হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র মজনু শাই'র ঘোড়াটা আবার ঢাকায় ফিরা আসছে। বড়সর কালা রঙএর, সুন্দর এবং পাগলা একটা ঘোড়া। অনেক দিন পর ঘোড়াটা ঢাকায় ফিরছে। সবশেষ ঘোড়াটা ঢাকায় আসছিল ১৭৬৩ সালে। ঘোড়াটার সওয়ারী ছিল তখন পাগরি পরা যোদ্ধা ফকির মজনু শাই।
ফকিরের হাতে কখনো তবজি থাকতো আবার কখনো থাকতো তলোয়ার অথবা মাস্কেট। জিকির আর রণহুঙ্কার ফকিরের কাছে সমান ছিল, মুলক আর কলবের মুক্তি ফকিরের কাছে এক হইছিল। এমন সওয়ারী পিঠে লইয়া মজনু শাইর ঘোড়া তখন ঢাকার রাস্তা দাবরায়া বেরাইতো।
সেই বছর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ঢাকা কুঠি দখলে নিছিলেন ফকির যোদ্ধারা। সুপারভাইজার রালফ লেস্টার পালায়া বাঁচলেও পরে ক্যাপ্টেন গ্রান্টএর নেতৃত্বে ফিরিঙ্গি যোদ্ধারা ফিরা আসে দ্বিগুন শক্তিতে।
কথিত ‘ডাকাইত’ ফকিরেরা ডাকাতি কইরা না পালায়া ফিরিঙ্গিগো লগে সেইদিন কুঠির নিয়ন্ত্রন লইয়া মরণপন লড়াই কেন লড়ছিলেন তার খতিয়ান নেওয়া হয়নাই আজো।
এরপরে বগুরা, যশোর, কুমিল্লা, ময়মনশিংহ, বিরভূম, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, চিটাগাং, পুর্নিয়ার বন জঙ্গল, মাঠ ঘাট ফকিররে সওয়ারী কইরা দাবরায়া বেরাইলো ঘোড়াটা। যেইখানেই কুঠি, সেইখানেই দাবরাইতো ঘোড়াটা, আর সওয়ারী ফকিরের কাছে মুলক আর কলবের মুক্তি এই দুই এক হইতো।
সবশেষ ঘোড়াটারে দেখা গেছিল ১৭৮৬ সালের ৮ডিসেম্বর, কলেশ্বর এর যুদ্ধের ময়দানে। নদীয়ার মাটি সেইদিন লাল এবং উর্বর হইছিল বহু ফকিরের রক্তে।
বহু ফকিরের লাশ পেছনে রাইখা ঘোড়াটা যখন দিগন্তে মিলাইতাছিল, তার সওয়ারী তখন কোনরকমে ঝুইলা আছে তার পিঠে। মজনু শাইর রক্তে সেইদিন কালা ঘোড়াটার পশম লাল হইছিল।
তারপরে আর ঘোড়াটারে দেখা যায়নাই, দেখা যায়নাই তার পিঠের সওয়ারী যোদ্ধা ফকিররেও। শোনা যায় এর বছর খানেক পরে কলেশ্বরেই জখমি ফকিরের মরন হইছিল। মুলকের মুক্তি ছাড়া ফকিরের কলবের মুক্তি হইছিল কিনা সেই সওয়ালের জবাব অবশ্য এতদিন পাওয়া যায়নাই।
সেই সওয়ালের জবাব দেওনের লাইগাই কিনা আবারো ঢাকা শহরে ফিরা আসছে মজনু শাইর পাগলা ঘোড়া। তবে ঘোড়াটার পিঠে এখন আর কোন সওয়ারী নাই, সওয়ারী ছাড়া ঘোড়াটা মন খারাপ কইরা ঢাকার রাস্তায় ঘুইড়া বেরায়, দাবরাইতে পারেনা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কুঠি নাই, কিন্তু এইদিক সেইদিক যেইকদিকেই যায় ঘোড়াটা সেইদিকেই খালি কুঠি আর কুঠি। সেইসব কুঠিতে খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, মানুষ, মগজ, মুক্তি, চেতনা সবকিছুরই বানিজ্য চলে। এত কুঠির মাঝখানে ঘোড়াটা মন খারাপ কইরা ঘুইড়া বেরায়।
মুলকের মুক্তি না হইলে মজনু শাইর কলবের মুক্তি হবেনা বইলাই ঘোড়াটা মন খারাপ কইরা ঘুইড়া বেরায়।
ঢাকা শহরের এই মাথা থেইকা সেই মাথা ঘোড়াটা ঘুইড়া বেরায়। কখনো তারে দেখা যায় শনীরআখড়া ওভারব্রিজএর উপরে দিয়া হাটতে, যাত্রাবাড়ীর মানুষের ভিরের মাঝখানে অসহায় খারায়া থাকতে। আবার কখনো দেখা যায় পল্টনের মোড়ে খারায়া কেএফসির বিলবোর্ডের দিকে চাইয়া থাকতে, কখনো বা শাহবাগের মোড় থেইকা ঢাকার গেটের মাঝখান দিয়া দোয়েলচত্ত্বরের দিকে ছুটাছুটি করতে। সওয়ারী ছাড়া পাগলা ঘোড়াটা মন খারাপ কইরা পুরা ঢাকায় নানান রঙের কুঠি দেখতে দেখতে ঘুইড়া বেরায় আর কাজল কালা জুলজুলা চোখে খুইজা বেরায়, ‘সওয়ারী’।
মাথায় পাগরি বান্ধা সওয়ারী চাই পাগলা ঘোড়াটার, যোদ্ধা ফকির সওয়ারী। সেই সওয়ারী একিসাথে জোওয়ান মরদ এবং ধ্যানী গৌতম। মজনু শাইর ঘোড়াটার নতুন সওয়ারী চাই, এমন সওয়ারী যার কাছে জিকির, স্লোগান আর রণহুঙ্কার সমান কথা। এমন সওয়ারী চাই যেই সওয়ারীর কাছে মুলক আর কলবের মুক্তিতে ফারাক নাই। সেই সওয়ারী লইয়া ঘোড়াটা কুঠিতে কুঠিতে দাবরাইয়া বেরাইবে।
মজনু শাই'র ঘোড়াটা আবার ঢাকায় ফিরা আসছে। সওয়ারী চাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।