আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুশীল বঙ্গ সুশীল রঙ্গ - 1

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

জগলুল মুমিন চৌধুরি এবং সৈয়দ আদম প্রাতঃভ্রমননিমিত্তে এসেছিলেন রমনায়। তারা দীর্ঘ দিনের বন্ধু। জগলুল মুমিন চৌধুরীর কথা বানিজ্য এবং সৈয়দ আদমের মোমবাতির ব্যাবসা জমজমাট। তবে তাদের মূল পেশা কলম পেষা। রমনায় অনেক ভোরে সমাগত স্বাস্থ্যার্থিরা নিয়ম মেনেই দুলকি চালে ছুটছেন।

জগলুল মুমিনের চার কোনা ফ্রেমের চশমাটা আবার কানঢাকা ফিতার ভেতরে রাখা। পার্কের ভেতরে রাত্রি 10 ঘটিকার পর অবস্থান করা নিষিদ্ধ জেনেও কিছু মানুষ আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সেখানে থাকছে। কতৃপক্ষ উদাসীন, নগর পিতার নজরে পরছে না- আইনের হাত এদের স্পর্শ করে না- অবশ্য মহিলার চোখে কাপড় বাঁধা, এক হাতে দাঁড়ি পাল্লা নিয়ে যেভাবে দাঁড়িয়ে থাকে অন্য মোলায়েম হাতে এদের ছুঁয়ে দিলে নিশ্চিত ভাবেই খোস পাঁচড়া হয়ে যেতে পারে- এ অশোভন বক্তব্য আসলে কথকের- জগলুল মুমিন চৌধুরী আইনের আওতায় না আসা এসব বেআইনি উদ্যানঅধিবাসীদের প্রতি নগরপিতার মৃদু প্রশ্রয় নিয়ে খানিকটা চিন্তিত। তিনি বেশ কদিন যাবত ভাবছেন সুহৃদ সৈয়দ আদমকে এ বিষয়ে অবহিত করে তার সুচিন্তিত মতামত শুনবেন এবং সংবাদ পত্রে একটা চিঠি লিখবেন কড়া ভাষায়। কেনো নগর পিতা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছেন এবং কেনো তার এই পক্ষপাতিত্ব।

তবে দীর্ঘদিন কলম পেষার পর সুনিশ্চিত শব্দাবলী কণ্ঠস্থ না হলে তিনি কোনো বিষয়েই বলতে পারেন না। উপস্থাপনে দার্ঢ়্য থাকটে হবে, একটার পর একটা অবগুণ্ঠন খুলে সত্যকে উজ্জল করে প্রকাশ করতে হবে। অন্যায়কে প্রকাশ করতে হলে সেখানে চলে আসা সহমর্মিতা আর সংশয় নির্মূল করেই সত্যভাষন দিতে হবে। নিরপেক্ষতা আদতে স নির্ধারণ করে- মাঝে মানবীয় আবেগ টেনে এনে রস বিনষ্ট করা অর্থহীন। গত কয়েকদিন মানসিক শ্রম শেষে তার উদ্যানের অবৈধ অধিবাসীদের প্রতি নগরপিটার পক্ষপাত নামক অভিসন্দর্ভটি তিনি গুছিয়ে এনেছেন।

লেকের পাশের বাঁধানো রাস্তা দিয়ে তারা হাঁটছেন- পাখিরা ডাকছে পবিত্র একটা পরিবেশ। শীতল মলয় বইছে মৃদুমন্দ, আহা, প্রভাত বড়োই মনোরম আজ। কুয়াশার চাদ আবছা করে রেখেছে দৃষ্টিকে- সে আড়াল কেটে যাবে- অতিক্রান্ত সময়ের সাথে অটিক্রান্ত পথের অস্পষ্টতা কমে যায়- শুধুমাত্র সামনে এগুলেই সামনের সরণী স্পষ্টতা পায়। তাদের হাতের বাঁধানো বেতের লাঠিটে কারুকার্য, হাতলটা মার্বেল পাথরের, আভিজাত্য ছড়াতে ছড়াতে হেঁটে যাচ্ছেন দুই সুহৃদ। সৈয়দ আদম, মনে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো- যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সবুজ আর সবুজ মখমলের ঘাস ছিলো।

তুমি তো মেয়েদের মহলে বেশ জনপ্রিয় ছিলে, তোমার সুললিত শব্দ ঝংকারে মুগ্ধ ছিলো তোমার সহপাঠিনীরা। সৈয়দ আদম কিছুটা স্মৃতিমগ্ন হয়েই লেকের পাশের করই গাছের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। তার ঠোঁটে স্মিত হাসি, টার মোটা কালো ফ্রেমের চশমার কাঁচ তিনি মনিপুরী চাদরের কোনা দিয়ে পরিস্কার করে বললেন" আহা, বিগত যৌবন সেতো মধুর মনে হয় আজও। তখন কতো শংকা ছিলো মনে -অহেতুক গা ছমছম উত্তেজনা নিয়ে আমি আর সুদেখা এদিকে হাঁটতে আসতাম। সুদেখাকে মনে আছে- ওই যে মোটা পাড়ের শাড়ী পড়ে আসতো- তোমার ক্লাশেই ছিলো---- খোঁপায় বেলী গুঁজে হাঁটতো , চারপাশে মাদকতা ছড়াতো।

তখন তো ফরাসী সৈরভ এত সহজলভ্য ছিলো না আর সুদেখা বরাবরই অন্যরকম। ওর কপালের টিপ আর ওর আভরন সবটাই ওর মতো। জগলুল মুমিন চোরা শ্বাস ছাড়লেন- সুদেখাকে তার বিলক্ষন মনে আচে- তবে এখন ভান করতে হয়- কোন সুদেখা?- ও - ও আচ্ছা মনে পড়েছে - ও তো মাইদুলকে বিয়ে করলো। সৈয়দ আদম জগলুল মুমিনের সামপ্রতিক উৎপ্রেক্ষায় অমনোযোগী। তার নিঃশ্বাসে এখন 21 বছর বয়েসের আবহ।

সেই দেখা- সেই গন্ধ- সেই আবেশে বিবশ এখনও - এখানে সরোবরে শুভ্র সারস খেলে পাখার ঝাপটে আসে দিন রাত ভর জোৎস্নায় ভেসেছে তোমার ঘর স্বপনে শুনেছো তুমি দুরাগত সমুদ্্রের স্বর সুষমার তন্দ্রিত কেশের প্রপাত তুমি কুন্তলে বাঁধলে ফুল ডোরে মৃদু উচ্ছাসে কাঁপে হিয়া ,রঙ্গিন বসন্ত দিন কবিতাটা এখনেই লিখেছিলেন- তারা দুলকি চালে হাঁটছেন এখন-জগলুল মুমিন অবশ্য রমনা রেঁস্তোরার সামনের টেবিলে বসেই এই নগর পিতার পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ সুবিস্তারে প্রকাশ করবেন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বান্দির পুত তোর মায়ে কোন লাং ধরে তোরে আনছে, কথা হুনোছ না ক্যান? মারমুখে জননী প্রতিরোধ করে - হ তোর তো লাগবোই- ভাত দিবার পারোছ না, নেশা ভাং এর টেকা কি তোর মায়ে গতর বেইচ্যা দেয় তোরে? পোলাটারে মারোস ক্যান? ভাত দিবার মুরোদ নাই কিল দেবার গোঁসাই আইছেন আমার। এই ছোড়া চ আমার লগে চ। ডাইনির পোলা আবার যদি ওর গায়ে হাত তুলছোস- ভয়ংকর দৃষ্টি হেনে হনহন হাঁটে মা- পেছনে না দৌড়ে না হেঁটে চলে ছেলেটা। স্মৃতিমগ্নতা থেকে রুঢ় বাস্তবতার ফিরে আসার পর কিছুটা সময় নিশ্চুপ থেকে সৈয়দ আদম আবার কথা শুরু করেন।

তিনি আত্মমগ্ন স্বরে বললেন- সেই শোভন পরিবেশ বুঝি আর থাকলো না। কৃষ্টি আর সংস্কৃতি অভাবের করাল গ্রাসে পঁচে গেছে। সেই আনুনাসিক পঁচে যাওয়ায় কুঞ্চিত নাক যেনো পচনের গন্ধ পায়। আমাদের শিক্ষার ভেতরে গলদ আছে কোথাও। সকালের পবিত্র আলোয় অন রকম একটা মোহ ছিলো, বুঝলে জগলুল, অনেকদিন পর মনে হলো সেই পুরোনো দিনগুলোতে ফিরে গেলাম।

জগলুল মুমিন মনে মনে কৃতজ্ঞ বোধ করেন সেই মেয়েটার প্রতি- তার কথা বলার একটা উপলক্ষ্য তৈরি হয়েছে। সৈয়দ আদম আমিও আসলে ভাবছিলাম তোমাকে বলবো কথাটা। এরাতো রমনা পার্কের প্রাকৃতিক পরিবেশও নষ্ট করছে, লেকটা ময়ালা হয়ে গেলো - আর এই যে গুল্মজাতীয় গাছগুলো, তার পাশে তুমি দাঁড়াতে পারবে না- ভীষন গন্ধ- ওখানে পাবলিক টয়লেট বানানো আছে তবুও এখানেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবে ওরা। আর আমাদের নগরপিতা এদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন, ভীষণ অন্যায়। উদ্যানের প্রবেশ পথে বড় বড় করে লেখা আছে এখানে রাট 10টার পর অবস্থান করা নিষিদ্ধ।

তবুও এদের প্রতি এই ইচ্ছাকৃত উদাসীনতা আসলে আমাদের আইনি দুর্বলটা। সৈয়দ আদম মাথা নাড়েন, ঠিকই বলেছো, এজন্যই বাংলাদেশের এই অবস্থা, লোকজন, প্রশাসন কেউই আইন মানে না। পরিবেশ দুষণের সমস্ত দায়টা তাদের আর ভুক্তভোগী আমরা। আহা, গাছটার গায়ে নির্মম ভাবে লিখেছে LUV U , গাছের চামড়া কেটে প্রেমের কথা লিখেছে পাষন্ড। জগলুল মুমিন পরম আদরে গাছের গায়ে হাত বুলান।

---------- আরও হয়তো আসবে সামনে - তবে নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না- বিব্রত দ্্রোণাচর্য এবং ওয়াহিদুল মুস্তাকিম এর একটা সংলাপ বাতাসে ঘুরছে- আইডিয়া মাশা'র।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.