আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছোট ভাই হাসানুল বান্না । ও আইন বিভাগের ছাত্র। ভাইটির দেশের বাড়ি নরসিংদী,টিউশনি করেই নিজের লেখাপড়ার খরচ চালায়। বাসা থেকে টাকা আনেনা বললেই চলে। আসলে সত্যি কথা বলতে বাসা থেকে ওকে যে মাসে মাসে কিছু টাকা পয়সা দেবে সেই সামর্থ্য নেই ।
বয়সে ছোট হলেও কেন জানি আমাদের দুজনের সম্পর্কটা বেশ মধুর,গতানুগতিক বড় ভাই ছোট ভাই সম্পর্ক নয়। গত এক মাস ধরে একটা টিউশনি জন্য ও যে আমাকে কতবারি ফোন দিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আমার কাছে যাও দুই একটা টিউশনি এসেছিল তাও আবার সায়িন্সের। তাই কেন জানি ছোট ভাইটির জন্য মনে মনে বেশ খারাপ লাগছিল। তবে হতাশ হচ্ছিলাম না এই ভেবে যে,আমার আল্লাহ্ তো অন্ধ না।
কিন্তু আজ যখন আমাকে প্রানরসায়ন বিভাগের আব্দুল মালেক ভাই ফোন করে জানালো,মামুন আমার ভাগ্নেকে ক্লাস টেনের ইংরেজি পড়াবে এমন কোন ছেলে পাও কিনা দেখ ত। আইন বিভাগের ছাত্ররা আবার ইংরেজিতে খুব ভালো হয়,আমি তাই মালেক ভাইয়ের সাথে কথা শেষ করে সাথে সাথেই হাসানুল বান্নাকে ফোন দিলাম টিউশনির সুখবর!দেবার জন্য। কিন্তু একি!ইথারের মধ্যে দিয়ে যা শুনতে পেলাম তাতে কেন জানি মনে হল বান্নার টিউশনির আগ্রহ নাই। তাহলে কি বান্না কোন টিউশনি পেয়ে গেছে,ওর আর্থিক সমস্যার কি কোন সমাধান হয়েছে?বেশি কিছু বলার আগেই বলল,ভাই “আমি ঢাকা আসছি,ঢাকায় পৌঁছে আপনাকে ফোন দিব”।
পরদিন দুপুর গড়িয়ে বিকেল চলে এল,বান্নার ফোন আমি আর পেলাম না।
যে মানুষটির একটা টিউশনি এত দরকার আর আজ যখন একটা টিউশনি পেলাম তখন কেন জানি কোন আগ্রহই দেখাচ্ছে না। আচ্ছা কোন খারাপ কিছু হয়নি তো ?এই দুশ্চিন্তা নিয়ে আমিই ফোন দিলাম। তবে ফোন দিয়ে অনেকক্ষন কথা বলে আসলে জানতে পারলাম তা হল, জাপানের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে বান্না একটা স্কলারশিপ পেয়েছে এবং সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী দুই মাসের মধ্যেই সেখানে চলে যাবে। আর আর্থিক সমস্যারও আপাতত কিছুটা সমাধান হয়েছে। তাই এখন ও চাচ্ছেনা কোন টিউশনি করতে।
শুনে মনটা বেশ ভালো হয়ে গেল। ভাবছিলাম টিউশনিটা তাহলে কাকে দেয়া যায়। মোবাইলটা নাড়াচাড়া করতেই আলামিন ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল। ওদিকে আবার আব্দুল মালেক ভাই বার দুয়েক ফোন দিয়েছে কাউকে পেয়েছি কিনা সে খবর জানার জন্য। আলামিন ভাইকে ফোন দিয়ে কিছু কুশালাদি জিজ্ঞাসা করে যেইনা টিউশনির কথা বলেছি ,অমনি আলামিন ভাই বিনয়ের সুরে বলল,”মামুন আমি যে কত সমস্যায় আছি তুই যদি তা জানতি।
আমার যে একটি টিউশনি কত দরকার ছিল। কি বলে যে আমি তোর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিনা”।
আলামিন ভাই ধন্যবাদটা আমাকে দিও না,পারলে এই গোনাহগার ছোট ভাইটার জন্য তুমি একটু তুমি দুয়া করিও। ধন্যবাদ,কৃতজ্ঞতা দাও সেই মহামহিম আল্লাহকে যিনি তোমার-আমার সৃষ্টিকর্তা। যিনি সারা পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা।
একমাত্র তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন-তার সৃষ্টি কে কেমন আছে?যিনি একটি মাকড়শার রিজিকদাতা আবার একটি হাতিরও রিজিকতা। তিনি যে আমাদের “রব”
জানো আলামিন ভাই,এই টিউশনি আসলে তোমার করানোর কথা ছিলনা টিউশনিটা আসলে করানোর কথা ছিল বান্নার। কিন্তু আল্লাহ এই টিউশনির মাঝে তোমার জন্য রিজিক বরাদ্দ রেখেছেন। আল্লাহ্ যে আমাদের “রিজিকদাতা’আজ যেন তা আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ।
আল্লাহু আকবার। । হে আল্লাহ্ তুমি আমাদের দ্বীনের সঠিক জ্ঞান বুঝার তাউফিক দাও...আমিন। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।