আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুশীল বঙ্গ সুশীল রঙ্গ ২ ক

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

প্রান্তিক মহাজন চিরকাল মাহাজন ছিলেন না, ছিলেন রাজগুরু, গুরু সংঘের সভাপতি বিব্রত দ্রোণাচর্যের সহপাঠী এবং পরবর্তীতে তার সহকর্মী। তাদের পরিবারে শিক্ষার চল ছিলো- বংশে কায়েত হলেও তার সকল সহোদর- সহোদরাই শৈশব থেকেই স্বরস্বতীর পাশাপাশি লক্ষীর সাধনা করেছেন- বিদ্যানুরাগী পিতার উৎসাহে তাদের এই সাধনা কখনই বাধাগ্রস্থ হয় নি- তাদের সবার প্রথম উপার্জন ছিলো দাদুর মাথার পাকা চুল বেছে দেওয়া- চুল প্রতি ১ পয়সা পাওয়া যেতো- সে সময়েই তিনি চুল কেটে চুলের পরিমাণ বাড়ানোর মহান বিদ্যাটা অর্জন করেন- এবং সেই উপার্জিত অর্থ আবার তারা ভাইবোনদের ভেতরে প্রয়োজনের ভিত্তিতে লেন দেন করতেন- শর্ত ছিলো একটাই এখন প্রয়োজন নাও তবে আমাকে বাড়িয়ে ফেরত দিতে হবে- অবশ্য শেষ বয়সে এসেও তার এই কর্মযঞ্জ অব্যহত ছিলো এবং তিনি যে রাজ্যে বসবাস করতেন সে রাজ্যের অধিকাংশ স্থানেই তিনি এই মাহাজনী ব্যবসার প্রচলন করেছিলেন- তবে শৈশব থেকে শান্ত প্রকৃতির এই প্রান্তিক মহাজন স্বরস্বতীর সাধনায় বিখ্যাত হয়েছিলেন এমনটাই অভিমত সবার- গৈরী সেনের পরামর্শক ছিলেন ভাবগতি চাটুজ্যে- ভাবগতি চাটুজ্যে গৈরি সেনকে কহিলেন অনেক অর্থই তো অপাত্রে দিলেন বাবু, নয় ছয় করে অনেক অর্থ তছরুপ করে ফেললো সবাই- তারা এখন কেউই আপনার দুয়ারে আসে না- তারা আপনাকে স্মরণও করে না-অথচ দেখেন যখনই তাদের প্রয়োজন হয় তখনই এই লোটাটা এই কম্বল বগলে করে আপনার দুয়ারে আসে- এভাবেই সবাই লুটে পুটে খাবে আপনার সম্পদ- ভাবগতি চাটুজ্যের ভক্ত ছিলো অনেকই- তিনি বাক্যে চতুর- স্বভাবে নারদ- বিভিন্ন মানুষের ভেতরে লাগিয়ে দিয়ে তিনি বিমলানন্দ উপভোগ করতেন- এবং পরিশেষে উভয় পক্ষকেই তিনি ডেকে পাঠাতেন- বলতেন- বাছারা এমনটা ঠিক না- হাতাহাতি করা উচিত না- তোমরা হাতাহাতি করছো কেনো- হানাহানিতে স্ব্যাস্থ্য হানীর আশংকা আছে- তবে তোমরা চাইলেই আমার বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কেটে লাঠি বানাতে পারো- এ জন্য তোমাদের সামান্য মূল্য শোধ করলেই চলবে- তিনি ব্যাংয়ের বগলে কাতুকুতু আর সাপের ঠোঁটে চুমু দিতে পারতেন অনায়াসে এবং উভয়েই আনন্দিত হতো- এমনই ছিলেন আমাদের ভাবগতি চাটুজ্যে- দুধেতে সুমিষ্ট পাকা আম হয়ে, পানিতে চিনি হয়ে গলে যাওয়া ভাবগতি চাটুজ্যের সঙ্গ কামনা করতো ছোটো বড় সকলেই- সবার গৃহেই তার সমাদর ছিলো। গুটিকয় উঠতি যুবা ব্যতীত ভাবগতি চাটুজ্যেকে পছন্দ করতেন সবাই- সেই গুটিকয় যুবার দাবি ছিলো সমবায় উন্নয়ন ঘটাতে হবে- প্রান্তিক মহাজন তখনও এসব তেমন কিছুই বুঝতেন না- তবে উন্নয়নপাগল প্রান্তিক মহাজন জুটে গেলেন এই যুবাদের দলেই। একদিন রাজা হুংকার দিয়ে ডাকলেন খাজাঞ্চিকে- রাজকোষে মুদ্রা নেই কেনো? খাজঞ্চি ডাকলেন তহশীলদারকে- কিরে পাপিষ্ট নর্দমার কীট- রাজকোষের অর্থ তছরূপ করো?অবশেষে রাজন্যবর্গকে রাজসভাসদদের ডাকা হলো- এদের সাথে আসলেন রাজসভায় গৌরি সেন, ভাবগত চাটুজ্যে, বিব্রত দ্রোণাচর্য সহ বিশিষ্ট জনদের। কি করিয়া রাজকোষ পূর্ণ করিতে হইবে এ বিষয়ে বিস্তর মত পার্থক্য ছিলো সবার ভেতরেই।

হট্টগোলের ভেতরে প্রান্তিক মহাজন বলিলেন উপায় একটা আছে মহারাজ- তবে তজ্জন্যে রাজকোষের চাবি দিতে হবে আমার হাতে- আর বরখাস্ত করিতে হইবে খাজাঞ্চী আর তহশীলদারকে। গৌরী সেন প্রামদ গনিলেন- রাজকোষাগারের মুদ্রার অধিকাংশই টার হাত গলেই অন্য সবার হাতে গিয়েছে- তার মুষ্ঠি খুললেই স্বর্ণ রেণু-হাত ঝাড়লেই পর্বত- তার দুয়ারে উপস্থিত সকল লোটা কম্বল বন্ধক দিতে আসা সবাইকেই তিনি প্রয়োজনের অধিক সহায়তা দিয়েছিলেন- এ কাজে খাজাঞ্চী আপত্তি জানালে তিনি তার হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন তার কূলীন বংশতালিকা। রাজসভায় তখন জলপানের বিরতি- চিৎকার করে সবার কণ্ঠ শুকিয়ে কাঠ- ভাবগত চাটুজ্যে এ সময় গৌরি সেনে কানে কানে বলিলেন হলো তো এবার- তখন কত বার বারণ করিলাম আপনি কর্ণপাতও করিলেন না- এবার পরিণতি বুঝলেন তো? তবে আপনাকে ভালো একটা পরামর্শ দিতে পারি- পাশের রাজ্যের কোষাগার উপচে পড়ছে মুদ্রায়- সেখানে মুদ্রা রাখবার জায়গা নেই- তারা মুদ্রা রাখবার জায়গা ঝুঁজছে- আপনি চাইলেই আমি তাদের আপনার কোষাগারে অর্থ মুদ্রা রাখবার কাজে প্ররোচিত করতে পারি- তাদের বলতে পারি এখানে মুদ্রা রাখবার জন্য তবে এজন্য আমাকে কথা দিতে হবে আপনি সংশোধিত হবেন- আপনি আমার পরামর্শ মেনে চলবেন। খাজাঞ্চী আর তহশীলদার- তারাও ভীষন চটেছিলেন গৌরিসেনের উপরে- তারাও জলপানের বিরতিতে শলাপরামর্শ করে ঠিক করিলেন গৌরি সেনের বিরুদ্ধে নালিশ জানাবেন রাজার কাছে- তার সকল কাজের ফিরিস্তি দিয়ে এর বিহিত চাইবেন- তবে এর আগে ঐ প্রান্তিক মহাজনের সাথে একটা বোঝাপরা করতে হবে- ডেঁপো ছোকরার সাহস কতো- তাদের বরখাস্ত করবার হুমকি দেয়। বিব্রত দ্রোণাচর্য কিছুি বুঝেন নি- তিনি আজীবন সুশীল সুমতি বালক ছিলেন- হৈ হট্টগোলের ভেতরে তিনি বার কয়েক অনুচ্চ স্বরে অনুরোধও জানিয়েছিলেন- আহা আপনারা এমন করছেন কেনো- শান্ত হউন- আমরা তো হট্টগোল ন াকরেও পরস্পরের কথা শুনতে পারি - শুনে বিবেচনা করে সকলের পক্ষে মঙ্গলজনক কিছু ভেবে বের করে ফেলতেও পারি।

রাজা সিংহাসনে বসে রাজসভার অরাজক অবস্থা দেখছিলেন- পোশাকে পরিপাটি আত্মবিমগ্ন পুরুষটির স্থিতধী তার মনোযোগ আকর্ষন করেছিলো- তিনিও খেয়াল করিয়া দেখিয়াছিলেন হৈ হট্টগোলের ভেতরেও এই সুবোধ পুরুষ সবাইকে নিরত হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ক্ষীন কণ্ঠে। জলপানের বিরতি শেষে সবাই আবারও আলোচনা শুরু করিলো- আলোচনা না বলে একে বিশৃঙ্খল কুচকাওয়াজ বলা চলে- এ তার পা মারিয়ে চিৎকার করছে হুজুর আমার কথা শুনুন- তো অন্যে তকে কানুই দিয়ে ঠেলে সামনে দাঁড়িয়ে বলছে হুজু আমার পরামর্শটা- তো তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আরেকজন বলছে আমাদের অধিকার আছে, আমাদের কথা আপনাকে শুনতেই হবে হুজুর- বিব্রত দ্রোণাচর্য ফ্যাকাশে মুখে আং্গুল পুরে তাকিয়ে দেখছে আর নখ কাটছেন দাঁতে- রাজা বলিলেন "খামোশ বেতমিজের দল"- মুহূর্তে চিত্রবৎ স্থির হলো সব- এখনও ধমকে কাজ হয় ভেবে খানিকটা আত্মপ্রাসাদ অনুভব করলেন রাজা- খানিকটা প্রসন্ন চিত্তে রাজা বলিলেন- এমন অরাজকতা চলতে দেওয়া যায় না- সভায় হৈ হট্টগোল আমার পছন্দ না- যদি এমনটা চলতে থাকে তবে আমি কঠোর ব্যাবসথা নিটে বাধ্য হবো- দুষ্টু গরুর চেয়ে শুন্য গোয়াল ভালো আমার- তিনি কিছু ক্ষণ চুপ থেকে তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া খেয়াল করে বললেন- সবাই নিজস্ব বক্তব্য লিখিত ভাবে পেশ করবে ঐ তার কাছে- এ কথা বলে তিনি দেখালেন বিব্রত দ্রোণাচর্যকে- আমি সবাইকে আশ্বস্ত করছি সবার কথাই বিবেচনা করা হবে= এ জন্য গুরু সংঘ নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ জারি করছি আমি- আর দ্রোণাচার্য হবেন রাজগুরু- তিনি আরও ঘোষণা করিলেন রাজ্যময় ঢেঁরা পিটিয়ে জানিয়ে দাও কিছুই মজুত করা যাবে না গৃহে- এমন কি বীজধানও না- সবই জাম দিতে হবে রাজকোষে। এটাই আমার হুকুম। সভাসদেরা বাসার পথে রওনা দিলো গৌরি সেনের সাথে চললেন ভাবগত চাুটজ্যে খাজাঞ্চীর সাথে তহশীলদার প্রান্তিক মহাজন সভা থেকে কখন নিরবে চলে গেছেন কেউ লক্ষ্য করে নি- প্রান্তিক মহাজনের মাহাজন হয়ে ওঠা কিংবা ভাবগত চাটুজ্যে গৌরীসেন- এবং খাজাঞ্চী তহশীলদারের ভেতরের টানাপোড়েনর বিস্তারিত গল্পটা সবাইকে জানানো সম্ভব হচ্ছে না এ মুহূর্তে- শুধু একটা বিষয় জানাতে পারি- গৌরী সেন আর ভাবগত চাটুজ্যে সফল হয়েছিলেন- পাশের রাজ্য থেকে মুদ্রা এসে জমা হয়েছিলো এ রাজ্যের রাজকোষে- তবে ভাবগত চাটুজ্যের পরামর্শ মেনে চলে গৌরি সেনের হাতে পড়লো সোনার শেকল- পরামর্শগুলো মন্দ ছিলো না- বলা হয়েছিলো যেহেতু মুদ্রাগুলো পাশের রাজ্যে তাই সে রাজ্য থেকেই প্রহরী নিয়োগ করতে হবে রাজকোষে- তারাই রাজকোষ পাহারা দিয়ে রাখবে--প্রহরীদের বেতনও দিতে হবে রাজকোষ থেকে- প্রহরীরা বর্ণান্ধ ছিলো এ ব্যধির কথা কেউ প্রকাশ করে নি কখনই- তারা প্রায়শই ভুল করে বলতো রাজকোষের অধিকাংশ মুদ্রাই দেখি আমাদের- এমন কি কখনও কখনও রাজকোষের অন্যান্য জমাকৃত রাজকরও নিজস্ব রাজ্যের মনে করে তারা সেসবও করায়ত্ব করতো- তবে তাদের এ কাজ থেকে বিরত রাখবার কেউই ছিলো না- কারণ রাজ্যের মুদ্রা তত্ত্বাবধান এবং রাজকোষের নিরাপত্তা বিধানের জন্য অন্য কেউই ছিলো না রাজ্যে- তারাই ক্রমশ সর্বসেবা হয়ে উঠলো এ রাজ্যে- খাজাঞ্চী আর তহশীলদারও নিজস্ব বাণিজ্যিক প্রচারণা শুরু করেছিলেন- প্রান্তিক মহাজন আর তাদের গল্প পরবর্তীতে বলা যাবে- সুযোগ বুঝে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.