আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"আধুনিকতা" .............. নির্লজ্জতার প্রতিশব্দ ?

আজ আমার ভাগ্নি নুস্রাত এর জন্মদিন। ৮ এ পা দিলো এবার। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। আপা ফোন দিয়ে বলল বাসায় যেতে। গিয়ে দেখি কেক-টেক নিয়ে বিশাল আয়োজন।

ভাগ্নি বলল ' মামা, আমার জন্য কি এনেছ ?' জিভ কেটে বললাম ' ইশ , ভুলে গেছি ' । ' ওসব চলবে না। এখনই আমার শপিং করে দিবা । '.........ভাগ্নি বলল । সেইদিনের পুচকি কত কথা শিখেছে ।

অগত্যা বের হলাম ওকে নিয়ে । শপিং সেন্টারের এক দোকানে ঢুকে বললাম ছোটদের থ্রি-পিছ দেখাতে । নুস্রাত চিৎকার করে বলল ' আমি থ্রি-পিছ পরবো না । আমি জিন্স আর টিশার্ট কিনবো । আমি স্মার্ট না !!!! ' শুনে আমি আকাশ থেকে মাটিতে পড়লাম ।

আপা কে ফোন দিয়ে বললাম । আপা বলল ' আজকালকার মেয়েরা ত এগুলোই পরে । যা চায় কিনে দে । ' আপার কথায় এবার মাটি থেকে চলে গেলাম সোজা পাতালে । একটা কথাই মনে হল ।

'আধুনিকতা' র সংজ্ঞা আসলে কি ? সভ্যতা যত আধুনিক উপহার কি ততটাই অসভ্য ? আমি ই বোধহয় ভুল জানতাম। সভ্যতার মাপকাঠি নাকি জাতির আচরণ আর আব্রুতে । এখন দেখি পুরো উল্টা । একেই বোধহয় বলে " জেনারেশন গ্যাপ " । সভ্যতা এখন অনেক বিবর্তিত ।

সবকিছুই সময়ের সাথে বিবর্তিত হয় । কিন্তু মানুষ ত সৃষ্টির সেরা জীব । তাকে তো বিবর্তন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে । মানুষের সর্বপ্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তার পরিবার । বাবা-মা ই যদি আধুনিকতার নামে সন্তান দের উচ্ছৃঙ্খলতার শিক্ষা দেন তাহলে কার সাধ্য তাদের শৃঙ্খলার শিক্ষা দেয় ।

গায়ে কাপড় না রাখাই যদি হয় আধুনিকতা , তাহলে সমগ্র পশুপাখিরা তো মানুষ থেকে বেশি আধুনিক !! ছোট্ট একটা গল্প বলি । জনৈক ব্যাক্তি প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী লিওনার্দো র কাছে একটি সম্পূর্ণ নগ্ন মেয়ের ছবি নিয়ে গিয়ে বললেন , ' দেখুন, কি অশ্লীল ' । শিল্পী হেসে বললেন , ' এটা তো অনেক সুন্দর একটা ছবি '। এরপর তিনি রং-তুলি দিয়ে ছবির মেয়েটির হাতে ও পায়ে কালো মোজা এঁকে দিলেন আর বললেন , ' এখন এটা চূড়ান্ত অশ্লীল ' । অর্থাৎ ঢেকেও না ঢাকা কিংবা শরীরকে এমনভাবে উপস্থাপন করা যা অন্যের পশুত্বকে জাগ্রত করে তাই অশ্লীলতা ।

তাহলে আধুনিকতা আমাদের পোশাক আর অঙ্গভঙ্গির যে ক্যাটালগ দিয়েছে তা আসলে কি ? এটা বিষয়বস্তুর প্রেক্ষাপটে একটা উদাহারন মাত্র । এখন যদি কেউ সম্পূর্ণ দিগম্বর হয়ে সৌন্দর্যের চতুরদশ্তম বংশধারা পর্যন্ত উদ্ধারকার্যে উৎসাহী হয়ে ওঠেন তাহলে সেটা কতটা সমীচীন হবে তা নির্ভর করে আপনি কতটা "মানুষ" তার উপর । আমরা তো পোশাক পরি লজ্জা ঢাকার জন্য । তাহলে পোশাকের কাঁটাছেঁড়া করে সবাইকে স্যাম্পল দেখানোর তো মানে হয় না । যদি আমরা মনে করি যে মানুষ আর পণ্য এর মধ্যে এখনও পার্থক্য আছে ।

কথাটা শুধু নারী নয় বরং অনেক পুরুষের জন্য ও যাদের প্যান্ট -শার্ট এ প্রায়ই দেখা যায় যত্নের আঁচড় । লজ্জা এমন জিনিস যা নারীপুরুষ সবার থাকতে হয় । আমাদের সমাজের অন্যতম কিছু ক্ষত হচ্ছে ইভটিজিং , ধর্ষণ , পরকীয়া ইত্যাদি যার প্রধান কারন উচ্ছৃঙ্খল পোশাক আর আচরণ । নিজেকে পণ্য হিসাবে উপস্থাপন করলে ভোক্তা তো তা পেতে চাইবেই । তা সে কিনেই হোক কিংবা অন্য কোন অনৈতিক উপায়ে ।

স্বাভাবিক শালীন পোশাকে কি আধুনিকতা বাধাগ্রস্থ ? মনে হয় না । বরং অশালীনতা আধুনিকতাকে কলঙ্কিত করে । নগ্নতা, তা পোশাকেই হোক কিংবা আচারে ; কখনই আধুনিকতাকে সংজ্ঞায়িত করে না। বরং সভ্যতাকে অতীতে ঠেলে দেয় । সবচেয়ে জরুরী মানসিকতার পরিবর্তন অর্থাৎ সুচিন্তার পরিবর্ধন ।

আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা পরিবারের । কারন, শেকড়ের শক্তি ভালো ফসলের পূর্বশর্ত । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।