আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলাম বনাম পুঁজিবাদ ( পর্ব ০২)

আগুন্তক ইসলাম মূলধন এবং সংগঠকের মধ্যে কোন পার্থক্য করেনি। কারন টাকা পয়সা যা ব্যাংক ধার দেয় তা মূলত ব্যাংকের নয়, এ মূলধনের মালিক মূলত আমানতকারি। সুতরাং আমানতকারি এবং সংগঠক একই। এভাবে ধার করা অর্থই ব্যাংকে আমানত করা হয়। এ অর্থ বা মূলধন অবশ্যই সংগঠকের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে হবে।

ইসলামী ব্যাংকের ৫ টি মূলনীতি হলোঃ- ১। তাওহীদ তথা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। আল্লাহ্‌র একত্ববাদ। ২। রিসালাত তথা মহানবী (সঃ) এর নবুয়তের পদ্ধতি অনুযায়ী সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করা।

৩। খিলাফা তথা আল্লাহ্‌ মহাজ্ঞানী এই বিশ্বাসে বিশ্বাস করা। ৪। তাজকিয়াহ। ৫।

দায়িত্বশীলতা। ইসলামী ব্যাংকিং এ ৫ টি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। আধুনিক ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংকের মধ্যা পার্থক্য লক্ষ্য করি। আধুনিক ব্যাংকঃ- ১। কার্যক্রম পরিচালনার কোন ধর্মীয় ভিত্তি নেই।

২। বিনিয়োগকারী পূর্বনির্ধারিত হারে সুদ পাওয়ার নিশ্চয়তা পেয়ে থাকেন। ৩। কোন বাধা নিষেধ, বাছ-বিচার ছাড়াই মুনাফা সর্বোচ্চ করণ চূড়ান্ত লক্ষ্য। ৪।

যাকাতের কোন সংশ্রব নেই। ৫। ঋণ খেলাপিদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ বা চক্রবৃদ্ধি সুদ দাবী করতে পারে। ৬ অর্থ ধার দেয়া এবং সুদ সহ তা ফেরত দেয়াই মুল লক্ষ্য। ৭।

ব্যাক্তি স্বার্থই প্রায়শঃ মুখ্য হয়ে দাড়ায়। ভারসাম্য পূর্ণ প্রবৃদ্ধির নিশ্চয়তার জন্য এখানে উদ্যেগ বা কৌশল নেই। ৮। মুদ্রাবাজার হতে ঋণ গ্রহন তুলনা মুলকভাবে সহজ। ৯।

প্রদেয় ঋণ হতে প্রকাশ্য আয় পূর্ব নির্ধারিত হওয়ায় প্রজেক্ট মুল্যয়ন এবং দক্ষতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব প্রদান গৌণ প্রসঙ্গ। ১০। মক্কেলের ঋণ গ্রহন যোগ্যতার উপর অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। ১১। মক্কেলের সাথে সম্পর্কের দিক থেকে ব্যাংকের স্ট্যাটাস হলো উত্তমর্ণ ও অধমর্ণের।

১২। সকল ধরনের আমানতের নিশ্চয়তা দিতে হয়। ১৩। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে হালাল হারাম বিবেচনা করা হয়না। ১৪।

এই ব্যবস্থায় যুলুম শোষণের বিস্তার ঘটে। ইসলামী ব্যাংকিংঃ- ১। কার্যক্রম পরিচালনা প্রণালী ইসলামী শরীয়তের উপর প্রতিষ্ঠিত। ২। মূলধন সরবরাহকারী ( বিনিয়োগকারী) এবং তহবিল ব্যবহারকারীর ( উদ্যেক্তা ) মধ্যে ঝুঁকি বণ্টনকেই উৎসাহিত করা হয়।

৩। মুনাফার সর্বোচ্চ করণ লক্ষ্য, তবে তা শরীয়তের সীমারেখার মধ্যে। ৪। যাকাত সরবরাহ এবং বণ্টন এর অন্যতম সেবামূলক কাজ। ৫।

লাভ লোকসানের অংশীদারি ব্যবসায় অংশগ্রহণ ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কাজ। ৬। ঋণ খেলাপিদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ দাবী করার কোন সুযোগ নেই। ৭। এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো ভারসাম্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধির নিশ্চয়তা।

৮। মুদ্রা বাজার হতে ঋণ গ্রহন তুলনামূলক ভাবে কঠিন। ৯। লাভ ক্ষতির অংশীদারিত্বের কৌশল থাকায় প্রজেক্ট মুল্যয়ন ও দক্ষতা অর্জনের উপর অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। ১০।

মক্কেলের সঙ্গে সম্পর্কের দিক থেকে ব্যাংকের স্ট্যাটাস হলো অংশীদারি বিনিয়োগকারী এবং উদ্যেক্তা। ১১। সকল বিনিয়োগ হালাল হারামের বিচার করা হয়। ১২। এই ব্যবস্থায় আর্থ সামাজিক সুবিচার ও কল্যান নিশ্চিত হয়।

তহবিল সংগ্রহের পদ্ধতিঃ- [si]আল ওয়াদিয়াহঃ- এই Account বৈশিষ্ট হলো আমানতকারি ইসলামী ব্যাংকের স্থায়ী হিসাবের এ হিসাবে টাকা আমানত করবে। ইসলামী ব্যাংক যে টাকা আমানতকারির কাছ থেকে গ্রহন করবে তা আমানতকারির অনুমতি সাপেক্ষে ব্যবহারের সুযোগ পাবে। ব্যাংক যদি লোকসান দেয় তবে এ লোকসানের ভার আমানতকারির উপর পড়বে না। আবার ব্যাংক যদি লাভ করে তবে সে লাভের অংশও আমানতকারিকে দিতে বাধ্য থাকবে না। আমানতকারি টাকা জমা রাখবে শুধু তার অর্থের নিরাপত্তার জন্য।

অর্থাৎ আপনি আপনার অর্থ জমা রাখবেন অর্থের নিরাপত্তার জন্য। যদি ব্যাংক আপনার অর্থের দ্বারা কোন লাভ করে এবং লাভের কিছু অংশ উপহার স্বরূপ আপনাকে দেয় তবে তা নিতে শরীয়ত অনুযায়ী কোন বাধা নেই। কিন্তু আপনি কোন ক্রমেই নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভের অংশ দাবী করতে পারবেন না। এই পদ্ধতি ইসলাম অনুমোদন দেয়। আপনার যদি ইচ্ছে হয় তবে আপনার অধিকার আছে এ অর্থ ফেরত দেয়ার।

মুদারাবা পদ্ধতিঃ- মুদারাবা হিসাবের অপর নাম Investment Account. একে আধুনিক ব্যাংকের Fixed Deposit Account –এর সমতুল্য বলা যায়। এ পদ্ধতিতে আপনি নির্দিষ্ট সময়ের( সাধারনত ৩ এর গুণিতক) জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ রাখলেন। এ অর্থ ব্যাংকের দ্বারাই ব্যবহৃত হয় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। এখানে ব্যাংক যে পরিমাণ লাভ করুক না কেন তা পূর্ব নির্ধারিত অনুপাতে বন্টিত হবে। ব্যাংক নির্দিষ্ট সময়ে যে লাভ করবে তা ব্যাংক এবং আপনার মধ্যে পূর্ব নির্ধারিত অনুপাতে বন্টিত হবে।

ধরুন, আপনি ১ বছরের জন্য ১০০০ টাকা জমা রাখলেন এবং চুক্তি করলেন যে ব্যাংক আপনাকে লাভের ৭০% দেবে। ব্যাংক যদি ঐ সময়ে আপনার টাকা দিয়ে ১০০ টাকা লাভ করে তবে আপনাকে দেবে লাভের ৭০ টাকা আর ব্যাংক রাখবে ৩০ টাকা। যদি ১০০০ টাকা লাভ হয় তবে আপনি পাবেন লাভের ৭০০ টাকা এবং ব্যাংক রাখবে ৩০০ টাকা। যদি কোন লাভ না হয় তবে ব্যাংক এবং আপনি কোন লাভ পাবেন না। অর্থাৎ ১ বছর পর আপনার ১০০০ তাকাই ফেরত পাবেন।

কিন্তু যদি লোকসান হয় তবে এ পদ্ধতিতে লোকসান বহন করবে শুধু আমানতকারি। ধরুন ১০০ টাকা লোকসান হলো। তাহলে আপনার উপরি লোকসান বর্তাবে। অর্থাৎ আপনি ১ বছর পর ৯০০ টাকা ফেরত পাবেন। কিন্তু বাস্তবে ব্যাংকও লোকসানের সম্মুখিন হলো।

কারন ব্যাংকের নিজস্ব পরিচালনা ব্যায় (যেমন স্টাফদের বেতন) আছে। সুতরাং ব্যাংক নিজেও লোকসানের ভাগিদার হয় যদিও তা আমানতকারির সাথে শতকরা হিসাবে তুলনামূলক ভাবে কম। আধুনিক ব্যাংক আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ দেয়। ব্যাংকের লাভ লোকসানের কোন প্রতিক্রিয়া আপনার উপর পড়ে না। ধরুন আপন ১০০০ টাকা এক বছরের জন্য রাখলেন।

তারা আপনাকে ৭% হারে ৭০ টাকা দেবে এবং আপনি পাবেন ১০৭০ টাকা। ব্যাংকের লাভ যত বেশী হোকনা কেন আপনি ৭০ টাকাই পাবেন, যা নির্দিষ্ট। এ পদ্ধতি ইসলাম সমর্থন করে না। আধুনিক ব্যাংকে সুদের হারের ক্ষেত্রে দর কষাকষি চলে আর ইসলামী ব্যাংক এ লাভের অনুপাত নিয়ে দর কষাকষি চলে। ইসলাম বনাম পুঁজিবাদ ( পর্ব ০১) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.