আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি স্মৃতিময় পহেলা বৈশাখ........

কর্ণফুলী নদীর পাড়ে দাড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। পরনে নীল শাড়ি। চোখে নীল কাজল। বাতাসে চুলগুলো উড়ছে তার। তার সাথে পাল্লা দিয়ে উড়ছে তার শাড়ির আঁচলটা।

হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে তার। অনেক দূরে কোথাও। দূরে....... পেছন থেকে কেউ একজন হাত রাখলো তার কাঁধে। ছোট একটা হাসি দিলো মেয়েটি। এসেছে অবশেষে সে যার জন্য অপেক্ষা।

আস্তে আস্তে তার দিকে ফিরতে লাগলো মেয়েটি........ মেঘ... এই মেঘ কি রে আর কত ঘুমাবি??আজকে পহেলা বৈশাখ। সবাই কতো আগে উঠে সেজে গুজে বসে আছে আর এই মেয়ে কুম্ভকর্নের মত খালি ঘুমায়। উঠ নাহয় মার খাবি কিন্তু। উফফফ......এই আম্মুটা যে কি না। কত সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম।

দিলো বারটা বাজিয়ে। আমার রাজকুমারটার মুখটাও দেখতে পারলাম না। ধ্যাত। এইটা কিসু হইলো? আচ্ছা আমার রাজকুমারটা কেমন হবে??জন আব্রাহাম এর মত??ইসসস্,কি যে ভালো হত। নাহ,তা হলে প্রবলেম।

সব মেয়ে নজর দিতো ওর দিকে। আমার কি হত তখন??থাক বাবা কাজ নেই। দেখা যাক কপালে কি আছে?উপপসস....পানির গ্লাসটাও ফেলে দিলাম। এখন আবার সব আমাকেই সাফ করতে হবে। আজকে এমন হচ্ছে কেন??নাহ আজকে আর উল্টা পাল্টা কিছু হতে দেয়া যাবেনা।

বছর এর প্রথম দিন এইভাবে গেলে সারাবছরই কপালে খারাবি আছে আমার। গোসল করে চুলটা শুকিয়ে নিলাম। নাহয় আবার ঠিকমতো ফুলবেনা। রোমানা,তিথি ওরা সবাই পার্লার থেকে সাজবে। আমাকে তো দেখাই যাবেনা ওদের পাশে।

যা হয় হোক। ড্রেস পড়ে হালকা সেজে রেডি হয়ে নিলাম। তাড়াতাড়ি যেতে হবে। ওরা ফোন দিচ্ছে বারবার। অনেক লেট হয়ে গেছে।

-কি রে মেঘ এতক্ষনে আসলি??এটা কি পরেছিস রে??শাড়ি পরিসনি কেন??আমরা এত করে বললাম আর তুই শুনলিনা? -আরে রাখ তো। তোদেরকে দেখার মতো মানুষ আছে। তার জন্য পরেছিস। আমি কি জন্য পড়ব??আর জানিস তো। আমার এতো সাজ ভালো লাগে না।

আচ্ছা তোরা এতক্ষণ কেমনে শাড়ি পরে থাকিস রে??হাটিস কিভাবে??পেঁচিয়ে যায় না??উফফফ পেইন। -হাহাহা। তোর ভালো লাগে না তো তাই এমন মনে হয়। আচ্ছা চল যাই মেলায়। ওরা চলে আসবে।

রাব্বী আর রিজভী ভাইয়াকে দেখা যাচ্ছে। বাব্বাহ। ফুলও নিয়ে এসেছে। জারবারা ফুল। প্রেয়সীর খোঁপায় পরিয়ে দিবে।

ভালই। আমার দেখতে ভালোই লাগে। ওদের বয়ফ্রেন্ড অনেক ভালো। আমার জন্য আইসক্রীম আনে। ওরা প্রেম করে আর আমি আইসক্রীম খাই।

হিহিহি.... -আরে কি হল তোর মেঘ??লাগেনি তো? -না। কিছুনা। -ব্যাথা পেয়েছিস নাকি দেখি তো। -না। তেমন না।

বাট জুতা ছিড়ে গেছে। -হায় হায় কি বলিস?এখন কি করবি??মেলায় তো জুতা সেলাইয়ের লোক পাওয়া যাবে না। আচ্ছা তুই থাক। আমরা দেখি কি করা যায়। তুই ঐ দোকানটায় গিয়ে বস।

-আচ্ছা। জুতা হাতে নিয়ে হাটতে লাগলাম ঐ দোকানের দিকে। আচ্ছা কিসের দোকান??পান্তার নাকি?? নাহ। পিঠার। আমার পিঠা অনেক পছন্দ।

সবাই তাকাচ্ছে আমার দিকে। কয়েকটা বজ্জাত মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কি সব বলছে যেন। আজিব মাইয়া সব। বেয়াদ্দপ। থাপরাইতে মন চাচ্ছে।

তোদের জুতা ছিড়লে কি করতি??? দোকানটা সাজিয়েছে বেশ সুন্দর করে। আশেপাশের সব স্টল থেকে একটু আলাদা। একটা সিটে বসে পিঠার অর্ডার দিয়ে সবাইকে দেখতে থাকি। হুম,কাপলও আছে কয়েকটা। নিচুস্বরে কথা বলছে একে অন্যের সাথে।

যেন আর কেউ শুনলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। আর কয়েকটা ছেলে টেবিলকে তবলা বানিয়ে গান গাচ্ছে। আর একটাতে তিনজন ভদ্রমহিলা। কি কড়া সাজ দিসে রে বাবা!আন্টিরা আপনাদের বয়স দিন দিন বাড়ে না কমে??? -এক্সকিউজ মি,বসতে পারি একটু? -না। -আসলে সব সিট ফিলাপ হয়ে গেসে।

তাই....... -আচ্ছা বসুন। -থ্যাংকস। আপনার কি জুতো ছিড়েছে নাকি?? -জি। আপনার চোখ ঠিকই দেখছে। -ও।

তাতে কি?ব্যাপার না। খালি পায়ে হাটুন। সবাইকে জুতা পড়ে হাটতে হবে এমন তো কোন কথা নাই। -মনে মনে ১০০ টা গালি দিলাম। কিন্তু মুখে বললাম যে ও তাই??ভালো।

-হুম। আচ্ছা আপনার নাম কি?? -মেঘ -কৈ কোথায়??বৃষ্টি আসলে তো মরসি আজকে। -আমার নাম মেঘ। উফফফ....... -এতো রাগেন কেন?জন্মের পর কি মধু না খেয়ে কাঁচা মরিচ খেয়েছিলেন নাকি? -আচ্ছা ভাইয়া। রাগিনাই।

আমি আসি। আর কোন কথা না বলতে দিয়ে বের হয়ে এলাম। ওরা এতো লেট করছে কেন??ভুলে গেলো নাকি??গেলে যাক। খালি পায়েই ঘুরতে লাগলাম মেলায়। কিন্তু কিছুই কেনার মত পাচ্ছিনা।

পছন্দই হচ্ছেনা কিছু। ওখানে কি হচ্ছে??উফফ এই মেলাতেও মারামারি। কই যে যামু। আরে এটা তো ঐ ছেলেটা। মারামারিতেও আছে।

একটা পিচ্চি ছেলেকে সাথে করে এদিকেই আসতে লাগলো সে। পিচ্চিটার গায়ে মারের দাগ। চামড়া ছিলে গেছে। খারাপ লাগলো অনেক। এগিয়ে গেলাম।

-এই যে মেঘ। হেল্প করো তো। ওর হাতটা তুলে ধরো। ঔষধটা লাগাই। -হুম কি হয়েছিলো ওখানে?? -আরে বলোনা।

চুরি করতে গিয়ে ধরা খাইসে। আমি না গেলে তো আজকে মরেই যেতো। -হুম। -মেলায় একাই এসেছো নাকি?? -নাহ। ফ্রেন্ডদের সাথে।

ওরা আমার জন্য জুতা আনতে গেসে। -এভাবে একা একা হাটাটা ভালো দেখায় না। ঐখানে পুতুল নাচ হচ্ছে। চল বসি। আচ্ছা তুমি করে বলছি খারাপ লাগছেনা তো আবার?? -এখন লাগছেনা।

আচ্ছা আপনার নাম কি? -রোদ। তুমি কিসে পড়ছো জানতে পারি? -অনার্সে। ৩য় বর্ষ। -হাহা। তাহলে তো জুনিয়র।

আমি মাষ্টার্সে পরছি। -জি। -একটা কথা বলি?? -কি?বলুন। -শাড়ি পরলে তোমাকে আরো দারুন লাগতো। -ও তাই?ভালো।

-এখন ও লাগছে তবে কম। -হাহা। আমার ফ্রেন্ডরা চলে আসছে। -এই নে জুতো। এবার চল ঘুরি।

উনাকে বিদায় দিয়ে আমরা ঘুরতে লাগলাম মেলায়। নাহ,প্রথমে যেমন মনে হয়েছিলো তেমন না। ভালোই বলা চলে। এরপর অনেকবার চোখাচোখি হল। দুজনই হাসলাম।

অনেক ঘুরলাম। মজা করলাম। নাহ,দিনটা এতো খারাপও যায়নি। এরপর ঘুরাঘুরি শেষে ফ্রেন্ডদের বিদায় দিয়ে আবার চললাম বাসার পথে। একটাও রিক্সা নেই।

আজিব। কি আর করা। হাটা শুরু করলাম। -অনেকটা পথ হেটে এসেও হয়নি হাটা তোমার পাশে -আপনি????????? -আমার বাসাও এদিকেই। আর আমি তোমাকে চিনি মেঘ।

-কিভাবে??(চোখ দুটোকে যতটুকু পারলাম বড় করলাম) -তোমাদের উপরের তলার নিধিকে পড়াই আমি। অনেকবারই তোমাকে দেখেছি। সব জানি তোমার সম্পর্কে। অনেক ভালো মেয়ে তুমি। -ও,তো কি হইসে? -কি আর হবে?কিছুই না।

দাঁড়িয়ে আছো কেন?চল হাটি। বাসায় যাবা না?? -হুম,তাইতো। চলুন। ভালোই,চলুক না ও সাথে। একা একা পথ চলতে আর ভালো লাগেনা।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.