যখন আমি হবো শুধুই স্মৃতি, আমার এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা গুলো সবার সামনে আমাকে আরো স্মৃতিময় করে তুলবে। লিজা অগ্রণী স্কুলে ক্লাস টেনে পড়ে। প্রতিদিনের মত আজও স্কুল শেষে বাসায় ফিরলো। কিন্তু বাসায় ঢুকতে গিয়ে প্রথমেই একটা খটকা লাগল। বাসায় তো কেউ থাকার কথা না।
দরজায় তালা নেই কেন? যাগগে, মনে হয় আম্মু আজ তাড়াতাড়ি ফিরেছে।
টিংটং করে কলিং বেল বাজালো।
দরজা খুলল একটা ছেলে। ২৫-২৬ বছর বয়স হবেহয়তো। কিন্তু তাকে তো সে চিনে না।
একটু হকচকিয়ে গেল।
“আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না। আপনি বাসায় ঢুকলেন কি করে?” লিজা বলল।
“তুমি ভেতরে আস, আমি তোমার পরিচিত। “
লিজা পুরো অবাক।
বাসায় আম্মু নেই। লোকটা চাবি পেল কোথা থেকে?
ভয়ে ভয়ে ভেতরে ঢুকল সে।
“আপনি কে? বললেন না যে?”
“সময় হলেই বুঝতে পারবে আমি কে? ভয় পেয়োনা, তুমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও। “
টিংটং।
লিজার বুকটা ধক করে উঠল।
ছেলেটা দরজা খুলে দিল। লিজা দেখতে পেল ৩ জন মানুষ ঘরে ঢুকল। অবাক বিষয় হল কাউকেই সে চিনে না।
“বসো তোমরা। “ লোকটা ওদের উদ্দেশ্যে বলল।
লোকগুলো ঘরে বসে লিজার দিকে তাকাতে লাগল।
লিজা তাড়াতাড়ি ঘরের ভেতর চলে গেল।
----------------------------------------------
স্থান: মিসেস রেহানার গবেষণাগার
বিকাল সাড়ে চারটা বাজে। গবেষণাগার থেকে বের হয়ে পাশের রুমে ঢুকলেন মিসেস রেহানা। হঠাৎ বাসার কথা মনে পড়ল।
আরে, তাড়াতাড়ি না যাওয়ার কথা ছিল?
কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লেন তিনি। যাবার আগে সহকর্মীকে নির্দেশ দিলেন কি করা লাগবে। গবেষণার এ বিষয়টি তাকে যথেষ্ট ভোগাচ্ছে। নিজে থেকে অনেক দিন ধরে কোন কূলকিনারা কেন জানি পাচ্ছেন না।
গবেষণাগার থেকে বের হয়ে রিক্সা নিলেন তিনি।
গন্তব্য সোজা বাসা।
এবার বাসার দরজার সামনে এসে খানিকটা হকচকিয়ে গেলেন তিনিও। বাসার দরজা বাইরে থেকে লাগানো। তাতে কোন তালা নেই। আশেপাশে তাকালেন তিনি।
বাসার কোন দারোয়ানও নেই যে চোখ রাখবে। আস্তে করে দরজাটা খুলে ভিতরে ঢুকে গেলেন।
ঢুকে যেটা দেখতে পেলেন সেটা এইমূহুর্তে তার কল্পনাতেও ছিল না। বিছানা এলোমেলো, জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এক মূহুর্ত কি যেন ভাবলেন তিনি।
এমনটাতো হবার কথা নয়।
মিসেস রেহানা ল্যান্ডফোন থেকে ফোন করলেন পুলিস স্টেশনে।
ঠিক সেই সময়ে ঘটল একটা অঘটন। ভেতরের ঘর থেকে চিৎকার করে উঠল কে যেন।
-------------------------------------------
স্থান: লিজাদের বাসা
“চলুন”, আমরা ছাদে চলে যাই।
লিজা বলল।
“হ্যা, এটাই ভাল হবে, চল”।
লিজা সহ সবাই বাড়ির ছাদে চলে এল।
তার কিছুক্ষণ পর তারা সবাই দেখতে পেল লিজার মা বাসায় ফিরছেন।
ছাদের রেলিঙের ফাক দিয়ে দেখতে পেল সবাই।
লিজার মা কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে ঘরের ভেতর ঢুকে গেলেন।
পরস্পরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল তারা।
ওরা আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল যে মিসেস রেহানা কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিস কে ফোন করবেন। তাই ওরা বাসার দিকে নামতে শুরু করল। লিজার মুখে যুদ্ধ জয়ের মত আনন্দ।
ওরা ধারণাও করতে পারে নি সামনে কি অপেক্ষা করছে।
বাসার মধ্যে ঢুকে পড়ল সবাই।
মিসেস রেহানার রুমে ঢুকতে যাবে, এমন সময় শুনতে পেল রক্ত হিম করা চিৎকার। ভয়ে জমে গেল ওরা।
লিজাও ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠল।
ফোন রেখে দিয়ে ঘর থেকে ছুটে বের হলেন মিসেস রেহানা। ঘরের বাইরে ওদের দাড়িয়ে থাকতে দেখে ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলেন তিনি।
কথা বলা হল না কোন। সবাই ছুটল রুমের দিকে। যেখান থেকে চিৎকার টা শোনা গিয়েছে।
ঘরে ঢুকে দেখল সবাই। মিসেস রেহানার কাছে মনে হল তার হৃৎপিণ্ডটা গলার কাছে চলে এসেছে।
বিছানায় পরে আছে একটি রক্তাক্ত মৃতদেহ। পেটে ছোরা ঢোকানো। এবং সেই মৃতদেহটি দেখতে হুবহু লিজার মত।
-------------------------------------------------
কিছুক্ষণ বিমূঢ়ের মত সেদিকে তাকিয়ে রইলেন মিসেস রেহানা। কিন্তু কিছু সময় পরই তাকে অবাক করে দিয়ে হো হো করে হেসে উঠল লিজা। তার দিকে তাকালেন মিসেস রেহানা।
“আম্মু তুমি গিয়ে দেখ তো লাশটা আসল না নকল?”
মিসেস রেহানা সম্মোহিতের মত এগিয়ে গেলেন সেদিকে। তারপরই বুঝতে পারলেন সব।
এটা কোন লাশ না। একটা বড় পুতুলকে একদম লিজার মত চেহারায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
চেপে রাখা নি:শ্বাস টা ছেড়ে দিলেন মিসেস রেহানা। লিজার দিকে ফিরলেন, এটা কি হল?
“বাহ্, তুমি তোমার নিজের মেয়ের উপর গবেষণা চাপিয়ে দেবে আর আমি তোমার সাথে এটুকু করতে পারব না?”
পুতুল টাকে দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি, “এটা কার সৃষ্টি?”
“তোমার সহকর্মীর গুণ তুমি নিজেই জানো না?”
মিসেস রেহানা বুঝতে পারলেন এটা রকিবের কাজ। ছেলেদের দিকে ফিরলেন তিনি।
“এমনটা হবার তো কথা ছিল না। “
“ম্যাডাম, আপনার দেয়া কাজটা সফল ভাবে আমারা সম্পন্ন করতে পেরেছি। ঘরে ঢোকার আগমুহূর্ত থেকে পরবর্তী সময়ের তার সমস্ত অনুভূতির রেকর্ড ভিডিও টাতে রয়েছে। “
“আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এবার গবেষণাটা আমরা শেষ করতে পারব। “
“আসলে হয়েছে কি, রকিব নামের ছেলেটি বলতে শুরু করল, লিজা খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
একারণে তাকে আমাদের সব খুলে বলতে হয়েছে। এদিকে আপনারো আসতে এতোটা দেরী হল.....”
“আমি হঠাৎ করে ভুলেই গিয়েছিলাম আসলে। “
“কিন্তু আমার শুধু একটাই প্রশ্ন করার ছিল। চিৎকার টা কে করল?”
পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করল ওরা। কারণ তাদের প্ল্যানে চিৎকারের কথা ছিল না।
উত্তর দিতে পারলনা কেউ।
অবাক দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলেন মিসেস রেহানা।
আর একটি মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণা করতে গিয়ে পরবর্তিতে অন্য এক নতুন রহস্যের মধ্যে জড়িয়ে পড়লেন তিনি।
এবং যেটা ছিল আরো অনেক বেশী ভয়ানক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।