" আমি খুব স্বার্থপর জেনো । আমি তো চাই- তুমি অসুস্থ হয়ে পড়ো এক্ষুনি । তখন তোমার নরম গলায় ঠোঁট ডুবিয়ে বলবো, 'ভালোবাসি' !"
ইদানিং ছেলে-মেয়ে গুলো একজন আরেকজনকে ভালোবাসলে সারাদিনে হাজার বার করে বলবে - ভালোবাসি...ভালোবাসি...ভালোবাসি । কিন্তু ভালোবাসা বলবার জিনিস নয়, অনুভবের ব্যাপার । এখন যে ছেলে রাতভর তোমাকে ভালোবাসার কথা বলবে- কিছুদিন পর এই ছেলেই তোমাকে বাজে কথা বলবে ।
তখন ভালোবাসাটা কোথায় থাকে ? রবীন্দ্রনাথ যখন ঘরে-বাইরে উপন্যাসে দেখালেন বিমলা ভালোবেসে ফেলল স্বামী নিখিলেশের বন্ধু সন্দীপকে, তখন ছি ছি পড়ে গেল চারদিকে । তারপর তিনি লিখলেন- চতুরঙ্গ উপন্যাসঃ তার নায়িকা দামিনী বিধবা হয়ে ভালোবাসলো শচীশকে, কিন্তু শচীশকে পাওয়ার সম্ভবনা না থাকায় তারই বন্ধু শ্রীবিলাসকে আবার বিয়ে করল; শচীশের প্রতি দামিনীর প্রেমের খবর শ্রীবিলাসের কানা ছিল, তবু দামিনীর প্রতি সহানুভূতিপূর্ণ যে ভালোবাসা তার জন্মেছিল, সে ভালোবাসার জোরেই এমন একটা দুর্বহ ভার নিতে সে আগ্রহশীল হয়ে উঠেছিল । তারপর শেষের কবিতায় তো আরো জটিলতা তৈরী করলেন রবীন্দ্রনাথ । অমিত ভা্লোবাসলো লাবন্যকে, বিয়ে করলো তার এককালের প্রে্মপাত্রী কেটিকে; লাবন্য ভালোবাসলো অমিতকে, কিন্তু বিয়ে করলো তার প্রতি আগে থেকেই নিবেদিতচিত্ত শোভবলালকে । অমিতের মুখ দিয়ে একটা ব্যাখ্যা দিলেন রবীন্দ্রনাথঃ একজন ঘড়ার জন-প্রতিদিনের ব্যবহারযোগ্য- আরেকজন দিঘি- মন যেখানে সাঁতার দেবে ।
( একদিন সময় করে অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের "বিবাহের চেয়ে বড়" উপন্যাসটা পড়ে নিবেন । )
যখন কেউ কাউকে ভালোবাসে- তখন সে একটা ঘোরের মধ্যে থাকে , একটা আবেগের মধ্যে থাকে । আর তাই ভুল করতে থাকে । আসলে স্বপ্ন আর বাস্তব তো এক না । প্রতিটা ছেলে-মেয়ে চায়, কেউ একজন আমাকে ভালোবাসুক ।
ভালোবাসার ক্ষেত্রে ছেলেরা বেশী প্রতারনার আশ্রয় নেয় । তারপরও দেখা যায়- ছেলেদের প্রতি মেয়েদের ভালোবাসার কমতি হয় না । ( সময় করে একদিন- O. Henry-র The gift of the Magic বইটা পড়লে উপকৃত হবেন । ) অনেক ছেলে-মেয়ে তাদের প্রেম-ভালোবাসার কথা প্রকাশ করে না । প্রকাশ হলে নানান সামাজিক পারিবারিক ও বন্ধুদের উপহাস সহ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয় ।
বিশেষ করে প্রেমিকাকে নিষ্ঠুর সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় । কিছু পুরুষ এক নারী থেকে ঘুরে বেড়ায় আরেক নারীতে । বিজ্ঞানের লেটেস্ট আবিস্কার অনুযায়ী, হরমোনের সমস্যা । সচরাচর অনেকের মধ্যে কম বেশী দেখা দেয় এই হরমোন সমস্যা । অনেকদিন আগে একটা কবিতা পড়েছিলাম ।
কবি এবং কবিতার নাম মনে নেই । তবে দু'টো লাইন মনে আছে-" জানি, কোনো নারী এক জীবনে রয়না চিরদিন/ এক জীবনে শুধতে হবে বহু নারীর ঋণ । " নিজের চোখে দেখা, একটা ছোট গল্প বলি- তারা অনেক বছর দুইজন দুইজনকে ভালোবেসে বিয়ে করলো । এবার বিয়ের ছয় মাস পরের ঘটনা বলি- তারা দুইজন খুব চিৎকার চেচামেচি করছে । আশে-পাশের লোকজন সব শুনতে পাচ্ছিল ।
কখনও গ্লাস ভাঙ্গার শব্দ, কখনও আলমারির সমস্ত সাজানোর জিনিস ভাঙ্গার শব্দ । বিকেলে তারা দুইজন ক্লান্ত হয়ে- দুজন দুইদিকে চলে গেল । তারপর তারা আর একসাথে থাকতে পারেনি । ( আমার খুব প্রিয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা কবিতা আছে "অনন্ত প্রম" পড়ে দেখতে পারেন খুব ভালো লাগবে । সকালে একবার পড়ে দেখবেন আবার মধ্যদুপুরে একবার এবং মধ্যরাত্রে একবার- প্রতিবার অন্যরকম লাগবে ।
)
বাংলা ভাষার প্রায় সব কবির প্রথম কবিতার বইটি হচ্ছে -প্রেমের । যাই হোক, এইবার একটা দামী কথা বলি- বেশীর ভাগ ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ভালোবাসা নামক কোনো বস্তু বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সত্যিকার অর্থে থাকে না । যেটা থাকে সেটা হচ্ছে- একটা মোহ । এই মোহ এক সময় কেটে যায় । কোনো কারনে এই মোহ বাঁধা প্রাপ্ত হলে গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয় ।
কিছু পন্ডিত লোক বলে থাকেন- "No Love without sex, no river without stream" এই ব্যাপারটা আমি মানতে পারি না । সে যাক গে, বাৎসায়ন চিরকুমার থেকে কামশাস্ত্রের প্রণেতা হলেন । আর জীবনানন্দ দাশ ইংরেজির অধ্যাপক হয়ে এবং প্রেম না করে বাংলায় কত কবিতা লিখলেন ! এবার গ্রামের প্রেম কেমন, শুনুন- গ্রামের কোনো রুপসী মেয়ে কলসী কাঁখে নিয়ে নদীতে বা পুকুরে গোসল করতে যায় । আর অন্যদিকে মোড়লের কুপুত্র চুপি চুপি রুপসী কন্যার শরীর মাজন দেখত । ( দূর থেকে মোবাইল দিয়ে ভিডিও করে ।
) সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেছেন- আধুনিক যুগের প্রেম ভালোবাসা হলো এত সহজলভ্য যে একে কাচকি মাছের ভাগার সাথে তুলনা করা যায় । সকালে কোনো মেয়েকে চোখ টপলে বিকেলে....আর প্রেমের একট অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে- ডেটিং । এক শ্রেণীর প্রেমিক আছে যারা প্রেমিকার বাড়ির কুকুরটাকে পর্যন্ত সব কুকুরের সেরা কুকুর মনে করে । আমার এক পরিচিত- যে কিনা সব সময় পকেটে বিস্কুট রাখে-প্রেমিকার কুকুরটার জন্য । এতেও নাকি এক ধরনের স্ব্র্গীয় আনন্দ পাওয়া যায় ।
প্রেমিকার বাড়ির শ্যাওলা পড়া দেয়াল দেখলে মনে হয়- রাজপ্রাসাদ আর প্রেমিকার বাড়ির সরু গলিটাকে মনে হয় যেন বিজয় স্বরণী । আরেক শ্রেণীর প্রমিক আছে যারা মেয়ে দেখলেই প্রেমে পড়ে যায় । সমাজে এদের সংখ্যাই বেশী । মেয়ে যদি প্রস্তাব গ্রহন না করে তাহলে বলে- মেয়ে টা ভালো না । ( কবি অসীম সাহা'র চুমু নিয়ে খুব সুন্দর একটা কবিতা আছে- আমার খুব পছন্দের ! " একটি চুম্বন দাও- /আমি নি্র্দ্বিধায় বরফশীতল ইংলীশ চ্যানেল-/ অতিক্রম করে যাবো ।
" আহ ! )
এইবার একটা চরম সত্য কথা বলব ! আমি তোমাকে ভালোবাসি- এই কথাটা বলার কোনো মানেই হয় না । আসলে মানূষ এতকাল ধরে চালাকি করে কথাটা ব্যবহার করে আসছে । কারন যখন তার দৈহিক সান্নিধ্যের প্রয়োজন হয়ে পড়ে-প্রবল ভাবে, তখন কথার মার-প্যাচে....!!! হা হা হা.... তোমার হাসি ভালো লাগে ! তোমার কথা- তোমার কন্ঠস্বর ভালো লাগে ! তোমার রান্না ভালো লাগে ...ইত্যাদি । কিন্তু ঘুণাক্ষরেও প্রকাশ করে না সে যা চায়...অথবা তার মনের একান্ত গোপন কথাটা । সমাজ অনেক বদলেছে ! এখন আর বাচ্চা বাচ্চা বয়সে ছেলে মেয়েদের বিয়ে হয় না ।
ছেলেরা ২১/২২ টা প্রেম করতে পারলে বন্ধু মহলে খুব প্রশংসা পায়- ব্যাটা পুরুষ ! মেয়েদের বেলায়ও একই নিয়ম । যত ছেলেকে পারো নাকানি-চুবানি খাওয়াও । তুমি তত হুট । এই ধরনের মেয়েদের ডিমান্ড বেশী । ( কবি আল মাহমুদ এর দারুন সুন্দর একটি কবিতার নাম হলো- "উপমা" ।
গভীর রাতে পড়ে দেখতে পারেন খুব ভালো লাগবে । ) ছেলেরা বলে, সে আমাকে খুব ভালোবাসে- এ জাতীয় গদগদ কথা বলে চলে যাত আরেক নারীর কাছে, তাকেও সে ভালোবাসে ! দু'জনের জন্য দু'রকম টান ? আসলে মানূষ ভালোবাসার স্বাদ বদলায় । কিছু মেয়ে আবার খুব একরোখা- তারা বলেন- আমাকে যদি সে ভালো না বাসে- কিন্তু আমি বেসে যাব নিরবধি । হায় রে বোকা মেয়ে ! প্রেমিক-প্রমিকারা একে অন্যকে আদর করে 'পাগল', 'বোকা' অথবা 'গাধা' বলে সম্বোধন করে কি বোজাতে চায় ? দু'জনাই বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে গেছে তাই ? গবেষনায় পাওয়া গেছে- প্রেম বোকামি নয় অথবা অর্থহীন আচরণ নয় । মানূষের ক্রমবিকাশ, জীববিজ্ঞান ও রসায়নের সাথে প্রেমের গভীর সম্পর্ক রয়েছে ।
এই অনুভূতির সাহায্যেই কি মানব জাতিকে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে ! স্নায়ু কোষ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে রাসায়নিক দ্রব্য রক্তস্রোতের সাথে মিশ্রিত ! তাই কি নারী-পুরুষের সাথে বন্ধনের সুত্রপাত ঘটছে ?
প্রেম-ভালোবাসার ঝাকুনি যখন আসে, তখন প্রতিবার ম্যালেরিয়ার মতো কাপুনি দিয়েই আসে । আর তাই স্বামীকে আড়াল করে প্রেম চালিয়ে যেতে পারে দিনের পর দিন । আসলে প্রেম ভালোবাসা নাম দিয়ে মানূষ- দ্রুত শরীরের দিকে ঝুকে পড়ে বেপরোয়া ভাবে । প্রথমে চুমু দিয়ে শুরু হয় । যতদিন শরীরের স্বাদ পাওয়া যাবে ততদিন প্রেম-ভালোবাসা টিকে থাকবে ।
বাজারের দ্রব্যমূ্ল্যের মতন ভালোবাসাও আজকাল নকল হচ্ছে । যে কোনো মুহূর্তে প্রতারিত হতে পারেন । বিজ্ঞানের যেমনি উন্নতি হয়েছে প্রেমেরও তেমনি উন্নতি হয়েছে । শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বাড়ির ছাদ, বাগান, রাজপথ, চাইয়ানিজ রেস্তরা, বাস, ট্রেন, পার্ক কোচিং সেন্টার , মেলা ইত্যাদি রমরমা অবস্থা । ( ষাটের দশকে ডেটিংয়ের ব্যাপারটি কোনো প্রেমিক-প্রেমিকা কল্পনাও করতে পারতো না ।
৭০-এর দশকের শেষের দিকে....থাক, এই ব্যাপারে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না । ) "কেউ কি এখন অবহেলায়/ আমার প্রতি বাড়িয়ে দেবে হাত ?/ খুব মেঘ করে এলে কখনো বড়ো একা লাগে,/ করুণা করে হলেও অথবা মিথ্যা করে হলেও বলো- ভালোবাসি । " এটা কার কবিতা ? আমি কিছুতেই মনে করতে পারছি না ! ভালোবাসার কারনে খুব কাঁদতে হয়, বুকের ভেতর অকারণে কষ্ট হয় । আমি বুঝি না, কষ্টই যদি হয়- তারপরও মানূষ ভালোবাসে কেন ?
( বেশ কিছু দিন ধরে মন-মেজাজ খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে । মানূষের হাস্যকর ব্যাপার দেখে আমার খুব রাগ লাগে ।
গাধার গাধা । একজন আরেকজনকে মনে করছে- আরে সে আমাকে এত সম্মান করছে ! আসলে এটা সম্মান নয়- তোমার কাছ থেকে সুবিধাভোগ করার জন্য তোমাকে সম্মান দেখাচ্ছে । মানূষ এত গাধা হয় কি করে সামান্য ব্যাপারটা বুঝে না ! আসলে মানূষের চোখ থেকে দিন দিন লজ্জা উঠে যাচ্ছে ! মানূষ সাপকে মনে করছে দড়ি !কাঁচকে মনে করছে হীরার খন্ড । তেল হীন মাথাকে মনে করছে তেলওলা মাথা । আর তেলওলা মাথা মনে করে আরও বেশী তেল দিচ্ছে ।
ফলাফল শূণ্য । হা হা হা...আমি দূর থেকে এই সব দেখি আর খুব হাসি । অনেকদিন আগে একটা বাংলা সিনেমা দেখেছিলাম- 'আবার তোরা মানুষ হো' । ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।