শুদ্ধতার আগুনে যেন সতত পুড়ি গ্রামাঞ্চলের অনেক বাড়িতেই মোল্লা-ক্বারি-মলানা জায়গির থেকে ‘মাডৎ’ বা চাঁদা তুলে কখনো বাসে ট্রেনে ভিক্ষা করে আবার এতিমখানায় থেকেও মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। বেশিরভাগ মাদ্রাসা ছাত্রই থাকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। আর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলে অনেকের মাঝে মানসিক দৈন্য শিকড় গেড়ে বসতে দেরি হয় না এবং সেই শিকড় বলতে গেলে তাদের মনে চিরস্থায়ী হয়ে যায়। এটা বাল্যকালে জ্যেষ্ঠ কারো কারো মুখে শুনেছি। প্রসঙ্গ ক্রমে বলা যেতে পারে- মসজিদের ইমাম সাহেব যখন চেয়ে চেয়ে ‘দাওয়াৎ’ পাবার ব্যবস্থা করেন।
-“অমুকের বাড়িতে অনেক দিন হইছে কোনো দোয়া-কালাম পড়ায় না। দোয়া-কালাম না পড়াইলে বরকত হইবো কেমনে? সে (অমুক) যদিও নমাজ ছাইড়া ছাইড়া পড়ে, তার বউডা তো এক্কেরে জাহেল...
এভাবেই মোল্লা-ক্বারি-মাওলানা কখনো বা ম’লিসাবের নামে নানা কথার জন্ম হয়। আর সে বিবেচনায় তাদের বিবেক বোধ যে কম থাকে হেফাজতে ইসলামের কর্মতৎপরতা দেখে-শুনে ভাবনাটা ফিরে ফিরে আসে। যেই দলটি বাংলাদেশে ইসলামের হেফাজতকারী মনে হচ্ছে। কিন্তু ইসলামের হেফাজত করার দায়িত্বটা কে বা কারা তাদের দিলেন সে জিজ্ঞাসায় আর না যাই।
বৃক্ষের পরিচয় ফলে আর ব্যক্তির পরিচয় কর্মে। এই সারাংশ থেকে ভাবতে গেলে দেখা যায় যে, ৫/৭জন নাস্তিককে শায়েস্তা করতে সরকার থেকে শুরু করে নানা পদের সুশীল-কুশীল শ্রেণীর মানুষ যেভাবে একতাবদ্ধ হয়েছেন, মনের আড়ালে তাদের কী আছে যদিও বোঝা যায় না, তবু মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত কথার কথাটি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি এবার। আরে ব্যাটা তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী মসজিদে কখনো ঢোকে নাই, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে বলে ‘আলহান্দুলিল্লা’ নামাজকে বলে ‘নোয়াজ’ সেই শ্রেণীর মানুষগুলো আল্লা আর আল্লার রসুলের মর্যাদা রক্ষার ইজারা নিয়ে নিয়েছে ভাবতেই মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে ওঠে।
যেই হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ আকাম-কুকামে বিশ্ব নাড়িয়ে দিয়ে নিজেকে অধঃপতিত করেছিল বিশ্ব-বেহায়া নামের দিকে, যেই এরশাদ সক্ষম থাকলে নাকি বাংলাদেশ কচি-কাচায় ভরে যেত- জিনাত মোশাররফ একদা বলেছিলেন, সেই লোক যুদ্ধ ঘোষণা করে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে। সোভানাল্লা, আল্লার আরশের আশ-পাশে বা আল্লার বাড়িতে নিশ্চয় ফেরেশতারা নৃত্য আরম্ভ করছিলেন খুশিতে, ইস্রাফিল দীর্ঘকাল পরে হয়তো তার শিঙ্গা ঝাড়-পোছ করে পালিশ করতে তৎপর হয়েছিলেন।
আমাদের ঈমানি শক্তি এতদূর পৌঁছে গেছে যে, ৫/৭জন নাস্তিকের বিরুদ্ধে খোদ সরকারও কাছা মেরে নেমে গেছেন। তাহলে বুঝি কেয়ামতের বাকি নাই বেশি দিন। আরে হেফাজতে ইসলাম হোক আর নাজাতে ইসলাম হোক, সবই জামাতে ইসলামীর জ্ঞাতি ভাই। তারা সবাই শহিদ মিনার ভাঙতে উৎসাহী হবেন ভুল নাই, কিন্তু কোনো মাজারের দিকে আগাতে সাহস পাবেন না। সিলেট চট্টগ্রাম খুলনা এমন করে প্রতিটা জেলাতেই আছে একটি করে পির আউলিয়ার গরম মাজার।
যেখানে উরসের সময় চলে গাঁজার উৎসব আর অন্য সময় চলে ‘মানৎ’ এর উৎসব। যেখানে মাজার জেয়ারতের উদ্দেশ্যে যাওয়া হারাম সেখানে আমাদের ‘নেত্রী-নেতারা’ বাবা শাহজালাল রহমতুল্লা আলাইহের মাজার জেয়ারত দিয়ে শুরু করেন তাদের নির্বাচনী প্রচারণা। অথচ মোল্লা-মাওলানা সাহেবরা তখন চুপ করে থাকেন। ‘বেদাতি’ নেতা-নেত্রীর পেছনে কাতার ধরে দাড়িয়ে পড়েন ওলামা দল বা ওলামা লিগ নাম দিয়ে। জামাতি ইসলাম বা হেফাজতে ইসলাম নামে দল তো আছেই, তাদের সহযোগিতা করতে আছে হিজ-বুত তাহেরির বা তালেবানী সংগঠন।
মাজারে সেজদা করা, মানৎ করা আগরবাতি গোলাপ-জল ছিটানো ইসলামের ক্ষতি হয় না। ইসলামের যাবতীয় ক্ষতি করে ফেলে চুনোপুঁটি মাপের কতিপয় নাস্তিক ব্লগার। আর রাজাকার আলবদর আলশামস হিজবুতী আর তালাবানীরা ইজারা নেয় ইসলাম রক্ষার।
আরো ঝেড়ে কাশলে কী আর হতো যে, আমি শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা, তোমাদের বঙ্গবন্ধুর কন্যা আসলে বাপের নীতিতে থাকতে গেলে ক্ষমতার আশা করা অনুচিত। আর তাই হজ করা নাস্তিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মাধ্যমে আসলে বাংলাদেশ জামাত-শিবিরের ছাতার নিচে আশ্রয় নিলো।
আসল কথা বলতে গেলে বলতে হয় যে, যারা নাস্তিক ব্লগার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন তাদের কোনো একজন সদস্য জামাত-শিবিরকে কিঞ্চিৎ ভালবাসে কি না সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। আমি তো মনে করি তাদের মতো ঘৃণা আর কেউ করে না রাজাকারগুলোকে। হুমায়ুন আজাদও নাস্তিক ছিলেন এবং রাজাকারদের ঘৃণা করতেন সবচেয়ে বেশি। আর তাই তাকে সেই মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে মৃত্যুকে বরণ করে। আর এবার নাস্তিক বলে কথিত যে ব্লগারদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে আর যাদের করা হবে, প্রত্যেকেই আসলে জামাত-শিবির-রাজাকার বিরোধী।
সরকার তাদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে রাজাকারদের জয়ধ্বনিই করলেন একরকম। জিয়াউর রহমান এরশাদ খালেদা জিয়া যেমন রাজাকারদের তোয়াজ করেছেন নিজেদের স্বার্থে সেই দলে মিশে গেলেন বঙ্গবন্ধু নিজেও। যেহেতু শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একমাত্র কাণ্ডারি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।