আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাঁচ এবং আয়না

আমি আঁধারে তামাসায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূন্যতা থেকে শূন্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে। আমাকে নরকের আগুনে পোড়ার শাস্তি দেয়া হয়েছে। আমি তীব্র প্রতিবাদ জানালাম যে আমিত নরকের কীট পতঙ্গ নই তবে আমি কেন সেখানে যেয়ে আগুন পোহাব ? আমার দৃষ্টির মতিভ্রম হল যেন তাৎক্ষনিক। আমার সামনে ভীষণ রকম আলোক জ্যোতির বিচ্ছুরন হল। আমি বুঝতে পারলাম তবে এবার নরকে যেতেই হবে।

আমি আর কালবিলম্ব না করে নরকের পথে রওনা হলাম। সেখানে পৌছতে আমার প্রায় কয়েক কিলো পথ পারী দিতে হল। যখন আমি পৌছাই দেখা গেল আগুনের প্রলয়ঙ্কারি শিখা নিভু নিভু জ্বলছে। প্রহরী আমাকে জানাল এতে খুসি হবার কোন কারন নেই। এখানে এমনই রাত হলে আগুন নিভে যেতে থাকে পুনরায় সকাল হতেই আগুনের উত্তাপ বাড়তে থাকে।

আমাকে আমার কক্ষ দেখিয়ে দেয়া হল। আমি সেই রাতে আর ঘুমাতে পারি নাই। তাই মাঝ রাতে এদিকটায় একটু ঘুরে দেখতে বের হলাম আমার কক্ষ হতে। সামনে একটি উনুন দৃষ্টিগোচর হল। আমি দেবী চন্দ্রাকে দেখে অবাক হলাম যে উনুনের ভেতর কয়লার নিভু নিভু আগুন হয়ে শীতল ধোঁয়া ছড়াচ্ছে তার শরীর ছাই হয়ে।

আমি কাছে গিয়ে বসলাম। একসময় অনন্ত যৌবনা যে দেবীর শরীরে আমি দেখতে পেতাম মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকার অনুপ্রেরনা আজ তার একি দশা ! আমাকে খুব হতাশ করে দিয়ে সে বলল যে আমাকে সে চিনতে পারেনি। আমি আমার পরিচয় দেয়ার পরেও চিনতে বেশ কষ্ট হল দেবীর। যে দেবীর চরনে মাথা ঠুকে ঠুকে কত প্রসাদ বিলিয়েছি একসময় জীবনের পুণ্যের আশায় আজ কিনা সেই দেবী আমাকে চিনতে পারছেনা ! তবে এতকাল যে আমি অজস্র প্রসাদ বিলিয়েছি সেসব তবে কি বৃথাই আমার পুন্যের তপস্যার কাছে ! কিন্তু একটি সমাধান কিছুতেই মেলাতে পারছিলাম না দেবীকে কেন নড়কের জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ? আমি ফিরে এলাম আমার কক্ষে। সেখানে এরই মধ্যে দেখলাম আরও একজনকে ইতিমধ্যে এনে রাখা হয়েছে।

তাকেও বেশ চেনা চেনা বোলেই মনে হল কিন্তু ঠিক যেন মনে করতে পারলামনা তার পরিচয়। আমার সহ কক্ষবাসি নিজ থেকেই পরিচয় দিল তার নাম দেবতা রবি। এবার তাহলে আমি তাঁকে চিনতে পারলাম এই সেই রবি যার মন্দিরের দেয়ালে আমি একদা লিখেছিলাম মৃত্যুর মন্ত্র। তার চোখের মনির ভেতর আমি আমার মুখের অবয়ব দেখতে পেয়ে নিজের অস্তিত্তের উপর আমার নর্দমার কালো কালো রঙের আঠাল একধরনের ঘৃণা বোধ হতে লাগল। আমি আর তখন নিজেকে সামলে রাখতে না পেরে ছ্যাপ ফেললাম তার মুখে।

সেও ঠিক একই ভঙ্গিমায় আমার মুখের উপর ছ্যাপ ফেলল। আমরা দুজনেই আর সে রাতে ঘুমাতে পারলামনা। আমাকে দেবতা রবি খুব অবাক করে দিয়ে বলল যে আমার শরীর থেকে নাকি মৃত মানুষের গন্ধ ছড়াচ্ছে। কিন্তু আমি কিছুতেই সেই গন্ধ পেলামনা। আমার অনুভবে ছিল শুধু সেই নর্দমার কালো কালো রঙের আঠাল একধরনের ঘৃণা বোধ।

সকাল হতেই আমাদের দুজনকে নিয়ে সেই উনুনের ভেতর শরীরের চামড়া সব ছিলে দিয়ে পোড়ান হল। লাকড়ি হিসেবে আবারো ব্যাবহার করা হল দেবী চন্দ্রাকে। চন্দ্রার চোখে দেখলাম একধরনের হতাশা মূলক দৃষ্টি। সেই দৃষ্টিতে কোন এক অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষার প্রহর গোনা ছাড়া যেন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। রাতে আবারো আমাদের ফিরিয়ে আনা হল কক্ষের ভেতর এবার আমরা পুরোপুরি সেই আগের শরীরে চামড়া ফিরে পেলাম।

এ যেন পবিত্র গোসলের প্রারম্ভে পোশাক খুলে রেখে সাগরে নামা তারপর গোসল শেষে আবার সাগরের তীরে ফিরে এসে পোশাক পরে নেয়ার এক বিরতিহীন যাত্রা শুরু হল আমাদের নতুন জীবনের। জানিনা কবে পবিত্র হতে পারব শেষবারের মত। এমনই যখন চলছে সময়ের বহমান স্রোতের ধারা ঠিক সেই সময় কিছুকাল পর লক্ষ করলাম রোজ রাতে একটি কালো কাক পাখি এসে আমাদের কক্ষের সামনে দাড়িয়ে থাকতে। আমার খুব ভয় হতে লাগল কিন্তু রবিকে দেখলাম কোন রকম কোন কৌতূহল নেই এই অসঙ্গতিতে। আমি ভাবছি এত রাতে কোথা হতে এই কাকটি আসে আর কেনই বা আসে।

রাতে কি কাক সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় নাকি এটা আমার কাছে একধরনের মরীচিকা হয়ে মস্তিষ্কের সাথে বেঈমানি করছে। তবে যে রাত থেকে এই কাক আমার সামনে এসে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকছে সেই রাত থেকে আমি ঘুমের অবচেতনে শুধু রক্তের স্বপ্ন দেখছিলাম। রোজ রাতে সেই একই স্বপ্ন আমি একটি সাদা রঙের বিড়ালের গলা ছুড়ি দিয়ে কেটে জবাই করছি কসাইয়ের মত তারপর আমার পুরো কক্ষটি ডুবে যাচ্ছে পানিতে আর আমি সেই পানির অতলে তলিয়ে যাচ্ছি। আমাকে উদ্ধার করার জন্য আমার কক্ষে আমার সাথে ঘুমিয়ে থাকা দেবতা রবিও এগিয়ে আসছেনা। এভাবে সময় তার বয়ে চলা গতি পথ বদলে নিল একসময়।

তারপর আর কখনো সেই কাক পাখিটিকে দেখা যায়নি। তবে আমাদের কক্ষের বদল হল। এবার যে কক্ষে নিয়ে রাখা হল সেখানে শুধু কাঁটা আর কাঁটা। সেই কাঁটায় আমরা দুজনে বার বার ক্ষত বিক্ষত হতে থাকলাম আর রক্তে ভেসে যেতে থাকল আমাদের কক্ষটি। আমরা দুজনে আমাদের নিজেদের শরীর হতে নির্গত রক্তের অতলে তলিয়ে যেতে থাকলাম।

হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল আমার। সূর্য এখনো দেখতে পাইনি কিন্তু আকাশটা এরই মাঝে হালকা হালকা ফর্সা হয়ে উঠেছে। ভোরের স্নিগ্ধ আলো এসে পরেছে আমার ঘরের জানালা দিয়ে। সেই আলোতে কিছু ধুলো বালি উড়ছে। কিছুক্ষন পূর্বেই হয়ত আযান হয়েছিলো মসজিদে তার মূর্ছনা যেন এখনো বাতাসে ভেসে আছে।

আমি টেবিলের উপর থেকে মাথা উঠিয়ে দেখি আমার কম্পিউটারের মনিটরে এখনো চলছে রাতে দেখতে থাকা নীল চলচিত্রটি। আমি খুব ক্লান্তি নিয়ে চেয়ারে বসে থেকেই বাসি মুখে একটি সিগারেটের মুখে আগুন দিলাম। আমার মুখের চারিদিকে একধরনের উৎকট গন্ধময় ধোঁয়ায় ভরে গেল মুহূর্তের মধ্যে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.