(সকল ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক)
২৭ টি সংগঠনের নেতারা একত্রিত হয়েছেন। সবাইকে চেনা যাচ্ছে না। এদের একজন এর নাম শাহরীয়ার কবির , একজন স্বঘোষিত নেতা ইমরান, একজন নাসিরুদ্দিন বাচ্চু । এরা সবাই ইদানিং খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
দেশটা আবার মধ্যযুগে চলে যেতে পারে !!! তারা তাদের প্রতিনিধি নিয়োগ দিলেন।
বাংলাদেশের আইনজীবিদের মধ্যে যারা যারা মধ্যযুগ বিশেষজ্ঞ তাদের প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হলো।
এরা সবাই বিশ্বের গুরূ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নালিশ করতে গেলেন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের নালিশ শোনার ও বুঝে নেয়ার জন্য লোক পাঠালেন। সেই লোকের নাম মি. জনসন। এই ভদ্রলোকও একজন উকিল ছিলেন।
ইদানিং প্রেসিডেন্ট ওবামার খুব কাছের লোক হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের ও দক্ষিন এশিয়ার নালিশগুলো শোনার জন্য বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন।
তিনি প্রথমেই সবাইকে দেখে অভিবাদন জানালেন।
অভিবাদনের জবাব দিলেন উপস্থিত ২৭ জন প্রতিনিধি। প্রতিনিধিদের মধ্যে সুন্দরী তরুনী প্রতিনিধি ছিল তিনজন। তারা আবারো তাদের লিপস্টিক ও অন্যান্য দৃশ্যমান অঙ্গ ঠিকঠাক আছে কিনা তা চেক করে দেখে নিলেন।
মি. জনসনঃ আচ্ছা আপনারা এই ২৭ জনই কি কথা বলবেন? তাহলে তো আমার জন্য মুশকিল হবে। যদি পারেন আপনাদের মধ্য থেকে দুজন কথা বলুন। বাকিরা উপস্থিত থাকুন, সমস্যা নেই। প্লিজ ঠিক করে নিন যে কোন দুজন কথা বলবেন।
প্রতিনিধিরা নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিলেন।
তারা আসলে ঠিক করতে পারলেন না যে কোন দুজন কথা বলবেন। শেষমেষ গায়ের জোরে দুজন নিজেরাই নিজেদের সিলেক্ট করলেন ও অন্যরা মুখ গোমরা করে বসে রইলো।
মি. জনসনঃ তাহলে প্লিজ বলুন আপনাদের মুল নালিশ কি নিয়ে।
প্রতিনিধি ১। ( মুখটা যথাসম্ভব কাচুমাচু করে) আসলে হয়েছে কি স্যার আমাদের দেশটা মধ্যযুগে চলে যাচ্ছে।
মি. জনসনঃ আপনাদের দেশটা কে মধ্যযুগে নিয়ে যাচ্ছে?
প্রতিনিধি ২। হেফাজতে ইসলাম।
মি. জনসনঃ এরা কারা, এরা কি কোনো বড় রাজনৈতিক দল?
প্রতিনিধি ২ । না স্যার।
মি. জনসনঃ আপনারা কারা? আপনারা কি কোনো রানৈতিক দল, আপনারা কি দেশের জনগনের প্রতিনিধিত্ব করেন?
প্রতিনিধি ১।
( একটু ভড়কে গিয়ে) না স্যার আমরা কোনো বড় দল বা জনগনকে প্রতিনিধিত্ব করি না। আমরা যাষ্ট বিশাল বড় একটি দলকে পেছন থেকে ঠ্যালা দেই ( পুশ ব্যাক)।
মি. জনসনঃ সেই ঠ্যালায় কি কাজ হয়?
প্রতিনিধি ২ । স্যার , যাদের ঠ্যালা দেই সেই দলের কোনো কাজ হয় কিনা তা জানিনা , তবে আমাদের অনেক কাজ হয়।
মি. জনসনঃ এবারে বলুন যে কিভাবে দেশ মধ্যযুগে চলে যাচ্ছে? টাইম মেশিনটা কি আপনাদের কারো আবিস্কৃত ? এটা তো বিশাল ব্যাপার।
প্রতিনিধি ১ । আসলে স্যার হেফাজত ইসলাম নামে একটি সংগঠন এমন কিছু দাবি করেছে যে সেগুলো মানলেই দেশ মধ্যযুগে চলে যাবে।
মি. জনসনঃ আপনাদের মধ্যযুগে নাকি অনেক ভাল অবস্থা ছিল, ধন ধান্যে পুস্পে ভরা ছিলেন আপনারা। সেখানে গেলে তো ভালই হয়, এত আপত্তি কেন করছেন?
প্রতিনিধি ২। আসলে স্যার সেই মধ্যযুগে না, এটা অন্য মধ্য যুগে নিয়ে যাবে।
এই দেখেন স্যার তারা কি কি দাবি করেছে।
মি জনসনঃ ( লিষ্ট পড়ে) কোন কোন দাবি মানলে আপনাদের দেশ মধ্যযুগে রওয়ানা হবার আশংকা আছে বলে আপনি মনে করেন?
প্রতিনিধি ১ । এর একটি দাবি মানলেও দেশ মধ্যযুগে চলে যাবে স্যার। আপনি দেখেন স্যার এই যে সংবিধানে আল্লাহর উপর পূর্ন আস্থা ও বিশ্বাস, আবার ধর্ম বিদ্বেষী ব্লগারদের ফাঁসি , আবর নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা.............
মি. জনসনঃ আমি পড়ে দেখলাম। আচ্ছা আপনারা কি কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন?
প্রতিনিধি ২ ।
স্যার আমরা তো ধর্মে বিশ্বাস করি , তবে আমরা যাদের প্রতিনিধিত্ব করছি তাদের কথা বলতে পারবো না।
মি. জনসনঃ আপনাদের দেশে তো এই ২০১১ সাল পর্যন্ত গড এর প্রতি পূর্ন আস্থা কথাটি ছিল, তখন কি আপনাদের দেশ মধ্যযুগে ছিলো? আচ্ছা আপনারা কি সর্বশক্তিমান গড মানে আপনাদের ধর্মে তো আল্লাহ বলেন, তার উপর পূর্ন আস্থা ও বিশ্বাস রাখেন?
প্রতিনিধি ১। আমরা রাখি স্যার।
মি. জনসনঃ এটা তো সব ধর্মের লোকজনই রাখে। আমেরিকায়ও সবাই রাখে।
এটা সংবিধানে থাকলে দেশ মধ্যযুগে কেন চলে যাবে? আচ্ছা যারা ধর্ম বিদ্বেষী তাদের আপনারা শাস্তি চান কি না?
প্রতিনিধি ১। না স্যার চাই না। ( অন্যান্য ২৫ প্রতিনিধির মধ্যে একটু চাপা গুঞ্জন দেখা যায়)
মি. জনসনঃ তাহলে আপনাদের ধর্ম নিয়ে সবাই গালাগালি করে লেখালেখি করুক সেটা চান? আপনারা আজ বিচার না চাইলে তো তাই হবে।
প্রতিনিধি ২ । ( অবস্থা বেগতিক দেখে ) স্যার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার..........
মি. জনসনঃ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তো আপনারা যাকে পুশব্যাক করছেন সেই সরকারই করছে।
সেটার সাথে এর কি সম্পর্ক? হেফাজতের কেউ কি যুদ্ধাপরাধী? তাদের কারো নামে কি মামলা আছে?>
প্রতিনিধি ১। না স্যার।
অবস্থা খুবই বেগতিক দেখে এতক্ষন চুপচাপ থাকা এক ভদ্রলোক যিনি ঘাদানিক নামে একটি সংগঠনের প্রতিনিধি, তিনি দৌড়ে আসলেন,
প্রতিনিধি ৩। স্যার জামাত , জামাত , জামাত.........
মি. জনসনঃ আপনি যার প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি কি জামাত? তিনি কি একাত্তরে জামাত করতেন?
প্রতিনিধি ৩ । নাউজুবিল্লাহ, স্যার কি বলেন !!! আমি যার প্রতিনিধিত্ব করি , তিনি একাত্তরে ছোটখাটো ব্যাবসায়ী ছিলেন।
তিনি পাকিস্তান সরকারের আর্মিদের মুরগী সাপ্লাই দিতেন । তিনি জামাত হতে যাবেন কেন? আমি তো স্যার জামাতের ষড়যন্ত্রের কথা বলছি।
মি. জনসনঃ হেফাজতের মধ্যে কি জামাত ছিল? তাদের পক্ষে কি জামাত বক্তৃতা করছে?
প্রতিনিধি ১। না স্যার , তাদের সাথে জামাত আসবে কেন? জামাত তো ৫০ বছর আগে থেকেই হেফাজতের নেতাদের শত্রু। তারা একে অন্যকে দেখতে পারে না।
মি. জনসনঃ তাহলে জামাত জামাত কেন করছেন?
প্রতিনিধি ২। কিন্তু স্যার হেফাজতের এই ১৩ দাবি তো আর মানা যায় না। নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ, দেখেছেন?
মি. জনসনঃ আমি আপনার কষ্টটা বুঝতে পারছি। আমি যখন আপনাদের দেশে সর্বশেষ সফরে গেলাম তখন দেখলাম, আপনাদের সরকার প্রচুর বিজ্ঞাপন দিয়েছে এইডস থেকে বাঁচতে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা করা যাবে না , ইত্যাদি। আপনাদের সরকারও তাহলে মধ্যযুগে আছে দেখছি।
প্রতিনিধি ১। বিষয়টা আসলে তা না। স্যার আসলে আপনি বুঝতে পারছেন না। সবগুলো দাবি মানলে দেশ মধ্যযুগে চলে যাবে। স্যার আপনাদের দেশেও তো এসব দাবি মানতেন না।
মি. জনসনঃ আপনাদের দেশের বিরোধী দল কি সবগুলো দাবি মানতে বলছে সরকারকে?
প্রতিনিধি ২। না স্যার বিরোধী দলও তাদের সবগুলো দাবির সাথে একমত না। মুর্তি স্থাপন বন্ধ, নারীনিতি ও নারী পুরুষের একত্রে কাজকর্ম করা সংক্রান্ত দাবিগুলো বিরোধী দলও মানেনি স্যার। সুতরাং এগুলো মানার প্রশ্নই আসে না।
মি. জনসনঃ তাহলে তো সহজই হয়ে গেল, আপনারা বিরোধী দলের সাথে আলাপ করে হেফাজতের সাথে সমঝোতায় আসেন।
সাধারনত ১৩ টি দাবি দিলে দেখা যাবে দুই বা তিনটি দাবি মানলেই আন্দোলন থেমে যায়। তাহলেই তো আর দেশ মধ্যযুগে যাবে না। যান সেইটা করেন।
প্রতিনিধি ৩ । ( মাথা চুলকিয়ে ) একটা বড় সমস্যা আছে স্যার, বিরোধী দলের সাথে যে আলাপ করা যাবে না।
বিরোধী দলের প্রথম সারির সব নেতা এখন জেলে আছেন। তাদের সাথে কিভাবে আলাপ করবো স্যার ?
মি. জনসনঃ বলেন কি !! একটা দেশের বিরোধী দলের সব নেতা জেলে। সেটা নিয়ে আপনাদের মাথা ব্যথা নেই, আপনারা এসেছেন আপনাদের পুশ ব্যাক দলের পক্ষে সাফাই গাইতে? আবার দাবি করছেন আপনারই দেশের সুশীল সমাজ? আর বলছেন দেশ যেন মধ্যযুগে না যায়..?? আপনাদের মনে হয় কোথাও হিসেবে ভুল হয়েছে। আপনারা অলরেডি মধ্যযুগেই আছেন !!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।