দুনিয়াতে শুধু দুই প্রকার মানুষ আছে। একদল ভাল, একদল খারাপ। এর বাইরে আর কোন বিভেদ নাই। ভুয়া হ্যাকিং লিডারের সাক্ষাৎকার প্রচার করায় ব্লগার আর ফেসবুকারদের আলোচনার ঝড়ে এটিএন নিউজের কর্নধার "মুন্নি সাহার সুনাম" সচেতন মহলে কিছুটা হলেও বিধ্বস্ত। তার বিধ্বস্তের এই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে অসাধু ছাগু সম্প্রদায়।
রাতারাতি গড়ে ওঠা ফেসবুকে বেশ কিছু উগ্র লাইক পেজে মুন্নি সাহাকে বলাৎকারের আহ্বান জানানো হয়েছে। অনেকের কাছে শুনতে বিস্ময়কর লাগছে হয়তোবা; তবু সত্য যে- একজন ফেসবুক ইউজার সেখানে কমেন্টারে সম্মিলিত গণ"-" করার প্রস্তাবও পেশ করতেও দেখা গেছে। কোড রেড' কে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে অদৃশ্যমান সিন্ডিকেট "ইসলামী আইন বাস্তবায়নকারী অনলাইন ইউজার সমিতি" বেশ তৎপর বলেই মনে হচ্ছে। সত্য-মিথ্যা যাই হোক- তাদের বিকল্প মিডয়া তথা অনলাইন মাধ্যমের প্রচার; একদিকে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে ফেলছে অন্যদিকে, উগ্র মানসিক চিন্তায় উস্কে দেয়া হচ্ছে। হ্যাকিং লিডারের সাক্ষাৎকার নেওয়ার অভিযোগে ইসলামী আইনে শাস্তি হিসেবে বলাৎকারের কোন নিয়ম আছে বলে আমার জানা নাই।
তাহলে কেন এই বলাৎকারের প্রস্তাব? ইয়াহিয়া খান গঠিত একাত্তরের শান্তি কমিটির সাথে এই সিন্ডিকেটের কোন সম্পর্ক আছে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে অনলাইন ইউজারদের মাঝে ! তবে তারা কি সাইবার যুদ্ধে গণিমতের মাল হিসেবে মুন্নি সাহাকে কল্পনা করছে? বিষয়টা তাদের কাছে অযৌক্তিক কিছু না বলেও মন্তব্য প্রকাশ করেছেন সচেতন বন্ধুমহল।
এটিএন নিউজ শুক্রবার রাতে তাদের নিয়মিত প্রোগ্রাম "নিউজ এক্সট্রা আওয়ার" (১৭। ০২। ১২) প্রচার করে। সেখানে "কোড রেড" নামের এক তথাকথিত হ্যাকার লিডারের সাক্ষাৎকার নেয়া দেখানো হয়েছে।
কেউ কেউ বলছেন এটা "তামাশা" হয়েছে। ঠিক তামাশা কিনা বলা মুশকিল, তবে সেটা নিয়ে আলোচনাও কম হয়নি এই স্বল্প সময়ের ভিতরে । চ্যানেলটির সংবাদে "কোড রেড"কে হ্যাকারদের নেতা বলা হলেও ব্ল্যাক হ্যাট ও সাইবার আর্মি তাৎক্ষনিক এক বিবৃতিতে বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তাতে ধুম্রজালের সাথে সাথে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে "কোড রেড" ও মুন্নি সাহাকে নিয়ে। সচেতন মানুষের মাঝে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে- ঐ মুখোশধারীকে হ্যাকার লিডার বানানোর আসল উদ্দেশ্যটা কি ? বানিজ্য ? প্রচার ? নাকি রাজনৈতিক কোন ফায়দা লোটার চেষ্টা ? তবে মুন্নি সাহার নিজস্ব ফায়দা যাই হোক না কেন; ছাগু সম্প্রদায়যে এক্ষেত্রে বেশ লাভবান তা ইতিমধ্যেই প্রতিয়মান।
কিছুদিন আগে আমার ফেসবুক বন্ধু আসিফ মহিউদ্দীন (http://www.facebook.com/atheist.asif) তার স্ট্যাটাসে বেশ কিছু লাইক পেজের নাম উল্লেখ করেছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও কিছু ইসলামী প্রচারনা ও গালি সর্বস্ব লাইক পেজ খুজলাম। কিছুটা সফলও হলাম বলা যায়। "সাহাবায়ে কিরাম আমাদের প্রেরনা', 'ইন্ডিয়া !!২০২০ সাল পর্যন্ত ক্রিকেট না খেলার জবাব এশিয়া কাপ এ দিমু' 'অই ছেড়ি, ওড়না গলায় না দিয়া বুকে দে, কামে দিবো', 'ধর্ম অবমাননাকারী নাস্তিকদের চিনে রাখুন', 'দেশ ও ইসলাম বাচান, আওয়ামী লীগ হটান', 'আপনি আওয়ামী লীগ নাকি খাঁঝিলিক', 'আসুন ভারতকে বাঁশ দিই', 'দোস্ত তোর বউ আমার বউ,আমার বউ তোর ভাবি:p,' 'মেয়ের ৯৯% ই ভালো, শুধু লজ্জাশরম একটু কম আর কি, আধুনিক মেয়ে তো'।
যে সব পেজের নাম আমি উল্লেখ করেছি- অধিকাংশ পেজের এডমিনই ধর্মপন্থী রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী।
আমি জানি না-আপনি ঐসব পেজে সক্রিয় কিনা তবে- পেজ গুলোতে যেসব স্ট্যাটাস দেয়া হয়- সেগুলোর বিপরীতে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিলে বুঝবেন- প্রতিক্রিয়া!!! অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হামলার হুমকি-গালি দেয়া হয়।
এই তালিকার বাইরে 'ভাদা ও নাস্তিক মুক্ত বাংলাদেশ চাই, মিশন ২০১৪" শীর্ষক লাইক পেজটি ইতিমধ্যেই মুন্নি সাহাকে নাস্তিক ও ইহুদি নাসারাদের দোসর বলে ঘোষনা করেছে। সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে কিছু পোষ্টও দিয়েছে। অমিত সিদ্দিকী নামক জনৈক ফেসবুক ইউজার ঐ পেজে বলেছেন, "মুন্নি বদনাম হইল, তোর লাইগা দেশ প্রেমিক বাংলাদেশীগো, তোরে জুতা মারমু, এই দেশ থেইকা ভাদা তারামু। "এখন ২০১২ সাল।
এই গ্রুপটি ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইসলামী আইন বাস্তবায়নের মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে সম্ভবত। যদি তাই হয় তবে তাদের মিশন পূরন হতে এখনো দুই বছর বাকি। সম্ভবত শেখ হাসিনা সরকারের মেয়াদ হওয়ার শেষ পর্যন্ত তাদের এই মিশন। তারপর নতুন সরকার নতুন মিশন নিয়ে মাঠে থুক্কু অনলাইনে কাজ করার পরিকল্পনা। পরিকল্পনা যাই হোক- ইতিমধ্যে তারা বেশ কিছু জায়গায় সফল।
যেমন ধরুন- যুক্তিতে না পেরে "পবিত্র গালি" বাণী আকারে লিপিবদ্ধ করাতে তারা বেশ সিদ্ধহস্ত হয়েছে। তাতে বাংলা গালি আরো সমৃদ্ধ হয়েছে কোন সন্দেহ নেই। গোলাম আযম ভাষা সৈনিক ছিলেন- তার শান্তি কমিটির আদলে গড়ে ওঠা এই সব অনলাইন গোষ্ঠী হয়তো এই গালি বাজদের বাংলা ভাষার "গালি সৈনিক" হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সম্মাননা পদকে ভূষিত করতে পারে! দুনিয়াতে কিছুই বিচিত্র নয় ।
আমি শান্তিবাদী মানুষ, গালিবাদী কিংবা সহিংসতাবাদী নই। আমার লেখায় শুধুমাত্র সেইসব মানুষকে কটাক্ষ করা হয়েছে যারা নিজেদের মুশলিম বলে দাবি করে কিন্তু নিজেকে 'গালি সৈনিক' হিসেবে প্রকাশ করতে পিছপা হয়না- প্রমান হিসেবে একটা ছবি দেয়া আছে।
নমুনা হিসেবে আরো দেয়া যাবে- আপত্তি নেই। প্রশ্ন হলো ইসলামে গালি দেয়ার এই রকম কোন নিয়ম আছে ?
সত্য তথ্যকে ঢেকে রাখা উচিত নয়-সেটা ভাল কিংবা খারাপ তথ্য হোক- প্রকাশ করা উচিত। তাতে সচেতনতা বাড়ে বৈ কমে না। মুশলিমদের সমস্যা-ভুল যদি প্রকাশ করা হয় তাতে মুশলিমদের উলঙ্গ করা হয় না, তারা শোধরানোর একটা সুযোগ পায়। দেহের কোন অংশে ছোট সমস্যা যদি জট পাকতে থাকে- অবহেলায়-অগোচরে যখন একসময় তা বড় আকার ধারন করে শেষ পর্যায়ে এসে পৌছে।
তখন আর শোধরানোর সময় থাকে না। সেই ক্ষতিটা তখন পুরো দেহেই প্রভাব ফেলে। আপনি এই নীতি মানবেন কিনা আপানার ব্যক্তিগত ব্যপার কিন্তু সত্য গোপন করার নীতি ইসলামে আছে বলে আমার জানা নেই।
পুরো লেখায় আমি শুধু এক শ্রেনীর মানুষের চরিত্রকে উন্মোচন করেছি। এরা নিজেদের ধর্মপ্রান বলে দাবি করলেও তাদেরকে ধর্মপ্রান বলা যাবে না-সেটা তো স্পষ্ট।
এদের নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ধর্মপ্রান মানুষ বলতে ধর্মের সকল বিধি বিধান মানেন-এমন ব্যক্তিকেই বোঝাবে। তবে বাস্তবে এমন ব্যক্তি পাওয়া যায় না। প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব একটি দুর্বলতা আছে- কোন না কোন জায়গায় সে ধর্মকে মানে না। এবং যে জায়গায় সে মানেনা- সেটার নতুন ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করে।
সমাজে "কিছু মানুষ" আছে, যারা ধর্ম নিয়ে নূন্যতম সমালোচনা সহ্য করতে পারেনা। ভাল সমালোচনার মাঝেও কিছু বিষয় উপরে উঠে আসে- যা কল্যানকর। আমার লেখায় স্পষ্টতই বলেছি-একটি শ্রেনী বিশেষের কথা, কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে কটাক্ষ করে নই। আমি জানি আমার এই লেখা দেখে ঐ গোষ্ঠী শোধরাবে না, তবু সত্য তুলে ধরতে দোষ কি? সমালোচনা সহ্য করতে না পারাতে- তাদের কোন দোষ নাই। দোষটা হচ্ছে সংস্কৃতির।
আমরা যে পরিবেশে বড় হয়েছি- যা দেখেছি- যা শিখেছি- সেটা আমাদেরকে নির্দিষ্ট গন্ডি থেকে বের করতে পারেনি।
কথা বাড়াবনা। ব্লগার আরিফ রুবেল ভাইয়ের এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানতে পারলাম, "বাংলাদেশের হ্যাকারদের সাথে হাত মিলিয়েছে একটি ইসরায়েলি হ্যাকার গ্রুপ। এতক্ষনে বুঝলাম ভারতের উপ্রে আক্রমনটা আসলে ইহুদী-নাসারাদের ষড়যন্ত্র। " ঘটনা যাই হোক- বিষয়টা এখন আন্তর্জাতিক-এটা সত্য।
তাহলে কথিত "সাইবার যুদ্ধ" এর শেষ কোথায়? সাংবাদিক সাগর রুনির হত্যাকান্ডের ঘটনার চেয়ে অনলাইন ইউজারদের কাছে হ্যাকিং এখন উত্তেজনাপূর্ন মুখরোচক বিষয়ে পরিনত হয়েছে। সময় যতই যাচ্ছে-হ্যাকিং লিস্ট আরো সমৃদ্ধ হচ্ছে- খবর হচ্ছে প্রতিনিয়ত-ব্যবসা বাড়ছে-আনন্দ বাড়ছে- ফায়দা লুটছে অন্যজন; এই নীতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে ? যদি হয় তবে কবে? প্রশ্নের উত্তরগুলো হয়তো একা একাই কাঁদছে। (সিয়াম সারোয়ার জামিল - ১৮/০২/২০১২) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।