ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকার একটি বিলাসবহুল এ্যাপর্টমেন্ট!নামী ডেভেলপার কোম্পানীর দামী এ্যাপার্ট!২৪০০ বর্গফুটের এই ফ্ল্যাটটিতে আছে ৪টি বেডরুম,সাথে ৪বাথ,আলাদা সার্ভেন্ট বেড,বাথ,ড্রয়িং,ডাইনিং,ফ্যামেলি লিভিং কাম লাইব্রেরি,রান্নাঘর ও ৪টি বারান্দা!২ফুট/২ফুট মিরর পলিশ মার্বেল টাইলস দিয়ে পুরো মেঝে,তাতে ছবি দেখা যায় আয়নার মতোই!মাস্টার বাথে আছে আধুনিক বাথটাব,মার্বেল টপস!রান্নাঘরের কেবিনেট সেগুন কাঠের,গ্রানাইট টপস!সব বেডরুমের ফার্নিচার ও কেবিনেট আসল সেগুন কাঠের,মনে হয় যেন সোনা রং চুঁইয়ে পড়ছে!ড্রংয়িংরুমে ৩লাখ টাকা মূল্যের রাজকীয় সোফাসেট,সুপার এ্যান্টিক টার্কিস কার্পেট,ক্রিস্টালের শো-পিস,বিদেশী বড় বড় দু’টি জারে সাজানো ফুল,লেটেস্ট মডেলের এল.ই.ডি টি.ভি,মাথার ওপর ঝুলছে ঝাড়বাতি!ডাইনিংয়ে ওক কাঠের এ্যান্টিক কালারের টেবিল,চেয়ার ও ডিনার ওয়াগন!ওভেন,ফ্রিজ,রাইসকুকার থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিকস কোন জিনিষ বাকি নেই!প্রতিটি ঘরেই রুচিশীল ভারি পর্দার পেছনে ঝুলছে নেটের দৃষ্টিনন্দন পর্দা!ফ্যামেলি লিভিংয়ের কাচের কেবিনেট বোঝাই বই আর বই!সবই সুন্দর করে সাজানো গোছানো!কোথাও যেন কোন মাত্রাতিরিক্ত বাহুল্য নেই!এক কথায় চোখ জুড়িয়ে যায় এ্যাপার্টমেন্টটিতে ঢুকলে ! এই বাড়িটির মালিক ভদ্রলোক একজন অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার!জীবনের শেষপ্রান্তে এসে তিনি এই বাড়িটি কিনেছেন!২৫বছর বয়স থেকে ৫৭বছর বয়স পর্যন্ত তিনি সারা দিনরাত কঠিন পরিশ্রম করেছেন রোগি দেখা এবং তারপর প্রশাসনিক চাকুরীতে!সকাল থেকে রাত অবধি দম ফেলার ফুরসৎ পাননি!৪বছর আগে অবসর নিয়েছেন ।ডাক্তার সাহেবরা ৯ভাই ৩বোন ।একমাত্র তিনি ছাড়া আর সব ভাই বোনদেরই দেশে বিদেশে ৪-৬তলা বাড়ি,লেটেস্ট মডেলের গাড়ি!ভাইবোন আত্মীয়-বন্ধু ঢাকা শহরে ডাক্তার সাহেবের বাড়িঘর জমিজমা কিছু নেই বলে তার প্রতি করুণার দৃষ্টিতে তাকাতেন,উপদেশের তুবড়ি ছোটাতেন,তার বাড়ি না থাকার দুঃখে তারাই মরে যেতেন!তার কলিগ আর অধস্তন কর্মকর্তা কর্মচারিরা বলতেন,‘স্যার এখন নয় পরে বুঝবেন!এ যুগে কি এমন সৎ হলে চলে?’ডাক্তার ভদ্রলোকের বউটির প্রতি ইংগিত করে আত্মীয়রা বলতো,‘বউটি সাংসারিক নয়!আরে বাবা ছেলে মানুষ সবসময় ব্যস্ত থাকে টাকা রোজগারের ধান্ধায়,তুই না বলে কয়ে বাড়িঘর কেনাবি?তা নয়,খালি হাসপাতালের চাকরী আর ছেলেমেয়েদের পড়ানো!একটা টিচার রেখে দিলেই তো হয়,তা নয় ,তিনি নিজে পড়াবেন!’এ যেন ‘রাজা করিতেছে রাজ্য শাসন,রাজারে শাসিছে রাণী…’।ভদ্রলোকের স্ত্রীটিও পেশায় ডাক্তার।জা’য়েরা তো সরাসরি বলে,‘তোমার এতটুকু বুদ্ধি নেই?শেষ বয়সে কোথায় থাকবে?ছেলেমেয়েদের জন্যও তো চিন্তা করতে হয়?এ জীবনে যদি ভোগই করতে না পারলে,তবে আর কবে করবে?’বউটি মিনমিন করে বলে,‘ভাবি,ছেলেমেয়েদের লেখা পড়া শিখিয়ে মানুষ করে দিচ্ছি,তাদের নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরাই করে নেবে।আমরাও তো নিজেরাই করে খাচ্ছি,বাবা-মায়ের থেকে তো এখনও কিছু পাইনি।’তারপরও স্বামীর ব্যস্ততার ফাঁকে কে কি বললো এটা বলে মনে করিয়ে দেয়,কিছু একটা করা দরকার ।ডাক্তার সাহেব শুনে বলেন,‘আমরা কি গাছতলায় বা রাস্তায় আছি নাকি?তাদের ৬তলা বাড়ির ১টি ফ্ল্যাটেই তো থাকে তারা,বাকি ৫টা ভাড়া,৫ ভাড়াটিয়ার অভিশাপ কুড়ায়,এর নাম ভোগ করা?আমরাও তো এখন বাড়ি করলে নিজেরা থাকতে পারবো না,ভাড়া দিয়ে রাখতে হবে,আমাদের হলো বদলির চাকরি।আর একটা মানুষের জন্য কতটুকু জায়গা জমি দরকার?সময় হলে হবে।’ শেষ বয়সে অবসর সময়ে সেই বাড়ি হলো!ভদ্রলোক সারাদিন বাড়ির জানালা দরজার কাঁচ ঝাড়পোছ করেন,ফার্নিচার মুছে চকচকে করে রাখেন আর ঘুরে ফিরে ফটোগ্রাফারদের মতো বিভিন্ন এ্যাঙ্গেল থেকে বাড়িটি দেখেন,মুগ্ধ হন!আর বলেন,‘আগে যদি বাড়ি করতাম তবে তো বাড়ির যত্ন করা,ভালোভাবে দেখাশোনাও করতে পারতাম না!সবকিছুরই যত্ন নেয়া,ভালোভাবে দেখাশোনা না করলে সে জিনিষের কোন কদর থাকে না!আজ নতুন বাড়ি,সব সুন্দর!আগে বাড়ি করলে আজ পুরনো বাড়িতে উঠতে হতো!’তাঁকে খুব সুখি মনে হয়! যেসব আত্মীয়-স্বজন আগে তাঁর দিকে করুণার চোখে তাকাতো,বাড়ি নেই বলে দুঃখে মরে যেতো,তারাই আজ ভদ্রলোকের এতা সুন্দর বাড়ি আর আনন্দ দেখে কষ্টে মরে যাচ্ছে!একই মানুষের মাঝে একইসঙ্গে এরকম বিপরীত ধর্মী দ্বৈতসত্ত্বার উপস্থিতি বুঝি মানুষের মাঝেই সম্ভব!
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।