রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন
দাতারা বিশেষতঃ বিশ্বব্যাংক উদ্বিগ্ন! কারণ জাতীয় ক্রয়নীতি সংশোধন করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য দাতাগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফলাফল হিসাবে তাদের পরামর্শক্রমে (চাপে) ক্রয়বিধিমালা ২০০৮, যা ২৪ জানুয়ারি ২০০৮ তারিখে বাংলাদেশে কার্যকর করা হয়। তাদের ভাষ্যমতে, এতে করে দূর্নীতি হ্রাস পাবে।
সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি, এবারের বাজেটের বিশেষ বৈশিষ্ঠ্য নাকি হবে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ। এই পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে বেসরকারীখাতকে উৎসাহিত করতে হলে বর্তমান ক্রয়নীতিমালা সহজ করতে হবে, না হলে তাদের বিনিয়োগ আগ্রহী করা সম্ভব হবে না।
এজন্য ক্রয়নীতিমালা সংশোধন করা হবে বলে জানা গেছে।
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বিষয়ে অনেকেই অনেকরকম বক্তব্য প্রদান করছেন। প্রতিবছর এডিপি বাস্তবায়িত না হওয়া কিংবা ধীরগতির জন্য আমাদের ক্রয়নীতিমালা দায়ী, তা অনেকেই বলেছেন। কারণ এডিপি বাস্তবায়ন করতে হলে এই ক্রয়নীতিমালা মেনেই তা বাস্তবায়ন করতে হয়, যা অনেকটাই প্রক্রিয়ানির্ভর এবং সময়সাপেক্ষ, যেকারণে এডিপি বাস্তবায়ন ধীরগতিসম্পন্ন হয়ে পড়ে। তখন দাতা (?)রা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, পরামর্শের নামে সরকারকে শাসিয়ে দেন- এরকম চললে ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড় করা হবে না! ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় বেসরকারী সংস্থায় কাজ করতে গিয়ে প্রক্রিয়ানির্ভরতা যে কতটা ভয়ংকর, তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।
কাজের চেয়ে এখানে প্রক্রিয়া মেনে চলতে হয় বেশি করে। যার ফলে কাজ হয় ঠিকই, কিন্তু ফল আসে একেবারেই কম, অনেকক্ষেত্রে জিরো। কাগজে পত্রে দেখা যায়, কাজের দিক থেকে কেউ নয় জিরো, সবাই ১০০ পারসেন্ট হিরো।
প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলা আমার লক্ষ্য নয়। যেকোন কাজ করতে গেলে অবশ্যই একটা নিয়মে তা করতে হবে।
কিন্তু নিয়মটা যদি করা হয় জঠিল, তখন কাজ করাটা হয়ে ওঠে আরও জঠিল। দুর্নীতিরোধের জন্য এই জঠিল প্রক্রিয়া অবলম্বন করার কথা থাকলেও ভালভাবে পরখ করলে দেখা যাবে, কাগজ বা প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করা হলেও কাজটি করার জন্য প্রতিটি পদে পদে বেছে নেয়া হয়েছে দূর্নীতি। যারা দুর্নীতিকে ঘৃণা করেন কিংবা এর প্রতি যাদের আগ্রহ নেই, তারাও এই পদ্ধতি বেছে নিতে বাধ্য হন শুধুমাত্র দায়িত্বপালনের জন্য। অর্থাৎ দুর্নীতি না করলেও যেকাউকে দুর্নীতিবাজ প্রমান করা সম্ভব হবে এই জঠিল প্রক্রিয়ার কারণে। সুতরাং দুর্নীতি প্রতিরোধ একটা গালভরা বুলি, যা উদ্দেশ্য তা হলো, ক্রয়নীতির কারণে যাতে দেশের সাধারন মানুষ রাষ্ট্রীয় ক্রয়সংক্রান্ত কাজে জড়িত হতে না পারে এমন একটা ব্যবস্থা শক্তিশালী রাখা; যাতে দক্ষতাসম্পন্ন (!) বিদেশী কন্ট্রাকটরা কিংবা তাদের এদেশীয় দোসরা রাষ্ট্রীয় সকল ক্রয়ের সাথে জড়িত হয়ে তাদের পকেট ভারী করতে পারেন।
যাহোক, দাতারা তো উদ্বিগ্ন হবেনই। কারণ তাদের আতে ঘাঁ লাগবে, অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যে তারা ক্রয়নীতিকে জঠিল করে রাখতে পরামর্শ দেন, তা শিথিল করা হলে দেশের আপামর কন্ট্রাটরগণ (তাদের ভাষায় অদক্ষ ও দুর্নীতিপরায়ন) রাষ্ট্রীয় ক্রয়ে টেন্ডার ড্রপ করবেন এবং দাতাদের মনোনীত ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে টপকিয়ে তারা কাজ পেয়ে যাবেন, এটা কি সহ্য করা যায়? তাই তাদের উদ্বিগ্নতা! ইস্যুটা পুরনো। আবার সেই দুর্নীতির ধোঁয়া ছড়ানো।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান শিয়েন ঝু নাকি ক্রয়নীতি সংশোধন করার খবর শুনে গত ২৫ মে ২০০৯ তারিখে সরকারকে একটি উদ্বিগ্নতার সাথে পত্র প্রেরণ করেন, যেখানে বিশ্বব্যাংক সাহায্যপুষ্ঠ প্রকল্পগুলিতে এর প্রভাব পড়বে বলে তারা উদ্বিগ্ন। পত্রে নাকি জানানো হয়েছে, ক্রয়নীতি সংশোধনে তাদের উদ্বিগ্নতার যথেষ্ঠ কারণ রয়েছে।
সেজন্য সরকারের উচিত বিষয়টি নিয়ে দাতাদের সাথে পরামর্শ করা, আর এজন্য তারা সরকারকে দাতাদের একটি বৈঠক ডাকারও পরামর্শ প্রদান করেছেন।
যে সরকার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছেন, তারা অবশ্যই চাইবেন, সেভাবে সুবিধা, তারা সেইপথে জনগণকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। দাতারা তো অনেক পরামর্শ দিয়েছেন সেই শুরু থেকেই। কোন সরকারকে পরামর্শ দিতে তারা বাদ রাখেননি। প্রত্যেকটি সরকারই বলা চলে তাদের পকেটে বসে দেশ চালিয়েছে।
কিন্তু উন্নয়ন কতটুকু হয়েছে?
এবার না হয়, সরকার নিজের পথেই চলুক। দুর্নীতি যদি তারা করে, তবে তো দেশের মানুষ আছে। পরবর্তী নির্বাচন আছে। দেশের মানুষ তার জবাব দেবে, পরবর্তী সরকার তাদের বিচার করবে। এতে বিশ্বব্যাংকের উদ্বিগ্ন হওয়ার কি আছে?
সময় এসেছে, এসব দাতাদের চরিত্র উন্মোচন করার, যদিও অনেকে তা করছেন।
এখন উচিত, তাদের চারমাথার মোড়ে ইয়ে দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা। শুধু কি তাদের, না না, শুধু তাদের নয়; সেইসাথে তাদের এদেশীয় দোসরদের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।