ইউরোপের অর্থনৈতিক সঙ্কট সবচেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি করেছে গ্রিসে। ইউরোজোনের ঋণ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দেশটি কর্মী ছাঁটাই থেকে শুরু করে ব্যয় সংকোচনের জন্য হেন কোন উদ্যোগ নেই যেটা নেয়নি।
স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার থেকে শুরু করে সরকারি পেনশন কাটা সবকিছুই করেছে তারা। তবে মুক্তি মেলেনি অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে। উল্টো সমস্যা মনে হয় আরও প্রকট হয়েছে।
সরকারের চাপিয়ে দেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসছে মানুষ। আবেগ দিয়ে, উত্তেজনা দিয়ে প্রতিবাদ করছে। কিন্তু জীবন যুদ্ধের ব্যয় মেটাতে সবচেয়ে কঠিন যে কাজটি করতে বাধ্য হচ্ছে তা বেশ হৃদয়বিদারক। নিজের নাড়ি ছেঁড়া ধনকে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। রাস্তায় নিয়ে আসছেন সন্তানদের বিক্রি করে দেয়ার জন্য।
কেউ কেউ বিভিন্ন চ্যারিটি সংস্থায় দিয়ে দিচ্ছেন আদরের সন্তানদের। যেমন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আবার সন্তানদের পড়ালেখা করাতে না পেরে তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেও হতাশ অনেকে। সমপ্রতি এমন খবর উঠে এসেছে ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে। এমন একজন মা কাসিয়ানি পাপাডোপাউলো। ৩০ বছরের বিধবা।
তার দু’মেয়ে ও এক ছেলে। বয়স যথাক্রমে ১৪, ১৩ ও ১২। এক বছর আগে বাধ্য হয়ে তিন সন্তানকে ২০ মাইল দূরের একটি চ্যারিটি হোমে রেখে আসেন। এক শনিবারে কাসিয়ানি বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের খেলনা গাড়ির একটি ব্যাগ নিয়ে বের হয়েছেন সন্তানদের দেখতে যাবার জন্য। তার সন্তানেরা তাকে দেখে ‘মা মা’ বলে দৌড়ে আসে।
জড়িয়ে ধরে চুমু খায় বড় মেয়ে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর যখন তার চলে আসার সময় হয় তখন তার গাল বেয়ে লাগাতার ঝরছিল অশ্রু। কাসিয়ানি বলেন, এটা অনেক কষ্টের। সন্তানদের ছেড়ে কোন মা-ই এমন দূরে থাকতে পারে না। কিন্তু আমি অপারগ।
তাদের খাবার, স্কুলে পাঠানোর খরচ ও নিজের বাড়ি ভাড়া জোগাড় করতে পারছি না। কত জায়গায় গেছি, কত সরকারি অফিসে গেছি সহায়তা পাবার জন্য। সবাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু কোন কাজে আসেনি। সবাই বলেছে আমাদের দেশ সঙ্কটে আছে।
অতিরিক্ত টাকা নেই। মারিয়া টিসিভরা (৩৭) বলেন, তারা অনেক সমস্যায় আছেন তবে অন্য অনেকের মতো রাস্তায় সন্তান বিক্রি করার মতো পরিস্থিতি তার তৈরি হয়নি। মারিয়া জানান, তার এক বন্ধু সিঙ্গেল মা অভাবের কারণে নিজে একটি চ্যারিটি সংস্থায় আশ্রয় নিয়েছেন। বাচ্চার খরচ জোগাড় করতে না পারায় তাকে একটি নিঃসন্তান পরিবারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এমন ঘটনা এখন অহরহ ঘটছে গ্রিসে।
নিজেদের প্রয়োজনীয় টাকা জোগাড় করতে সহায়তা চাইতে বিভিন্ন চ্যারিটি সংস্থা ও চার্চে যাচ্ছে মানুষ। দেশটির অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সেখানে প্রতি ৫ জনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। প্রায় ৫ ভাগ গ্রীক ফার্ম বন্ধ হয়ে গেছে। গত দু’বছরে জীবনযাত্রার মান ২০ ভাগ নিচে নেমে গেছে। এমনকি খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ শতাব্দিতে অলিম্পিক গেমসের উদ্ভাবক দেশটি অর্থের অভাবে লন্ডন অলিম্পিকে মাত্র অর্ধেক অ্যাথলেট পাঠাচ্ছে।
একটি গির্জার ফাদার জন বলছেন, এমন দারিদ্র্য কখনও কোথাও দেখেন নি তিনি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।