আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষমা করে দিও জাবেদ....

অভ্র, যুগান্তকারী বাংলা লেখার সফটওয়ার। জটিল কিবোর্ড লেআউট মুখস্থ করতে না পেরে যারা বাংলা লেখাকে ভুলতে বসেছিলেন, বিদেশী ভাষায় চালিয়ে যাচ্ছিলেন বাংলা লেখা, তাদের জন্য, আমাদের সবার জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে ফ্রি সফটওয়ার অভ্র। অভ্রর সহজবোধ্য লেখার উপায় ও ইউনিকোড ভিত্তিক ফন্টের কারণেই আজকের ব্লগিং জগতে বাংলার এই সদর্প পদচারণা। এই গ্রুপটিতে আমরা অভ্র নিয়ে কথা বলবো, অভ্রর এই সঙ্কট মুহূর্তে প্রিয় সামহয়ারইন ব্লগের ব্লগারদের কণ্ঠে ধ্বনিত হবে - "ভাষা হোক উন্মুক্ত"।   ২২ শে মার্চ সকাল, ঘুম টা ভাংলো সকাল ৯ টার দিকে।

ক্লাস নেই আজ আমার, সারাদিন বাসায় থাকার থেকে ভাবলাম ভার্সিটি গিয়ে আড্ডা দেওয়া যাক। যেরকম ভাবনা সেরকম কাজ, আনুমানিক সকাল ১০ টার দিকে ভার্সিটি পৌছালাম। ভার্সিটি পৌছে তেমন কাওকে চার দোকানে পেলাম না। কি করার চা পান করে ক্লাস এর দিকে গেলাম, দেখলম কোন এক ষ্টুডিওতে আমাদের সজীব সার ক্লাস নিচ্ছেন। আর একটি ষ্টুডিও তে এসে দেখলাম সায়রা আপু বসে কাজ করছেন, যাক গল্প করার একজন মানুষ পেলাম।

কথা হচ্ছিল প্রজেক্টের কাজ নিয়ে, কিছু সময় পর সাগর ভাই এর প্রবেশ। ষ্টুডিও তে ঢুকে সাগর ভাই এর প্রথম কথা, রাফি কাল তোমাকে কেন হাসপাতালে দেখলাম না? আমি অবাক হয়ে বললাম হাসপাতালে কেন যাবো ভাই? উত্তরে জানলাম, আমাদের ভার্সিটির এক ছোট ভাই জাবেদ হাসপাতালে। গত রাতে(২১ শে মার্চ মোঙ্গলবার,আনুমানিক ৮টা ৩০ এ) বাসের আঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। ভাবছিলাম কে এই জাবেদ ?? নামটা শুনেছি কিন্তু চেহারা টা মনে করতে পারছি না। জাবেদের কথা ভাবতে ভাবতে, নিচে এসে দেখি মোটামোটি পরিচিত অনেক মানুষের বিচরন চার দোকানের আশেপাশে।

সবার মুখে একি কথা জাবেদ। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের এশিয়া-কাপ এর ফাইনাল খেলা। তবে আজ প্রধান কাজ ছিল জাবেদ কে দেখতে হাসপাতালে যাওয়া। কিন্তু যাওয়া হল না কারন জাবেদের পরিবার নাকি আমাদের(ছাত্র-ছাত্রীদের) যাওয়া টা পছন্দ করছে না(যেটা পুরাপুরি ভুল খবর ছিল,যেটা পরেরদিন বিকালে জানতে পারি)। যাই হোক, ভার্সিটি তে খেলা দেখে রাতে বাসায় ফিরলাম।

বাসায় ফিরে, ফেসবুক খুলতেই ফেসবুক হোম পেজ এই জাবেদের ছবি দেখতে পেলাম। ছবি দেখে তো আমি পুরা হতবাক। এটা কার ছবি দেখছি!! এই ছেলেটা কে কয়েকদিন আগেই র‍্যাগ দিয়েছিলাম। নেচেছিল, গেয়েছিল, হেসেছিল আমাদের সাথে। যতবার ছেলেটি আমার চোখের সামনে পরেছে সর্বদা ঠোটের কোনায় একটা হাসি দেখেছি।

যতবার দেখা হয়েছে একটা সালাম দিয়ে আমার কুশল জানতে চেয়েছে। ওকে হাসপাতালে দেখতে না যাওয়া আর ওর জন্য কিছু করতে না পারার কেমন যেন একটা অপরাধবোধ আমাকে গ্রাস করতে শুরু করলো। পরের দিনই ছুটে গেলাম হাসপাতালে, যতদুর পেরেছি- যতটুকু পেরেছি- ওর কোন কাজে আসি বা না আসি থেকেছি হাসপাতালে ওর পাশে। একবার গিয়েছিলাম দেখতএও আই.সি.ইউ তে। আই.সি.ইউ তে মৃত-প্রায় জাবেদ, যার ব্রেন কোন কাজ করছেনা- নরছে না হাত-পা, শুনতে পারছেনা ডাক্তারের সাথে আমার কথোপকথন, দেখছেনা এই অপরাধী আমাকে যে গিয়েছে ওকে ২-দিন পরে দেখতে; কিন্তু ঐ দিনও ওর মুখে ঐ একি রকম নির্মল হাসির একটা ছাপ ছিল।

ওর ঐ নির্মল হাস্যোজ্জল মুখ যেন আজও আমার পিছ ছারে নাই। ২৬শে মার্চ বিকাল ৫টা, ছোট একটা ঘুম থেকে উঠে জাবেদের খবর নেয়ার জন্য ফোন করলাম ওর বন্ধু আদনান কে। ফোনটা রিসিভ করেই আদনান ওপাশ থেকে বললো " ভাইয়া জাবেদ নেই, এইমাত্র ওর লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হয়েছে, আপনি এখনি আসেন"। ছুটে গেলাম হাসপাতালে, কিন্তু কেমন এক অপরাধবোধে দেখতে পারিনি ওর মুখ। ওকে দাফনের জন্য ওর সাথে গেলাম চিটাগং, কিন্তু আপরাধবোধে দিতে পারিনি ওর কবরে দিতে পারিনি এক দানা মাটি।

ওকে দাফন করে ওর বাসায় যেতে, কথা হল জাবেদের মা'র সাথে। আমাদের দেখে জাবেদের মার প্রথম কথা আমার একটা জাবেদ গেছে কিন্তু আমি অনেক জাবেদ পেয়েছি। কিন্তু আমি তখনো বলতে পারি নি আন্টি আমি স্বার্থপর- আমি যান্ত্রিক, কাজের চাপে ব্যাস্ত আমি; আমার দ্বারা সর্বদা আপনাদের খোজ খবর নেওয়া সম্ভব না। হয়তবা প্রয়োজনে আমাকে ডাকলেও পাবেন না। জাবেদ আজ নেই।

কিন্তু আমি আজ অপরাধী, আমরা সবাই অপরাধী। আমরা কি পারতাম না জাবেদকে বাচাতে? কেন টাকার জন্য হাসপাতালের বারান্দায় আহত জাবেদ কে তিন-ঘন্টা ফেলে রাখা হল বিনা চিকিৎসায়? কেন তিলে তিলে মৃত্যুর মখে ঠেলে ফেলা হল জাবেদকে? এর জবাব কে দিবে-আমি জানিনা !!! আমি জানিনা ঢাকা-ভার্সিটির একটা ছেলে মারা গেলে খবরের কাগজে বড় করে লেখা হয়, আর আমাদের আধিকাংশ মিডিয়াকর্মী কেন এই জাবেদ হত্যার কথা প্রকাশ করেনাই? হয়তবা কারন একটাই আমরা প্রাইভেট-ভার্সিটির ছাত্র, রাস্তা-অবোরোধ-দাঙ্গা-ভাংচুর আমরা করি না। আমরা একের পর এক মানব-বন্ধন করেছি, শুধু একটাই দাবী আমাদের জাবেদের মত যেন আর কেউ বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়। আমি জানিনা, আমাদের দাবী কেউ শুনবে কিনা, আমাদের কথা কেউ বলবে কিনা। হাসপাতাল গুলা টাকার কথা চিন্তা না করে আগে চিকিৎসা করবে-এটাও সম্ভব কিনা,আমি বলতে পারবো না।

আমি এটুকুই বলতে পারি, জাবেদ আজ নেই হয়তবা কাল জাবেদকেই আমরা ভুলে যাবো। কাল হয়তবা ঠিক এভাবেই বিনা চিকিৎসায় আমার-আপনার কিংবা অন্যকারো হত্যা হবে। কিন্তু আমরা চুপ থেকে যাবো। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.