কেউবা তাদের বলেন পরগাছা, কেউবা বলেন ভাল নাপিত। অর্থাৎ সু মানে ভাল আর শীল মানে নাপিত তাতে অর্থ দাঁড়ায় ভাল নাপিত। এই ভাল নাপিত অর্থাৎ সুশীল মানুষদের ব্যাপক প্রভাব এবং তথাকথিত সংস্কার এবং সমাজ (!) হিতৈষিমূক সংগ্রাম নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে। বিশেষ করে ১/১১ পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আলোচিত একটি গ্র“পের নাম হচ্ছে “সুশীল সমাজ”।
এনজিও’র কার্যক্রমের অভ্যন্তরে এবং ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত বিভিন্ন সংস্থার কর্ণধার সুশীলরা এ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ডিসেশন মেকার হিসেবে দিনদিন বিভিন্ন সরকার এবং গোষ্ঠীর উপর প্রভাব বিস্তার করেই চলেছে।
মুখে প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের কথা বললেও তাদের বাস্তবিক কার্যক্রমে কখনো তা পরিলক্ষিত হয় না। বরং দাতা প্রভূদের টাকায় বিলাসবহুল গাড়ী এবং এসি বাড়ীতে এদের বসবাস। দেশপ্রেমের লেশমাত্র তারা বহনকরেন বলে মনে হয় না।
মাঝে মাঝে বিভিন্ন পাঁচতারকা বা চারতারকা হোটেলে এসি রুমে সভা-সেমিনার করে এরা দারিদ্র্যতা দূরীকরণের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনে ব্যস্ত থাকে। অথচ এ সকল সভা সেমিনার কওে বছরে যে টাকা তারা খরচ করে তার ছোট খাট একটা অংশ সাধারণ দুঃখী জণগণের হাতে যদি পৌঁছত তাহলে হয়তো দারিদ্র্যতার কষাঘাতে নিষ্পেশিত এ সকল গরীব লোক কিছুটা হলেও জীবনটাকে সুন্দর করে সাজানোর সুযোগ পেত।
চিকিৎসার টাকার অভাবে মারা যেত না কোন আদম অথবা টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে যেত না কোন কিশোর-কিশোরীর পড়ালেখা।
এনজি’ও আইনের অন্যতম শর্ত হচ্ছে কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে যাওয়া যাবে না। কিন্তু এ কাজটাও আমাদের দেশের কতিপয় এনজিও ব্যক্তিত্ব এবং সুশীল সমাজের সেনাপতিরা সুকৌশলে বিগত নির্বাচনের সময় বিশেষ একটি দলকে সুবিধাজনক মাঠ তৈরিতে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালিয়েছে। এরও পূর্বে ২০০৪ সালে “৩০ এপ্রিলের ডেড লাইন” নামক আন্দোলনে এ দেশের প্রতিষ্ঠিত একটি এনজির কর্মীদের কাজে লাগানো হয়েছিল। ১/১১ পরবর্তী সময়ে দুই নেত্রীকে মাইনাস করে সুশীল সমাজের সেনাপতি ড. কামাল হোসেন জাতীয় সরকারের থিম উত্থাপন করেন।
এ থিম যখন কাজে আসেনি তখন তারা ড. ইউনুসকে নামালেন রাজনৈতিক মাঠে। কিন্তু দেশের মানুষ তা ভালো ভাবে না নেওয়ায় ড. ইউনুস তার গঠিত দল “নাশ” (নাগরিক শক্তি) নিয়ে ইজ্জত বিনাশ হওয়ার পূর্বেই রণে ভঙ্গ দেন। কিন্তু তাতেও থেমে থাকেনি তাদের দৌরাত্ম। সর্বশেষ বিগত নির্বাচনের পূর্বে এই সুশীলরাই প্রত্যেকটি জেলায় “যোগ্যপ্রার্থী আন্দোলনের ” ব্যানারে কনভেনশন করে। টিআইবি তাদের লিফলেটে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ন্যায় একটি বিতর্কিত ইস্যুকে হাইলাইট করেছে।
দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে হিরো বনে যাওয়া টিআইবি প্রধান তো রীতিমত চুন হতে পান খসলে জাতিকে নসিহত করে থাকেন। আবার তিনিই কিনা অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখলকারী ভিত্তিহীন সরকারের নায়ক সেনাপ্রধানের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করে দাঁত কেলিয়ে হেসে ফটো সেশন করেন তখন সত্যি অবাক হতে হয়। এদের দ্বারাই সম্ভব!
২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের এই সুশীলদের এজেন্ডা বাস্তবায়িত হওয়ার পর একটি গ্র“প পর্দার আড়ালে চলে গেছে। বর্তমানে নতুন আরেকদল সুশীলের আবির্ভাব ঘটেছে। তারা বাংলাদেশকে একটি জঙ্গী রাষ্ট হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার হীন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ওয়ালিউর । সর্বশেষ গত ১৬ই এপ্রিল সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালীউর রহমান বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ল এন্ড পার্লামেন্টারি এ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া) আয়োজিত এক কর্মশালায় বলেন, “গত জোট সরকার ২০০১ সাল থেকে সেনা বাহিনীতে ৫% কওমী মাদ্রাসা ছাত্রের স্থলে ৩৫% ভাগে উন্নীত করেছে, যার ফলে সেনাবাহিনীতে জঙ্গীদের উত্থান ঘটতে পারে বলে মন্তব্য করেন। ” উক্ত সেমিনারে তাকে সাংবাদিকরা যখন প্রশ্ন করেন যে, কওমী মাদ্রাসায়তো কোন সার্টিফিকেট দেওয়া হয় না, তাহলে সেনাবাহিনীতে কিভাবে সার্টিফিকেট ছাড়া লোক প্রবেশ করছে? তিনি এ প্রশ্নের কোন সদুত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
সুশীলদের এহেন জয়জয়কার দেখে অনেকে নব্য সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হওয়ার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছৈন। সম্ভবত দেশের এখন সবচেয়ে নিয়ামক গোষ্ঠী হচ্ছে সুশীল সমাজ।
তাই দেশের সেনাবাহিনীর প্রধান হয়েও মঈন উ আহমেদ ইয়া ঢাসা বই বের করে নিজেকে দেশপ্রেমিক হিসেবে উপস্থাপনের আড়ালে সুশীল সমাজের একজন হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিংবা হাসান মসহুদ দুদকের দায়িত্বে থাকার সময় সুশীল সমাজের তল্পাবাহী একটি পত্রিকা অফিসে প্রত্যেক সমপ্তাহে একবার না গেলে যেন ভাত হজম হতোনা। তাইতো তার পদত্যাগে (অনেকে মতে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে) ঐ পত্রিকা যারপরানায় সরকারকে একহাত নিয়েছে।
সুশীলদের এই দৌরাত্ম যতদিন থাকবে ততদিন স্বাধীন সার্র্বভৌম দেশের গণতন্ত্র ঠিক সেভাবেই অবহেলিত হবে যা দেখা গিয়েছিল ১/১১ এর সময়ে। কিংবা র্যাব যখন শত শত গডফাদারকে শাস্তির আওতায় এনে ক্রস ফায়ারে ফেলেছিল তখন তারা “মানবাধিকারের” লঙ্গন দেখে অথচ সেই সন্ত্রাসী যখন একজন নিরীহ লোককে ২০ টুকরা করে তখন তাদের চোখে তা মানবাধিকারের লঙ্গন নয়।
সুতরাং সুশীল হইতে সাবধান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।