আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাদুকা কাহিনী -২য় পর্ব।

প্রবাসী বলছিলাম পাদুকার ইতিবৃত্ত। “পাদুকা” এসেছে সংস্কৃত শব্দ “পদ” এবং “কা” থেকে । অহিংসা প্রাচীন ভারতের সমস্ত ধর্মেরই মূলমন্ত্র। প্রাচীন কালের ভারতীয় পাদুকায় তাই প্রানীর চামড়ার ব্যবহার ছিল নিষিদ্ধ। তখন যে পাদুকা’র প্রচলন ছিল তা ছিল প্রকৃতপক্ষে “খড়ম” খড়মের মাঝখান থাকত ফাকা, উদ্দেশ্য ছিল অশাবধানতা বশতঃ প্রানী হত্যা না হয়ে যায়।

কাঠ , হাতির দাত, এমনকি রুপা দিয়েও তৈরী হত নীচের অংশ বা তলা আর পায়ের সামনে উপরের দিকে উঠে থাকত ছোট দাবার গুটির মত অংশ। এই অংশকেই পায়ের বুড়ো আঙ্গুল এবং পাশের আঙ্গুলের মধ্যে রেখে শক্ত করে ধরে খট খট শব্দ করে হেটে যাওয়া হত। হিন্দু ধর্মে পাদুকার রয়েছে উল্লেখযোগ্য স্থান। হিন্দু মহাকাব্য রামায়নে রাজা দশরথ পূত্র রাম বনবাসে গেলে তার পাদুকা বা খড়ম সিংহাসনে রেখে রাজ্যশাসন করতেন ভাই ভরত। আর লক্ষী পুজোতে মা লক্ষীকে আহবান করা হয় ঘরের সিড়ি থেকে ঘরের ভেতর অবধি পর্যন্ত পায়ের আলপনা একে এবং তার পাশে প্রদীপ জ্বালিয়ে।

পূজারীর মনের বাসনা থাকত মা লক্ষী পদচিহ্ন অনুসরন করে ঘরে প্রবেশ করে ঘর ভরে দিয়ে যাবেন ধন সম্পদে। ১) হাতীর দাঁত এবং কারুকার্য্যময় , অলংকার খচিত ভারতীয় খড়ম। ২) রোকোকো এবং বারোক জুতা- ইউরোপের রেনেশাঁর যুগে এই দুই ধরনের জুতা প্রচলিত ছিল। বারোক জুতা ছিল অপেক্ষাকৃত ভারী এবং মজবুত, উৎপত্তিস্থান হল ইতালী আর রোকোকো জুতা অপেক্ষাকৃত হালকা এবং জন্ম ফ্রান্সে। বারোক জুতা পূরুষদের মধ্যে এবং রোকোকো জুতা মহিলাদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল।

জাপানের শিন্টোদের জুতা- জাপানের অন্যতম প্রধান ধর্ম হল শিন্টো ধর্ম। তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য ছিল নির্দিস্ট জুতা। গরুর জুতা- মানুষের মত গরুর ও জুতা পরার প্রজোন পড়ে । গরুর পা আঘাতপ্রাপ্ত হলে তা সারিয়ে তোলার জন্য গরুর পায়ে ব্যবহার করা হয় রাবার ফিতা এবং বাকলস দেওয়া বুট জুতো। মহাশুন্য চারীর জুতা- এপোলো মহাশুন্য প্রোগ্রামের এপোলো১১ তে করে ১৯৬৯ সালে প্রথম চাঁদে মানুষ পা রাখে।

নীচের ছবি এপোলো প্রোগ্রামের মহাশুন্যচারী জিম লোভেলের ট্রেনিং জুতা। স্তরে স্তরে টেফ্লন দিয়ে মোড়া থাকত এ জুতা যাতে সূর্য্যরশ্মি শরীর পর্যন্ত না পৌছায়। বলিভিয়ার টিঙ্কু স্যান্ডেল জুতা- বলিভিয়াতে “টিঙ্কু” নাচের সময় ব্যবহার করা হত এ জুতা। কারুকাজ করা এই স্যন্ডেলের বৈশিষ্ঠ হল যে এতে সুচালো ধাতুর নব দেওয়া থাকত যা্তে করে নাচের সময় প্রতিযোগীর পায়ে আঘাত করা সম্ভব হয়। চোরাচালানের জুতো- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ১৯৪০-৫০ এর দশকে সালে এই জুতার ব্যবহার ছিল নেদারল্যান্ডে।

এর পুরু শুকতলার নীচে পাচার করা হত নিষিদ্ধ কিংবা রেশনের সামগ্রী নেদারল্যান্ড এবং বেলজিয়াম সীমান্ত দিয়ে। এর সামনের দিকে থাকত গোড়ালীর অংশ ফলে হেটে গেল এমন ছাপ পড়ত যে মনে হত উলটো দিকে হেটে গেছে কেউ। মোরাভিয়ার নাচের জুতা- এই ধরনের নাচের জুতার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় নাচের সময় মোরাভিয়ায়, চেক রিপাবলিকে এবং হাঙ্গেরীতে। ষোড়শ শতাব্দীতে শেকসপীয়ার যখন হ্যামলেট লিখছেন তখন উচু প্লাটফর্মের এই জুতাগুলো জনপ্রিয় ছিল অভিজাতশ্রেনীর মহিলাদের মধ্যে, সম্ভবতঃ অটোমান তুর্কী থেকে ইউরোপে আসে এই ধরনের জুতো। এই জুতার নাম হল চোগিন।

কয়েদীদের জুতা- কয়েদীরা যাতে সহজে দৌড়ে না পালিয়ে যেতে পারে সেই উদ্দেশ্যে ভারী রিংসহ এ যুতা পরিয়ে রাখা হত কয়েদীদের। দেখতে একেবারে জুতার মত নয়। বরং কতকটা চোঙ্গার মত এই জুতা জাপানীরা ব্যবহার করত বরফের মধ্য দিয়ে হেটে যাওয়ার সময়। বিশাল জুতা- বিরাট আকৃতির এই জুতার ডিজাইন করা হয় মেক্সিকোতে। কাউবয় বা রাখালদের এই জুতার হীল উচূ এবং সামনের দিক সুচালো , উত্তর এবং মধ্যে আমেরিকার কাউবয়দের মধ্যে জনপ্রিয়।

নেদারল্যান্ডে জলাভুমী থেকে পীট সংগ্রহ করার সময় ব্যবহার করা হত। পীট হল আংশিক পঁচা গাছপালা যা ব্যবহার শুকিয়ে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হত। অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো এবং এলজাবেথ টেইলরের জুতো। এডমিরাল হোরেশিও নেলসনের জুতার বকলেস এবং ফ্রান্সের সম্রাট নেপলিয়নের মোজা টেনিস চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড় রজার ফেদেরার এবং বিয়ন বর্গের জুতো। তিব্বতের ধর্মীয় নেতা এবং নোবেল বিজয়ী দালাইলামার ব্যবহৃত এ চটি জুতা বাটা কোম্পানীর তৈরী।

আমেরিকার জাতীয় বাস্কেটবল খেলোয়াড় চ্যাম্পিয়ন “ শাকিল ও’ নেইলের”র ব্যবহৃত জুতা। ৭ফুট ১ ইঞ্চি উচু নেইলের এ জুতার সাইজ হল ২৩ আর তার ওজন ছিল ৩২৫ পাউন্ড। টেরী ফক্স এর জুতা –শুধুমাত্র বাম পায়ের এই জুতা পরে ই কানাডার এক প্রন্ত থেকে অন্য প্রান্তে দৌড় শুরু করেছিলেন টেরী ফক্স। অল্পবয়সে হাড়ের ক্যান্সারে ডান পা হারান ফক্স। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে ইংল্যান্ডের প্রধান্মন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের জুতা কানাডার প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোর জুতা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.