আধুনিকতার অনেক ছোঁয়া আমাদের সমাজে লাগলেও প্রকৃতপক্ষে আধুনিক হতে পারিনি আমরা। বিশেষ করে আমাদের চিন্তা-চেতনায়। এখনো আমাদের মাঝে ভর করে আছে নানা কুসংস্কার এবং সংকৃণ মনমানসিকতা।
সহজ করে কোনো কিছু ভাবতে আমরা সব সময় অনীহা বোধ করি। আবার নিজের সুবিধার্থে আমরা যেকোনো কিছুকে মেনে নিতে পারে সহজেই।
আমি কাউকে নির্দিষ্ট করে বলছি না। আমি যাদের কথা বলছি তাদের মধ্যে হয়তো আমিও আছি।
মানুষ তখনই কোনো কিছুতে সম্মতি প্রকাশ করে যখন সেখানে নিজের সুবিধা বা স্বার্থ থাকে। নিজের একটি ঘটনা দিয়েই উধাহরণ দেওয়া যাক। ‘আমার স্বামী কোথাও গেলে আমার সঙ্গে যাবার বায়না ধরি, বা আমি কোথাও গেলে তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চাই- কারণ তাকে ছাড়া আমার কোথাও যেতে ভালোলাগে না।
কিন্তু কিছুদিন আগে আমি যখন আমার বন্ধুদের সঙ্গে মেলায় গিয়েছি তখন তাকে আর সঙ্গে যাবার কথা জিজ্ঞেস করিনি। কারণ আমার মনে হয়েছে আমার বন্ধুদের সঙ্গে সে সহজভাবে মিশতে পারবেনা, তাছাড়া পর দিনই তার পরীক্ষায় তাই হয়তো সে যেতেও চাইবে না। ’ কিন্তু ওইদিন আমি বন্ধুদের সঙ্গে মেলায় গিয়ে তার অনুপস্থিতি খুব বেশি অনুভব করিনি। এ ঘটনায় অনেকেই আমাকে স্বার্থপর ভাববেন। ভাবাটাই স্বাভাবিক।
তবে ওইদিন আমি তার সামনে অনেকটা কাচুমাচু ভঙ্গিতেই ছিলাম।
এবার আরেটি ঘটনা বলি- ওইদিন ছিল ১৬ ডিসেম্বর। সরকারি ছুটির দিন থাকলেও আমাদের অফিস সেদিন খোলা ছিল। স্বাভাবিকভাবেই সেদিন অফিসের জন্য বাসা থেকে রওনা হয়েছিলাম। বাসস্ট্যানে এসে দেখি এই পথে কোনো বাস চলবে না আজ।
টেম্পুতে করে কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি রাস্তা আটকানো, ট্রাফিক-পুলিশ কোনো যানবাহন চলতে দিচ্ছে না। টেম্পু থেকে নেমে এক পুলিশকে জিজ্ঞেস করায় বললো ভিতরের পথ দিয়ে হেঁটে যেতে। অন্য সবার মতো আমিও হাঁটা শুরু করলাম। যেহেতু পথঘাট ভালো করে চেনা নেই, তাই সমস্যা হচ্ছিল। আমার স্বামীকে ফোন দিয়ে পরিস্থিতি বললাম, সে বললো দেখ কি করা যায়।
তার আবৃত্তি সংগঠনের বাচ্চাদের ওইদিন অনুষ্ঠান ছিল, সে জানালো ১টা পর্যন্ত সেখানে সময় দিতে হবে। অফিসের এক কলিগকে ফোন কওে অবস্থা জানালাম, বললাম দেরি হবে। হাঁটছি হাঁটছি হাঁটছি... কিন্তু পথ আর শেষ হচ্ছে না। বার বার পিছন দিকে তাকাচ্ছি যদি কোনো প্রেসের গাড়ি পেলে লিফট চাইবো। এতো দূর এসে গেছি যে বাসায়ও ফিরে যাবার উপায় নেই।
এক পর্যায়ে খুব কান্না পেল। খুব রাগ হলো তার ওপর। তাকে ফোন করে দু’একটা উচ্চবাচ্য করে ফোন রেখে দিলাম। সে বলছিল অফিসকে জানাতে। ওই একই অফিসে আমার দুজনেই একসময় ছিলাম।
তাই অফিসের ব্যবস্থাপনার ব্যাপাওে তার ভালো করে জানা। পা চলছিল না। মনে হচ্ছিল রাস্তায় বসে পরি। কাঁদছিলাম আর হাঁটছিলাম। এক সময় ফর্মিগেট পৌঁছে ৬ নম্বর বাসে করে অফিস এলাম।
অফিসের বস বললেন, ‘তোমার অফিস করতে হবে না, বাসায় চলে যাও। ’ রাগে-দুঃখে অফিসের টয়লেটে গিয়ে কিছুক্ষণ কান্না করলাম। মোবাইল বের করে দেখি তার একটা কল। আমি যখন বাসে, ফোনটা সে সময়ের। রিংটোন শুনতে পাইনি বলে রিসিভ করা হয়নি।
সে আমাকে উদ্ধার করার জন্য এলাকা থেকে বের হয়েছিল। আমি ফোন না ধরায় বোনোর বাসা ঘুরে এসেছে।
সেদিন বাসয় ফিরার পর আমাকে বলছিল, আমার মত হাজার হাজার মানুষ নাকি হেঁটে হেঁটে নিজেদের গন্তব্যে গিয়েছে। - আমি আগেই বলেছি, ওইদিন ছিল ১৬ ডিসেম্বর অর্থাৎ সরকারি ছুটির দিন। হাজার হাজার মানুষের ওইদিন বাইরে কাজের জন্য বের হওয়ার কথা না।
অনেকে হয়তো ভাবছেন আমি আমার স্বামীকে অন্যের চোখে ছোট করার জন্য ঘটনাটি বললাম। এরকম উদ্দেশ্য আমার নেই।
সব শেষে আরেকটি ঘটনা বলি, সম্প্রতি আগে আমার নতুন একটা চাকরি হয়েছে। ওখানে তিনটা শিফটে (সকাল ৮টা- দুপুর ৩টা, দুপুর ১২টা-রাত ৮টা, বিকেল ৩টা-রাত ১০টা) কাজ করা যায়। আমি বিকেলর শিফটি আমার জন্য সুবিধার মনে করছিলাম।
কিন্তু আমার স্বামীর সঙ্গে মতের অমিল হয়ে গেল। সে বললো, এত রাতে বাসায় ফেরা তার ফ্যামিলির কেউ মেনে নেবে না। টাকা-পয়সার এতো প্রয়োজন পরেনি যে আমাকে এত রাত পর্যন্ত কাজ করতে হবে। আমি তাকে আমার সুবিধা-অসুবিধাগুলো বলেও তাকে রাজি করাতে পারছিলাম না। আমার শ্বাশুরিকে বললাম।
শ্বাশুরি এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন। বললেন ছেলেকে সে রাজি করাবে। বুঝলাম সমস্যাটা ফ্যামিলির না, তার নিজের। যা হোক অনেক মনমালিন্যের পর ঠিক করলাম ৩দিন সকালে আর ৩ দিন বিকেলে কাজ করবো।
এ ঘটনাটা বললাম কারণ সে খুব নারী স্বাধীনতার কথা বলে।
তার চিন্তা-ভাবনাও খুব আধুনিক। কিন্তু নিজের স্ত্রীর বেলায় সে উদারতার বা অধুনিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারেনি।
যা দিয়ে শুর করেছিলাম ‘আধুনিকতা’। এখনো মনে প্রাণে আধুনিক হতে পারিনি আমি, আপনি বা সে। কবে একদিন মানুষ প্রকৃত অধুনিক হবে এটাই প্রত্যাশা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।