গডফাদার টাইটেলটি যে অর্থে ব্যবহার হওয়া স্বাভাবিক সে একজন ভয়ংকর কেউ। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়াও হত্যা, মাদক ব্যবসা, রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ এ সবকিছুর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ থাকবে তার হাতে। শিক্ষিত সমাজ, সুশীল, বুদ্ধিজীবীরা তাকে পছন্দ করবে না। এসবের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে যখন কোন ফিল্মের হিরোকে প্রতিবাদ করতে দেখে তখন তারা হাততালি দেয়। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন নিয়ে গডফাদার ইস্যুটি সামনে আসে।
শামীম ওসমান কে, সে কি এই টাইটেল পাবার মত কেউ? ভোটের আগে ফলাফল যাই হোক এর নেপথ্য-চিত্র জানা জরুরী।
জয়নাল হাজারিকে নিয়ে মিডিয়ায় প্রথম এ ধরণের প্রচারণা চলে নিজের দলের অনেকেই এতে সায় দেয়। কার কতটুকু উপকার হয়েছে জানিনা কিন্তু হাজারীর এলাকার লোক মনে করে জয়নাল হাজারী ভাল ছিল। সে শহরকেন্দ্রিক ছিল, গ্রাম-গঞ্জ নিয়ে মাথা ঘামাতো না, কাউকে তা করতেও দিত না। হাজারীর পর গ্রাম বা শহরের লোকজন তুলনামূলক-ভাবে ভাল নেই
জয়নাল হাজারীর সাথে শামীম ওসমান কোনভাবেই তুলনীয় নয়।
জয়নাল হাজারীর বিরুদ্ধে কথা বলতেও সাহস পেত না। শামীম হাজারীর মত একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারীও নয়। সেখানে আওয়ামী লীগের গ্রুপিং'এর কথাও সবার জানা। একজন গডফাদার মর্যাদার লোকের ক্ষেত্রে যা চিন্তা করাও কঠিন। অন্যসব রাজনৈতিক নেতার মতই তার রাজনীতি।
হঠাৎ করে জুড়ে বসা কেউ নয় সে। তার বিরুদ্ধে এ জাতীয় অভিযোগের একমাত্র কারণ তার বিশাল একটি কর্মী বাহিনী আছে যা কোন অপরাধ নয়। নারায়ণগঞ্জের প্রেক্ষাপট জানা প্রয়োজন। ব্যক্তিগত দুটি ঘটনার উল্লেখ করতে চাই।
১৯৯৪ সালে আমাদের এক বন্ধু(বান্ধবী)কে নারায়ণগঞ্জ থেকে তুলে নিয়ে যায়।
কি করবে তা নিয়ে তার পরিবার দিশেহারা কারণ তুলে নিয়ে গেছে ছাত্রদল নেতা ডেভিড। থানা কোন মামলা নিচ্ছে না। ডেভিডরা দিব্যি ঘুরে বেড়ায়। জোর করে বিয়ে করে তিনদিন পর দিয়ে যায়। বাড়ীর সামনে ডেভিডের পাহারা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিনের পিএস শাহাবুদ্দিন সাহেবের মাধ্যমে মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে দেখা করলে তিনি জানান ডেভিড দলের নিবেদিত-প্রাণ। একটি উপকার করতে পারে পুলিশ প্রহরায় সেখান থেকে চলে আসার ব্যবস্থা করতে পারে। রাত তিনটায় ঘরের সবকিছু যেভাবে ছিল সেভাবে রেখে নারায়ণগঞ্জ থেকে চলে আসতে হয়।
জানতে পারি নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদলের ডেভিড ও জাকির খানের কাছে জিম্মি। জাকির খান কে? এক নারায়নগঞ্জবাসীর ভাষায়, ৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর মাইকিং করা হয় এক অনুষ্ঠানে খান সাহেব আসবেন।
সবাই খান সাহেবের নাম শুনছিল। টানবাজার পতিতালয়ের মালিক (সম্ভবত দৌলত খান) খান সাহেবের ছেলে জাকির খান বিএনপি'র কাণ্ডারি।
৯৬ সালের পর জাকির খান গা ঢাকা দেয়। সিদ্ধেশ্বরীতে এক বন্ধু বলল নারায়ণগঞ্জের ডন জাকির খানকে দেখবো কিনা? দেখে খুব হতাশ হলাম- ছোটখাটো টোকাই-টাইপের চেহারার এই জাকির খান!! পতিতালয়ের আয়ে তখনও গাড়ি কিনতে পারেনি। ২০০১ এর পর শুনেছি তার আগে পরে কয়েকটি দামী গাড়ীতে বডি-গার্ডরা থাকতো।
ডেভিড বা জাকির খানের নাম কি কখনও কোন পত্রিকায় সেভাবে এসেছে? নারায়নগঞ্জবাসী তাদের কাছে জিম্মি ছিল। টেন্ডার, চাঁদাবাজির কারণে যে কোন সময় যে কোন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হত। পত্রিকায় কিছু ছাপা হলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
এ রকম একটি এলাকায় রাজনীতি করতে হলে, এসবের প্রতিবাদ করতে হলে কর্মী-বাহিনী ঐক্যবদ্ধ করার কোন বিকল্প কি কারও জানা আছে? ২০০১ এর নির্বাচনে ভোলায় আওয়ামী লীগের ২২জনকে হত্যা করা হয়। হাফিজ উদ্দিনের নাম গডফাদার তালিকায় থাকেনা।
লালবাগের কে না জানে যে পিন্টু সাংসদ থাকা কালে ৭০/৮০ বছরের বৃদ্ধ লোকের গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করতো না।
শামীম ওসমানকে যদি পেশী-শক্তি ব্যবহারের টাইটেল দেয়া হয় তবে এ অভিযোগ থেকে কে মুক্ত থাকতে পারবেন?
আমরা মিডিয়া দিয়ে এত বেশী প্রভাবিত যে অনেকেই ধারণা করে শামীম ওসমান বোধ হয় লেখাপড়া না জানা রাগী ধরণের কেউ। নারায়ণগঞ্জ পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শামীম ওসমানের অনেক সহনশীলতা এবং ইতিবাচক রাজনৈতিক গুণাবলীও প্রত্যক্ষ করেছি। শামীম ওসমান না থাকলে নারায়ণগঞ্জ হতো জাকির খানের সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। এই শহরটির জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান হয়নি।
হকারদের বিকল্প ব্যবস্থা হয়নি। খাল কেটে কুমীর আনার মতো মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
নারায়ণগঞ্জ শহরের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে, সন্ত্রাসমুক্ত করতে এবং আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তুলতে শামীম ওসমানের কোন বিকল্প নেই।
দল-মত নির্বিশেষে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে শামীম ওসমানকে ভোট দেয়ার আহবান জানাই।
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।