আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফাঁকি

নতুনদিনের মিছিলে,একজন বেয়নেটধারী সৈনিক তীর্যক চাহনিতে নিজেকে আয়নায় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখি। অবশেষে সিদ্ধান্তে আসি, বদলে গেছি। কানের কাছের চুলে পাক ধরেছে। চশমাটার প্রয়োজনীয়তাও বেড়েছে। খবরের কাগজটাও আগের চেয়ে বেশি আপন হয়েছে।

দাদা বলতো, "বুঝলি, যেদিন বুড়ো হবি। সেদিন নিজের সংসারের চেয়ে, বিশ্বসংসারের খোঁজ নেওয়াটা বেশি জরুরী হবে। " আমি শুনে অনেক হেসেছিলাম। দাদুটা যে কি বলে! সারাদিন আবোল-তাবোল। আজ দাদু নেই।

থাকার কথাও না। সময় আস্তে আস্তে সবাইকে গিলে নিচ্ছে। দাদু, বাবা-মা সবাইকে। এবার বুঝি আমার পালা এলো! সবকিছুই ঠিক ছিলো। গতকাল মাধবীর সাথে হঠাৎ দেখা হওয়ার আগে পর্যন্ত সবকিছু ঠিক ছিলো।

মাধবীতো বুড়িয়ে যায়নি। এখনো তার চোখে-মুখে সেই ২০ বছর আগের লাবণ্য ধরে রেখেছে। সেই ছিপছিপে দেহটা আগের মতোই আছে। আমাকে দেখে হেসে বলেছিলো, বুড়ো হয়ে গেছো দেখি! কথাটা বড় লেগেছে। একেবারে মনের দরজায় গিয়ে আঘাত হেনেছে।

যে দরজাটা এতদিন বন্ধ ছিলো। হাতলে ধুলোও জমেছিলো হয়তো। মাধবীর হাসিটা সেই ধুলো উড়িয়ে দরজাটা খুলে দিলো। অহংবোধে আঘাত দিলো। না।

বুড়িয়ে গেলে চলবেনা। এখনো অনেক কাজ বাকি আছে। মাধবীকে জবাব দেবার এখনো অনেক কিছু আছে। এতোটা বছর একা থাকার সাধনা যার জন্য, তার কথাতে নুইয়ে পড়লে চলবেনা। বাসা থেকে বেরিয়ে সোজা চলে গেলাম, অধীরের দোকানে।

অধীর আমার ছোটভাই। এক মায়ের পেটে জন্মানো ছোট ভাই। অধীর দোকানে নেই। তার কর্মচারী ছেলেটা আমাকে দেখে একটা চেয়ার এগিয়ে দিলো। বসে বললাম, অধীর কই? জানলাম, শ্বশুর বাড়ী গেছে।

তারমানে আবার ঝগড়া! বছরের ৩৬৫ দিন তাদের লেগেই আছে। কুৎসিত সব ঝগড়া! তারপর বউকে বাপের বাড়ীতে আনতে অধীরের ছোটা! হাসি এলো। পারিসও বটে। অধীরের কর্মচারীটাকে এক বোতল চুলের কালি দিতে বললাম। সে এনে দিলো।

আমি পকেটে পুরে দোকান থেকে বেরোতে যেতেই ছেলেটা বললো, "দাদা, এখনো বউনি হয়নি!" বলে কি! নিজের ভাইয়ের দোকানে বউনির হিসেব! ছোঁড়াটা দেখি ভালোই ফাজিল! মানিব্যাগ খুলে দশ টাকার একটা নোট ছুঁড়ে দিলাম। বাসার পথে পা বাড়ালাম। সাদা চুলগুলো ঢেকে ফেলতে হবে। বয়সের লড়াইয়ে মাধবীর কাছে হেরে গেলে চলবেনা। কিছুতেই চলবেনা।

এতদিনপর মাধবী এ পাড়ায় ফিরেছে! আজ আমার বড় বেশি তাড়াহুড়ো! (শুরুটা করি বড় একটা গল্প লিখবো বলে, পরে অলসতা তাড়িয়ে বেড়ায়। লেখা আর বড় করা হয়না। তাড়াহুড়ো করে শেষ করে দেই। ) কৃতজ্ঞতাঃ কামরুল হাসান শাহি।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।