কল্পনা করুন এমন একটি হাসপাতালকক্ষ, দরজার হাতল বা রান্নাঘরের তাকের কথা; যেখানে একটিও ব্যাকটেরিয়া নেই। সেখানে জীবাণুনাশক বা ফুটন্ত পানি বা বিশেষ কোনো ওষুধ ছিটানোর প্রয়োজনও পড়ে না; এমনকি রাতে একটাও তেলাপোকা ঘুরে বেড়ায় না। সত্যিই কি এমনটা সম্ভব?
এই ভাবনা এবং প্রচেষ্টা থেকেই অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা একটি চমকপ্রদ উদ্ভাবন আমাদের সামনে হাজির করেছেন। নেচার কমিউনিকেশনস সাময়িকীতে গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বামনপ্রযুক্তি (ন্যানোটেকনোলজি) ব্যবহার করে তৈরি একটি বিশেষ পৃষ্ঠতল ব্যাকটেরিয়াজাতীয় অণুজীবকে সরাসরি মেরে ফেলতে পারে। একটি ফড়িংকে দেখেই এই উদ্ভাবনের ধারণাটি গবেষকদের মাথায় এসেছিল।
জীবাণু হত্যাকারী পৃষ্ঠতলটি কালো সিলিকনের তৈরি। এটি ১৯৯০-এর দশকে ঘটনাচক্রে আবিষ্কার করা হয় এবং এখন বস্তুটিকে সৌরপ্যানেলের জন্য একটি সম্ভাবনাময় অর্ধপরিবাহী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বৈদ্যুতিক অণুবীক্ষণযন্ত্রে (মাইক্রোস্কোপ) এই পৃষ্ঠতলটিকে অতি সূক্ষ্ম (৫০০ ন্যানোমিটার লম্বা) সুচালো কাঁটায় (স্পাইক) পরিপূর্ণ দেখায়। আর এটির কোষীয় দেয়ালের সংস্পর্শে যেকোনো ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। বিজ্ঞানীরা এই প্রথম পানিনিরোধী কোনো পৃষ্ঠতলের সন্ধান পেলেন, যেটি ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে পারে।
মেলবোর্নের সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির গবেষক এলেনা ইভানোভার নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী গত বছর ডাইপ্ল্যাকোডস বাইপাংকটাটা প্রজাতির ফড়িংয়ের ডানায় ব্যাকটেরিয়ানাশক উপাদানের সন্ধান পেয়েছিলেন। তাঁরা ওই ফড়িং নিয়ে গবেষণা চালিয়ে দেখেন, ব্যাকটেরিয়ানাশক উপাদান আসলে পতঙ্গটির ডানার কোনো জৈবরাসায়নিক পদার্থ নয়, বরং সেখানকার ‘ন্যানোপিলারে’ লুকিয়ে রয়েছে। ফড়িংটির ডানায় রয়েছে কালো সিলিকনের চেয়েও সূক্ষ্ম স্পাইকের সমাহার।
বিজ্ঞানীরা কালো সিলিকন ও পতঙ্গের ডানার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখেন, জীবাণুনাশে এদের সামর্থ্য প্রায় সমান। মানুষের কাছে এই কালো সিলিকনের পৃষ্ঠতল মসৃণই মনে হয়।
এটি উপকারী ও ক্ষতিকর—উভয় ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও এককোষী প্রাণী ধ্বংস করতে পারে।
প্রতি বর্গসেন্টিমিটারে প্রতি মিনিটে প্রায় সাড়ে চার লাখ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার প্রমাণ দিয়েছে এই কালো সিলিকন পৃষ্ঠতল। এটি তৈরির খরচ কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ালেও ন্যানো-স্কেল জীবাণুনাশক পৃষ্ঠতল তৈরির আরও কয়েকটি পদ্ধতি প্রয়োগ বিজ্ঞানীদের হাতে রয়েছে। কৃত্রিম ব্যাকটেরিয়ানাশক ন্যানো-বস্তুও একই ধরনের কার্যকারিতা দেখায়। যেকোনো সময় এটি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
এএফপি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।