প্রকৃত আলোয় আলোকিত হউক সবার হৃদয়। উদ্বেগ উৎকণ্ঠা মোটেই ভালো জিনিস নয়। আমরা সাধারণত একে অপরকে যে কোন বিষয়ে উদ্বেগ না করার পরামর্শ দেই। কারণ এতে হৃদরোগসহ আরও নানাবিধ মনোদৈহিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। আমার এক বোন যে কোন বিষয়ে এত বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন যে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
বিশেষ করে তার সন্তানদের বিষয়ে কোন সামান্য সমস্যায়ও তিনি উদ্বেগে অস্থির হন। আমরা যতোই বুঝাই তিনি কিছুতেই তার উদ্বেগ ত্যাগ করতে পারেন না। মাঝে আমরা রাগ করি। কিন্তু আমরাও বুঝি মা কি পারেন তার সন্তানের বিষয়ে নিরুদ্বিগ্ন হতে? দেশের জনগনও দেশের সরকার, রাজনীতিবিদদের নিকট সন্তানতুল্য হওয়া উচিৎ। আমাদের সংবাদকর্মীগণকে দেখি সিটি কর্পোরেশন মেয়রকেও নগর পিতা সম্বোধন করতে।
সেখানে পুরো জাতির কর্ণধার হিসেবে যারা আছেন তারা তো দেশপিতা/মাতা। তাহলে তারা কি করে পারেন স্বীয় সন্তানতুল্য প্রজাদের বিপদাপদে নিরুদ্বিগ্ন হতে? এ বিষয়ে দেশের একটি জাতীয় দৈনিক আজ সম্পাদকীয় করেছে। ভারতীয় ইটিভিতে এক সকালে বাংলাদেশি নির্যাতনের ভিডিওটি দেখার পর হতে আমি অধিক শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলাম। ব্লগ বা কোথাও এবিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পর্যন্ত পারিনি। তার উপর আমাদের একজন মন্ত্রী এবং সংসদীয় কমিটির বিবৃতি আমাকে হতবাক করেছে।
আজ সম্পাদকীয়টি দেখে মনে হল আমার অব্যক্ত কথাগুলো তারা বলেছেন, তাই শেয়ার করলাম।
উদ্বিগ্ন যখন ‘দ্য হিন্দু’, নিরুদ্বিগ্ন তখন আমাদের সরকার
অবিলম্বে বন্ধ হোক বিএসএফের এই অমানবিক কর্মকাণ্ড
ভারতের প্রতি বাংলাদেশ সরকার এতটাই সম্মোহিত যে, ভারত নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠানোর প্রয়োজনই অনুভব করে না। ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে যা বলে, যা করে সেটাই যেন আমাদের শিরোধার্য; এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ফলে অন্য অনেক কিছুর মাঝে যখন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের বাংলাদেশী হত্যা নিয়ে সারা দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন, এমনকি ভারতের কোনো কোনো মহলও উদ্বিগ্ন; তখন আমাদের সরকার একেবারে নিরুদ্বিগ্ন। তা যদি না হতো, তবে আমাদের এলজিআরডি মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কি বলতে পারতেন- বিএসএফের বাংলাদেশী হত্যা নিয়ে তার সরকার বা রাষ্ট্র উদ্বিগ্ন নয়।
এ ধরনের বাংলাদেশেী হত্যা অতীতেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে। অতএব এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় অন্যান্য বিষয় নিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতানেত্রীর এ ধরনের নানা মন্তব্য শুনলে এরা বাংলাদেশের না ভারতীয় কোনো মুখপাত্র, তা বোঝা দায়।
সময়ের সাথে সীমান্তে বিএসএফের হত্যা-গুম-নির্যাতন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এর শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের নিরীহ নাগরিক।
শুধু সাধারণ নাগরিকই নয়, সমপ্রতি এদের হাতে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বা বিজিবির একজন সদস্য অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন। তাকে পিটিয়ে আধমরা করে বিএসএফ বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেছে। তা ছাড়া সমপ্রতি একজন বাংলাদেশীকে বিএসএফ সদস্যরা যেভাবে উলঙ্গ করে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে, তার ভিডিওচিত্র ভারতীয় একটি টিভিতে সমপ্রচারিত হওয়ায় তাতে শুধু আমাদের দেশে নয়, ভারতীয় বিভিন্ন মহলে নিন্দার ঝড় ওঠে। এমনকি বিএসএফের এ নৃশংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দু এ অপরাধকর্মের জন্য ভারতকে বাংলাদেশের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলেছে।
নয়া দিগন্ত গত বুধবার এক খবরে জানিয়েছে, সীমান্তে নৃশংসতা (ব্রুটালিটি অন দ্য বর্ডার) শিরোনামে গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে দ্য হিন্দু বলেছে- সামপ্রতিক সময়েও বিএসএফ সদস্যরা সীমান্তে একজন বাংলাদেশীর ওপর নির্যাতন চালিয়েছে এবং সে ভিডিওচিত্র গণমাধ্যম সূত্রে অনেকেই দেখেছেন।
এ ঘটনায় বাংলাদেশীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বলা হয়, ঘটনা নিয়ে চেঁচামেচি করা উচিত নয় বলে ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি যে মন্তব্য করেছেন তার সাথে একই কথা বলেছেন বাংলাদেশের একজন মন্ত্রীও। এসব মন্তব্য বাংলাদেশে ক্ষোভ আরো উসকে দিয়েছে। দ্য হিন্দুর মতে, এ ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কহানি এড়াতে ভারতকে যা করতে হবে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে- বাংলাদেশের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা।
এমনি যখন অবস'া তখন আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, আমাদের সংসদীয় কমিটিও সীমান্তে বাংলাদেশীদের ওপর এ ধরনের হত্যা-গুম-নির্যাতন নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় বলে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশ হচ্ছে।
ধিক্কার জানাই সরকার ও সংসদীয় কমিটির এরূপ নিরুদ্বিগ্ন থাকার প্রবণতাকে।
বাংলাদেশ সরকারের অবস'া যেন এমন- ভাসুরের নাম নেয়া যাবে না। আমরা দেখেছি, কানাডা সরকারও বিএসএফকে একটি সন্ত্রাসী কিলার বাহিনী উল্লেখ করে বিএসএফের এক সাবেক সদস্যকে কানাডায় ভিসা দিতে অস্বীকার করেছে। এই বিএসএফ আমাদের ভাই-বোনদের প্রতিনিয়ত গুম-হত্যা-নির্যাতন চালিয়ে গেলেও এদের বিরুদ্ধে আমরা টুঁ শব্দ করতে নারাজ। আজ দেশের প্রতিটি মানুষ চায় বিএসএফের এই অমানবিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হোক।
দ্বিপক্ষীয়ভাবে এ সমস্যার সমাধান না হলে বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে তোলা হোক। আমরা আশা করব, এ ব্যাপারে সরকারের বোধোদয় হবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।