আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি সহজপাচ্য বুর্জোয়া-প্রলেতারিয়েত প্রসঙ্গ

seremos como el Che পৃথিবীর সব ক্ষেত্রেই একটা বুর্জোয়া আর প্রলেতারিয়েত শ্রেণীর উদ্ভব হয়। প্রসেসটা শুরুর সাথে সাথে হয়ত হয় না, সময়ের সাথে সাথে হয়। প্রথমে সবচেয়ে পুরানো সংগঠন পরিবারের দিকে দেখা যাক। বিয়ের পরে প্রেম ভালবাসার প্রাথমিক আবেগটা শেষ হয়ে যাবার পরে বউ পিটানো অথবা যৌতুক আকাঙ্খী পুরুষ হয়ে ওঠে পরিবারের ভেতরকার বুর্জোয়া শ্রেণী, স্ত্রীটি এই ক্ষেত্রে হয়ে যায় প্রলেতারিয়েত। আবার স্ত্রীটি বড়লোক বাপের মেয়ে অথবা দজ্জাল টাইপের হলে ঘটনা হয় বিপরীত।

আরেকটা ডাইমেনশন দেখা যাক। ধরা যাক, আমার একটা জমি আছে। আমি এক বস্তির সর্দারকে সেইটা ইজারা দিলাম। সে সেইখানে একটা বস্তি খুলে বসল। এখন সেই বস্তিবাসীর কাছে সর্দার হল বুর্জোয়া শ্রেণী আর বস্তিবাসীরা হল প্রলেতারিয়েত।

আবার সেই সর্দারের কাছে আমি বুর্জোয়া আর সে নিজে প্রলেতারিয়েত। এইটা একটা লেয়ার্ড শ্রেণীবিভাজন। এর মধ্যম শ্রেণী, যারা ক্ষেত্রবিশেষে বুর্জোয়া এবং প্রলেতারিয়েত উভয়ই হতে পারে, তারা হল একটা সুবিধাবাদী শ্রেণী। এরা উপরের বুর্জোয়াদের থেকে যতই শোষিত হবে এরা ততই এদের নীচের প্রলেতারিয়েতের উপর শোষণ বাড়াতে থাকবে। নিজের লাভটা এরা ঠিকই কড়ায় গন্ডায় উঠিয়ে নেবে।

এর ফলাফল হিসেবে টপ লেভেল বুর্জোয়ারা বড়লোক থেকে আরও বড়লোক হতে থাকে, অপরদিকে লোয়ার লেভেল প্রলেতারিয়েতরা দরিদ্র থেকে নিঃস্ব হয়ে যেতে থাকে। তাই হয়ত বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে বেশীরভাগ সমতাবাদী আন্দোলন এই লোয়ার লেভেল প্রলেতারিয়েতদের থেকেই আরম্ভ হয়েছে। সমাজের শুরু থেকেই লিঙ্গ বিভাজনের ভিত্তিতে পুরুষ নামক বুর্জোয়া শ্রেণীর উত্থান হয়েছে, নারীদের স্থান হয়েছে প্রলেতারিয়েত হিসেবে। প্রথম থেকেই এই বুর্জোয়ারা শিক্ষা-দীক্ষা, সাহিত্য, সুবিধা সবকিছু নিজের কুক্ষিগত করেছে, আর শূণ্য করে রাখা হয়েছে প্রলেতারিয়েত শ্রেণীটিকে। বুর্জোয়া সমাজের সৃষ্ট কিছু ম্যাকানিজম আছে।

এইগুলা ব্যাবহার করে মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে যুগ যুগ ধরে এই শ্রেণী বিভাজনটাকে প্রকটভাবে জিইয়ে রাখা হয়েছে। প্রলেতারিয়েতরা এই বিভাজন যতটুকু ভাঙ্গতে পেরেছে তা সম্ভব হয়েছে অসাধারণ চিন্তাশীল কিছু সদস্যদের দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণে। কিন্তু দীর্ঘকাল এই শ্রেণীবিভাজনের মধ্যে বেঁচে থেকে এই শ্রেণীটি অসম্ভব রকম নতজানু হয়ে পড়েছে। এদের আনুগত্য এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে এরা নিজেরাই নিজের অজান্তে বুর্জোয়াদের পক্ষে কথা বলে যায়। এদের বড় একটা অংশই এই প্রলেতারিয়েত শ্রেণী হয়ে বেঁচে থাকাটাকে নিজেদের নিয়তি বলে স্বীকার করে নিয়েছে।

এই বিভাজন ভাঙ্গতে আন্দোলনের সাহায্যে যে শক্ত আঘাত করা প্রয়োজন সেটা করার শক্তিটাও তারা হারিয়ে ফেলছে প্রতিদিন। আধুনিক যুগে বুর্জোয়া শ্রেণীর সমতাবাদী বেশকিছু সদস্য এই বিভাজন ভেঙ্গে সমতা আনয়নে আগ্রহী। কিন্তু তারা কোনদিনই সফল হবে না যতদিন না এই ক্রমনিঃস্ব হতে থাকা প্রলেতারিয়েতরা তাদের নিজের অধিকার নিজেরাই আদায় করে নিতে শিখবে। চে গুয়েভারা বলেছিলেনঃ “I am not a liberator. Liberators do not exist. The people liberate themselves.” [শেষকথাঃ বুর্জোয়া-প্রলেতারিয়েত শ্রেণীবিভাজনের কনসেপ্টটা মূলত অর্থনৈতিক বৈষম্যকে বুঝায়। আমি ব্যাপারটিকে শোষক আর শোষিতের রূপক হিসেবে দেখিয়েছি।

এর মধ্যে সমাজতন্ত্রের কোন জটিল তত্ত্ব খোঁজার চেষ্টা না করলেই ভাল। ] ২৫শে জুলাই, ২০১২, ঢাকা।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.