আপডেট। আপগ্রেড। লাভ হোয়াট ইউ ডু। ডু হোয়াট ইউ লাভ।
এইরকম পাঁচটা বিষয়ে খুঁজে বাহির করা মুশকিল যেগুলির উপর আমার খুব একটা জানাশোনা আছে, কেউ একজন একটাকিছু জিজ্ঞাস করলে আমি চোখমুখে গভীর একরকম চিন্তার ছাপ ফুঁটিয়ে টেবিলে কলম ঠুঁকতেঠুঁকতে একপাশে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকি, দেখে মনে হতেই পারে চিন্তাভাবনাগুলি মুখে আনার আগেআগে মাথার ভিতর নাড়াচাড়া করে দেখে নেয়া হচ্ছে এখুনি খুব কোন জমকালো দর্শন-তত্ত্ব ইত্যাদি দিয়ে বোঝাই একটাকিছু বলা হবে, আসলে জিনিসটির বিষয়ে আদৌ কিছু জানা আছে কি নাই থাকলে সেটি কি, দেয়ালের রং সাদা কেন সেইটা আকাশি হলে ভালো লাগতো- মাথার ভিতর এইরকম ব্যাপারগুলি চিন্তা করে দেখা হচ্ছে! বিশ্ব পরিবেশ দিবসের বিষয়টিও জানা ছিল না- যার কাছে প্রথম জেনেছি তার সাথে আলোচনা হচ্ছিল ভূত নিয়ে, তার বক্তব্য ভূতের ওজন নাকি ২১ গ্রাম এইরকম একটি কথা প্রচলিত আছে, শুনে আমি হতাশমতো হয়ে যাই- আমি হালকা পাতলা মানুষ নিজের ওজন ২১ গ্রাম হয় কি-না সন্দেহ- ভূতের পর্যন্ত ওজন আমার চাইতে বেশি! এই বন্ধুটির সাথে কথা বলতে বসলেই কিসের কথা কিসে গিয়ে শেষ হয় হদিস করা মুশকিল; কোন একবার পাঙ্গাস মাছ নিয়ে শুরু করা কথা দেশের অর্থনৈতিক খাতে গিয়ে শেষ হয়েছে; ভূত নিয়ে আলোচনাও যে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে গিয়ে শেষ হবে এটিতে তাই অবাক হওয়ার মত বেশি কিছু থাকে না! বন্ধুটি পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রথমপ্রথমেই যেটি বলল সেটি হল, চোখ বন্ধ করে পৃথিবীর কথা চিন্তা করলে সবার আগে যেই জিনিসটার কথা মনে পরে সেটি কি?
আমি চোখ বন্ধ করে একটুসময় চিন্তা করে বলি, কমলার কথা।
কমলা খেতে ইচ্ছে করছে- কমলা খাব।
আমি কমলা আনতে কোথায় যাচ্ছি বন্ধুটি তাড়াতাড়ি থামিয়ে দিয়ে বলল- খাবার না একজন মানুষ কল্পনা কর। পুরো দুনিয়া একটা মানুষ হলে দেখতে ঠিক কিরকম দেখাতো?
আমি একটুসময় চোখ বন্ধ করে থেকে বলি, একজন যুবতী মেয়ে যার চোখ দুইটা একটু টানা, সুডৌল গালে হাসলে টোল পড়ে, নাকটা...
বন্ধুটি তাড়াতাড়ি থামিয়ে দিয়ে বলল আমারও প্রথমপ্রথম ঠিক এই রকম একজনই চোখে ভেসেছে অস্বীকার করছি না। আমাদের পৃথিবীর শুরুর দিকে আসলেও এইরকম একটা অষ্টাদশী মেয়ের মতোই সুন্দর ছিল- কিন্তু এখন আর নাই! এখন পৃথিবীর কথা মনে করলে যে মানুষটা চোখের সামনে ভেসে উঠার কথা সে একজন চামড়া ঝুলে যাওয়া বয়স্কামানুষ- যার শরীরের জায়গায় জায়গায় নানানরকম ক্ষত। এবং পৃথিবীর এই অবস্থা হওয়ার জন্যে আমাদের নিজেদেরই দায়।
পরের বড় একটাসময় ধরে সে পৃথিবীর পরিবেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে যে আট-নয় মাইল লম্বা বক্তব্য দিল সেটি শুনে উঠে আসার সময় আমার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসার একটা অবস্থা; চারপাশের সবকিছুর দিকে ভয়েভয়ে তাকাতে থাকিঃ দুনিয়াটাকে এর আগে তো এত ভয়ানক মনে হয় নাই- এখন যেই দিকেই তাকাই ভয়ের উপাদান পাওয়া যেতে থাকে! পুরো বিষয়টুকু চিন্তা করলে দেখা যায় বন্ধুটি আসলেও ঠিক; আমাদের চারপাশের পরিবেশটুকু যদি সত্যিসত্যিই একটা মানুষ হত সেটির জন্য বন্ধুটি যে উদাহরন টেনে সেটির সাথে অমত করার কোন উপায় নাই!
৫ই জুন গেল বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ম্যাজিক বিষয়টির উপর ছোট থাকতেথাকতেই আমার বড় রকম একটা উৎসাহ; ৩ইঞ্চি টুপি সেটির ভিতর থেকে ম্যাজিশিয়ানরা কিকরে কিকরে খরগোশ-কবুতর বাহির করে আনে আবার মানুষের শরীর কাটিকুটি করে জোড়া লাগিয়ে দেয় এই জিনিসগুলি চিন্তা করে আমি হদিস করতে পারিনা; কিন্তু সবচাইতে বড় ম্যাজিক যেটি সেটি হলো আমাদের প্রকৃতিঃ প্রকৃতি বা পরিবেশ জিনিসটি লাখ লাখ বছরের বিবর্তনের ভিতর দিয়ে এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়া হয়েছে যেখানে পুরো জিনিসটুকু একটি বিশাল জিগ্স’ ধাঁধাঁর মতো- অনেক কয়টা উপাদান একটি আরেকটির সাথে জোড় বেঁধে পুরোটুকু দাঁড়া করিয়েছে- পুরোজিনিসটির উপাদানগুলির একটির আরেকটির সাথে সম্পর্ক নাই একটিদু’টি উপাদানে গোল দেখা গেলেই পুরো বিষয়টুকুতেই গোল বেঁধে যায়! মানুষের সভ্যতা যত এগিয়ে পরিবেশের উপাদানগুলিতে গোল বাঁধার এই বিষয়টি নিয়ম করেই ঘটেছে; পরিবেশ বিষয়টি তাই এখন মোটামুটি এলোমেলো একটি জিগ্স’ ধাঁধাঁর মতো এর যেই জিনিসগুলি যেভাবে থাকার কথা যেই ঘটনাগুলি যেভাবে ঘটার কথা তার অনেকগুলিই সেইখানে নাই এবং সেইভাবে ঘটছেনা!
এই উপাদানগুলির ভেতর পানি- বাতাস-বনভূমি-জীবজন্তু এগুলি কয়েকটি। বনভূমি দাঁড়া হয় গাছ দিয়ে, গাছেদের সকাল বিকাল নয়টা-পাঁচটা অফিস নাই, তার একজন আরেক জনকে মারার জন্যে গুলি হাতবোমা আবিস্কার করে না, তাদের নিজেদের ভেতর মারপিট করারও কোন রেকর্ড নাই; কিন্তু মানুষ তাদের নির্বিচারে কাটিকুটি করে ফেলছে; সেটিতে আপত্তি করার বেশি উপায় নাই- তারা সেটি করছে নিজেদের প্রয়োজনেই, কিন্তু সেটি করা হচ্ছে যে গানিতিক হারে- বিপদের বিষয় সেটিই। পরিসংখান বলে দুনিয়ায় প্রতি মিনিটে ষাট একরের মত বন ধ্বংস হচ্ছে। আম্মারা যেমন ছেলেপুলের মুখে ভাত গোঁজা করে দিতে থাকেন তারা মুখ আঁকাবাঁকা করে না খাওয়ার জন্যে চেচিঁয়ে দেয়ালের চুনকাম পাতলা করে দেয়- বায়ুমন্ডলের বিষয়টিও একটুএকটু সেইরকম- মানুষ কার্বন-ডাই-অক্সাইড নামের গ্যাস দিয়ে সেটিকে বোঝাই করে ফেলছে এবং সেটি চিৎকার চেচাঁমেচি করে বলার চেষ্টা করছে সেটির পক্ষে এর চাইতে বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড নেয়া ঠিক না, কিন্তু মানুষের সেটি শোনার উপর বেশি উৎসাহ নাই! কচ্ছপ-ঈগল-মেরুভল্লুক-তিমি এগুলির নিশ্চয়ই আমাদের সাথে মুকাবিলা করার জন্যে ট্যাংকগাড়ি যুদ্ধ বিমান এগুলি নাই- এবং সেটি বড়রকম একটি স্বস্তির ব্যাপার- কারন করা গেলে তারা নিশ্চয়ই সেটি করতোঃ এই নিরীহ জীবগুলি যে বিলুপ্তির পথে একটুএকটু করে এগিয়ে যাচ্ছে সেটির পেছনে আমাদের মানুষদের যে বড় একটি ভূমিকা আছে সেটি অস্বীকার করার উপায় নাই! সাগরে ফেলা বর্জ্যরে কারনে বৎসরে লাখখানেক সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী, মিলিয়নের কাছাকাছি সমুদ্রের মাছ খেয়ে বেঁচে থাকা পাখি, অগণিত সামদ্রিক মাছের মৃত্যু হয় তথ্যটুকু বেশ একটু বিচিত্র শোনায়; “তুষারকন্যা” রূপকথার কাহিনীতে একটি আয়না দেখা যায় যেটির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলে সেটি পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর নারীটির নাম বলে দিত- পৃথিবীর সবচাইতে ভয়ংকর জীব কোনটি জানার এই রকম কোন আয়না নাই; থাকলে সেটিকে মানুষের নাম উত্তর করত সেটি নিয়ে কোন সন্দেহ নাই!
একটি ব্রেকিং নিউজ।
গোপনীয়তার স্বার্থে স্থান প্রকাশ করা সম্ভব না উত্তর আমেরিকার এই রকম একটি ভূগর্ভস্থ গবেষনাগারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মে মানুষদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের একটি বিষয় নিযে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ সময় ধরে গবেষনা চালাচ্ছিলেন; দিন দুই আগে তারা বিষয়টিতে সফলতামতো পেয়েছেনঃ ভবিষ্যৎ প্রজন্মে মানুষেরা যে বিচিত্র সাংকেতিক বার্তাটি পাঠিয়েছে সেটির অর্থ দাঁড়া করিয়ে যেটি দেখা গেল সেটি এই রকমঃ দূষণের কারনে অনেক আগেআগেই স্থলভাগ বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে; মানুষ এখন সাগরের নিচে কৃত্রিম সভ্যতা নির্মান করে বাস করছে; স্থলভাগের কিছু ত্রিমাত্রিক ছবিও কিছুক্ষনের ভেতর পাঠানো হয়- সেগুলি দেখেদেখে বিজ্ঞানীদের গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাওয়ার অবস্থা!
রসিকতা। এই রকম কিছু ঘটেনি, কিন্তু পরিবেশ দূষনের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করা না গেলে মানুষের জন্যে সুদূর ভবিষ্যতে যে এই রকম একটা কিছুই অপেক্ষা করে নাই। সেটি নিশ্চিত করে কে বলতে পারে!
এরকম একটা কিছু হওয়া থেকে পৃথিবীকে বাঁচানো কিভাবে সম্ভব? বড়বড় সাংগঠনিক উদ্যোগ নেয়ার জন্যে আশি-নব্বই কেজি ওজনের মাথার অনেক মানুষ আছেন, আপনার আমার মত সাদা পাতলা মানুষ কি করতে পারে? নিজের কাছে নিজে উত্তর করুন এই রকম কাজ আপনি করেন যেগুলি পরিবেশের জন্যে ক্ষতির কারণ সেগুলি কি? আপনার যেই যেই জিনিসগুলি ব্যবহার করে অভ্যাস সেগুলির ভেতর ক’টা বন্যপশুর চামড়া থেকে দাঁড়া করোনো? এই চামড়া গুলি নিশ্চয়ই ছাপাখানায় প্রিন্ট করে বাহির করে আনা হয় নাই, সেগুলি এসছে একটা হাঁটা-চলা করে বেড়ানো জ্যান্ত জীবের গাঁ থেকে। সেটি নিশ্চয়ই আলুথালু পায়ে ঘুরঘুর করা দুই চারটা বাচ্চা আছে যেইগুলি মানুষের মত একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরতে পারে না- আম্মা আব্বার গায়ে গা ঘষেঘষে ভালবাসার বিষয়টুকু প্রকাশ করে! আপনার নিজের ছেলে নিজের মেয়ের জীবনে কি কি হওয়ার পাওয়ার ইচ্ছা সেইগুলির লম্বা তালিকা নিশ্চয়ই করা আছে- এই বাচ্চা গুলির সেই রকম কিছু নাই; বনের খাদ্য-পিরামিডের জটিল জগতের ভেতর এদের পুরোপুরি নিজের বলতে কেবল এই আব্বা আম্মা- তাদের কাছ থেকে এই আব্বা আম্মাকে সরিয়ে এনে এই চামড়া আসে। এই জিনিসগুলি কিনবেন না।
রাতে কাজের শেষে বন্ধ না করেই কম্পিউটার খুলে রেখে ঘুমিয়ে অভ্যাস? দয়া করে সেটি বন্ধ করে ঘুমোন। হপ্তায় একটা দিন খাওয়ার বিষয়টুকু নিরামিষের উপর দিয়ে চালিয়ে নিয়ে খুব কি অসুবিধে? একটি এলুমিনিয়ামের ক্যান রি-সাইকেল করে যেইটুকু শক্তি উৎপন্ন হয় সেটি দিয়ে একটি টেলিভিশন তিনঘন্টা চালানো সম্ভব- এটি জেনে আমি নিজেও বিস্মিত হয়ে ছিলাম একটু। বেশি দূরে নয় এই রকম একটা কোন জায়গায় গাড়ি চালিয়ে যাওয়া খুব কি দরকার? হেঁটে যান? আপনার নরম ঠোঁটের ওপর যে লিপস্টিকটুকু মাখান কিংবা মুখে যে প্রসাধনী- সেগুলো তৈরির পেছনে কি পশুজ কোন দ্রব্যের ব্যবহার হয়? আমি একটি প্রসাধনীর নাম জানি যেটি আপনার মুখকে প্রায় সমান সুন্দর রাখবে। এবং এটি দাম দিয়ে দোকান থেকে কিনে আনা লাগেনা। আপনার হাসি।
গাড়ির চাকা ফুটো হয়ে গেলে যেই রকম নূতন চাকা দিয়ে সেটি পাল্টে নেয়া যায় আমাদের কাছে নিশ্চয়ই সেরকম একটি আলগা দুনিয়া নাই; তাই পৃথিবীর যেটিতে আমরা বাস করছি সেটিকে রক্ষা করা আমাদের নিজেদেরই দায়। পরিবেশের উপর বড় বড় স্লোগানগুলি টি-শার্টের চাইতে টি-শার্টের পেছনে যে বুক সেটিতে ধরে রাখা বেশি জরুরী। বড়বড় প্রতিষ্ঠানগুলি অনেক কয়টিতেই সামনে কাঁচে ঘেরা বাক্সমত একটি জিনিস থাকে সেটির ভেতর আগুন নেভানো যায় এই রকম পদাথ দিয়ে ভর্তি সিলিন্ডার, সামনে গুটিগুটি লেখাঃ ‘ইমার্জেন্সী পরিস্থিতিতে ব্যবহার করুন’। জরুরী পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা যায় এই রকম একটি দরকারী জিনিস আমাদের ভেতরেও আছে- সেটি হল একতা; বড়বড় বিপর্যয় গুলির ভেতরেও আমরা মানুষেরা এই জিনিসটিকে খুব যতেœর সাথে ব্যবহার করে টিকে গেছি; পরিবেশকেও টিকিয়ে রাখার জন্যে এই দরকারী জিনিসটিকে বাক্স ভেঙ্গে নূতন করে বাহির করে আনার সময় হয়েছে।
কারন এখনকার সময়টুকু আসলেও একটি “ইমার্জেন্সী”।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।