পরাঞ্জয়ী... হিয়া আজকাল প্রায়ই জিন্স আর চেক শার্ট টা গায়ে গলিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। মা মারা যাবার পর থেকেই এমন হয়ে গেছে সে। নুহাশের সাথে ডিভোর্স হয়েছে বাচ্চাটা মারা যাবার পরই। সমস্ত যুক্তি তর্ক কে ছাড়িয়ে হিয়ার বদ্ধমূল ধারণা " অমির (হিয়া নুহাশের ছেলে) মৃত্যুর জন্য নুহাশই দায়ী! সেই রাতে সময় মত বাসায় ফিরলে অমি হয়ত বেঁচে যেত! যে সন্তান পৃথিবীর মুখ দেখেনি তার নামেই নুহাশকে জীবন থেকে বিদায় দিয়ে দিল হিয়া। নুহাশ শেষ চেষ্টা হিসেবে বলেছিল "হিয়া, একটাবার ভেবে দেখ"।
প্রথমবারের মত একটা ইংরেজী শব্দের ব্যবচ্ছেদ করেছিল হিয়া "ফাক অফ!" সেই থেকেই জীবন থেকে নিজেকে ফাঁক করে ফেলছে নাকি জীবনটাকেই ফাক (fuck) করে যাচ্ছে সে খবর না ঐ ঈশ্বর জানেন না পৃথিবীর কোন জীবিত জীব! সোজা সাপ্টা জীবনে বিশ্বাসী একটা মেয়ে কেমন করে যেন চরমপন্থি সন্ত্রাস জীবন বেছে নিল। হিয়ার বাবা জাফর সাহেব দেখেন আর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। তিনি জানেন এই যে নদীটাকে সবাই মিলে পাথর মেরে খরস্রোতা বানিয়েছে তাকে আর সামলানো যাবেনা। সে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে, নিজেও ভেসে যাবে!
বাসা থেকে নীচে নামতে নামতে সিঁড়ি তে শুনলো তিনতলার মহিলাটা সামনের ফ্লাটের মহিলাকে বলছে " ও যে কি পরিমান খেয়াল রাখে আমার। ৭ মাস চলছে।
আমাকে একটাদিন কোন কষ্ট পেতে দেই নাই রাব্বি। আমার বাচ্চাটা খুব লাকি ভাবী!" হিয়া আজকাল জিরো টলারেন্স লেভেলে থাকে সবসময়। কিংবা এভাবেও বলা যায় যে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করার কোন চেষ্টাই সে করেনা। নিজেকে সামাজিক জীব হিসেবে পরিচয় দিতে ঘেন্না লাগে তার এখন। এই সামাজিক জীবগুলাই প্রত্যেকদিন অকথ্য সব অসামাজিক কাজ করে বেড়ায় আর সমাজের অবক্ষয় নিয়ে বড় বড় কথা বলে নিজের মুখটাকে হাই কমোড বানিয়ে ফেলে! ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনতলার সাত মাসের অন্তসত্বা মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বলে "ফ্রিকিং শিট, জানিস তোর লাকি বাচ্চার ভাল বাবা রোজ বাইকে একটা সুন্দরীকে চড়াইয়া টি এস সি এলাকায় ঘুরে বেড়ায়, আর সন্ধ্যার পর চুমাচুমি কইরা ১৮+ বডিস্প্রে আর ভিক্টরিয়াস সিক্রেটের গন্ধ এক কইরা ফালায়? যা এখন ঘরে গিয়া বালিশ চাইপা কান গিয়া! শালি, জীবনভর তোরা নিজেই নিজেগোরে ঠকাস, প্রবঞ্চনা করস, আর নারী মুক্তির জন্য প্ল্যাকার্ড লেখস! হিপোক্রাইট এর দল!" এমন একটা প্রচন্ড ধাক্কার জন্য অপ্রস্তুত দুই মহিলাই হা করে তাকিয়ে থাকে হিয়ার মুখের দিকে! এ কি মেয়ে নাকি ঝড়?!
হিয়ার চোখের সামনে তখন ভয়ংকর সেই দৃশ্যগুলো ভেসে ওঠে।
নুহাশ ভীষণ ভালবাসত হিয়া কে, বাচ্চাটার জন্যেও তার ছিল ভয়ংকর আকাংখা। কিন্তু যখন থেকে হিয়ার শরীর আস্বাদনের অযোগ্য হয়ে পড়ল, নুহাশের সে কি তৃষ্ণা! যন্ত্রনা দুজনেরই হয়েছে। হিয়ার শরীরের যন্ত্রণা শরীর থেকে শরীরে ছড়িয়েছে, আর নুহাশের যন্ত্রণা ব্রেইন থেকে শরীরের একটা নির্দিষ্ট অঙ্গে বদলি হত। সে যন্ত্রণা কমাতে নুহাশ বাথরুমে ঢুকত। হিয়া শুধু অবাক হত! আর ভাবত "ভাগ্যিস এ যন্ত্রণা মেয়েমানুষের নেই, এই ভাল আছি, কোমর ব্যাথা, বুক জ্বালাপোড়া, শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যাথা নিয়ে! এই ভাল আছি" তারপর পেটের উপর ডান হাত বুলাতে বুলাতে বলত "অমি সোনা, তুমি কবে আসবে? গান শুনবে?" তারপর গলা ছেড়ে গাইত "ভালবাসি, ভালবাসি-----এই সুরে, কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায়---বাজায় বাঁশি----- ভালবাসি ভালবাসি"।
ওর গোলাপি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ত এক ফোটা রক্তাভ জল! বাস্তবে আসলেই এই গানটা যে কতটা অযৌক্তিক তা ঐ রবীন্দ্রনাথ বুড়ো ভামটা জানত না। সে জানত না যে, যত্র তত্র যে কোন পরিস্থিতিতে ভালবাসার কথা গাইতে সুন্দর, শুনতে সুন্দর কিন্তু ভালবাসতে? বুল শিট!
হিয়া হাঁটতে থাকে আনমনে। পথ জানা আছে, গন্তব্য জানা নেই! ট্রাফিকপুলিশকে "রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ" সাইনবোর্ড ঝুলানো রাস্তায় রিকশা ঢুক্তে দেয়ার অনুমতি দিয়ে রিকশাওয়ালার কাছ থেকে পাঁচ টাকা নিতে দেখে মনে মনেই সে বলে ঊঠে "এ্যসহৌলস, ইউ পিপল শ্যুড বি ফাকড আপ!" ষাটোর্ধ রিকশাওয়ালার কাছ থেকে ৩০ বছরের জোয়ানকে ঘুষ নিতে দেখে হিয়ার ইচ্ছা করে ছুটে গিয়ে ওর পুরুষাঙ্গে একটা লাত্থি দিয়ে বলে "শালা, দিনে দুপুরে চুরি করস লজ্জা নাই তোদের? ভিক্ষা করতে পারিসনা?" ক্ল্যাসিক সিঙ্গার হিয়া এখন মেটাল ফ্রিক! সামান্য কথায় যে বলত "ছিহ, অসভ্য কথা বোলনা"। সেই হিয়া এখন মনে মনেই সই, অকথ্য গালি দেয়! জীবাণুরা ছড়িয়ে পড়েছে। চারদিকে ম্যাগোটস কিলবিল করছে।
সমাজটা পুরোপুরি পচে গেলেই আক্রমণ করবে ওরা। কুরে কুরে খেয়ে শেষ করে ফেলবে। একটা ফসিল হয়ে পড়ে থাকবে সামাজিকতায় আবধ্য এই সভ্য দেশটা! এই জীবাণু গুলো একদিনে ছড়ায়নি। বংশানুক্রমে ছড়িয়েছে। হিয়ার বাবা পেয়েছিলেন তার বাবার কাছ থেকে।
সভ্য সমাজ থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি জীবানুর সংখ্যা বাড়িয়েছেন, জন্মসূত্রে সেই জীবাণু এসেছে হিয়ার কাছে, হিয়ার থেকে হিয়ার সন্তান এমন একটি চক্রে এই সমাজটায় পচন ধরেছে। পচে গেছে সব - আগা, গোড়া, ডালপালা সব!
মেজাজটা কেমন যেন গরম হতে হতে তাঁতিয়ে উঠছে আজ। কেন হচ্ছে জানেনা সে। হয়ত গতরাতে বাবার বলা কথাগুলো মাথা থেকে যায়নি এখনও "কেন জিদ করছ? জীবন তো এভাবে চলবেনা। একা একা বাঁচা যায়না! তুমি কি তোমার মায়ের মত গণ্ডমূর্খ মেয়েমানুষ? যুক্তি বোঝনা? ইমোশন নিয়ে কেন চলছ?" হিয়া ক্ষেপে বুনো শাড়ের মত হয়ে গিয়েছিল তারপর চুল ঝাঁকিয়ে বলল "আমার মা গণ্ডমূর্খ বলেই তোমার মত একজন স্বার্থপর আর নিম্নশ্রেণীর মানুষের সাথে ৩৩ বছর কাটিয়েছে! আমি হলে ৩৩ দিনও কাটাতাম না, এখন বের হয়ে যাও আমার ঘর থেকে!" হঠাত হিয়ার কান্না পায়।
কিন্তু চোখ দুটোকে শাসায় "নো, নো, ইঊ টু উইল বি পানিশড, ডোন্ট!" তার জন্ম না নেয়া অমি সোনার জন্য আবারো কান্না পায় তার, এবার কাঁদে সে! বসে পড়ে রাস্তার আইল্যান্ডে। প্রথমবার বলে ওঠে আনমনে "বাবুসোনা, আমাকে নিয়ে যাবে তোমার কাছে?"
পাশ দিয়ে চলতে থাকা অভিজাত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজাত ছেলেরা আওয়াজ করতে থাকে "একা নাকি সুইটি?"...........................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।