আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাত্রীদের ধর্ম পালন নিয়ে কটূক্তি

চট্টগ্রাম সরকারী নার্সিং কলেজে হিজাব পড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কলেজের শিক্ষিকাদের সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় এবং শিক্ষার্থীদের একটি কক্ষে আটকে রাখার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আতংকিত শিক্ষার্থীরা বিষয়টি তাদের অভিভাবকদের জানালে তারা সাংবাদিকদের বিষয়টি জানান। বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রোনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত হলে নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ হোসনে আরা পুলিশ পাহারায় তাদেরকে আন্দোলনরত মেয়েদের হলে নিয়ে যান। সেখানে উপস্থিত ভীতসন্ত্রস- ৭০-৮০ ছাত্রী সাংবাদিকদের দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। এসময় মুসলিম পরিবারের হিজাব পরিধানকারী ছাত্রীরা সবার সামনে তাদের উপর চলমান বিভিন্ন নির্যাতনের বর্ননা দেয়।

হিজাব এবং নামাজ পড়ার কারণে তাদেরকে ক্লাস, পরীক্ষা এবং ওয়ার্ড এ ডিউটিসহ সকলক্ষেত্রে পদে পদে বাধা দেয়ার নজিরবিহীন নির্যাতনের কথা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরে। ছাত্রীরা জানান, পুর্বে তাদের হিজাব নিয়ে সমস্যা করলেও এবার তাদের নামাজ পড়া এবং নামাজ ঘরের জায়গা নিয়েও কলেজ কর্তপক্ষ নতুন ভাবে ঝামেলা করছে। সোমবার সকালে অধ্যক্ষ্যের নেতৃত্বে একদল শিক্ষিকা হোস্টেলের একটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের নামাজ ঘরে রীতিমত হামলে পড়ে। তারা মসজিদে রাখা বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তক নিয়ে কটাক্ষ করে এবং ছাত্রীদের ধর্ম পালন নিয়ে কটূক্তি করে। এ সময় অঞ্জলী দেবী নামে এক শিক্ষিকার উদ্ধত আচরণে উপস্থিত ধর্মপ্রান ছাত্রীরা হতবাক হয়ে যায়।

ছাত্রীদের ভাষ্যমতে এই শিক্ষিকা জুতা পড়ে নামাজ ঘরে প্রবেশ করে ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘নামাজ ঘরে জুতা নিয়ে ঢুকেছি, কই আল্লাহ আমাকে কি করেছে ?’ এছাড়া অধ্যক্ষ তাদের বলেনরেকে বলেন, ‘নামাজ পড়লে কে দেখে ? সেবা করলে নামাজ পড়তে হয়না। ’ এসময় তারা হলের নামাজ ঘরটি বন্ধ করে দিতে বলে। মুল হল থেকে প্রায় দশ মিনিট দুরত্বে অবস্থিত আরেকটি হলের নামাজ ঘর পরিদর্শন করিয়ে কলেজ কর্তপক্ষ সাংবাদিকদের বলেন, আলাদা নামাজ ঘরের কি দরকার? একটা হলেই হয়। এছাড়া দূর দুরান্ত থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ফোন করে তাদের সন্তানদের বহিষ্কারের হুমকি দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ কারনে অনেক অভিভাবক তাদের মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অনেকটা বাধ্য হয়ে হিজাব খুলে ক্লাস করার জন্য চাপ দিচ্ছে।

এদিকে কলেজ কর্তপক্ষ কলেজের নোটিশ বোর্ডে, নীতিমালা অনুযায়ী পোশাক পরিধানের কথা উল্লেখ করে হিজাব পরিধানকারী ছাত্রীদের ক্লাস এবং ওয়ার্ড ডিউটি থেকে এক প্রকার নিষিদ্ধ করেছে। হিজাব পড়ে ক্লাস করতে যাওয়া ছাত্রীদের ক্লাস এবং পরিক্ষা হল থেকে বের করে দিয়ে বাকিদের নিয়ে ক্লাস এবং পরীক্ষা নেয়ার অভিযোগও করে ছাত্রীরা। সরেজমিনে কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায় কলেজ কর্তপক্ষ যে ড্রেস কোড নীতিমালার কথা বলে হিজাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে সে ড্রেস কোড উল্লেখিত অন্যান্য নীতিমালাও ছাত্রীরা মেনে চলছেনা। যেমন ড্রেস কোডে মেয়েদের পেছনে বেল্ট সম্বলিত কালো সু পরিধানের কথা বলা হলেও পুরো ক্যাম্পাসে সু পরিধেয় ছাত্রীর দেখা মেলেনি। কলেজ ড্রেস কোডে কোমরে বেল্ট পড়ার বিষয়টি থাকলেও কোন ছাত্রীকে সেটি পড়তে দেখা যায়নি।

এমনকি মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ডিউটিরত বিভিন্ন শিক্ষার্থীদেরকেও ড্রেস কোডের এসব বিষয় পালন করতে দেখতে পাওয়া যায়নি। কিছুদিন পরে অনুষ্ঠেয় ফাইনাল টার্মের পরীক্ষায় হিজাব পরিহিতা কোন ফরম পুরুন করা হবেনা বলেও হুমকি দেয়া হয়েছে ছাত্রীদের। ছাত্রীরা হিজাব পরে সরকারী নিয়ম অমান্য করেছে এবং সেকারণে তাদের কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়। শিক্ষিকাদের রোষানল থেকে সিনিয়র-জুনিয়র কোন ব্যাচ বাদ পরছেনা। শিক্ষিকাদের অব্যাহত চাপ, পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার হুমকি এবং অপমান সহ্য করতে না পেরে কিছু ছাত্রী বাধ্য হয়ে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হিজাব পরা বাদ দিয়েছে।

মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে অনেক ছাত্রী। অন্যদিকে কিছু ছাত্রী অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কলেজ কর্তপক্ষের কাছে ছাড়পত্র চাইলে সেটাও দেয়া হচ্ছে না বলে জানায় এক ছাত্রী। কলেজের ড্রেস কোডের বিভিন্ন নিয়মনীতি ভঙ্গ হলেও শুধু কেন হিজাবের বিষয়ে কলেজ কর্তপক্ষের আপত্তি সেটা জানতে কলেজের অধ্যক্ষ্যের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অনেকটা এড়িয়ে যান। তবে তিনি কোমরের বেল্টকে সেকেলে বলে সেটা পড়ার ব্যাপারে উল্টো অবস্থান নেন। বারবার তিনি ড্রেসকোডের দোহাই দিয়ে হিজাব পড়ার ব্যাপারে নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন।

অন্যদিকে কলেজের মেট্রন মিনারা খানম বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) নেতাদের কথা জানিয়ে বলেন, হিজাব পড়া এসব ছাত্রীদের ওয়ার্ডে ডিউটি করতে বিএমএ থেকে আপত্তি দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে কলেজে হিজাব না পড়া অন্যান্য ছাত্রী এবং ছাত্রের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা কলেজ কর্তপক্ষের হাতে একপ্রকার জিম্মি হয়ে আছে। তাদের নানা অন্যায় আচরণ সহ্য করতে হচ্ছে। তারা হিজাব পড়া ছাত্রীদের দাবিকে ন্যায্য দাবি বলে সমর্থন দিয়ে বলেছেন, ধর্মপালনে যেমন জোর নেই সেভাবে ধর্ম পালনে বাধা দেওয়াও অন্যায়। হিজাব পড়ে ডিউটি করতে যদি সমস্যা না হয় তাহলে শিক্ষিকাদের কেন এতে আপত্তি সে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।

এদিকে শিক্ষিকাদের হুমকি এবং চাপে কলেজের সিনিয়র ব্যাচের কতিপয় ছাত্রী হিজাব এবং নামাজ ঘর রক্ষার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রীদের এসব না করতে হুমকি দিচ্ছে বলে জানা যায়। উল্লেখ্য নার্সিং অধিদফতরের অধিনে ৪ বছর মেয়াদী বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স নিয়ে চট্টগ্রাম সরকারী নার্সিং কলেজ ২০০৮ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে। শুরু থেকে কলেজ কর্তপক্ষের বিভিন্ন অন্যায় আচরণ এবং সেশন জটের কারণে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কলেজটি একাধিকবার বন্ধ ঘোষিত হয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.