এখানে গৃহী হওয়ার মত কেউ নয়! সংসার বিরাগির মত আমিও বলতে চাই- রাজপথ দেখেছ, নিল রাজপথ, নিল নিয়ন.... হয়তো লোভে চকচক করছিল আমার চোখ দুটো । মুহূর্তে স্থির করে ফেলি আমাকে কি করতে হবে।
ঘটনাটা গত মাসের , এর শুরুটা বলাযায় তখন থেকে যখন লিটন ও মিলা এসে উঠল আমার হোটেলে । হোটেল বা মোটেল নিয়ে বিতর্কে যাবার দরকার নেই, আমার বাবা এর নামকরণ করে গেছেন । তার নামকরণ অনুসারে এটা হোটেল ।
ঘটনাটা বর্ণনার আগে আমি নিজের ও আমার হোটেলের পরিচয়টা দিয়ে নেই। আমি পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া হোটেলের মালিক ও ম্যানেজার, বিবাহিত ও চার বছরের শিশু কন্যার বাবা। মানুষ হিসাবে ভাল সে বিচার নিজে করতে চাইনা। তবে এটুকু জানি যে বুদ্ধি হবার পর থেকে আমি অপরের কোন অপকার করিনি। আমার হোটেলটি বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের একটি মাঝারি পাহাড়ের চুড়ায় ।
যে পাহাড়ের পাস দিয়ে বয়ে গেছে কর্ণফুলী । হোটেলের ছাদ ও বারান্দা থেকে দেখা যায় দুরের দিগন্ত জোড়া সবুজের সমারোহ , ছোট ছোট পাহাড় আর এঁকে-বেঁকে বয়ে যাওয়া মায়াবী কর্ণফুলী ।
এত সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও এখানে মানুষ সচরাচর বেড়াতে আসেনা । বলাযায় আমার হোটেলের বাসিন্দা বছরের প্রায় সময় আমি নিজে।
তো, গত মাসের শুরুর দিকে এক রাতে লিটন ও মিলা এসে উঠল আমার হোটেলে।
যেহেতু খুব কম মানুষ আমার এখানে আসে তায় চেষ্টা করি যথেষ্ট সেবা যত্ন করতে। এভাবে আতিথেয়তায় মুগ্ধ দু-চার জন রেগুলার অতিথি পেয়ে গেছি আমি । প্রথম কয়েকদিনে একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করলাম যে ওরা দুজন কখনোই বাইরে বের হয়না । আসার পর থেকে সারাক্ষণ ঘরের ভিতর বন্দি থাকে দুজনে । যাওয়ার ভিতর মাঝেমধ্যে বারান্দায় ও ছাদে যায় ওরা।
যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার ভেবে আমি এ নিয়ে বেশি মাথা ঘামালাম না।
সকালে ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস আছে আমার, তবে বাসি খবর। কারণ এখানে খবরের কাগজ পৌছাতে দুপুর ১২টা ১ টা বেজে যায়। তাই আগের দিনের কাগজটায় ভোরে পড়তে বসি । পড়তে পড়তে একটা জায়গায় আমার চোখ স্থির হয়ে যায় ।
হয়তো লভে চকচক করছিল আমার চোখ দুটো । মুহূর্তে স্থির করে ফেলি আমাকে কি করতে হবে। শান্ত ও সহজ ভঙ্গিতে কথা বলি লিটনের সাথে। তারপর এক অপার্থিব আনন্দে ভোরে যায় আমার মন। কারণ লিটন আমাকে আসশস্থ করেছে খুব তাড়াতাড়ি তারা যাচ্ছে না এখান থেকে।
তার পর খবরটা পাঁঠিয়ে দিলাম যথাস্থানে । এখন শুধু অপেক্ষা ।
রাত ১২.৩০ দুটো প্রাইভেট কার এসে থামল হোটেলের সামনে । আমি শুধু ডুপ্লিকেট চাবিটা ধরিয়ে দিলাম ওদের একজনের হাতে। ৫ মিনিটের মাথাই মিলা নেমে এলো নিচে।
শান্ত ভঙ্গিতে হেটে গিয়ে দাঁড়াল ওর বাবার সামনে। তার দু মিনিট পর লিটন ছুড়ে ফেলা হল দোতলার বারান্দা থেকে। সেদিকে তাকিয়ে মিলা শুধু একবার বলল, ‘ বাবা আমি ওর সাথে শুধু একমিনিট কথা বলব তার পর তুমি যা বলবে তায় করব’।
ওর কণ্ঠে এমন কিছু ছিল উনি না করতে পারলেন না।
না মিলা কাঁদেনই কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়া দৃষ্টি নিয়ে এলোমেলো পায়ে হেঁটেযায় লিটনের কাছে ।
ততক্ষণে লিটন উঠে দাঁড়িয়েছে কোনরকমে। বাম চোখের উপরে ভ্রু থেঁতলে রক্তে ভেসে যাচ্ছে মুখের একটা পাশ। মিলা ওর কাছে গিয়ে একটু দুতত্ত নিয়ে দাঁড়াল । দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ । তারপর সবকিছু বুঝে গেছে এমন একটা হাঁসি ফুতে উঠল ওর কেটে যাওয়া ঠোঁটে ।
হাত দুটো দুপাশে ছড়িয়ে দিল মিলাকে জড়িয়ে নেবার জন্য। এক মুহূর্ত দেরি না করে মিলা দুপা দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল ওর বুকে। পরস্পর কে আঁকড়ে ধরে ওরা ছিটকে পড়ল পিছনে , যেখানে খাড়া পাহাড় শেষ হয়েছে কর্ণফুলীতে । /#
রহস্য পরতিকায়
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।