আওয়ামী লীগের চাহিদা অনুযায়ী সংসদীয় আসনের সীমানা প্রায় অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ৮৯টি আসনের সীমানা নতুন করে গড়ার প্রস্তাব করলেও চূড়ান্ত বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জের তিনটি ছাড়া বেশির ভাগ আসনে বড় কোনো পরিবর্তন আসছে না।
নারায়ণগঞ্জের তিনটি আসনের জন্য নতুন যে সীমানা প্রস্তাব করা হয়েছে, চূড়ান্ত বিবেচনায় তাতে আরও বেশি ভাঙচুর করা হচ্ছে। সেখানকার অন্যান্য আসনে ভোটার আড়াই থেকে পৌনে তিন লাখ হলেও নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে ভোটার সংখ্যা ছয় লাখের বেশি হচ্ছে। কমিশন এ ক্ষেত্রে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইন এবং নিজস্ব নীতিমালা অনুসরণ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত আসনের ব্যাপারে শুনানি শেষে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কয়েক দফায় বৈঠক করে কমিশন বেশির ভাগ আসনের সীমানা অপরিবর্তিত রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। কাল রোববারের বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। তার পরপরই নতুন সীমানার চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হবে।
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে সীমানা পুনর্নির্ধারণ-সম্পর্কিত সংলাপে আওয়ামী লীগ সংসদীয় আসনের সীমানা অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করে।
জাতীয় সংসদের সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইন ১৯৭৫ অনুযায়ী সীমানা পুনর্নির্ধারণের সময় প্রশাসনিক অখণ্ডতা, যোগাযোগব্যবস্থা এবং সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যার হিসাব যথাসম্ভব আমলে নিতে হবে।
২০০৮ সালে আসনপ্রতি জনসংখ্যা কমবেশি সমান রাখার চেষ্টা করে আসনবিন্যাস করা হয়। সীমানাবিন্যাসের জন্য কমিশনের এবারের গৃহীত নীতিমালায় বলা হয়েছে, যথাসম্ভব বিদ্যমান সীমানা অপরিবর্তিত এবং উপজেলা অখণ্ড রাখা হবে। এই নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে কমিশন ৮৯টি আসনের সীমানাবিন্যাসের প্রস্তাব করে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ হয়। গত ২৩ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত কমিশনের প্রস্তাবিত সীমানার ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। নতুন বিন্যস্ত আসনের মধ্যে ২৮টির ব্যাপারে কোনো আপত্তি জমা পড়েনি।
৮৯টি আসনের মধ্যে সর্বাধিক ১৬টি আসন ঢাকার। কমিশনের প্রস্তাবে ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৬টি নতুন করে বিন্যাস করা হয়। এতে দোহার, নবাবগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে আলাদা তিনটি আসন (ঢাকা-১, ২ ও ৩) গঠন করা হয়। এই তিনটি আসন গঠন করতে গিয়ে ঢাকার আরও ১৩টি আসনে ভাঙচুর করতে হয়। কমিশনের ঢাকার আসন বিন্যাসের বিরুদ্ধে এইচ এম এরশাদ, সাহারা খাতুন (ঢাকা-১৮), জাহাঙ্গীর কবির নানক (ঢাকা-১৩), রাশেদ খান মেনন (ঢাকা-৮), কামাল আহমেদ মজুমদার (ঢাকা-১৫), সাবের হোসেন চৌধুরী (ঢাকা-৯), মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন (ঢাকা-৭) ও আসলামুল হক (ঢাকা-১৪) আপত্তি জানান।
শেষ পর্যন্ত কমিশন ঢাকার বিদ্যমান আসন প্রায় অবিকৃত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ঢাকা-১৯ (সাভার উপজেলা) থেকে কাউন্দিয়া ইউনিয়ন বাদ দিয়ে তা ঢাকা-১৪-এর (উত্তর সিটির ৯, ১০, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড) সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে।
বিদ্যমান সীমানা অনুযায়ী সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩, ফতুল্লা থানা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ এবং নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর থানা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন। বর্তমানে এই তিন আসনের ভোটার যথাক্রমে চার লাখ পাঁচ হাজার ৫৪৩, চার লাখ ২২ হাজার ৯৮৭ এবং দুই লাখ ৭৪ হাজার ৫৫৯ জন। কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, আইন অনুযায়ী প্রশাসনিক অখণ্ডতা ও ভোটার সংখ্যার সামঞ্জস্যের কারণে এই তিনটি আসনে পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন ছিল না।
তা সত্ত্বেও কমিশন নারায়ণগঞ্জ সিটির বন্দর থানা ও সোনারগাঁ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩, ফতুল্লা থানার সঙ্গে আলীরটেক ও গোগনগর ইউনিয়ন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ এবং সিটির সদর থানা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন করার প্রস্তাব করে। প্রস্তাবিত এই তিন আসনের ভোটার সংখ্যা দাঁড়ায় যথাক্রমে তিন লাখ ৪১ হাজার ৬২০, চার লাখ ৫১ হাজার ২৪০ এবং তিন লাখ ৩৮ হাজার ৪৮২। কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, আইনগতভাবে এই বিন্যাসও গ্রহণযোগ্য ছিল।
কিন্তু এই বিন্যাসের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছেন তিনজন। সাবেক সাংসদ শামীম ওসমান ফতুল্লা থানার সঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জ জুড়ে দিয়ে আসন গঠনের দাবি জানান।
অন্যদিকে নাসিম ওসমান ও তৈমুর আলম খন্দকার বিদ্যমান সীমানা বহাল রাখতে বলেন। শেষ পর্যন্ত কমিশনের বিবেচনায় শামীম ওসমানের দাবিই যৌক্তিক বিবেচিত হওয়ায় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সূত্র জানায়, কমিশন সোনারগাঁ উপজেলা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ এবং নারায়ণঞ্জ সদর ও বন্দর থানা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে এই তিনটি আসনের ভোটার সংখ্যা দাঁড়াবে যথাক্রমে দুই লাখ ৪৪ হাজার, ছয় লাখ ২২ হাজার এবং দুই লাখ ৭৪ হাজার।
কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে ভোটার সংখ্যা ছয় লাখের বেশি হওয়াটা আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বিদ্যমান আসন বহাল বা প্রস্তাবিত সীমানা অনুমোদন করলে এই সমস্যা এড়ানো যেত।
কমিশন সূত্রমতে, অভয়নগর ও বাগারপাড়া উপজেলা নিয়ে যশোর-৬ এবং কেশবপুর উপজেলা নিয়ে যশোর-৪ আসন গঠন করা হচ্ছে। মনিরামপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত যশোর-৫ অক্ষত থাকছে।
বিএনপির সাবেক সাংসদ মনিরুল হক চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন কুমিল্লা-৮ আসন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন। কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, শেষ পর্যন্ত কমিশন কুমিল্লা-৮ ও ১০ আসনকে কিছুটা বিন্যস্ত করে বাকি দুটি আসন অক্ষত রেখে দিচ্ছে।
এর বাইরে কমিশন দেশের বিভিন্ন আসনে যেভাবে বিন্যাসের প্রস্তাব করেছিল তা আর হচ্ছে না।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ প্রথম আলোকে বলেন, কমিশন আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী আসনের সীমানা বিন্যাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বিশেষ কোনো দল বা ব্যক্তির সুবিধার কথা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।