আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেতৃত্ব সঙ্কটে বিএনপি!!!

বিএনপি কে চালায়? এটা এখন বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরই প্রশ্ন। এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি চালাচ্ছেন বামপন্থীরা। খালেদা জিয়ার চার পাশে অবস্থান করে যারা দল পরিচালনা করছেন তারা এক সময়ের ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। একই সঙ্গে সাবেক আমলা আর সেনাকর্মকর্তারা খালেদা জিয়াকে ঘিরে রাখায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল থেকে নেতাকর্মীরা। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অনেক নেতাই গুরুত্ব দেন না।

দেখা যায় দলের কোনো অনুষ্ঠানে গেলে মঞ্চে ওঠার আগে তাকে কেউ বসতেও বলেন না। জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে এরকম দৃশ্য দেখে মিডিয়াকর্মীরা হতবাক হয়েছেন। ওই অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম যখন বক্তৃতা করছিলেন তখন গুলশান অফিসের এক কর্মকর্তা পেছন থেকে তার পাঞ্জাবি টেনে ধরে বক্তৃতা শেষ করতে বলতে থাকেন। এ সময় মঞ্চে খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন। গুলশান অফিসের আরেক কর্তাব্যক্তি মির্জা ফখরুলকে অনেক সময় ধমক দিয়েও কথা বলেন।

এমন দৃশ্য গুলশান কার্যালয়ে অনেক মিডিয়াকর্মী দেখেছেন। অভিযোগ আছে ছোটখাটো কোনো অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল যেতে না চাইলে কর্তাব্যক্তি তাকে প্রেসার দিয়ে যেতে বাধ্য করেন। কোনো কোনো অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুলও বলেন, 'অমুক ভাই বলেছেন তাই না এসে পারলাম না। এক সময়ের ছাত্রদল বর্তমানে বিএনপির মধ্যম সারির নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায়ও আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের জন্য গণভবনের দরজা খোলা থাকে। পক্ষান্তরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিরোধী দলে থাকলেও তার সঙ্গে জেলা পর্যায়ের নেতাদের দেখা করা তো দূরের কথা, অনেক সময় ঢুকতেও দেয়া হয় না।

গুলশান কার্যালয়ের দোতলায় কে কে যেতে পারবে এমন ধরনের নোটিশ টাঙানো ছিল বলেও তিনি অভিযোগ করেন। ওই নেতা জানান, গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে কেউ প্রবেশ করতে চাইলে কয়েকটি গেট পার হতে হয়। রয়েছে আর্সওয়ে। সেখানে এসএসএফ'র আদলে গড়ে তোলা হয়েছে সিএসএফ (চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স)। গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশ করতে হলে সিএসএফ নামের ওই সিকিউরিটির হাতে থাকা নোটবুকে নাম লেখাতে হয় সবাইকে।

এজন্য কোনো ভদ্রলোক ভয়েও গুলশান যেতে চান না। কারণ অনেকে মনে করেন ওই তালিকা সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থার হাতে গেলে তাদের বিব্রত হতে হবে। বিএনপির একজন উপজেলা সেক্রেটারি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'অনেক চেষ্টা করে একদিন গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের দোতলা পর্যন্ত উঠেছিলাম। কিন্তু ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। বহু চড়াই-উতরাই পার হয়ে দোতলায় ম্যাডামের রুমে প্রবেশের মুখে আমার পরিচয় পেয়ে খালেদা জিয়ার এক বিশেষ সহকারী এক রকম ধাক্কা দিয়েই আমাকে বের করে দেন।

' ওই নেতা বলেন, 'ছাত্রজীবন থেকে জিয়াউর রহমানের রাজনীতি করি। ওই বিশেষ সহকারীকে বলে এসেছি, এটা কি চিড়িয়াখানা নাকি যে প্রবেশ করতে টিকিট লাগবে। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে তো টিকিট লাগত না। ' একজন জেলা পর্যায়ের নেতা অভিযোগ করেন, 'গুলশান কার্যালয়ে অর্থের লেনদেনও হয়। যাদের টাকা পয়সা আছে তারা কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান।

আমরা যারা আজীবন ছাত্রদল বিএনপি করে বয়স শেষ করলাম তারা ম্যাডামের কাছেও যেতে পারি না। মনের কথা খুলে বলতে পারি না। ' খালেদা জিয়ার চারপাশে অবস্থান করা আমলাদের দিকে অঙুলি উঠিয়ে এক নেতা বলেন, 'আমলারা কখনোই রাজপথের আন্দোলনে থাকেন না। তারা চাকরিজীবনেও আরাম-আয়েশে থেকে চাকরি করেছেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন।

এখনো সরকারের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য বিবৃতি তাদের দিতে হয় না। রাজপথে মিছিল মিটিং করতে হয় না। ফলে সরকারও তাদের ওপর নাখোশ হয় না। হামলা-মামলা-গ্রেপ্তার হতে হয় না। জেল খাটতে হয় না।

তারাই খালেদা জিয়াকে ঘিরে রেখেছে। ছাত্রজীবনে এসব আমলারা বামপন্থী রাজনীতি করেছেন। ওই নেতা আরো বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করেছেন। ওই আমলারাও তার সময়ে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। তারা ম্যাডামকে বামপন্থী বানিয়ে ছাড়বেন।

' দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, রিয়াজ রহমানরা দ্বিতীয় সারির আমলা ছিলেন- এমন অভিমত ব্যক্ত করে এক নেতা বলেন, 'শমসের মবিন চৌধুরী পররাষ্ট্র সচিব থাকাকালেই বিএনপি সরকার বহির্বিশ্ব থেকে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছিল। রিয়াজ রহমান সে সময় ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। আর সাবিহ উদ্দিন ছিলেন রাষ্ট্রদূত। কিন্তু বিএনপি সরকারের সঙ্গে বিদেশের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পরেও তখন তারা কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি। সেই সব আমলারাই এখন আবার ম্যাডামকে পরিচালনা করছেন।

' বিএনপি এখন কে চালাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, 'হাসিনা বিএনপি চালায় এমন বক্তব্য আমি এক বছর আগে দিয়েছিলাম। তখন এ কথার আগে পিছে অনেক কথা ছিল। সে বক্তব্যের জের ধরে এখন কিছু বলতে চাই না। ' বিএনপি বিএনপির নেতারাই চালায় দাবি করেন তিনি। বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক এক সময়ের ছাত্রদল নেতা আবদুল লতিফ জনি বলেন, 'বিএনপি কে চালাবে? বিএনপি তো দলের চেয়ারপারসন চালান।

কাউন্সিল তাকে সেই ক্ষমতা দিয়েছে। এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে ম্যাডাম স্থায়ী কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর দলের ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, যুগ্ম-মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকরা আছেন। তাদের পরামর্শ নিয়েই ম্যাডাম সিদ্ধান্ত দেন। ' এ বক্তব্যের জবাবে এক নেতা বলেন, 'বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে নেয়া অনেক সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি এমন নজির অনেক আছে।

এ নিয়ে বিভিন্ন সময় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আমলাদের দায়ী করে বলেছেন, আমলারাই যদি সব সিদ্ধান্ত দেয় তাহলে স্থায়ী কমিটি থাকার দরকার কী?' বলা হয়, গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারী এমনকি পিওন ড্রাইভারও নমিনেশন বিক্রি করেন। অনেকে নমিনেশনের লোভ দেখিয়ে টাকা আদায় করেন তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে। এমন অভিযোগ করেছেন দলের একাধিক নেতা। এক নেতার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া, 'ম্যাডাম যদি তৃণমূল নেতাদের জন্য তার দরজা উন্মুক্ত না করেন তাহলে বিএনপির এক সময় অস্তিত্ব থাকবে না। 'তৃণমূলের ১০০ নেতার মধ্যে ৯০ জন নেতাই গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ওপর নাখোশ।

এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে না পারা। ' অপর এক নেতা জানান, 'গুলশান কার্যালয়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের দখলে। ফখরুদ্দীন সরকার যখন ম্যাডামকে গ্রেপ্তার করে জেলে রেখেছিল তখন এইসব সেনা কর্মকর্তারা মইন উদ্দীনকে সংবর্ধনা দিয়েছেন। তারাই এখন সিকিউরিটির নামে ম্যাডামকে জনবিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন। এর অবসান হওয়া দরকার।

' ক্ষোভ প্রকাশ করে ছাত্রদলের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, 'ম্যাডামের কোনো সিদ্ধান্তই দ্রুত কার্যকর হয় না। ছাত্রদল, যুবদলের কমিটি নতুন করে দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে না। ছাত্রদলের বিভিন্ন কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও নতুন কমিটি না দেয়ায় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। ' তিনি বলেন, সব সিদ্ধান্তই কেন যেন আটকে আছে। এভাবে চলতে থাকলে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতাকর্মী পাওয়া দুষ্কর হবে।

' বিশেষ করে ছাত্রদলের নতুন কমিটি না দিলে ছাত্রদল কর্মীরা রাস্তায় নামবে না বলেও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা বলেন, যুবদলের কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন গুলশান কার্যালয় কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না। ম্যাডামকে কারা কী বুঝিয়ে কমিটি স্থগিত করে রেখেছেন। যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আর সেক্রেটারি সাইফুল আলম নীরবের দ্বন্দ্বে দলটির কার্যক্রম দীর্ঘদিন স্থবির হয়ে আছে। এক সময় যে যুবদল ছিল বিএনপির আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি, সেই যুবদল এখন চলছে দ্বন্দ্ব আর দ্বন্দ্ব।

যাযাদি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.