অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে কারণ নিম্ন আয়ের মানুষ চিনি খায় না- মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজ
তহবিল তছরুপের দায়ে যখন রাজা পুরোনো খাজাঞ্চিকে বরখাস্ত করিলেন তখন রাজ্যময় ঢি ঢি পড়িয়া গেলো, জনতা সটি বাজাইয়া, চুনকালি মাখাইয়া গলায় জুতার মালা পড়াইয়া হেনেস্থার একশেষ করিয়া ছাড়িলো তাকে-
বহুদিনের পুরোনো খাজাঞ্চির বিদায়ে রাজা মুষড়ে পড়িলেও ভাবিলেন যুগ পালটাইতাছে, নতুন যুগের সাথে তাল মিলাইয়া নতুন শোণিত সঞ্চালন করিতে হইবে রাষ্ট্রদেহে- খোজা খাজাঞ্চি বরং বাধার প্রাচীর হইয়া দাঁড়াইয়া ছিলো উন্নয়নের পথে।
রাজা ভাবিতে বসিলেন ২ যুগের পুরোনো খাজাঞ্চি কত প্রশ্রয় দিয়াছে তাকে, তাহা ছাড়া বিশ্বস্ততায় অনুগত কুকুরের মতো ছিলো, যদিও অবাধ্য সারমেয়ের মতো দৈনিক মাংসের বরাদ্দটা দিন দিন বাড়াইতে হইতেছিলো তাহা ছাড়াও খোজা খাজাঞ্চি পাশের এলাকা থেকে এক ভোলা কুকুরকে আনিয়া আপন সন্তানের মমতায় পালন করিতো- তাহার নানা বায়ানাক্কার টাকাও টাকশাল হইতেই যাইতো- নানাবিধ ভাবনা করিয়া রাজা নিশ্চিত হইলেন তাহার সিদ্ধান্তটি আসলেই যুগোপযোগী ছিলো।
আমিষ বরাদ্দের পরিমাণ আর প্রসাধন বাবদ খরচটা আমলে আনিলে আসলে এ সিদ্ধান্ত রাজ্যের পক্ষে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত বলেই বিবেচিত হইবে- অন্তত রাজকোষের কিছু টাকা অপচয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে- বিষন্ন হলেও রাজা অবশেষে নিজেকে বুঝাতে পারিলেন বিশ্বস্ত কুকুরের মতো পুরোনো খাজাঞ্চিকে বহিস্কার করিয়া আসলে তিনি ভালো একটা সিদ্ধান্তই নিয়াছেন।
তিনি তাহার নানারকমের দোষ আবিস্কার করিতে সচেষ্ট হইলেন- তাহার কথা পরিস্কার বুঝা যাইতো না- তবে তাহার শেষ কথাগুলো নিয়াও তিনি পুনর্বার ভাবিতে লাগিলেন- খাজাঞ্চি বলিয়াছে অর্থ তছরুপের অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট- তিনি সকল কার্য আইন মোতাবেক মহারাজের আদেশেই করিয়াছেন--
রাজারও মনে পড়িতেছে মাঝে মাঝেই দরবারে খাজাঞ্চি তাহার কানে কানে কিসব কথা কহিতেন- তাহার ঝড়ে পড়া এবং অবশিষ্ট দাঁতের উপগলি দিয়া নিঃসৃত বাতাসের গুঞ্জরন কদাচ বুঝিতে পারিতেন তিনি- এবং এই উপগলি দিয়ে যত না শব্দ নির্গত হইতো তাহারও বেশী নির্গত হইতো সঞ্চিত লালা- সে বর্ষণ এড়াইতে তিনি সকল প্রস্তাবেই সায় দিয়াছেন, হইতেও পারে সেই সময়েই খাজাঞ্চি অনুমতি চাহিয়াছিলো-
তবে ক্ষমতায় সে হীন তাই অভিযুক্ত খাজাঞ্চিকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়া সেপাই পেয়াদা তলব করিবেন নাকি নগর রক্ষকের সাথে পরামর্শ করিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহন করিবেন এই দোলাচল কাটাইয়া উঠবার আগে পুরোনো খাজাঞ্চি দরবার ছাড়িয়া চলিয়া গিয়াছিলো।
ইহার পর রাজা রাজয় পূনর্গঠনে ব্রতী হইয়াছেন- তাহার দরবার নতুন করিয়া সাজাইয়াছেন- আকবরের নবরত্ন সভার চাইতে তাহার সভার ঔজ্বল্য বেশী- তাহার সভায় জ্বলজ্বল করিতেছে ১১টি রত্ন।
তবে এই ১১ রত্নের সম্মিলিত ঔজ্বল্যও রাজ্যময় অমানিশা ঘনকৃষ্ণ অন্ধকার দুর করিতে পারিতেছে না- এমতাবস্থায় রাজা ঘনিষ্ট সুহৃদ কোতোয়াল জাহাঞ্গির মুন্সী এবং প্রধান সেনাপতি মইদুল্লাহ বোগদাদীকে ডাকিলেন সগৃহে।
ঢাক ঢুলি সমেত রাজ্য ঘোষণায় প্রকম্পিত হইলো- আজ মহারাজের গৃহে পদার্পন করিবেন মাননীয় সেনাপতি শৈর্যে বীর্যে অনন্য, বিশিষ্ট সমর কৌশলী মইদুল্লাহ বোগদাদী- তাহার সহিত চা চক্রে মিলিত হইবেন দুষ্টের যম শিষ্টের ভগবান জনদরদী কোতোয়াল জাহাঙ্গির মুন্সী-
উৎসুক জনতার ভীড়ে ভরে গেলো রাজগৃহ প্রাঙ্গন- জনতা দেখিলো রাজা বিষন্ন বদনে বসিয়া আছে আর গম্ভীর ভাবে মাথা নাড়িতেছেন- সেনাপতি উত্তেজিত, তিনি ছাদ জুড়ে পায়চারী করিতেছেন- আর কোতোয়াল পাংশু মুখে বসিয়া আছে-
গোধুলী লগনে কনে দেখা আলোয় ফ্যাকাশে কোতোয়াল জনসমক্ষে আসিয়া বলিলেন রাজা নিজ গৃহে অন্তরীণ , রাজ্য শাসনে গাফিলতির জন্য সেনাপতি সর্বসমক্ষে তাহাকে ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দিয়াছেন-
সেনাপতি বলিয়াছেন তিনি নগরীর উপকণ্ঠে সুসজ্জিত সেনাদল রাখিয়া আসিয়াছেন- তাহারা তার আদেশের অপেক্ষায় রহিয়াছে- দুরবীক্ষণে তাহার আঙ্গুলে হেলনের দৃশ্য দেখার অপেক্ষা করিতেছে- তিনি ইশারা করিলেই তাহারা আক্রমন করিবে।
অপেক্ষমান জনতার অবস্থা করুণ, দুর্বল চিত্ত কতিপয় মান্য সাধারণের পরনের কাপড় নষ্ট হইয়া গেলো- অন্যদের অবস্থায় তেমন ভালো নহে- তাহাদের ঘন ঘন তৃষ্ণা এবং ত্যাগের বেগ চাপছে- অনধিক অর্ধ ঘন্টার ভেতরেই প্রাঙ্গন প্রায় ফাঁকা হইয়া গেলো- তবে অতি আগ্রহী যে সকল জনতা তখনও প্রাঙ্গনে ছিলো তাহাদিগের উদ্দেশ্যে প্রধান মসজিদের মিম্বরে চড়িয়া সেনাপতি কহিলেন- আমি অবিলম্বে এই প্রাঙ্গনে সেনা মোতায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহন করিয়াছি, যাহাদিগকে এইখানে অন্ধকার নামিয়া আসিবার পরও উপস্থিত পাওয়া যাইবে তাগাদিগের সকলেরই দেখা মাত্রই গর্দান কাটিয়া ফেলানোর নির্দেশ দিয়াছেন তিনি সেপাহীদের।
আপন গর্দানের মায়ায় সবাই চলিয়া গেলো- ধীরে ধীরে রাত নামিলো রাজ্যময়।
পরদিন সকালে জানা গেলো রাজয়ের খোল নলচা বদলাইয়া গিয়াছে রাতারাতি- নরহরি দত্ত হইয়াছেন ছায়া সরকারের প্রধান- রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করিয়া সেনাপতি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করিয়াছেন রাজ্যে-
কোথাও কোনো অনিময় সহ্য করা হইবে না- রাজ্যজুড়ে ঢোল নাকাড়া বাজাইয়া ফরমান জারি হইলো- প্রজাগণের কণ্ঠ শুকাইয়া গেলো ভয়ে-
প্রথম দিনই ফাতিমা বিবির সাথে সেপাইদের কোন্দল বাধিলো- তাহার অপরাধ শিশুপুত্র গোলাম আলী বাসার সামনের রাস্তায় প্রসাব করিয়াছে- তিনি শিশুপুত্রকে নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হইয়াছেন- বিশাল চামড়ায় বাধানো পুঁথির ধারা উপধারা খুঁজিয়া অবশেষে গম্ভীর মুখে সেপাই কহিলো- ধারা ২১৪ উপধারা ১৭ এর গ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাজপথের আশে পাশের পরিবেশ দুষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হইলো- সাক্ষ্য সমুদয় উপস্থিত সেনা-
পেয়াদা ফাতিমা বিবিকে গারদে আটক করো-
কাজী নিযুক্ত হইয়াছিলেন যিনি টাহার জিহ্বায় কিঞ্চিত জড়তা রহিয়াছে- তিনি সাক্ষ্য তলব করিলেন- মামলার নথি পড়িতে শুরু করিলেন তিনি-
অভিযুক্তা ফাতিমা বিবি
অভিযোগ রাজপথ পার্শস্থ অঞ্চলের পরিবেশ দুষণ
অভিযোগের বিস্তারিত বর্ণনা- সাক্ষীগণের সম্মুখে প্রস্রাবরত অবস্থায় ধৃত হইয়াছে অভিযুক্তা ফা ফা ফাটিমা- তিনি আর পড়িতে আগ্রহী নন- তিনি প্রথম সাক্ষীকে তলব করিলেন- ফৈজু মিয়া তুমি মাননীয় আদালতের সামনে দাঁড়াইয়া ধর্মগ্রন্থ স্পর্শ করা পূর্বক শপথ করিয়া সাক্ষ্য দিতাছো অভিযুক্তা ফাতিমা বিবি রাজপথ সংলগ্ন এলাকা প্রসাব করিয়া দুষিত করিয়াছে?
সাক্ষী আমতা আমতা করিয়া উত্তর দিতে উদ্যত হইলো- মহামান্য কাজী ফাতিমা বিবির বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি দুষণ নিবৃত করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন-
কাজী জড়তাগ্রস্থ জিহ্বায় চিৎকার করিয়া কহিলেন- ট ট টোমাকে যাহা বলা হইয়াছে টুমি টাহার উট্টর দিবে-
ফাটিমা বিবিকে তোমরা কি অবস্থায় দেখিয়াছো?
আজ্ঞে হুজুর এখন যে অবস্থায় দেখছেন তাকে আমরাও তাহাকে সে অবস্থায়ই দেখিয়াছি-
হুমম করিয়া গম্ভীর গর্জন করিলেন কাজী- তিনি কপাল কুঞ্চিত করিয়া কহিলেন- অভিযোগ নিতান্ত গুরুতর, ইহা শুধুমাত্র পরিবেশ দুষণ নহে বরং শালীনতার লঙ্ঘন- দাঁড়াইয়া প্রসাব করা রমনীরা দেশ ও জাতির শত্রু।
তাহাদিগের জন্য২৫২ ধারায় অভিযোগ দায়ের করিতে হইবে- শিষ্টাচার লঙ্ঘন এবং সামাজ বিধি লঙ্ঘনের জন্য আপাতত তাহাকে ৩০০ টাকা জরিমানা এবং এক মাসের আটকাদেশ দেওয়া হইলো- জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হইলো অভিযুক্তাকে-
পরবর্তী অভিযুক্ত দীনু গোয়ালা- টাহার অপরাধ সে তাহার দুধের পাত্রে গরুর বাঁট ধোয়া পানি দিয়াছে- স্বাস্থ্যবিধি ১০৪ এর ৫ নম্বর উপধারার (ণ) অধ্যাদেশ লংঘনের অভিযুক্ত গোয়ালাকে ১ মাসের আটকাদেশ দেওয়া হইলো।
অনধিক ১ সপ্তাহের ভেতরেই বাঁধানো চামড়ার পুঁথির উপরে প্রগাঢ় শ্রদ্ধা জন্মালো সবার- মহা আশ্চর্য কিতাব, তাহার বিধি নিষেদ আর নির্দেশনার সীমা নাই- জগতের সকল কর্ম সম্পাদনের শাস্ত্র সম্মত উপায় লিখিত আছে সেখানে-
চায়ের দোকানে উশখুশ করিতেছিলো একজন, শ্রোতাদের আলোচনার ফাঁকে সে কহিলো- কি অনাছিষ্টি কান্ড বলো হে বাপু, আমার পেত্তিবেশী ছামদুলকে রাজার পেয়াদা ধরিয়া নিয়া গেলো, তাহার অপরাধ ছিলো সে নাকি হাত ধুইয়াছিলো উঠোনের সজনে গাছের গোড়ায়, তাকে ১ মাসের আটকাদেশ দিয়াছে-
পাশ থেকে একজন গলা উচিয়ে বললো দেয়ালে হেলান দিয়া বসিয়াছিলো মোল্লা ছোবান, পরিবেশের নিরাপত্তা বিঘ্ন করিবার অভিযোগে তাহাকে ১৫ দিনের জন্য আটক করিয়া ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদ করিতেছে সেপাহীরা-
বিস্তারিত জানা গেলো, মোল্লা ছোবান দুপুরে বিশ্রাম নিতেছিল রাজপ্রাসাদের বাইরের দেয়ালের ছায়ায়- মাথার উপরে চান্দি ফাটা সূর্য জ্বলজ্বল করে- একটু তন্দ্রামতো লেগেছিলো- সেই জন্যই হয়তো সেয়ালে ঠেস দিয়া ঝিমাচ্ছিলো ছোবান- সেপাই তখনই তাহাকে ধরিয়া নিয়া গেছে-
রাজাকে উত্তর গিরিতে নির্বাসন দিয়া এখন সেনাপতি নিজেই রাজপ্রাসাদে আবাস গেড়েছেন- ছোবানের বিরুদ্ধে অভিযোগ সে রাজপ্রাসাদ ধ্বসাইয়া দেওয়ার হীন চক্রান্তে লিপ্ত ছিলো-
পাশের একজন বলিলো আমার ভাগ্নেকে ২ সপ্তাহের আটকাদেশ দিয়াছে-সবাই ঘাড়ঘুরাইয়া তাকাইলো তাহার দিকে- বক্তা বলিলেন তাহার কোনো অপরাধ ছিলো না- উপস্থিত জনতা বলিলো- অপরাধ ছিলো না বলিলেই হইবে- নিশ্চিত কিছু করিয়াছে সে- বিনা অপরাধে ওরা ১ সপ্তাহের আটকাদেশ দেয়।
পেয়াদারা আসিয়া পড়ায় পাংশু মুখে চায়ের আড্ডা মিয়াইয়া গেলো- ফরমান জারি হইয়াছে, নতুন ফরমান- ইহা দ্বারা সবাইকে জানানো হইতেছে আগামী কল্য হইতে সন্ধ্যা নাবিবার পর কেহই বাতি জ্বালাইয়া মূল্যবান তৈল সম্পদের অপচয় করিতে পারিবে না- তাহা ছাড়াও অভিযোগ রহিয়াছে- কতিপয় অসাধু জনগন চায়ের আড্ডায় রাত্রি কালে বসিয়া সেনাপতির বিরুদ্ধের ঘোঁটা পাকাইতাছে- রাজকীয় গোয়েন্দা সংস্থা এমনটাই জানাইয়াছে-
সেনাপতির বিশেষ স্নেহভাজন হইবার কারণে আস্তাবলের সহিস নইমুদ্দি যোগাযোগ বিষয়ক পরিদপ্তরের বড় কর্তা হইয়াছে- সেই সেনাপতিকে গিয়া বলিয়াছে
তৈলের অভাবে এক্কাগাড়ীগুলোর চাকায় তেল দেওয়া সম্ভব হয় নি- তাহাদিগকে নিয়া রাস্তায় নামিলেই কটু শব্দ উৎপাদন করে-
বাণিজ্য শাখার মহাধাক্ষ্যকের তলব করিয়া সেনাপতি নির্দেশ দিয়াছেন যেনো আস্তাবলে সন্ধ্যা নাবিবার পূর্বেই ২ পিপা উৎকৃষ্ট তৈল পৌছাইয়া দেওয়া হয়-
বাণিজ্যাধক্ষ্য অরুণ চৌধুরি পরবর্তী শুক্র বার প্রধান মসজিদের মিম্বরে দাঁড়াইলেন- খোতবার সময় তিনি কহিলেন জাতির সামনে এক মহা দুর্যোগ উপনীত হইয়াছে- জাতির সামনে আজ মহা সঙ্কট,এই সঙ্কট কালে আমাদিগকে ধৈর্য্য ধারণ করিতে হইবে- জাতির আকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা- এই মহান জাতি আজ মহা সঙ্কট কালে- রাজ্যের ভাঁড়ারে তেল প্রায় শেষ-
এই অবস্থায় আমাদের গাভীরা পুষ্টির অভাবে দুধ দিতে পারিতেছে না- গোয়ালারাও অসহায়- বিশুষ্ক বাঁটে তৈল মর্দনের মতো তেলও অবশিষ্ট নাই তাহাদিগের গৃহে-ঘৃতের অভাবে রাজপ্রাসাদে প্রদীপ জ্বলিতেছে না-
আমরা আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখিয়াছি, চাষিদের নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে পর্যাপ্ত রেড়ী চাষের- রেড়ীর তৈল দিয়াই প্রদীপ জ্বালাবো আমরা- তবে এজন্য আমাদের বেশ কিছু দিন কৃচ্ছতাসাধন করিতে হইবে- ইত্যবসরে আমাদের লক্ষ্য থাকিবে দুঃস্থ প্রজাগণ যেনো চাঁদের আলোতে রাতের সকল কার্য করিতে প্রত্যয়ী হয়- আমাদের অভাব থাকিলেও মহান আল্লাহতা'লা রাব্বুল আলা আমিন তাহার প্রদীপ নিভাইয়া দেন নাই।
ইহার পরে উঠিলেন ছায়া সরকারের প্রধান, তিনি বলিলেন- আজ আপনাদের নিকট করজোড়ে ভিক্ষা প্রার্থণার জন্য দাঁড়াইয়াছি আমি- আমাদের পর্যাপ্ত অর্থ নেই-পররাজ্যের ধনপ্রত্যাশী আমরা নই- আমরা আমাদের মস্তক নোয়াইবো না- আমিও অবস্থার প্রেক্ষিতে ব্যয় সংকোচন করিয়াছি- আপনারা শুনিয়া আনন্দিত হইবেন, মাননীয় সেনাপতি, বর্তমানের রাষ্ট্রবিধাতাও ব্যয় সংকোচনের নিমিত্তে তাহার প্রাসাদ থেকে দুই জন পাঙ্খাচালককে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করিয়াছেন- তিনি সকলের উদ্যেশ্যে বলিয়াছেন এ ক্রান্তি লগ্নে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হইয়া সংকট থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে হইবে- তিনি আপনাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য গভীর ভাবে মর্মাহত-
মাস গেলো- সূর্য উত্তরায়ন থকে দক্ষিণায়নের গেলো= দুর্ভিক্ষ আসলো রাজ্যে-
মাননীয় সেনাপতি কহিলেন এর সকলই অপপ্রচার- বহিরাজ্যের কুৎসায় কর্ণপাত না করিয়া জনগণকে নিবিষ্ট মনে নিজ নিজ কর্তব্য পালনের আহ্বান জানাইলেন তিনি-
শীর্ণ প্রজাকূল অশক্ত হইলেও তাহারা মিম্বরের দিকে তাকাইয়া থাকে যথোপযুক্ত নির্দেশনার আশায়- অবেশেষে একদিন স্বয়ং সেনাপতি উঠিলেন মিম্বরে- খোতবার কালে তিনি কহিলেন-
আমি এবং আমার সভাসদের অবগত আছি যে আপনাদের কেউ কেউ অর্ধাহারে, অনাহারে কালাতিপাত করিতেছেন- আমাদের বিশেষজ্ঞ দল জানাইয়াছে এ সঙ্কট সাময়িক- আসলে এ খাদ্যাভাবের সকল দায় ইঁদুর আর চড়ুইয়ের, ধান মাড়াইয়ের সময় ইঁদুর ধান জমাইয়াছে তাহার গর্তে- আর চড়ুই মাড়াইকৃত ধানের মজুট গড়েছে-
আমাদের বিশেষজ্ঞ দল নিরলস কাজ করিতেছে- তাহারা জানাইয়াছে এ সঙ্কট অচিরেই কাটিয়া যাইবে- আমরা অতিশীঘ্রই ইঁদুর আর চড়ুইয়ের মজুতকৃত ধান নিয়া আসিবো খোলা বাজারে- তখন আর কোনো খাদ্যাভাব থাকিবে না রাজ্যে-
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।