একি আজব কারখানা...........
ইহা আমার একটা শর্টফিল্ম।
একটা কাজ , সেটা যত খারাপ ই হোক না কেন, প্রতিবারি নতুন নতুন জিনিস শিখতে পারি, নতুন ভুল ধরতে পারি। আর আমরা যেহেতু প্রফেশনাল না, তাই অনেক ভুল হয়াই স্বাভাবিক।
টিমের অন্যদের তেমন ভুল নেই আসলে, মুল ভুলগুলা হয়েছে আমার ডিরেকশনে। কাজেই ভুলের দায় মাথা পেতে নিচ্ছি।
ভিডিও প্রোডাকশন এর ব্যাপারে আমি আসলে খুব একটা জানিনা। তবে সাহস করে করে ফেললাম আর একটি কাজ। শর্টফিল্ম এর উপর আমার যা কিছু জানা প্রায় সবি নেট থেকে। কাজেই আপনাদের ভয় পাওয়ার কিছু নাই। সাহস করে শুরু করে দিন।
আমি শেয়ার করছি আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা। যদি কাজে লাগে। গতানুগতিকভাবেই ফেস করতে হয়েছে অনেক সমস্যা। সেগুলাও আলোচনায় রাখছি।
আমরা যারা কাজ করেছিঃ
আমার খুব ঘনিস্ট কয়েকজন মানুষকে বলা হলো।
তারা সবসময়ি আমার পাশে ছিলেন। । স্ক্রিপ্ট লিখলাম আমি আর জনিদা। ডিরেকশনে আমি। শুটিং এ পুরা সময়জুড়ে অনেক হেল্প করেছে বন্ধু নাবিলা, জনিদা, পাপন, সৌমিকদা এবং জহির।
কাস্টিং এ আমাদের এক রিক্সাওয়ালা মামার ছেলে বিপ্লব, বড় ভাই সৌমিক দা এবং স্থানীয় একজন ড্রাইভার।
শুটিং ইকুইপমেন্টঃ
আমাদের লোকেশন ছিলো কড়াইল বস্তি এবং বনানী। তাই ইউনিট নিয়ে তেমন তাড়াহুড়া করতে হয়নি। ক্যামেরা একটা দিয়েই শ্যুট করতাম, তবে দুইটা পাওয়া যাওয়ায় সময় বেচেছে অনেক।
ক্যাম হচ্ছে সনি এইচডিভি১০৮০ দুইটা।
দুইটা ট্রাইপড। দুইটা রিফ্লেক্টর, একটা সফট রিফ্লেক্টর(ককশিট),একটা বুম। প্রপস হিসেবে খুব বেশি কিছু ছিলোনা। একটা বস্তা, একটা বোতল, একটা গাড়ি।
সিনোপসিসঃ
এই ব্যাপারে আসলে কিছু বলার নেই।
কারন আপনারা ভিডিও দেখেই যা বুঝার বুঝে নিতে পারবেন। থিম হচ্ছে পথশিশুদের শিক্ষিত করে তোলা। একজন পথচারি সচেতনতা দেখিয়ে একটা জিনিশ শিক্ষা দেয়ায়
পরের দিন ই সেই শিক্ষাকে সমাজের কাজে লাগিয়ে ফেলে পথশিশুটি। লাস্টে সিম্বলিকভাবে বুঝানো হয়েছে আমরা আসলে বস্তা হাতে ছিড়া জামার টোকাই চাইনা। এই বয়সের একটা শীশুর কাছে আমরা স্কুল ব্যাগ আর স্কুল ইউনিফর্ম চাই।
্মুখে চাই হাসি।
লাস্টে "গাড়ি রাখা নিষেধ" আসলে "শিশুশ্রম নিষেধ" হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, তবে এডিটিং এ দুর্বলতার কারনে করতে পারলাম না।
কথা না বাড়িয়ে আসুন শর্ট ফিল্ম টি দেখে ফেলি। পরে বলছি কি কি সমস্যা ফেস করেছি এবং আমাদের কোথায় কোথায় ভুল হয়েছে।
পোস্ট প্রডাকশনঃ
আমরা ভয়েস ডাব করে নিয়েছি।
আসলে ডায়ালগ তো নেই বললেই চলে। এডিটিং প্যানেল ছিলো সেই রকম একটা ম্যাক। ৪২ ইঞ্ছি একটা ম্যাক। কাজ করেছি ফাইনাল কাট প্রো দিয়ে।
সময় সল্পতার কারনে অনেক জিনিস ইচ্ছা থাক্লেও পারিনি।
শূটিং এর মোট সময় ১ দিন, এডিটিং ২ দিন। আমরা মিডিয়া সাপোর্ট ফ্রি পাওয়ায় খরচ হয়নি বেশি টাকা।
যে সব সমস্যা বের হলোঃ
সমস্যা ১- (পেপার ওয়ার্ক)
আমি অনেকটা দায়সারা ভাবে রিসার্চ পেপার তৈরি করেছিলাম। তাই লাস্টের দিকে এসে টের পেলাম, আসলে স্টপ চাইল্ডলেবার বললেই হয় না। কারন, যে চাইল্ড টা লেবার দেয়,
সেই হয়তো পরিবারের এক্মাত্র ইনকাম সোর্স।
অথবা তার দুনিয়ায় কেউ নাই, লেবার না দিলে খাবে কি ? তবে এ ব্যাপারে সরকার হয়তো রিহ্যাবিটেশন করতে পারে,অথবা তাদের শিক্ষার ব্যাবস্থা করতে পারে। আমরা সাধারন মানুষরা কিন্ত এক্টুখানি সচেতনতা দেখাতে পারি।
কাজেই স্ক্রিপ্ট এ অনেক চেঞ্জ আনতে হলো।
সমস্যা ২-কন্টিনিউয়িটি মিসিং
প্রথমে ইস্টাব্লিশিং শট নেয়ার পরে আরেক লোকেশনে গিয়ে আমরা এক্টা ভুল করি। ছেলের যেই হাতে বস্তা ছিলো পরে হাত চেঞ্জ হয়ে গেছে।
এটাকে বলা হয় কন্টিনিউইয়িটি মিসিং। পরে আবার শটগুলা নিতে হয়েছে। তাছাড়া কয়েকটা শট নিয়ে নিয়েছিলাম স্যান্ডেল পরা অবস্থায়। আসলে কিন্ত হবে খালি পা।
সমস্যা ৩- জোন ক্লিয়ার
জোন ক্লিয়ার মানে আসলে পুরাই ক্লিয়ার।
ক্যামেরার অপজিটে লোকেশন ক্লিয়ার করার পরো প্যানেলে নিয়ে দেখি ফ্রেমের মাঝে কোথেকে যেন একটা মাথা ঢুকে পড়েছে। পরে ক্রপ করে নিতে হয়েছে।
সমস্যা ৪-
আমি কাট বলার আগেই শটে ঢুকে পড়েছিলো নাবিলা। তাই কয়েকটা শট বাদ দিতে হয়েছে।
সমস্যা ৫-
সাউন্ড সিলেকশন বেশি ফাস্ট হয়ে গেছে।
সবচেয়ে বড় সমস্যা-
আমাদের বেশ কিছু ফুটেজ হারানো গিয়েছে ক্লোস শটের। তাই অনেক দারুন দারুন শট মিস হয়ে গিয়েছে। এটা ক্যাপচারিং এর সময়েও হতে পারে, আবার রিওয়াইন্ড করে হয়তো আগের যায়গায় আনা হয়নি, এ কারনেও হতে পারে।
সমস্যা ফেস করে যে টিপ্সগুলা দেয়া যায়ঃ
১. পেপারওয়ার্ক অবশ্যই গুরুত্বসহকারে করুন। পারলে অবশ্যই স্টোরিবোর্ড তৈরি করে নিন।
২. শুটিং এর সময় ক্যামেরা সেটিং চেক করে নিন এবং অবশ্যই
কালার ব্যালেন্স চেক করে নিন। ভালো হয় অটোতে না রেখে কালার ব্যালেন্স হোয়াইট পেপারের মাধ্যমে ঠিক করে নিলে।
৩. শুটিং এর সময় যথাযত স্ক্রিপ্ট ফলো করার চেস্টা করুন। স্ক্রিপ্ট পেপারে শট শেষের সাথে সাথে টিক দিন এবং কন্টিনিউটি ফলো করুন।
৪. জোন ক্লিয়ার রাখার জন্য অন্তত একজন বন্ধুকে এই দায়িত্ব দিন।
৫. ক্যারেক্টার যেন ক্যামেরার দিকে ফলস লুক না দেয়।
৬.কাট বলার আগে ভুল করেও কেউ শট শেষ হয়ে গেছে ভেবে ফ্রেমে ঢুকে পড়বেন না।
৭. পারলে ডাব করে ভয়েস নিন নতুবা বুম মাইক ইউস করুন।
৮. এডিটিং এর সময় ভালো করে লাইন আপ চেক করুন এবং রাফ কাট করে নিন।
৯.বের করার আগে ক্যাসেট চেক করে নিন।
১০.দলের প্রত্যেককে ডিভোটেড থাকতে হবে। এখানে একজনের কাজকেও হেলাফেলা করার কোন সুযোগ নেই। যত দক্ষ টিম ওয়ার্ক, তত ভালও কাজ। ।
উৎসর্গঃ সামুর সিনেমাপ্রেমীরা।
আপনারা বসে না থেকে করে ফেলুন নিজের ইচ্ছামত কোন প্রোডাকশন। আমি তো আছিই আপনাদের সাথে।
হেপ্পি ফিল্ম মেকিং।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।