চোখে যা দেখি, কানে যা শুনি, তা নিয়ে কথা বলবোই ! মিঠা পানির নদী-বিল-হাওরের মধ্যে এই পাখিটিকে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় হাওরের জলাভূমিতে। হাকালুকি হাওরে প্রতি বছরই এ জাতের পাখি দেখা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় টাঙ্গুয়ার হাওরে। গোটা বিশ্বে এ প্রজাতির পাখি সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে একসময় এ পাখি ভালো অবস্থায় থাকলেও এখন গয়ারকে আর দেখা যায় না বললেই চলে।
এদের হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি দূষণ, খাবার আর বাসা বানানোর জায়গার অভাব। বিল আর নদীতে ছোট মাছের দারুণ সংকট চলছে। শীতকালে ধান চাষের জমিতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক কীটনাশক প্রয়োগের ফলে ছোট মাছ প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এদের বাসা বানানোর জন্য বড় বড় উঁচু গাছের প্রয়োজন। এ দেশে এ রকম গাছের বড়ই অভাব।
কাজেই বাংলাদেশে এই পাখি টিকে থাকার
এখন একমাত্র জায়গা হাওর। টাঙ্গুয়ার হাওরে এই পাখি রক্ষায় একটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পাখিটিকে হাওরের ইনডিকেটর প্রজাতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতি বছরই এই পাখি গণনা করা হয়। তাদের বাসা বানানোর গাছগুলোকে সংরক্ষণের জন্য বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে।
শুধু এই একটি জায়গায় পাখিটি রক্ষায় যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা এটি টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট নয়। পাখিটিকে রক্ষায় অন্যান্য জলাভূমিতে দ্রুত আবাসস্থল ফিরিয়ে আনা জরুরি।
পৃথিবীতে আনিঙ্গিডি পরিবারের প্রজাতি আছে মাত্র দুটি। জনহীন পরিবার আর কি! এর একটি দেখা যায় আমাদের দেশে। সেটিই হলো গয়ার।
ইংরেজি নাম ওরিয়েন্টাল ডাটার। গলাটা সাপের মতো বলেই অনেকে একে সাপগলা গয়ার বা সাপপাখি বলে থাকেন।
প্রজনন ঋতুতে পাখিটির ডানা ও পিঠ কালো। তবে এর পালকগুলো ভালো করে দেখলে রূপালি বাদামির আভা আছে বলে মনে হয়। পেটের দিকটি পুরোপুরি কালচে।
গলাটা ভেলটেভযুক্ত ও বাদামি। ঠোঁটটার উপরের অংশ গাঢ় বাদামি আর নিচের অংশ হলদে। পা দেখতে কালো। প্রজনন ঋতুর বাইরে পাখিটাকে দেখতে কিছুটা ভিন্ন রকমের লাগে। এ সময় এদের গলা ও মাথা বাদামি।
পাখিটির ছানার উপরিভাগের রং গাঢ় বাদামি এবং নিচের দিকটা হালকা বাদামি। পুরুষ ও মেয়ে পাখি দেখতে একই রকম। গয়ারের পালক ওয়াটারপ্রুভ নয়, তাই এদের দিনের বিভিন্ন সময় রোদ পোহাতে দেখা যায়।
অনেকে পানকৌড়ি বলে পাখিটিকে ভুল করেন। পানকৌড়ির মতো এরাও পানির খাবার খেতেই অভ্যস্ত।
এরাও সাধারণত মাছ খায়। মাছ ধরার পর এরা জোরে ঝাঁকুনি দিয়ে ঊর্ধ্বাকাশে ফেলে দেয়। তারপর হাঁ মুখে অনায়াসেই সেটা মুখে নিয়ে নেয়। মাঝে মাঝে সাপগলা গয়ারকে সাপ বলে অনেকে ভুল করেন। এরা জলাশয়ের উদ্ভিদের মধ্যে গলা খাড়া করে এমনভাবে সাঁতার কাটে যে ভয় পাওয়ারই কথা।
সাপগলা গয়ার নদী, লেক, হাওর, পুকুরে একাকী, জোড়ায় জোড়ায় অথবা দলে বাস করে। দল বেঁধে বড় কোনো গাছে একসঙ্গে লতা, পাতা ও কাঠি দিয়ে বাসা বানায়। এদের প্রজননকাল জুন-ডিসেম্বর। মেয়ে পাখিটি ৩-৬টি সবুজাভ নীল ডিম পাড়ে।
সাপগলা গয়ার বাংলাদেশের একটি বিপন্ন পাখি।
পাখিটি কমে যাচ্ছে মানেই আমাদের জলাশয়ের পানি দূষণ বাড়ছে। দ্রুতহারে কমে যাচ্ছে ছোট মাছও।
সূত্র : সমকাল ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।