মানুষ মানুষের জন্যে
বিজ্ঞানের ইতিহাস কিংবা বিজ্ঞানীদের জীবনী নিয়ে খুব কম মুভি বানানো হয়েছে। Einstein and Eddington এই ধাঁচের একটি মুভি। এই মুভিতে জিনিয়াস আইনস্টাইনের General theory of relativity নিয়ে আইনস্টাইনের পথচলাকে তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায় বিজ্ঞানের জন্য আইনস্টাইনের চরম ত্যাগ স্বীকার। আইনস্টাইন ম্যাক্স প্লাঙ্কের অনুরোধে জার্মানির বার্লিন ইউনিভার্সিটিতে প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন।
এই জন্যে আইনস্টাইনকে তাঁর পরিবার সুইজারল্যান্ডের জুরিখে ছেড়ে আসতে হয়। এই দূরত্ব পরবর্তীতে প্রথম স্ত্রী মিলেভার সাথে তাঁর বিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে আইনস্টাইন অনেক প্রতিকুলতা সত্ত্বেও তাঁর কাজ চালিয়ে যান। জার্মানে থাকার সময় আইনস্টাইনের সাথে তাঁর Cousin ‘এলসা’ এর সম্পর্ক গড়ে উঠে।
(ওনাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দরকার আছে কি!!!)
অন্যদিকে Eddington ছিলেন ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজের প্রধান জ্যোতির্বিদ।
একবার Royal Astronomical Society এর প্রধান Sir Oliver Lodge, Eddington কে আইনস্টাইনের কাজ গবেষণা করতে বলেন এবং নিউটন যে ঠিক সেটার উপর একটা বক্তৃতা দিতে বলেন। Eddington বক্তৃতা দেন কিন্তু তাঁর মনে একটা সন্দেহ থেকে যায় হয়ত আইনস্টাইন সঠিক হতে পারে। তিনি আরও গভীর ভাবে আইনস্টাইনের কাজ গবেষণা করা শুরু করেন। তিনি উপলব্ধি করেন আইনস্টাইন মহাবিশ্বের একটি নতুন তত্ত্বের দিকে ইঙ্গিত করছে। নিউটনের তত্ত্ব মারকিউরির কক্ষপথকে ব্যাখ্যা করতে পারে না।
Eddington আইনস্টাইনকে তাঁর তত্ত্ব অনুযায়ী মারকিউরির ব্যাখ্যা চেয়ে একটি চিঠি লিখেন বার্লিনে।
(Aurther Stanley Eddington)
এমন সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। জার্মান বিজ্ঞান তখন ব্যবহার হচ্ছিল সামরিক কাজে। সেখানে চলছিল বিস্ফোরক আর ক্লোরিন গ্যাসের গবেষণা। বার্লিন ভার্সিটির এই অবস্থা দেখে আইনস্টাইন খুবই মর্মাহত হন।
এই ক্লোরিন গ্যাস দিয়ে ইপ্রাসে ১৫০০০ সৈন্যকে হত্যা করা হয়। এই যুদ্ধে Sir Oliver এর ছেলে ও Eddington এর বন্ধু উইলিয়াম প্রাণ হারান। এই ঘটনার পর Royal Astronomical Society থেকে জার্মান বিজ্ঞানীদের বাদ দেয়া হয় এবং জার্মান বিজ্ঞান নিষিদ্ধ করা হয়। আর ওইদিকে আইনস্টাইনকে পাঠানো চিঠির উত্তর পেয়ে Eddington লক্ষ্য করেন Einstein এর হিসাব মারকিউরির সাথে সম্পূর্ণ মিলে যায়। এতে তিনি নিশ্চিত হন যে আইনস্টাইন একটি নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছেন।
তিনি আইনস্টাইনের তত্ত্ব প্রমাণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি প্রমাণ করার একটি পদ্ধতি বলেন। আইনস্টাইনের মতে তারার আলো যখন সূর্যের কাছে আসে তখন তা বেঁকে যায়। যদি তা প্রমাণ করা যায় তাহলে প্রমাণ হবে আইনস্টাইন সঠিক ও নিউটন ভুল। এই পরীক্ষা করার জন্য তিনি ১৯ মে ১৯১৯ এই তারিখ ঠিক করেন।
যে দিন ছিল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ। এই জন্য তিনি আফ্রিকার প্রিন্সিপে দ্বীপ বেছে নেন। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দিতে Royal Astronomical Society এর প্রধান Sir Oliver রাজি হচ্ছিলেন না। কারণ তার সন্তান জার্মানির সাথে যুদ্ধে মারা যায় এবং এতে ইংরেজদের গর্ব নিউটনের তত্ত্ব ভুল প্রমানিত হতে পারে বলে তার ভয় ছিল। কিন্তু অবশেষে Eddington অনুমোদন পান।
এক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করেন তাঁর বিজ্ঞানী বন্ধু ও Royal Astronomical Society এর সদস্য Dyson। অবশেষে তিনি প্রিন্সিসে সূর্যগ্রহণের আটটি ছবি নেন যার মধ্যে দুইটি উপযুক্ত ছিল। এরপর এক ঐতিহাসিক দিনে জনসমক্ষে দুই ফটোগ্রাফিক প্লেটকে একটিকে আরেকটির উপর রেখে দেখা যায় তারার আলো সূর্যের কারনে বেঁকে যায় এবং আইনস্টাইন সঠিক প্রমানিত হন। Eddington এর কারণে আইনস্টাইন একজন স্বল্প পরিচিত বিজ্ঞানী থেকে জগত বিখ্যাত বিজ্ঞানীতে পরিণত হন। কিন্তু Eddington এর অবদান আজ অনেকেই জানে না।
এর একবছর পর আইনস্টাইনের সাথে Eddington এর দেখা হয়। এই ছিল মোটামুটি Einstein and Eddington এর কাহিনী।
(আইনস্টাইন চরিত্রে Andy Serkis)
এই ছবিতে আইনস্টাইনের চরিত্র করেছেন Andy Serkis । আর Eddington এর চরিত্র করেছেন David Tannent। এই দুইজন অভিনেতার যত প্রশংসা করা হোক তা কম হবে।
অসাধারণ অভিনয় করেছেন। তার সাথে অন্যান্য চরিত্রগুলোও অসাধারণ।
(Eddington চরিত্রে David Tannent)
এই মুভিটি লিখেছেন Peter Moffat, প্রযোজনা করেছেন Mark Pybus ও পরিচালনা করেছেন Philip Martin। বলতে হবে এই মুভিটির পরিচালনা অসম্ভব রকম সুন্দর। কাহিনীর গতি ও চরিত্রের কার্যকলাপ এত ভালো যে আপনি দেখতে বসলে শেষ না করে উঠতে পারবেন না।
এটি প্রথম প্রচারিত হয় BBC TWO তে। এই ছবির শুটিং হয় Hungarian Academy of Sciences, St John’s College, Cambridge এবং Adriatic Coast of Croatia তে। এই অসাধারণ মুভিটি সবারই দেখা উচিত। একবার দেখলে আপনি বারবার দেখবেন এটুকু আমি বলতে পারি!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।