আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সৃষ্টিকর্তা

চন্দ্রিমা সেন গুপ্তকে তো আপনারা সবাই চেনেন। সুরের ভুবনে যতগুলি নাম আছে চন্দ্রিমা তাদের মধ্যে অন্যতম। শিল্পী হিসেবে সে দেশ বরেণ্য। মঞ্চে উঠলে হাজার দর্শক তাকে করতালি দিয়ে অভিবাদন জানায়। মুখরিত জনতার চোখ কেবল চন্দ্রিমা সেনগুপ্তার দিকে।

এমন কোন প্রডাক্সান নেই যে চন্দ্রিমাকে নিয়ে প্লেব্যাক করেনি। করবে না কেন? চন্দ্রিমাকে নিয়ে প্লেব্যাক করা মানে রাতারাতি শীর্ষস্থানে উঠে আসা। মানুষের চাওয়ার সব কিছুই মানুষ পায় না। সবার জীবনে একজন প্রিয় মানুষের প্রয়োজন যার সাথে সুখ দুঃখের ভাগাভাগি করা যায়। একার মাঝে কোন আনন্দ নেই।

একা কোন আনন্দ করা যায় না। আনন্দের সময় টুকু কষ্টের কঁড়াল গ্রাস গিলে ফেলে। আনন্দ তখন বেদনার হাতে আর্ত সমার্পণ করে। চন্দ্রিমার বাড়ির নাম সূর্যনিবাস। এক সময় যা চন্দ্রা ভিলার নামে প্রকাশ ঘটতে চেয়েছিল।

চন্দ্রা ভিলা আগে সেন বাড়ি নামে পরিচিত ছিল। সেন বাড়ির কর্তা সুশান্তের এক মাত্র ছেলে আর স্ত্রী। ছেলের নাম সূর্যসেন। সূর্য খুব মেধাবী ছাত্র। সূর্য পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় সুশান্ত মারা গেল।

সূর্যের পড়াশোনা সমাপ্ত হল। মায়ের স্বপ্ন সফল করার জন্য সূর্য রাস্তায় রাস্তায় গান গায়। লোকে মুগ্ধ হয়ে শোনে। সূর্যের মা-ই তাকে গান শেখাত। সেদিন বাড়ি ফিরতে দেরি হল।

সন্ধ্যা ঘোর হয়েছে। রাতের আঁধার গা মেলে পৃথিবী জুড়ে বসছে। হঠাৎ কান্নার আঁওয়াজ ভেসে এল। একটি মেয়ে কাঁদছে। সূর্য পাশে গিয়ে দাঁড়াল।

“তুমি কাঁদছ কেন?” “ওরা আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। ” “কেন। ” “একটা প্লেট ভেঙ্গেছি বলে। ” “তোমার বাবা মা?” কেউ নেই। ” “তোমার নাম?” “সুরমা।

” “আমার সাথে যাবে?” মা আদর করে নাম দিল চন্দ্রা। চন্দ্রিমা সেন গুপ্তা। মা সঙ্গীতা সেন। সূর্য মায়ের ভয়ে চন্দ্রাকে লুকিয়ে লুকিয়ে গান শিখাত। সূর্যের ভয়, মা যদি চন্দ্রাকে তাড়িয়ে দেয়।

তবে ও কিভাবে বাঁচবে। এ গান টুকু সম্বল করে অন্তত পেট বাঁচাতে পারবে। মা যখন সূর্যকে গান শিখাত চন্দ্রা পাশে দাঁড়িয়ে শুনত আর সুর্যের দিকে তাকিয়ে নীরবে হাসতো। সে হাসি তার ঠোঁট দুটিকে বড় করে তুলত। সঙ্গীতের সুরে সুরে ওদের জীবনে বসন্ত এল।

প্রেম এল , মুখে হাসি এলো, ঠোঁটে ফুল ফোটাল। স্বপ্ন এল, সুখ এল। দুটি মন একাকার হল। সুর মানুষকে সহজে পাগল করে। সঙ্গীত জ্ঞানের আলো দেয়।

ওদের ভালোবাসায় মায়ের মুখে হাসি ফোটে। সূর্যের দুষ্টুিমগুলো চন্দ্রা যেভাবে সহ্য করে তাতে মা’র বুঝতে বাকি থাকে না ও কি চায়। সুরের ভুবনে চন্দ্রা সূর্যকে ছাড়িয়ে চলছে। সূর্য কেন জানি বড় বেশি হেঁয়ালী হয়ে উঠছে। গানে ওর মন বসে না ।

ওর মন কেবল চন্দ্রার পিছেই লেগে থাকা। চন্দ্রাও যেন ওর কোমল মনের সান্ত্বনা। হঠাৎ একদিন মা মারা গেলেন। সংসারে বিপর্যয় দেখা দিল। সূর্য সঙ্গীতের কাছে হার মানল।

কিন্তু চন্দ্রাকে হার মানতে দিল না। চন্দ্রাকে বড় করার স্বপ্ন দেখল। সূর্য চন্দ্রার সুযোগের অপো করল কিন্তু সুযোগ এল না। মাঠের জমি বিক্রি করল। গ্রামে ফাংশন দিল।

তাতে চলল চন্দ্রার একক সন্ধ্যা। গান শুনে অনেকেই বলল, “চন্দ্রা শিল্পী একজন হবে। খুব বড় মাপের। সূর্যের মন প্রাণ ভরে গেল। চন্দ্রাকে বড় করতে হবে।

একজন ভালো সুরকারের কাছে গান শিখাতে হবে। সে অনেক টাকার ব্যাপার। তাতে কি? সূর্যকে সকল কিছুই সংগ্রহ করতে হবে। “তুমি আমার জন্য এতো করনা। আমি আর বড় হতে চাইনা।

” “মাথা খারাপ করবে না। আমার কাজ আমাকে করতে দাও। ” “এ বাড়ি বেচলে আমরা থাকব কোথায়?” “গাছতলায়। ” “তুমি পারলেও আমি পারব না। ” “বড় অট্টালিকা গড়ে নিও।

” “তুমি যদি দূরে সরে যাও?” “তোমার নাম এতো প্রসারিত কর যেন আমি যেখানেই লুকিয়ে থাকি তোমার কণ্ঠ আমার কানে এসে ধরা দেয়। ” “তুমি হারালে যে আমার কণ্ঠ হারিয়ে যাবে। ” “জীবনে এমন ভুল করনা। মনে রেখ, তোমাকে গান গাইতে হবে। অনেক বড় হতে হবে।

সব চ্যালেঞ্জ জয় করতে হবে। ” “কথা দাও সব দিন আমার পাশে থাকবে। ” মধ্যাহ্নের সূর্য অনেক প্রখর আলো নিয়ে প্রকাশিত হলেও মাঝে মাঝে মেঘে ঢেকে যেতে পারে। বৃষ্টির শীতল বুকে পৃথিবী ঘুমে পড়তে পারে। তারপর আবার সূর্যের মুখ দেখলেও পৃথিবী বৃষ্টির প্রেমে সূর্যের ছন্দ হারিয়ে ফেলে।

” “তুমি যে দিন দিন গভীর হয়ে যাচ্ছ। ” “তোমাকে বড় করার স্বপ্ন দেখছি তাই। ” “আমাকে দিতে দিতে তুমি যে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছ। ” “সে তোমার দায় নয় আমার গৌরব। ” “ কোন একটা গাছকে যদি তিলে তিলে বড় করে দেখ জমি ভাগের সময় তা অন্য কারো হয়ে গেছে পারবে তা সহ্য করতে?” “গাছের মালিক না জানলেও গাছ কিন্তু ভুলতে পারে না কে তাকে বড় করছে।

” “সে নির্বাক। বলার শক্তি নেই আবার বাঁচারও ইচ্ছে নেই। ” “আমাকে ভাবিয়ে তুলনা। আমার দরকার টাকার। টাকা ছড়িয়ে ছড়িয়েই কুড়াতে হয়।

কারো কারো ছড়ানো টাকা বাতাসে উড়ে যায়। আবার কেউ তা কুড়িয়ে অনেক বড় হয়। এখন শুধু টাকার দরকার। তাই বাড়িটা বিক্রি করলাম। দেখবে একদিন তোমার অনেক টাকা হবে।

” চন্দ্রাকে বিশিষ্ট সুরকার কমলদাস গুপ্তের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। দু’জনে একটা বাসা ভাড়া নেয়। সেখানে দিনে সূর্য রাতে চন্দ্রা। সূর্য নাইট গার্ড। সারা রাত জেগে থাকে আর চন্দ্রার স্বপ্ন দেখে।

চন্দ্রা অনেক বড় শিল্পী হয়েছে। সবাই তাকে করতালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। অনেক বড় বড় ব্যক্তিরা তাকে সম্মান দেখাচ্ছে। সেদিন আশা প্রডাক্সের ব্যানারে চন্দ্রার প্রথম ক্যাসেট বের হল, ‘শিল্পী আমি। ’ সূর্যের মন ভরে গেল।

চারিদিকে চন্দ্রার গানের ক্যাসেট বাঁজছে। লোকের মুখে মুখে চন্দ্রার নাম। শুরু হলো চন্দ্রিমা সেনগুপ্তের দিন। চন্দ্রিমা এখন নব যুগের নতুন কারিগর। সারা বাংলায় সাড়া পড়ে গেল।

অনেক বড় বড় মানুষের সাথে মেলামেশা কত লোক আসে তাদের ভাড়া বাড়িতে। চন্দ্রিমার এখন অনেক টাকা। কিন্তু টাকা মানুষের ভালোবাসার পথ ভোলায়, ভালোবাসার পথ বদলে দেয়। চন্দ্রা হয়ে ওঠে অন্য চন্দ্রিমা। অহংকার ওর অতীতকে মুছে দেয়।

কত লোকইতো তার পাঁয়ের তলায় বসে তার বন্ধনা করে। সেনবাড়ি চন্দ্রার নামে কেনা হয়। চন্দ্রার প্রকাশে এই কেবল মাত্র সূর্যের হাসি ম্লান হলো। সূর্যের ইচ্ছে ছিল এ বাড়ি একদিন সঙ্গীতালয় হবে। তার মায়ের ধ্বনি চন্দ্র সূর্যের মাঝে প্রকাশিত হবে।

দিনে সূর্য রাতে চন্দ্র তার সুরের ভুবনকে আলোকিত করবে। কেবল সে দুঃখ নয় আরো অনেক দুঃখ সূর্যের হাসি কেড়ে নেয়। সূর্য পাশে থাকা মান সম্মানের ব্যাপার। চন্দ্রিমা সেনগুপ্ত এখন আর সেই রাস্তার মেয়ে সুরমা নয়। বাড়ির কাজ চলছে।

পাঁচ তালা বিল্ডিং। চন্দ্রিমার মহিমায় সেই গ্রাম এখন শহরের পথে। লোকের কোন অভাব নেই। একটার পর একটা গাড়ি আসছে। সূর্য এখন মেঘের আড়ালে চলে গেছে।

চন্দ্রিমা কোথায় থাকে? কখন আসে? কখন যায়? সূর্য সে খবর পায় না। বাড়ির পুরাণো লোক বিজয় তাকে কিছু কিছু খবর দেয়। বিজয় বলল, “দাদা, শুনছেন? এ বাড়ির নাম হবে চন্দ্রা ভিলা। ” সূর্য বসে বসে কিছু সময় ভাবল। অতীত চিরদিনই সুন্দর।

সব সম্পর্কই বিপরীত সম্পর্কের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। একটিকে বাদ দিলে অন্যটি মূল্যহীন, অস্থিত্যহীন। সন্ধ্যার দিকে সূর্য বিজয়কে ডেকে বলল, “এই চিঠিটা তোদের ম্যাডামকে দিস। ” “কোথায় যাবেন?” “চন্দ্রা ভিলার বাইরে। ” “আপনাকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি?” “যদি জবাব দিতে না পারি?” “আপনি কি মানুষ নাকি অন্য কিছু?” “হয়তো পশুপাখি।

” “আমাকে মা করবেন আমি আপনাকে এমনটি বলিনি। ” “যে যেমন তাকে তার স্থানে সম্মান দেখাও, তাতে সে ছোট হবে না। ” “ম্যাডাম যদি আরো কিছু জিজ্ঞেস করেন?” “প্রয়োজন হবে না। ” অনেক রাত্রে ম্যাডাম এলো। বিজয় চিঠিটা দিল।

“কে লিখছে?” “দেখুন। ” “তোমার চন্দ্রা ভিলায় আমার স্বপ্ন পূরণ হলো না। সূর্য। ’’ চন্দ্রিমা থমকে গেল। সূর্য রাগ করে চলে গেছে।

চন্দ্রিমার ঐশ্বর্যের কাছে যেন পদাঘাত মারছে। নিজেকে কেন যেন অপরাধী বলে মনে হলো। বিশ্বাস করতে পারল না সূর্য চলে যেতে পারে। চন্দ্রিমা বাইরে গেল না। একটা অন্ধকার যেন ওকে ঝাঁপিয়ে ধরল।

মনে মনে বলল, ‘‘তুমিইতো আমাকে এখানে নিয়ে এসেছ। যদি অহিংসায় নিজেকে গড়তে না পারলে কেন আমাকে এখানে নিয়ে এলে। এ আমি চাইনি। আমার প্রতি তোমার হিংসা হোক সে অহংকার আমি কোন দিন চাইব না। ” রাস্তার পাশের কান্না মনে পড়ল।

মনে পড়ল মায়ের আদর। সকল অতীতকে মুছে ভবিষ্যৎ সুন্দর হয় না। মানুষতো কেবল নিজের পাওয়ার মাঝে আনন্দ খোঁজে। যিনি পাইয়ে দিলেন তাকে মনে রাখে না। চন্দ্রা ভাবল, সৃষ্টিকর্তার আড়ালে সৃষ্টি সুন্দর হয় না।

কেবলি মিথ্যার বোঝা হয়ে থাকে পৃথিবীতে থাকতে হয়। চন্দ্রিমা সেন গুপ্তের দিন চলতে থাকে। সুরের আড়ালে দু’টি চোখ খুঁজে ফেরে অন্য কোন মুখ। কিন্তু দেখা মেলে না। বয়স বেড়ে ওঠে।

যৌবন পার হয়ে যায়। সূর্য নিবাসে একাকি কাটাতে থাকে। সে কাছে নেই বলে তার ভালোবাসা এমন করে প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু সে আর ফেরে না। সে দিন কমলদাসের দরজায় আবার টোকা পড়ল।

দরজা খুলে তাকে ভিতরে নিল। “তোমাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। কোথায় যেন দেখছি। ” “হয়তো। ” “তোমার কি চাই?” “সুর।

আমি গান শিখব। ” আগে কখনও গাইতে?” “মায়ের কাছে শিখতাম। ” “পারবে সে সুর ফিরে আনতে?” “পারব। ” “এসো। চেষ্টা করে দেখি।

” ভোরের পত্রিকায় একটি নতুন ছবি ছাপা হলো। শিল্পী সূর্য সেন। আজকের ফাংশনে চন্দ্রিমা সেনগুপ্তের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সারা দেশ অবাক চোখে দেখল। কেউ ব্যঙ্গও করল।

কিন্তু চন্দ্রিমার মুখে হাসি ফুটল। অতীতের দিকে খানিক তাকিয়ে থাকল। পত্রিকার ছবির দিকে তাকিয়ে দুচোখে জল ভরে উঠল। বলল, “তুমি বলেছিলে, সব চ্যালেঞ্জেই যেন আমার জয় হয়। আজ আমি জয় চাইনা, চাই আমার হার।

তবু তোমার আর্শীবাদ ফেলে দেব না। আমি আমার সাধ্য মত জয়ের চেষ্টা করব। যদি হারি তবে তুমিও হারলে। ” সূর্যসেন মঞ্চে এল। হাজার জনতা করতালি দিল।

মাউথ ধরে, “সুপ্রিয় শ্রোতামন্ডলী। আজ আমার সঙ্গীত জীবনের চরম প্রতিযোগিতা। প্রতিদ্বন্দ্বি একালের বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী। যেখানে হাত বাড়ানো আমার পে অসম্ভব। কিন্তু চন্দ্রিমা সেনগুপ্তাও একদিন আমার মত ছিল।

ছোট বেলা আমি আমার মায়ের কাছে গান শিখতাম আর গোপনে গোপানে আরেক জনকে শিখাতাম। সেও আপনাদের চন্দ্রিমার মত বড় শিল্পী। আমার মায়ের হারানো গান হয়তো আপনাদের নতুন করে ভালো লাগবে। ” পাওয়াটাই যদি বড় হলো যে দিল সে কেন দূরে চলে গেল। দর্শক জোরে করতালি দিল।

কিন্তু সূর্য চন্দ্রিমার কাছে হেরে গেল। বিশ্রাম ঘরে দুজনের দেখা হলো। সূর্য নীরব। চন্দ্রা বলল, “শোন। ” সূর্য সেদিক ফিরে তাকাল।

“তোমার মনে আছে, তুমি বলেছিলে সব চ্যালেঞ্জে জয় করতে। ” “সে কথা ছিল চন্দ্রার কাছে। চন্দ্রিমা সেনগুপ্তের কাছে তা নিছক পুতুল খেলার ছলনা মাত্র। ” “আমি বিশ্বাস করি চন্দ্রের যত আলোই থাকনা কেন সে আলো সূর্যের। সূর্য তাকে গোপনে দান করে।

” “চন্দ্র সূর্যকে ছেড়ে যখন অনেক উপরে উঠে যায় তখন সূর্যের আলো তাকে আকর্ষণ করতে পারে আকৃষ্ট করতে পারে না। সে নিজেই আলোকিত। আমি চন্দ্রাকে ভুলে গেছি। ” “ভুলে গেছ? পারলে ভুলতে? পারলে চন্দ্রা নামটাকে মুছে ফেলতে?” “যেদিন চন্দ্রা ভিলা ভেঙ্গে সঙ্গীতালয় তৈরি করতে পারব সেদিন আমি আমার চন্দ্রাকে খুঁজব। চন্দ্রা আমার ভালোবাসা, চন্দ্রা আমার স্বপ্ন।

জানি সকল স্বপ্ন বাস্তব হয়না। এখন আমার একটাই সাধনা চন্দ্রা ভিলার পতন। ” “আমার সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে বলছি, তুমি কোন দিন আমাকে হারাতে পারবে না। তবু বলি চলো আমি চন্দ্র ভিলা ভেঙ্গে ফেলব। ” “সূর্য কোনদিন করুণা চায়নি, চাইবেও না।

” “আমার গর্ব আছ কিন্তু তোমাকে করুণা করার মত মতা বা অহংকার আমার নেই আর আমি তা পারবও না। ” সেদিন পত্রিকা দেখে সবার চোখ বড় হয়ে গেল। চন্দ্রিমা সেনগুপ্তার বাড়ি বিক্রি হবে। বিকেল পাঁচটায় নিলাম হবে। সূর্য ব্রিফকেস নিয়ে হাজির হলো।

সূর্যের চোখ বড় হয়ে গেল। “সঙ্গীতালয়। ” তার স্বপ্ন, তার সাধনা। থমকে দাঁড়ল। চন্দ্রিমা সেনগুপ্ত একটা সাধারণ ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।

সাথে একমাত্র প্রহরী বিজয়। “আমি চলে যাচ্ছি। এ তোমার স্বপ্ন, তোমার সঙ্গীতালয়। চন্দ্রা ভিলার সৃষ্টির আগেই সূর্য নিবাস হয়েছিল। আমি জানতাম না তাতে আমার সৃষ্টিকর্তার স্বপ্ন পূরণ হবে না।

” সূর্য নীরব। “আমি বেঁচে থাকতে কোন দিন তোমার জয় হবে না এ আমার সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ। তাই আমি চলে যাচ্ছি। তোমার জয় হোক। চন্দ্রিমার অহংকার ভেঙ্গে চূরমার হয়ে যাক।

” “চন্দ্রা। ” “আমি সুরমা। আমি জানতাম যত টাকাই হোক তুমি এ নিলাম পাবে। কিন্তু আমিতো বেচতে পারি না। এ বাড়ি আমার সৃষ্টিকর্তার মন্দির।

আমাকে মা করে দিও। তোমার সৃষ্টি আমি বাঁচিয়ে রাখতে পারলাম না। তোমার চন্দ্রিমা সুর হারিয়ে সুরমা হয়ে গেল। ” “সৃষ্টিকে ধংস করে কেউ সৃষ্টি কর্তা হতে পারে না। তুমি তোমার সৃষ্টিকর্তাকে আপমান করছ।

আমি করুণা নিয়েও হয়তো সুখী হতে পারব কিন্তু আপমান নিয়ে কোন দিনই সুখী হতে পারব না। কিন্তু একটা প্রশ্ন রয়ে গেল। যদি এমন করবে কেন আমার চন্দ্রাকে ডুবে দিলে? সঙ্গীতালয়ে চন্দ্রাকে ছাড়া সূর্য আর কিছুই চায়না। ” “পারবে আবার সুরমাকে চন্দ্রা সেন করতে? কেবল সঙ্গীতালয়ে নয় তোমার পাশে ঠাই দিতে?” “তোমার সৃষ্টিকর্তার প্রতি অধিকার হারিয়ে ফেলছ? পারবে সঙ্গীত জগৎ থেকে চন্দ্রিমার নামটা মুছে ফেলতে?” সূর্য চন্দ্রার দিকে হেঁটে এল। হাত দুটি ধরে বলল, “আমার জয় হলো তুমিও হারলে না।

কেবল মিথ্যা হলো অভিমান। ” ০১/০৬/২০০৭ ইং, শনিবার, নিজ বাড়ি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.