কমল দাশগুপ্ত, সঙ্গীতে বিরল প্রতিভাবান একজন সৃষ্টিশীল মানুষ। খ্যাতির আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রেখে নিরলস সাধনা করে গেছেন সঙ্গীতের, করেছেন একের পর এক নতুন নতুন সুরের সৃষ্টি। বাংলা, হিন্দি, উর্দু সঙ্গীতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন অতি উচ্চ আসনে। ক্ল্যাসিক্যাল, সেমি-ক্ল্যাসিক্যাল, নজরুল সঙ্গীত, শ্যামা সঙ্গীত, গজল, কীর্তন, ইসলামী ও আধুনিক গানসহ সঙ্গীতের নানা শাখায় করেছেন সৃষ্টিশীল ও মননশীলতার উজ্জ্বল এবং অবাধ বিচরণ। এই সুরস্রষ্টার সুর ও সঙ্গীতায়োজনে আছে প্রায় আট হাজারের(৮০০০) মত গান।
কমল দাশগুপ্ত, জীবনের একটা বড় অংশ কাটিছেয়েন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের একান্ত সান্নিধ্যে। দুজনেই উস্তাদ জমিরউদ্দিন খানের কাছে থেকে সঙ্গীতের তালিম নিয়েছিলেন। প্রায় চারশত(৪০০)র অধিক পরিমাণ নজরুলগীতির সুরকারও তিনি। কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্বয়ং নিজে শুধুমাত্র কমল দাশগুপ্তকেই কবির অনুমতি ছাড়াই কবির নিজের লেখা গানে সুর বসানোর অধিকার দিয়েছিলেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সে এইচ.এম.ভি(The Gramophone Company of India where HMV represents ‘His Master’s Voice’) তে জয়েন করেন এবং প্রধান সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে দীর্ঘ ২৫ বছর কাজ করেন।
যূথীকা রায়, হেমন্ত মুখার্জী, জগমোহন মিত্র, তালাত মাহমুদ ও ফিরোজা বেগম সহ অনেকেই উনার কাছ থেকে সঙ্গীতের তালীম নিয়েছেন এবং উনার সুরারোপে গান করেছেন। এছাড়াও প্রায় ৯০টির মত ছায়াছবিতে করেছেন সঙ্গীত পরিচালনা। এই উপমহাদেশে উনার সমকক্ষ কিংবা প্রতিদন্ধী একমাত্র উনি নিজে ছাড়া দ্বিতীয়টি আর কেউ নেই। সঙ্গীতের এই কিংবদন্তীর শ্রেষ্ঠত্ব তাই শুধু উনার নিজের সাথেই তুল্য।
ফিরোজা বেগম, একমাত্র পরিচয় হিসেবে বলা যায় তিনি একজন নজরুল সঙ্গীত শিল্পী।
এই একটি মাত্র পরিচয়ই উনার অন্য সব পরিচয়কে ম্লান করে দেয় নিমিষেই। উপমহাদেশ বিখ্যাত নজরুল সঙ্গীতের কিংবদন্তি শিল্পী ও বিশিষ্ট গুরুজন হিসেবে সব মহলেই সমাদৃত তিনি। নজরুল সঙ্গীতে উনার জ্ঞান, দখল উনাকে খ্যাতির চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। যদিও আজন্ম খ্যাতির আড়ালেই থাকতে পছন্দ করেন তিনি। অনেকটা সময় কাটিয়েছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সান্নিধ্যে।
নজরুল সঙ্গীত ছাড়াও সঙ্গীতের নানা শাখায় করেছেন অবাধ বিচরণ তবুও তিন নজরুল সঙ্গীত শিল্পী হিসেবেই সমাদৃত আছেন এবং থাকবেন।
কমল দাশগুপ্ত ও ফিরোজা বেগম, সঙ্গীতের এই দুই দিকপাল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সূচনা করেন সঙ্গীতের আরেক মধুর অধ্যায়ের। যার শুরু আছে, হয়ত কোন শেষ নেই। যেন সঙ্গীতের আলোক বার্তা হাতে নিয়ে বহুদূরের অন্ধকার অনেকটা পথ আলোকিত করার দৃঢ় সংকল্পে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এই পরিবারটি। সঙ্গীত ভুবনে নিজেরা দাপটের সাথে বিচরণ করেছেন খ্যাতির চূড়ায় থেকে।
অগণিত ভক্ত-শ্রোতার হৃদয় কেড়েছেন গানে গানে। একজন সুর বেঁধেছেন শিল্পীর জন্য আর অন্যজন কণ্ঠে তুলে তা পৌঁছে দিয়েছেন শ্রোতাদের কাছে। কমল দাশগুপ্ত নিজেও কণ্ঠে তুলেছেন অনেক গান। সঙ্গীতের অনবদ্য সৃষ্টির জোয়ারে ভাসিয়েছেন দেশে-বিদেশ অজস্র শ্রোতা হৃদয়।
তাহসীন আহমেদ, হামিন আহমেদ ও শাফিন আহমেদ এই তিন সন্তানের জনক সঙ্গীতের এই দুই মহান দিকপাল।
হামিন আহমেদ ও শাফিন আহমেদ, বাবা-মা কমল দাশগুপ্ত ও ফিরোজা বেগম, সঙ্গীতের এই দুই মহান শিল্পীদ্বয়ের পরিচয়কে ছাপিয়ে মেলে ধরেছেন নিজেদের পরিচয়। সঙ্গীত ভুবনে নিজেদের মেধা ও সৃজনশীলতার প্রতিটি স্পর্শে তিলে তিলে গড়েছেন এক একটি অনবদ্য সঙ্গীত। জোয়ারে ভাসিয়েছেন, কেড়েছেন অজস্র শ্রোতাহৃদয়। মঞ্চে কাঁপিয়েছেন দেশে-বিদেশের হাজার হাজার উন্মত্ত দর্শকশ্রোতা।
হামিন আহমেদ, বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও ট্রু-রক ব্যান্ড ‘মাইলস’-এর ব্যান্ড লিডার, গিটারিস্ট ও কণ্ঠশিল্পী।
বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশান (বামবা) এর বর্তমান সভাপতি। এসব খ্যাতির আড়ালে উনি নিজে একজন দুর্দান্ত গীতিকার ও সুরকার।
শাফিন আহমেদ, বর্তমান মাইলসের বেইজিস্ট ও মেইন ভোকালিস্ট। তিনিও একাধারে দুর্দান্ত গীতিকার ও সুরকার। ব্যান্ডের বাইরেও সলো ক্যারিয়ারে তুমুল জনপ্রিয় এই সঙ্গীত তারকা।
একটা সময় ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবাম গুলোতে দাপটের সাথেই বিচরণ করেছেন শ্রোতা হৃদয়ে। মাইলসের বাইরে সলো কিংবা মিক্সড অ্যালবামেও রয়েছে এই তারকার অধিক সংখ্যক জনপ্রিয় গান।
ফরিদ, হ্যাপি আখন্দ, কমল, মুসা, ল্যারি, ইশতিয়াক ও রবিন কে নিয়ে ১৯৭৯ সালে গড়ে উঠে ব্যান্ড দল ‘মাইলস’। ঐ সালেই কিছু সদস্য ব্যান্ড ছেড়ে গেলে হামিন আহমেদ ও শাফিন আহমেদ মাইলস-এ জয়েন করেন। সেই-ই শুরু।
আজকের এই বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে ব্যান্ডটি অতিক্রম করেছে দীর্ঘ তিন যুগেরও কিছুটা বেশী সময়। দাপিয়ে বেড়িয়েছে দেশবিদেশের উন্মক্ত মঞ্চে। রেড়িও, টিভি কিংবা খবরের কাগজের রঙ্গীন পৃষ্ঠা জুড়ে এঁকে দিয়েছে তারুণ্যের হৃদপিন্ডের স্পন্দন। জয় করেছেন খ্যাতির পুষ্পমালা। হামিন আহমদে ও শাফিন আহমেদ, এই দুই ভাইয়ের হাতের ছোঁয়ায় বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিকে শুরু হয়েছে সৃষ্টিশীল নান্দনিকতার আরেক অধ্যায়, যার নাম ‘মাইলস . . . . . .’
১৯৮২ এবং ১৯৮৬ তে ‘Miles’ & ‘A Step Farther’ নামে দুটি ইংলিশ অ্যালবাম প্রকাশ করে।
‘Miles’ শিরোনামের অ্যালবামটি তিনটি মৌলিক গানসহ সাতটি কাভার সং এবং ‘A Step Farther’ অ্যালবামে থাকে সাতটি মৌলিক গান ও তিনটি কাভার সং। এরই মাঝে হ্যাপি আখন্দ ব্যান্ড ছেড়ে চলে গেলে ১৯৮২ সালে কীবোর্ডিস্ট ও ব্যাক ভোকালিস্ট হিসেবে জয়েন করেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা কীবোর্ড বাদক ও একজন সফল সুরকার মানাম আহমেদ। এবং ১৯৮৭ সালে রক-স্টারটার মাহবুব রশীদ মাইলসের ড্রামার হিসেব জয়েন করেন।
বিভিন্ন রদবদলের মধ্য দিয়ে ১৯৯১ সালে হামিন, শাফিন, মানাম ও মিল্টন(On Drums)কে নিয়ে বাংলা ব্যান্ড মিউজিকে অনবদ্য সঙ্গীত রচনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বের হয় মাইলসের প্রথম বাংলা অ্যালবাম ‘প্রতিশ্রুতি’। প্রথম বাংলা অ্যালবামেই শ্রোতা হৃদয়ে রক-ফিউশানের ঝড় তুলে দিয়ে শুরু হয় নতুন যাত্রা।
‘প্রতিশ্রুতি’ প্রকাশের ২০ বছর পরে আজকের বর্তমান সময়ে একুশ শতকের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে ঐ অ্যালবামের একটি গানও পুরোনো মনে হয় না (বরং সেই সময়ে করা গানের গুণগত মান ও স্বাদের কথা ভেবে মনটা খারাপই হয়ে যায়, কত চমৎকার চমৎকার গান সৃষ্টি হত যার স্বাদ বর্তমান সময়ে করা গানে আর পাইনা তেমন)। আবেদন কমে যায় নি এতটুকুও। ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘সে কোন দরদিয়া’, ‘প্রথম প্রেমের মত’, ‘ঘরে লইয়্যা যাও’, ‘পাতা ঝরে যায়’, ‘এ মনতো আর মানে না’ কিংবা ‘গুঞ্জন শুনি’ এই বর্তমান সময়েও চূড়ান্ত রকমের আবেদন নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শ্রোতা থেকে শ্রোতা হৃদয়ে।
‘প্রতিশ্রুতি’র জনপ্রিয়তায় মাইলস জোয়ারে ভাসছে তখন। মাঝে এক বছরেও কিছুটা বেশী সময় বিরতি দিয়েই মাইলস আবারও তাদের নতুন প্রজেক্ট নিয়ে ফিরে আসে শ্রোতাদের কাছে।
সেই সাথে ১৯৯৩ সালেই মাইলসে আবারও ফিরে আসেন ড্রামার মাহবুব রশীদ। শ্রোতাদের দেয়া প্রতিশ্রুতির কথা মাথায় রেখেই শ্রোতা হৃদয়ের প্রত্যাশা পূরণের অঙ্গীকার দিয়ে ১৯৯৩ সালে মাইলস প্রকাশ করে তাদের দ্বিতীয় বাংলা অ্যালবাম ‘প্রত্যাশা’। অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়ে এবং শ্রোতা হৃদয়ের সমস্ত প্রত্যাশাকেও ছাপিয়ে মাইলসের ‘প্রত্যাশা’ অ্যালবামটি হয়ে উঠে সর্বাধিক জনপ্রিয় অ্যালবাম। ভিন্ন মাত্রার কথা, সুর ও সঙ্গীতায়োজনে খুব সহজেই শ্রোতাদের ভাললাগার শীর্ষ তালিকায় স্থান করে নেয় এই অ্যালবামটি। মাইলসের সর্বাধিক জনপ্রিয় গানগুলোও এই অ্যালবামেরই।
এমনকি কিছু শ্রোতা মাত্রই তারা শুধু গান শুনে যান, গানের পেছনের ব্যাক্তিটি কে বা কারা এমনটি খোঁজ নেবার প্রয়োজন বোধ করেন না, তাদের কাছেও ‘ফিরিয়ে দাও, আমারই প্রেম তুমি ফিরিয়ে দাও’, ‘নীলা’, ‘ধ্বিকি ধ্বিকি’, ‘যাদু’, ‘আর কতকাল খুঁজবো তোমায়’, ‘পাহাড়ি মেয়ে’ কিংবা ‘এক ঝড় এসে ভেঙ্গে দিয়ে গেল, তাই জীবনটা এলোমেলো/স্বপ্ন ভঙ্গ’ স্বাভাবিক ভাবেই পরিচিত, যা জনপ্রিয়তার স্বাক্ষর বহন করে। (প্রতিটি গানই আলাদা আলাদা ভাবে উল্লেখ করার মত। বরং গানগুলোর উল্লেখ করছি না বলে আমার নিজেরই খুব কষ্ট হচ্ছে। তবে পোষ্টের শেষের দিকে মাইলসের জনপ্রিয় গানগুলো এবং গানগুলোর পেছনে যে মানুষগুলোর অবদান রয়েছে তার কিছুটা তুলে ধরতে চেষ্টা করব। )
তারপর প্রায় তিন বছরের দীর্ঘ বিরতি।
এই বিরতির মাঝেই আমেরিকা থেকে মাইলসের জনপ্রিয় গানগুলো নিয়ে ‘বেস্ট অব মাইলস’ শিরোনামে একটি অডিও সিডি প্রকাশ করে ব্যান্ডটি এবং এটিই বাংলাদেশী কোন ব্যান্ডের প্রথম সিডি প্রকাশ। ঐ সময়টাতে ভারত সহ দেশ-বিদেশের প্রচুর কনসার্টে অংশগ্রহণ করে মাইলস। ১৯৯৬ সালে ‘প্রতিশ্রুতি’ এবং ‘প্রত্যাশা’র ব্যাপক সফলতার পরে মাইলস তাদের ব্যান্ডের পঞ্চম ও বাংলা তৃতীয় অ্যালবাম ‘প্রত্যয়’ তুলে দেয় শ্রোতাদের হাতে। জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এই অ্যালবামটিও জনপ্রিয় ও বৈচিত্র্যময় গানের সমাহারে ভরপুর। সর্বাধিক জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে ‘জ্বালা জ্বালা’, ‘তুমি নাই’, ‘এ সময়’, ‘ফ্রাসট্রেশান’, ‘এইতো সেদিন’ ও ‘ভুলবোনা তোমাকে’ উল্লেখযোগ্য।
‘প্রত্যয়’ অ্যালবাম প্রকাশের মধ্য দিয়ে ড্রামার মাহবুব রশীদ ব্যান্ড ছেড়ে চলে গেলে সেই বছরই মাইলসের ড্রামার হিসেবে জয়েন করেন জিয়াউর রহমান তূর্য। এবং এখন অব্দি ড্রামার হিসেবে মাইলসের সাথে সম্পৃক্ত আছেন সফল ভাবে।
১৯৯৭, দুটি গান নিয়ে প্রকাশিত ‘প্রয়াস’ নামের অ্যালবামটি Extended Dance Music হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয় এবং ১৯৯৮ সালে ভারত থেকে ‘Best of Miles – Vol I’ এবং ‘Best of Miles – Vol II’ দুটি সংকলিত অ্যালবাম প্রকাশ পায় যা ভারতে মাইলসের জনপ্রিয়তা ব্যাপক বাড়িয়ে দেয়।
‘পিয়াসী মন’, ‘পলাশীর প্রান্তর’, ‘শেষ ঠিকানা’, ‘বিষ্ময় যাত্রা’ ও ‘পারিনা বোঝাতে’র মত তুমুল জনপ্রিয় গান নিয়ে ১৯৯৯ সালে বের হয় ব্যান্ডের পঞ্চম বাংলা অ্যালবাম ‘প্রবাহ’। আবারও জনপ্রিয়তায় চূড়ায় ভাসতে থাকে ব্যান্ড দল মাইলস।
অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয়তা পাওয়া গানের গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলী প্রথম বারের মত এই অ্যালবামেই মাইলসের জন্য তিনটি গানের কথা সংযোজন করেন। শ্রোতা থেকে শ্রোতাতে, শত শত পলাতক হৃদয়ে কানে কানে কি যেন বলে যায় এই অ্যালবামটি। মাইলসের অন্যসব অ্যালবামের মত এই অ্যালবামটিও বিপুল জনপ্রিয়তার স্বাক্ষর বহন করে। সেই সাথে মাইলসের পঞ্চম বাংলা অ্যালবাম ‘প্রবাহ’র মধ্য দিয়েই গিটার হাতে মাইলসের পঞ্চম সদস্য হিসেবে ব্যান্ডটিতে জয়েন করেন ইকবাল আসিফ জুয়েল।
তারপর ছয় বছরের আরো একটি দীর্ঘ বিরতি।
অনেকটা সময় শ্রোতাদের আড়ালে থেকে অবশেষে ২০০৬ সালে ‘প্রতিধ্বনি’ নিয়ে আবারও হাজির হয়। আর সঙ্গীত জগতে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে সেই গানগুলো। তবে শ্রোতাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির কাঠগড়ায় আগের অ্যালবামগুলোর জনপ্রিয়তার মানদণ্ডে বিচার করলে বলতে হবে আগের অ্যালবাম গুলোর তুলনায় অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়ে ‘প্রতিধ্বনি’। তবুও ‘জাতীয় সঙ্গীতের দ্বিতীয় লাইন’, ‘অসহায়’ কিংবা ‘প্রতীক্ষা’ সহ বেশ কিছু গান মাইলসের অস্তিত্বের জানান দেয় শ্রোতা মহলে। ‘জাতীয় সঙ্গীতের দ্বিতীয় লাইন’ গানটি একক ভাবে বেশ শ্রোতাপ্রিয়তা পায়।
যদিও অধিক শ্রোতাপ্রিয়তা গানের ছড়াছড়ি নেই এই অ্যালবামটিতে তবুও বেশ কিছু চমৎকার গান রয়েছে যা মাইলসের সৃষ্টিশীলতা ও নান্দনিকতার স্বাক্ষর বহন করে।
২০১২ সাল। জনপ্রিয়তার ঘোড়দৌড়ে কিছুটা পিছিয়ে গেলেও থেমে নেই জনপ্রিয় এই ব্যান্ডটি। ব্যান্ডটির সর্বশেষ অ্যালবাম ‘প্রতিচ্ছবি’ গ্রামীণফোন মুঠোফোনে ডিজিটাল প্রকাশ পেয়েছে। এরই মাঝে ‘প্রিয়তমা মেঘ’ নামের গানটি রেডিওতে অধিক সংখ্যকবার প্রচারিত হয়েছে।
সেই সাথে পেয়েছে শ্রোতাপ্রিয়তাও। অধীর অপেক্ষায় বসি আছি অ্যালবামটির জন্য। জানিনা কবে অডিও সিডি প্রকাশ পাবে। হয়ত কপিরাইট আইনের সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত হাতে পাবো না প্রিয় এই ব্যান্ডটির নতুন অ্যালবামটি।
মাইলস . . . . সস্তা জনপ্রিয়তার সাথে আপোষহীন এই ব্যান্ডটি জন্মলগ্ন থেকেই মেধা, মননশীল ও সৃষ্টিশীল নান্দনিকতায় শ্রোতা হৃদয়ে তুলেছে সঙ্গীতের ঝড়, পত্রিকা থেকে টেলিভিশন কিংবা ক্যাসেটের ফিতা থেকে উন্মত্ত মঞ্চে কাঁপিয়েছেন অজস্র দর্শক শ্রোতা।
বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতে গড়ে তুলেছে নিজেদের ভিন্ন মাত্রার মৌলিক এক ধারার, অনবদ্য সঙ্গীতের আলোকোজ্জ্বল এক অধ্যায়ের যার মটো Miles To Go .. .. ..
‘মাইলস’ এই পরিবারটির সাথে যারা ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছেন সেই সব মানুষগুলো, যারা গানের কথা লিখে, সুরবিন্যাস কিংবা যন্ত্রসংযোজন করে দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশী সময় সাফল্যের ধারাবাহিক রেখাচিত্র এঁকেছেন শ্রোতা থেকে শ্রোতা হৃদয়ে, দর্শক থেকে দর্শক হৃদয়ে। যাদের অবদানে আমার শ্রোতা হৃদয়ের অনুভূতিগুলো সাজিয়ে রেখেছি গানের পরতে পরতে। সেই সব পেছনের মানুষগুলো, যাদের অবদানের কথা আমরা শ্রোতা মাত্রই এড়িয়ে যাই কিংবা খোঁজ নেবার প্রয়োজন পড়ে না, তাদেরই কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করছি----
অ্যালবামঃ প্রতিশ্রুতি, প্রকাশকালঃ ১৯৯১
১. চাঁদ তারা/ লিরিকঃ কাজী ফারুক বাবুল, সুরবিন্যাসঃ মানাম আহমেদ
২. সে কোন দরদিয়া/ লিরিকঃ ফেরদৌস নাহার, সুরবিন্যাসঃ শাফিন আহমেদ
৩. প্রথম প্রেমের মত/ লিরিকঃ ফেরদৌস নাহার, সুরবিন্যাসঃ হামিন আহমেদ
৪. সুপ্ত বাসনা/ লিরিকঃ শাফিন আহমদে, সুরবিন্যাসঃ হামিন আহমেদ
৫. গুঞ্জন শুনি/ লিরিকঃ শাফিন আহমেদ, সুরবিন্যাসঃ শাফিন আহমদে
৬. শান্তি নেই/ লিরিকঃ হামিন আহমেদ, সুরবিন্যাসঃ হামিন আহমেদ
৭. আশা নিরাশা/ লিরিকঃ হামিন আহমদে, সুরবিন্যাসঃ হামিন আহমেদ
৮. ফিরে এলেনা/ লিরিকঃ কাজী ফারুক বাবুল, সুরবিন্যাসঃ শাফিন আহমেদ
৯. কে ওরা রাজপথে/ লিরিকঃ হামিদুর রহমান, সুরবিন্যাসঃ শাফিন আহমেদ
১০. পাতা ঝরে যায়/ লিরিকঃ অতনু চক্রবর্তী, সুরবিন্যাসঃ শাফিন আহমেদ
১১. ঘরে লইয়্যা যাও/ লিরিকঃ কাওসার আহমেদ চৌঃ, সুরবিন্যাসঃ হামিন আহমেদ
১২. এ মন তো আর/ লিরিকঃ মাহমুদ খুরশীদ, সুরবিন্যাসঃ মানাম আহমেদ
অ্যালবামঃ প্রত্যাশা, প্রকাশকালঃ ১৯৯৩
এই অ্যালবামের প্রচ্ছদে গানের কথা সংযোজন ও সুরবিন্যাসে অবদানের কথা উল্লেখ নেই। তবে পরবর্তী সময়ে পত্রিকায় দেখেছিলাম অধিকাংশ গানের কথা ও সুর সংযোজনা শাফিন, হামিন ও মানাম আহমদের। তথ্যসূত্র উল্লেখ করতে পারছিনা বলেই আলাদা ভাবে গীতিকার ও সুরকারের নাম দেইনি।
অ্যালবামঃ প্রত্যয়, প্রকাশকালঃ ১৯৯৬
১. জ্বাল জ্বালা/ লিরিকঃ মাহমুদ খুরশীদ, সুরবিন্যাসঃ মানাম আহমেদ
২. এ সময়/ লিরিকঃ চারু, সুরবিন্যাসঃ হামিন আহমেদ
৩. তুমি নাই/ লিরিকঃ মাহমুদ খুরশীদ ও হামিন, সুরবিন্যাসঃ হামিন আহমেদ
৪. ভুলবোনা তোমাকে/ লিরিকঃ মাহমুদ খুরশীদ, সুরবিন্যাসঃ মানাম আহমেদ
৫. প্রেমের আগুন/ লিরিকঃ ফেরদৌস নাহার, সুরবিন্যাসঃ শাফিন আহমেদ
৬. এইতো সেদিন/ লিরিকঃ হামিন আহমেদ, সুরবিন্যাসঃ হামিন আহমেদ
৭. ঝলমলে বিকেলে/ লিরিকঃ মাহমুদ খুরশীদ, সুরবিন্যাসঃ মানাম আহমেদ
৮. স্বপ্নে/ লিরিকঃ শাফিন আহমেদ, সুরবিন্যাসঃ শাফিন আহমেদ
৯. ফ্রাসট্রেশান/ লিরিকঃ চারু ও হামিন আহমেদ, সুরবিন্যাসঃ হামিন আহমেদ
১০. অনাবিল বিশ্বাসে/ লিরিকঃ ফেরদৌস নাহার, সুরবিন্যাসঃ শাফিন আহমেদ
১১. জীবন/ লিরিকঃ কামরুজ্জামান কাজল, সুরবিন্যাসঃ মানাম আহমেদ
অ্যালবামঃ প্রবাহ, প্রকাশকালঃ ১৯৯৯
১. পিয়াসী মন/ লিরিকঃ দীপন, সুরবিন্যাসঃ মানাম আহমেদ
২. পারিনা বোঝাতে/ লিরিকঃ মাহমুদ খুরশীদ, সুরবিন্যাসঃ শাফিন আহমেদ
৩. স্বপ্নীল এই রাতে/ লিরিকঃ দীপন, সুরবিন্যাসঃ হামিন আহমেদ
৪. তুমি কি সুখী/ লিরিকঃ মানাম আহমেদ, সুরবিন্যাসঃ মানাম আহমেদ ও বাপ্পী খান
৫. হ্যালো ঢাকা/ লিরিকঃ লতিফুল ইসলাম শিবলী, সুরবিন্যাসঃ শাফিন আহমেদ
৬. প্রিয়তমা/ লিরিকঃ অনিন্দ, সুরবিন্যাসঃ হামিন আহমেদ
৭. বিষ্ময় যাত্রা/ লিরিকঃ মাহমুদ খুরশীদ, সুরবিন্যাসঃ শাফিন আহমেদ
৮. শেষ ঠিকানা/ লিরিকঃ লতিফুল ইসলাম শিবলী, সুরবিন্যাসঃ হামিন আহমেদ
৯. মিছে আশা/ লিরিকঃ ইকবাল আসিফ জুয়েল, সুরবিন্যাসঃ বাপ্পী খান
১০. নীরবে কিছুক্ষণ/ লিরিকঃ আসিফ ইকবাল, সুরবিন্যাসঃ মানাম আহমেদ
১১. পলাশীর প্রান্তর/ লিরিকঃ লতিফুল ইসলাম শিবলী, সুরবিন্যাসঃ শাফিন আহমেদ
১২. অনামিকা/ লিরিকঃ অনিন্দ, সুরবিন্যাসঃ শাফিন আহমেদ
বর্তমান ব্যান্ড লাইনা-আপঃ
হামিন আহমেদ/ -গিটার/ভোকাল
শাফিন আহমেদ/ -বেজ/ভোকাল
মানাম আহমেদ/ -কীবোর্ডস/ভোকাল
জিয়াউর রহমান তূর্য/ -ড্রামস
ইকবাল আসিফ জুয়েল/ -গীটার/ভোকাল
*এই লেখাটা রেডিও বিজি২৪ এর সকল শ্রোতা ভক্তদের উৎসর্গ করলাম।
"রেড়িও বিজি২৪, একটি শিক্ষিত রেডিও। যেখানে দুর্লভ বলে কিছুই নেই। "
(এই চমৎকার লিখাটি রেডিও বিজি ২৪ এর বন্ধুদের জন্য পাঠিয়েছেন 'রেডিও বিজি২৪' এর খুব কাছের একজন বন্ধু মুখলেসুর রহমান সজল ভাই। তাঁর প্রতি জানাই অসংখ্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ)
একটি শিক্ষিত রেডিও ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।