ব্লগিং জগতে অশিক্ষিত বালক নামেই রিচিত আমি। ওয়েবসাইট নিয়ে পাগলামি করার টুকটাক অভ্যাস। তাই, পড়ালেখার পাশাপাশি বন্ধুদেরকে নিয়ে টুকটাক ওয়েবসাইটের পাগলামি নিয়ে আছি। আমার কাজকর্ম দেখুন এখানেঃ http://banglatheme.com/ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রেজাল্ট বোর্ডের সামনে ঠায় দাড়িয়ে আছে মাসুদ। তার পঠিত কোন একটি বিষয়ের রেজাল্ট দিয়েছে আজকে।
রেজাল্ট দেখেতো তার চোখ চড়কগাছ। কোন রকমে টানাটানি করে পাশ। কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা না। এবার তো সে তার শিক্ষকের সাথে ভালো মাত্রাই লবিং করেছে। শিক্ষককে যত ধরণের তেল মারা সম্ভব তার কোনটাই বাদ রাখেনি মাসুদ।
কিন্তু এ কী? এমন তো হওয়ার কথা না। তবে কী তার লবিং স্কিল দুর্বল। সেটাই হবে হয়তো, মাসুদ ভাবে নিজের মনে মনে। কেননা, সে প্রথম বর্ষ থেকেই দেখে আসছে যে যারাই শিক্ষকদের সাথে ভালো লবিং করতে পারছে তাদের আর কিছু হোক আর না হোক, এ+ টাতো মিস হচ্ছে না।
এই হচ্ছে বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষার সাথে জড়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি অহরহ চিত্র।
লবিং নামক এক প্রকার মিষ্টি তেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আজ ভালো ভাবে তৈলাক্ত। এই তেল যে যত মাখতে পারছে এ+ এর বাজারে তার চাহিদা তত বেশি। যে যত বেশি শিক্ষককে তেল মারছে, শিক্ষকের রুমে যাতায়াত বেশি করছে, ক্লাসে একটু এক্সট্রা পারফরমেন্স দেখাচ্ছে, একটু ডং করতে পারছে সেই অনায়াসে লুফে নিচ্ছে এ+ নামক সোনার হরিণটিকে, জায়গা করে নিচ্ছে চাকুরীর বাজারে। কিন্তু এমনটিই কী হওয়া উচিত? শিক্ষকতা কী শুধুই একটি পেশা? অথচ আমার এক শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন যে শিক্ষকতা হলো একটি সেবা যেখানে থাকবেনা কোন পক্ষপাতদুষ্টতা, থাকবে না কোন বৈষম্য, থাকবে না কোন স্বজনপ্রীতি। একজন শিক্ষকের নজরে প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী হবে সমান।
যদি উক্ত শিক্ষকের নিজের সন্তানও তার শ্রেণীকক্ষে থাকে তবুও তার প্রতি আলাদা দৃষ্টি দেওয়ার সুযোগ তার নেই। শিক্ষক তার জ্ঞানের দ্বারা মোহিত করবেন সকলকে, তার মনোযোগ থাকবে সমানভাবে সকল শিক্ষার্থীর প্রতি, প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীকে তিনি মূল্যায়ন করবেন নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে যাতে তার যোগ্য মূল্যটাই সে পেতে পারে। যখন বাস্তবিক পক্ষে শিক্ষকরা এমন করতে পারবেন তাহলেই বলতে হবে শিক্ষকের শিক্ষণ সফল হয়েছে, শিক্ষার্থীদের শিখন পরিপূর্ণ হয়েছে।
লবিং নামক এই বিষয়টির জন্য আমি সর্বাগ্রে দায়ী করবো আমাদেরকে, শিক্ষার্থীদেরকে। কেননা, আমরাই মূলত এই লবিংয়ের জন্মদাতা এবং প্রশ্রয়দাতা।
আমি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, কেউ কেউ আছে যারা লবিং করতে করতে এমন এমন কাজ করে বসে যার দ্বারা যে তার স্বকীয়তাকে হারিয়ে ফেলে, অন্যভাবে বলতে গেলে তার স্বকীয়তাকে বিক্রি করে দেয়।
হ্যাঁ, আমি একথা বলছি না যে, শিক্ষকের সাথে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক থাকবে না। অবশ্যই থাকবে। বরং একটি শিখন-শিক্ষণ পরিবেশকে সফল করার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক খুবই জরুরী। কিন্তু একথা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে এই সম্পর্ক যেন শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে প্রভাব বিস্তার না করে এবং সেখানে যাতে একশতভাগ নিরপেক্ষতা বজায় থাকে।
লেখা আর লম্বা করতে চাই না। শিক্ষার্থীদের জন্য আমি বলবো যে, শিক্ষকদের সাথে আমরা অবশ্যই ভালো সম্পর্ক বজায় রাখবো কিন্তু সেই সম্পর্ক যেন একটি সীমার মধ্যে থাকে এবং তার জন্য যেন আমরা আমাদের স্বকীয়তাকে হারিয়ে না ফেলি। অন্যদিকে, শিক্ষকদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে যে আপনারা অনুগ্রহ করে আমাদেরকে নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন করবেন....হতে পারে আপনার কোন একজন শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ কিন্তু সেই পছন্দকে পছন্দের তালিকাতেই রাখবেন, সেটা যেন শিক্ষার্থীর মূল্যায়নে প্রভাব না ফেলে। আমার কাজ ছিল বলার, আমি বলে দিলাম। এবার লবিং এর বিপরীতে আওয়াজ তোলা না তোলা এটা আপনাদের বিবেচনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।