Digital Bangladesh Warriors - fb.com/openbd
নেতা সম্বর্ধনা, গণসম্ভর্ধনা আজ আমাদের সমাজে ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাসের মত ছেয়ে গেছে। সালমোনেলা, বভি'র চেয়ে মারাত্মক এ ভাইরাস। এক সময় এই জলকাঁদার দেশের মানুষের পাঁচরা, ফোঁড়া হতো ঘরে ঘরে। সেই জীবানুরা বিলুপ্ত হলেও আজ পুরো সমাজের শরীরে এক্সজিমা, দাউদ, বিখাউজ, বিষফোড়ায় দগদগ করছে সম্বর্ধনা, সমানননা ইত্যাদীতে। আজ এক নেতা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন করবে, তাকে দেখে কাল কোন জেলার সন্ত্রাসের সাংঙ্গঠনিক সম্পাদক জেল ফেরত দিবস পালন করবে।
গত ঈদের ছুটিতে মোটরসাইকেলে চারটি জেলা সহ বেশ কয়েকটি উপজেলা ঘুরলাম। সবখানে দেখলাম সরকারী দলের এমপি, মেয়র, চেয়ারম্যান, কমিশনারেরা প্রতিটি শহর থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত সম্বর্ধনা, শুভেচ্ছার ব্যানার, তোড়নে ডাস্টবিন বানাইয়া ফেলছে। চারদিকে পথেঘাটে খুটিতে, পিলারে, বাঁশে, খালি বিশ্রী মুখায়ববের ছবি ও তোড়ন। এই যে দেখুন ছবিতে এক নেতার সম্বর্ধনা দেখুন। এ নেতা না ছাগল, বাঙালীর ভেতর এই ছাগলামির বীজ কারা কখন কোথায় ঢুকিয়েছে খুজতে গিয়ে দেখেছি, সম্বর্ধনা গণসম্বর্ধন অনুষ্ঠানগুলো চিরায়ত টাউট, ভন্ড, প্রতারক, নির্লজ্ব, উন্মাদ, ইডিয়ট, ফাউল নেতাগোছের বাঙালীর একটি ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানের জ্বলন্ত উদাহরন।
আমি একবার উপজেলা ল্যভেলে এক স্কুলে এমন এক কৃতি ছাত্রছাত্রী সম্বর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। অনুষ্ঠানের মাঝেই এর-তার কাছ থেকে খবর নিচ্ছিলাম অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে। খোজ নিয়ে দেখলাম, সেখানে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বৃত্তি প্রদান করা হবে অথচ অনুষ্ঠানের মঞ্চ বানাতেই পঁচিশ হাজার টাকার উপর খরচ হয়েছে, অন্যান্য খরচ তো আছেই। পুরো অনুষ্ঠানের খরচ দিচ্ছে সেখানকার স্থানীয় এক টাউট বড়লোক, তাকেও স্টেজে বসানো হবে এই শর্তে। এতে নাকি চিরন্তন অবরুদ্ধ বাঙালীর প্রচারের বিশাল কাজ হয়।
সেদিন আমি আমার বক্তব্যে বিষয়টি তুলে ধরলাম, এবং প্রধানঅতিথিকে অনুরোধ করলাম এরকম উদ্ভট অনুষ্ঠানকে কোন ভাবেই প্রশ্রয় দেয়া উচিত না, এধরনের অনুষ্ঠান বর্জন করা উচিত। বিনিময়ে প্রধানঅতিথি তার শুধু তার বক্তব্যে আমাকে নসিয়ত করলেনা খেসারত পরে আরও দিতে হয়েছিল, বললেন এর মাধ্যমে ছোট ছেলেমেয়েরা নাকি তারমত ও বিশষ্ট (টাউট)হতে উৎসাহিত হয়। কিন্তু সেদিন আমি আশ্চর্য হয়েছিল এত অভিজ্ঞ জ্ঞানী একজন মানুষ কেন এ ধরনের একটি প্রতারনাকে ঐতিহ্য বলে তার পক্ষেই কথা বললেন ?উনি কি এরকম বিষয়গুলো বুঝতে পারেন না ? নাকি আমি ভুল বুঝছি ?এরপর আমি অনেক সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান খুব নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষন করেছি। এমনও কোন নেতার, এমনও সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান দেখেছি যেখানে ত্রিশ চল্লিশ কিলোমিটার রাস্তায় শতশত তোড়ন খাড়া করা হয়েছে। ভাঙ্গা সরু রাস্তায় যানবাহন ও লোক চলাচলের অসুবিধা করেও নির্লজ্বের মত তোড়নগুলো দাড়িয়ে আছে আর তোড়নে থাকা ছবির মানুষগুলো টাকা খরচ করে তার বাপদাদা চৌদ্দগুষ্টিকে অশ্লিল ভাষায় সাধারন মানুষের গালি খাওয়াচ্চে।
আজকাল রাস্তাঘাটে এমনিতেই অসম্ভব যানজট, অসংখ্য ঝঞ্জাট এর মধ্যে রাস্তার মাঝখানে খাড়া করা তোরণ একটি বড় সমস্যা। এমনিতেই স্কীন টাইট হয়ে গেছে প্রতিটি মফস্বল শহরের রাস্তার ট্রাফিক। জ্যামে, রাস্তায় খালা খন্দের ভেতর যানবাহন কোন রকমে সম্ভূক গতীতেও চলতে পারছে না তার উপর ঐ সমস্ত ব্যাস্ততম ও অধিক জনাকির্ন রাস্তাগুলির দুই পাশে আরও দুই ফিট করে রাস্তা চিপা করে, অর্থ অপচয় করে, লোকজনের চলাফেরার সমস্যা করে খাড়া করা থাকে বিশাল বিশাল সব তোরণ। রাজধানী থেকে শুরু করে মফস্বল শহর কোথাও এ অত্যাচার থেকে নিস্তার নেই। এরকম বাজে কালচার কে শিঘ্রই আইন করে নিষিদ্ধ করা উচিত।
...............................................................................
নিচে একটি লাগসই আইন প্রস্তাব করা হলো।
ধারা ১. শিরোনামঃ এই আইন "তোরণ খাড়া নিষিদ্ধ আইন-২০১২" নামে পরিচিত হবে।
ধারা ৫. যে ভিআইপিকে উদ্দেশ্য করিয়া তোরণটি খাড়া করা হইবে, সেই ভিআইপি তোরণটির সন্মুখ দিকে মুখ করিয়া হাতের ডান দিকের, তোরণের খুটির পাশে কোমড় ঝুকাইয়া, হাটুতে নাক ছোয়ানোর ভংগিতে দাড়াইবেন। আর তোরণটির খুটির নিচের দিকের চারটি বাঁশ এক আটিতে শক্ত করিয়া বাঁধিয়া ঐ ভিআইপির পশ্চাদদেশে (পুটকিতে) গারিয়া দেওয়া হইবে।
ধারা ৬. যিনি তোরণ খাড়া করিয়াছেন অর্থাৎ তোরণের স্পন্সর, তোরণটির সন্মুখ দিকে মুখ করিয়া হাতের বাম দিকে তোরণের খুটির পাশে একই ভংগিতে দাড়াইবেন এবং তোরণের খুটির ঐ পাশের নিচের দিকের বাঁশগুলি এক আটিতে বাঁধিয়া ঐ জনাবের পশ্চাদদেশে(পুটকিতে) ভরিয়া দিতে হইবে।
ধারা ৭. ধারা ৫ ও ধার ৬ কার্যকর করিয়া এই দুই জনাব পরবর্তী তিন দিন ঐ তোরণ পশ্চাদে লইয়া দাড়াই থাকিবে।
ধারার ব্যাখ্যাঃ তোরণের দুই পাশের কোন এক পাশে বা উভয় পাশে যদি শাস্তি যোগ্য সংশ্লষ্ট ব্যাক্তির সংখ্যা একাধীক হয় তবে প্রতি জন আলাদা ভাবে দন্ড প্রাপ্ত হইয়া তার তিন দিন সাজা আলাদা আলাদা ভাবে খাটিবেন, প্রচলিত ক্রম ব্যবহার করে।
এক্ষেত্রে, তোড়ন খাড়া রাখতে দুই পাশেই খুটি লাগে বিধায়, এক পাশ শেষ হইয়া গেলে অন্য পাশ থেকে সমন্বয় করা যাইবে এবং সর্বশেষে যদি একজন দন্ডিত একা থাকিয়া যায় তবে যে ভিআইপির উদ্দেশ্য তোরণ খাড়া হইয়াছিল তাকে তার নিজ মেয়াদের অধিক অতিরিক্ত তিন দিন ঐ খুটির আটি পশ্চাদে ভরিয়া দাড়াইয়া থাকিতে হইবে। উল্লেখ্য এক্ষেত্র ভিআইপির ব্যস্ততা বিবেচনায় রাখিয়া তার নিজ মেয়াদের অব্যহতি পরেই এই অতিরিক্ত সাজা একাদিক্রমে খাটিতে সুযোগ দেয়া যাইবে তবে প্রথম মেয়াদ শেষে খুটি খুলিয়া পুনরায় গারিতে হইবে।
কোন একজন বা উভয় জন মহিলা আসামী হলে নন্দনতত্ত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রাখিয়া তার পদমর্যাদায় বা সামাজিক মর্যাদায় ইমিডিয়েট পূর্ববর্তী পুরুষ ব্যাক্তির পশ্চাদে খুটি গারিয়া সাজা কার্যকর করা যাইবে।
তবে কনভিক্ট মহিলা "আমার সাজা এই গাধা খাটিতেছে" ইহ বড় আর্ট পেপারে লিখিয়া গলায় ঝুলাইয়া খুটি ধরিয়া দাড়াইয়া থাকিবেন।
সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়নে এ ধরনের উৎসব আয়োজনের সংবাদ পাইলেই স্কুলের বাচ্চাদের নৈতিক শিক্ষার ক্লাসের ব্যবহারিকের অংশ হিসাবে এরকম দৃশ্য ফরমাললি দেখার ব্যবস্থা করবে।
........................................................................
এক খবরে দেখেছিলাম, রাজধানীর পার্শ্ববর্তী সাভার-আশুলিয়া নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৯ নির্বাচনী এলাকার প্রায় সর্বত্র এই আসনের সাংসদ তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদের ছবিতে ভরা। কোনোটি বিশাল ব্যানার, কোনোটি আবার পোস্টার। এর বাইরে নাম লেখা ব্যানারও রয়েছে অসংখ্য।
তাই সাভার এলাকায় ঢুকলে তাঁর মুখচ্ছবি না দেখে বেরোনোর কোনো পথ নেই। তিনি এই আসনের সাংসদ তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ। মুরাদ জং নামেই তিনি এলাকায় বেশি পরিচিত। নিজের ছবি দিয়ে ব্যানারে সাভারে ছেয়ে ফেলা সম্পর্কে সাংসদ মুরাদ জং বলেন, ‘এলাকার লোকজন ভালোবেসে এটি করে। না করতে দিলে অনেকে কান্নাকাটি পর্যন্ত করে।
’ তবে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে সাভার মহাসড়কে তোরণ তিনিই তৈরি করেন বলে জানান। মুরাদ জং বলেন, সাভারবাসীর গৌরবের ধন স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল নামার ঐতিহাসিক এই দিন দুটিকে উৎসবমুখর করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সাভার উপজেলা পরিষদ এলাকায় ঢুকতে গেটের দুই পাশে সাংসদের বিশাল দুটি ছবি টানানো রয়েছে। একটু সামনে এগোলেই ডানে-বাঁয়ে আবারও চোখে পড়বে মুরাদ জংয়ের নানা আকৃতির ছবি। প্রতি ইঞ্চি জায়গায় প্রতিমুহুর্তে সংবর্ধীত হচ্ছে এই নেতা।
তারপরও প্রশ্ন আসে বাংলাদেশে হঠাৎ করে প্রচারের মাত্রা এত বেড়ে গেল কেন ? এর পেছনে অনেকে অনেক সোশিওইকোনমিক, সাইকোটিক কারন দেখাতে পারবেন। তবে আমি আপনাদেরই এক ভাই, অন্য অথচ অন্যতম নাদেখা দিকটির কথাই বলবো। বিশ্বে মানুষের কর্মকান্ডের গতি গত দুই দশকে অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে বেড়ে গেছে। মোবাইল, ইন্টার্নেট আধুনিক মোবিলাইজেশন অবকাঠামো মানষকে আরও ইফিসিয়েন্ট করে তুলেছে। সেই সাথে বাংলাদেশে জনসংখ্যা অল্প আয়তনে অনেক বেশি।
কিন্তু এই সর্বদা সর্বত্র হাটের দেশে মানুষের যোগাযোগ, কমিউনিকেশন, কানেক্টিভিটির জন্য সর্বনিম্ন সম্পদ ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সুবিধা বেশি জনগণকে মূর্খ রাখা যায়। তার প্রমান বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, কতটা নির্লজ্জ্ব মানুষ হলে এরপরও বলবে রাজনীতি মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য, দিরাই-শাল্লার মানুষকে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিতে পারে। রাস্তা, কানেক্টিভিটি হয়া গেলে চোচ খুলে যাবে, ওদেরকে আর কোন ভাবেই বোঝানো যাবে না ঐ টাকা ফারুকের টাকা। ওরা তখন আর বাতাস খেয়ে বড় হবে না।
সমাজে, স্থানীয় এলাকায়, রাষ্ট্রে বসবাসকারী মানুষের যোগাযোগ বা সংযোগের জন্য রাস্তা, রেলপথ, পানিপথ, আকাশপথ, মাটির তলায় টানেল/রেলপথ, দোতলা তিনতলা পথ, তরঙ্গের পথ, মোবাইল, এফএম, টিভি ইত্যাদী সকল তাড়বিহীনপথ, অপটিক ক্যাবলের ব্রডব্যান্ডপথ ইত্যাদী উল্লেখ যোগ্য। এখান থেকে বের করুন বাংলার মানুষের পথের স্বাধীনতা কোথায় রেখেছে। অথচ এদেরই সম্বরধনা দিয়ে আমরা এইটুকু পথঘাটও বন্ধকরে অন্ধকার রুদ্ধ এক সন্ত্রাসের জনপদের দিকে যাচ্ছি।
যে নেতা সম্বোর্ধীত হয়ে আরাম বোধ করেন, অসস্তি লাগে না, তাকে সর্বদা বুঝতে হবে নিৎকৃষ্ট নেতা -এটা হিউম্যানসাইকোলজি, না মানলে সে সমাজ মানুষেরই না। আজ এমন এক নেতা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ও সম্পাভর্লধনা হচ্নছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।