আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুদের হার কত হওয়া উচিত? ১০% না কি ২৫%??

নৌকা আর ধানের শীষে ভোট দিয়ে সোনার বাংলার খোয়াব দেখা আর মান্দার গাছ লাগিয়ে জলপাইর আশা করা একই! বিস্ময়ের ব্যাপার হল দিনের পর দিন আমরা তাই করছি!! ব্যাংকিং খাতে সুদ হারের উলম্ফন এ মুহুর্তে অন্যতম আলোচ্য বিষয়। টার্ম ডিপোজিটে সুদ ৮-৯% থেকে বেড়ে এখন ১৪-১৫%। বড় অংকের ক্লায়েন্টরা দর কষাকষি করে আরো কিছুটা বাড়িয়ে নিতে পারেন। অনেক ব্যাংক নতুন কোন গ্রাহককে ঋন দিচ্ছে না। পুরনোদের সিসি লোনে রেট ১৩% থেকে ১৬% করা হয়েছে।

টার্ম লোনে রেট এখন ১৭-১৮%। ব্যবসায়িরা বলছেন এত চড়া দামে টাকা নিয়ে তাদের পোষায় না। আর ব্যাংক বলছে ১৫% রেট দিয়েও ডিপোজিট পাচ্ছিনা। সরকারী প্রতিস্টান/ কর্পোরেশনের বড় বড় ফান্ড ধরার জন্য ব্যাংকাররা রীতিমত 'ঘুষ' দিচ্ছেন 'জায়গামত। ' দালাল গজিয়েছে একশ্রেনীর।

ইত্যাদি ইত্যাদি। কথা হল, আসলে কত হওয়া উচিৎ সুদের হার? এটা কি পুরোপুরি বাজারের হাতে ছেড়ে দেয়া ভাল, না কি বাধ্যতামূলক সীমারেখা থাকা ভাল? না কি আধাআধি হুমকি-ধামকি ভিত্তিক সাময়িক ব্যবস্থাপনার আওতায়ই চলবে (যেমনটি চলছে)? এক কথায় কোন উত্তর না দিয়ে একটু বৃত্তান্ত দিই। সুদ ও টাকা কি? টাকার ইটসেলফ কোন মূল্য নেই। যা আছে তা রেফারেল ভ্যালু। তাই স্থান ও কাল ভেদে সমপরিমান টাকায় আমরা সমবস্তু/সেবা পাই না।

৪০ টাকায় এ মুহুর্তে ঢাকায় ১ কেজি চাল পেলেও বাঘাইছড়ির সাজেকে পাওয়া যাবে ১/২ কেজি মাত্র! মোটামুটি ১৫ টাকায় এখন ১ কেজি টমেটো পেলেও ক'মাস বাদেই এ টাকায় ২০০ গ্রামের বেশী মিলবে না। সুতরাং আয় থেকে ব্যয় বাদ দিলে যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তা যক্ষের ধনের মত কাপড়ের পুটলি বা মাইট্টা ব্যাংকে আঁকড়ে ধরে রাখলে তেমন লাভ নেই। বরং কালে কালে তা ক্ষয়েই যাবে। উপরন্তু চুরি, ডাকাতি, উইপোকায় কাটা, পুড়ে যাওয়া, পানিতে ভেজার ঝুঁকিতো রয়েছেই! তাই রিয়াল ভ্যালুতে লসে না পড়া বা খানিকটা লাভের জন্য টাকাকে ভ্যালু এডিং অর্থনৈতিক প্রবাহে ঠেলে দেয়া জরুরি। সুদ এ প্রবাহে টাকাকে ঠেলে দেয়ার প্রণোদনা।

সুদের মিনিমাম রেট কত হওয়া উচিত? যেহেতু টাকার ভ্যালু রেফারেল। তাই আর দশটা পণ্যের দামের সাথে টাকার দামেরও একটা ন্যায্যতাভিত্তিক উঠানামা দরকার। বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়ল অথচ টাকা স্থির দামে রইল তাহলে লোকেরা কেন সঞ্চয় করবে? দেশে এ মুহুর্তে মূল্যস্ফীতি কত তা কেউ জানেনা! যদি ধরি জমি তাহলে তা কমছে কম +৩০%, রিকশাভাড়ায় +১০০%, চাল ডালে হয়ত +১০%, মোবাইল সেটে -২৫%, চুল কাটায় +২৫% ইত্যাদি। তবে খাতাকলমের হিসেবে সরকারী বোদ্ধারা তা ১১% বলে থাকেন। যে যাই বলুক, আমি বলব কমছে কম ১৫% করে রিটার্ন না পেলে একজন সঞ্চয়কারীর চলতি বাজারে পোষাবে না! আর আমার এ কথার তালেই আছে সরকার।

সরকারী বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রে মোটামুটি ১২% রেট পাওয়া যাচ্ছে। সরকার এ দামে টাকা কিনলে সংগতকারণেই বেসরকারী ব্যাংকগুলোকে আরো বেশী রেট দিতে হবে। তা না হলে লোকেরা সেখানে টাকা রাখবে কেন? সুতরাং এ বাস্তবতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মোটেও উচিৎ হবে না 'গায়ের জোরে' সার্কুলার দিয়ে অগনিত মধ্যবিত্ত সঞ্চয়কারীকে কম দামে তাদের টাকা 'লসে' বেচতে বাধ্য করার। যদি তা করা হয় তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌলিক কর্ম তথা রাস্ট্রের সাধারন জনগণের স্বার্থ রক্ষার বিপরীতেই কিছু একটা করা হবে। ব্যবসায়িদের মেকীকান্না ও ঋনের সুদ ব্যবসায়িরা নাবালক ছেলেরমত কান্নাকাটি করে দেখছেন বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের হয়ে 'মাস্তানী'টা করে কিনা! হতাশার ব্যাপার কিছুটা করছে।

তারা বলছেন এত চড়াদামে টাকা ধার করে তাদের পোষাচ্ছেনা। কথা মানলাম। তাহলে ব্যবসাটা ছেড়ে দেন! আপনারা যখন আরো চড়াদাম কিংবা একেবারে গলাকাটা দাম রাখেন তখনতো আমাদেরও পোষায়না! তবু আমরা জীবন বাচানোর জন্য কেনাকাটা করি! আর কে বলেছে ব্যবসার পুরো পুঁজিই আপনাকে ব্যাংক থেকে নিতে হবে? আপনার ইক্যুইটি কই? বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের বেশীরভাগ ব্যবসায়ী মাত্রাতিরিক্ত ঋন নিয়েছেন এবং তা পানির দরে। অনেক প্রতিস্টান প্রযোজ্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ৩/৪ গুন ঋন নিয়ে তা (স্মার্টলি) স্বীয় নামে জমিজমা, ফ্ল্যাট, অন্যব্যবসায় গেঁড়েছেন। সবচেয়ে ন্যক্কারজনক বিষয় হল দেশে নারী উদ্যোক্তার নামে ও কিছু কিছু খাতে ১০% এ লোন দেয়া হয়েছে।

যার বিরাট অংশ ১২-১৩% রেটে অন্যকোন ব্যাংকে এফডিআর হয়ে গেছে!!! বাংলাদেশের টাকার প্রবাহ আমরা একটু ডিপলি অবজার্ভ করে দেখতে পাই, পল্লী অঞ্চলের শাখাগুলোয় লোন কম ডিপোজিট বেশী আর ঢাকায় লোন বেশী ডিপোজিট কম। আবার ডিপোজিটররা পেশায় সবাই চাকুরে, প্রবাসী। আয়ে মধ্যবিত্ত ঘরানার। পক্ষান্তরে বেশীরভাগ ঋন যায় বড় বড় গ্রুপ ধাঁচের ব্যবসায়িদের কাছে। এসব গ্রুপের ব্যবসার প্রকৃত রিটার্ন অন ইক্যুইটি ৫০% এর কম নয়! তবে কাগজে কলমে গরীবানা শো করার জন্য ওনারা অনেক কিছুই করেন।

হাস্যকর হলেও ৫০% ধনী প্রফিট মেকাররা ব্যাংকের কাছে ১০% এর কম রেটে লোন চাচ্ছেন। তাহলে ব্যাংক ডিপোজিটরকে কি ৫% ভিক্ষা দিয়ে বিদেয় করবে! কেন? সবাইকে ধন্যবাদ। চট্টগ্রাম ২৯.০২.২০১২  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.