দিন যত যাচ্ছে, দেশ যত উন্নতির দিকে অগ্রসরমান(?), মানুষের মাঝে সামজিক নিরাপত্তা বা নিশ্চয়তা ততই একধাপ অনিশ্চয়তার দিকে প্রবহমান। একটি প্রবাদ আছে “মাছের প্রথম পঁচা ধরে মাথা থেকে” ঠিক তেমনি একটি দেশের ধ্বংস শুরু হয় বুদ্ধিজীবি নামক শ্রেণীটির থেকে। ১৯১১ সালে দুই বাংলার শিক্ষার হার ছিল ৭.৫% আর বর্তমানে ৬৫%। এক্ষেত্রে যে জাতি উন্নতি সাধন করছে তার হিসাব করতে যেমনি পরিসংখ্যানের ছাত্র হইতে হবে না, ঠিক তেমনি তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থার সাথে বর্তমানের তুলনা করতে কাউকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নাই। কিন্তু কেন এই ছন্দপতন? ৭.৫% শিক্ষিত জাতি যদি আমাদেরকে জগদীশ, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল উপহার দিতে পারে, কেন আজ আমরা শুধু একটি বিতর্কহীন শিক্ষানীতিও উপহার দিতে পারছি না? শেরেবাংলা, ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী, মুজিবের দেশে কেন আজ রাজনৈতির রিমোর্ট ব্যবসায়ীদের হাতে? তাহলে এই স্বাক্ষরতার প্রবৃদ্ধি আমাদেরকে কি দিয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আজ আর কেউ নেই।
আজ আমরা এমনি একটি সমাজে বসবাস করছি যেখানে সংবাদপত্র গুলোকে নিউজের সন্ধান করতে হয় না। ছাত্র -শ্রমিক -কৃষককে কথা বলতে দেওয়া হয় না, রাজনিতিবীদদের জনগণকে নিয়ে ভাবতে হয় না।
মিডিয়াগুলো আজ পালন করছে দন্তহীন বাঘের ভূমিকা। আজকে সড়যন্ত্র চলছে আমার মায়ের অলংকারগুলো এক-একটি করে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার। তবুও কেন নীরব এ শিক্ষিত(?) সমৃদ্ধ জাতি? জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সুশিল, প্রগতিশীল ও বুদ্ধিভিত্তিক প্রাণীগুলোর নীরবতা সত্যিই আমাদেরকে ভাবিয়ে না তুলে পারে না।
হাজার হাজার বুদ্ধিজীবীর এই দেশে কেন আনু আহাম্মদরা আজ সঙ্গীহীন। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ এন.জি.ও সমৃদ্ধ এই দেশ দিন দিন দ্ররিদ্রের দিকে যাওয়ার চিত্র আমাদেরকে নাড়া না দিয়ে পারে না। তাইতো হুমায়ন আজাদ বলেছিলেন “ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র দূর করার কাজ করা, ধর্ষন করে ধর্ষিতাকে যৌন সুখ দেওয়ারই নামান্তর”। গনতন্ত্রের স্বার্থে যে দেশের জন্ম সেই দেশে সংসদে প্রতিনিধি কোন দলের অনুপস্থিতি যেমন কাম্য হতে পারে না, তেমনি রাজপথে রাজনীতিবীদকে রক্তাক্ত করানোর নাম গনতন্ত্র হতে পারে না। মানব অধিকারের নামে-বেনামে অজস্র প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি আমাদেরকে হতাশ করে।
কারণ আমরা জানি, জোরুজালেমের টাকায় আর যাই প্রতিষ্ঠা হোক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। বুদ্ধি ভিত্তিক চর্চা কখনো বাণিজ্যের হাতিয়ার হওয়া উচিত নয়। তাই এখনই চুড়ান্ত সময় নতুন করে ভাবার। সবকিছু দেখে, শুনে ও জেনেও অন্ধ বধির ও অজ্ঞতার ভূমিকা রাখার কোন মানে হয় না। একটি দেশকে সমৃদ্ধির শিখরে নেওয়ার জন্য, অপশক্তির অগ্রাসনের হাত থেকে রক্ষার জন্য, হাজার ও বুদ্ধিজীবি বা বুদ্ধিভিত্তিক সংগঠনের প্রয়োজন নেই।
প্রয়োজন ‘৫২, ‘৬৯, কিংবা ‘৭১ এর চেতনার তথা দেশ প্রেমের আর এই ক্ষেত্রে আমাদের একটু ঘুমের ভান না করলেই হয়। এবং এটাই আজ জাতিরকামনা।
মোহাম্মদ তরিক উল্লাহ
আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।