পাবনায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারদলীয় ক্যাডাররা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে গভীর রাতে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটকেন্দ্রে গেলে পা কেটে ফেলা হবে বলে হুমকি দিচ্ছে। ভোটারদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট এবং প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। শনিবার গভীর রাতে এসব ঘটনা ঘটে বলে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী অভিযোগ করেন। আজ পাবনা সদর উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ঘটনায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জামায়াত সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মাওলানা হাফেজ ইকবাল হোসাইন অভিযোগ করে বলেন, আমার কর্মী-সমর্থকদের প্রকাশ্যে বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ৩১ মার্চ ভোটকেন্দ্রে গেলে পরদিন তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গত শনিবার গভীর রাতে ২০-৩০টি মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে সশস্ত্র আওয়ামী ক্যাডাররা উপজেলার জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত এলাকায় ঘুমন্ত ভোটারদের ডেকে হুমকি দিচ্ছে। লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরে চার উপজেলার ৩৭৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৪৮টিই পুলিশের তালিকা অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়েছে। অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ও পুলিশের মোবাইল টিম মাঠে কাজ করছে।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মহিউদ্দিন বকুলের সমর্থক আবুল কাশেমকে ভবানীগঞ্জ এলাকায় পোস্টার লাগাতে গেলে মারধর করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সালাহউদ্দিন টিপুর লোকজন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে লক্ষ্মীপুর মডেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে একই দিন রাতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মাহমুদুল করিম দিপুর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয় বলে জানা যায়। সুবর্ণচর-হাতিয়া : শাসকদলীয় কর্মী ও জলদস্যু হুমকি-ধমকির মধ্য দিয়ে নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আজ।
নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা ও সন্ত্রাসী হামলা দস্যুবাহিনীদের ভোটকেন্দ্র দখলের আশঙ্কা করছে সাধারণ ভোটাররা। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকি ও হামলার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচন সামনে রেখে পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকাবাসী ৬৩টি ভোটকেন্দ্রের সবকটি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। শ্রীপুর : শনিবার রাতে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ হয়েছে।
আজ উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। আওয়ামী লীগের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করার সব পদক্ষেপই নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজ হায়দার ভূঁইয়া বলেন, নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ করা হবে। আশা করি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।
কুমিল্লা : আজ কুমিল্লার মুরাদনগর ও চান্দিনা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। দুটি উপজেলার নির্বাচনকে ঘিরে সংঘাত সংঘর্ষের আশঙ্কায় ভোটার ও প্রার্থীদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। দুই উপজেলার অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র দখল ও এজেন্ট বের করে দেওয়ার আশঙ্কা করেছেন ১৯ দল সমর্থিত প্রার্থীরা। দুটি উপজেলার মোট ২০২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৭৬টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। জেলা রিটার্নিং অফিসার ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, দুই উপজেলার নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাÍক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ : উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ও আড়িয়ল বালিগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমীর হোসেন দোলনকে আটক করেছে র্যাব। র্যাব সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাতে উপজেলার সোনারং গ্রামের হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকায় বিএনপির প্রার্থী আলী আজগর রিপন মল্লিকের পক্ষে টাকা ছড়িয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় এবং টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে। এ সময় তার কাছ থেকে নগদ ৯১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-১১-এর ভাগ্যকুল ক্যাম্পের এএসপি ওবায়েদ ইসলাম। অপরদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই দাবি করেছেন, বিএনপির প্রার্থীকে জোর করে পরাজিত করার জন্যই বিএনপি নেতা দোলন চেয়ারম্যানকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আটক করা হয়েছে। বরগুনা : স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সদর উপজেলার বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী রেজবুল কবীর।
বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জেলা বিএনপিরর বহিষ্কৃত প্রার্থীর সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যান প্রার্থী আঁতাত করে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীকে হারানোর ষড়যন্ত্র করছে। বিভিন্ন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা বিএনপির এজেন্টদের পুলিশের হাতে হয়রানির অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। সাতক্ষীরা : আজ সাতক্ষীরার তালা, দেবহাটা ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাচনে মোট ২৪৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৭৯টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৩১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১১টি, তালা উপজেলার ৭৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৩টি ও দেবহাটা উপজেলার ৩৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৫টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণসহ সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে গ্রহণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা।
নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের তিন উপজেলা নির্বাচনে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে। রূপগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির প্রার্থী মাহফুজুর রহমান আকন্দ। বিদ্রোহী থানা যুবদল সভাপতি গোলাম ফারুক খোকন। তিনি এরই মধ্যে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন।
বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষ নিলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে কেন্দে র এরকম সিদ্ধান্তের পরও কেন্দ ীয় যুবদল নেতা দীপু ভূঁইয়া খোকনের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণায় নামেন। আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজাহান ভ্ইূয়া। সোনারগাঁয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নান। আওয়ামী লীগের প্রার্থী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন ও বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। এই দুই প্রার্থী গত কয়েক দিনে ৩-৪ দফা সংঘর্ষে জড়ান।
তাই ভোটাররা এ দুই প্রার্থীর ওপর ক্ষুব্ধ। আড়াইহাহজার উপজেলায় বিএনপির প্রার্থী গাজী মাসুদ। এ উপজেলায় প্রচারণা চালাতে গিয়ে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা এবং মহিলা কর্মীরা লাঞ্ছিত হয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজালাল মিয়া। ৩টি উপজেলা মধ্যে সবচয়ে বেশি আতঙ্ক বিরাজ করছে আড়াইহাজার উপজেলায়।
আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেল করে কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা, নির্বাচনে ভোট ডাকাতি, ব্যালট ছিনতাই হতে পারে ও সম্ভাব্য এজেন্ট হতে ইচ্ছুক কর্মীদের বাড়িতে পুলিশি অভিযানের নামে ঘরছাড়া করেছে বলে অভিযোগ করেছে। পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পুলিশকে সহযোগিতার জন্য র্যাব, বিজিবি, আনসার, কোস্টগার্ড এবং সেনাবাহিনী থাকছে। যেসব ভোট কেন্দে উত্তেজনা রয়েছে সেগুলোকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ ভোট কেন্দ দখল অথবা ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে বলেও তিনি জানান।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।