এ জগতে তাই যত কিছু পায় তৃপ্তি আমার নাই অন্যের ধন দেখে কেন আমি করি শুধু হায়হায়! এই নিয়ে তৃতীয় বারের মত conceive করল তিথি। প্রথম দুটি বেবীই miscarriage করেছে। যে কারনে পরিবারের সবাই বিষয়টা নিয়ে বেশ চিন্তিত। ডাক্তার অবশ্য এসব বিষয় নিয়ে একেবারেই চিন্তা করতে না করেছেন তিথিকে। সজীব সবসময়-ই তিথিকে বলে তুমি কোন চিন্তা করনা, এবার দেখ আল্লাহ আমাদেরকে একটা ফুটফুটে সুন্দর বাচ্চা দিবে।
তিথি হাসে, তোমার কথাই যেন সত্যি হয়।
রাহেলা বেগম ও আনোয়ার সাহেব খুব যত্ন নিচ্ছেন বৌমার। গত দুবার মায়ের বাড়িতে থাকলেও এবার যেতে দেন নি তিথিকে। সব সময় ডাক্তার এর পরামর্শ মত চলতে সহযোগীতা করছেন তিথিকে। তাদের একমাত্র সন্তান সজীবের মুখে হাসি দেখতে চান।
সজীবকে সারাক্ষণ অফিসের কাজে ব্যস্ত খাকতে হয়। প্রাইভেট কোং খুব ভাল বেতনে চাকরী করে সজীব কিন্তু সমস্যা একটাই ছুটি পাওয়া খুব কঠিন। যদিও বস্ বলেছেন আপনাকে ১৫ দিনের ছুটি দিব এবার।
সময় যত যাচ্ছে অজানা সংঙ্কা ও ভয় কাজ করছে তিথির ও সজীবের । প্রতিদিন কাজের ফাকে অনেকবার ফোন দেয় তিথিকে।
বছরের মাঝামাঝি সময় বলে অফিসে খুব ব্যস্ত, যে কারনে অনিচ্ছা সত্বেও অফিসে না যেয়ে উপয় নেই, জুন মাস টা গেলে ছুটি নিবে সজীব। আজ ক’দিন হলো ভাল করে কিছু খেতে পারছে না তিথি । সন্ধ্যায় তিথি ফোন করে সজীবকে তার জন্য বিরিয়ানী নিতে বলে, তার খুব বিরিয়ানী খেতে ইচ্ছে করছে। সজীব বলে তুমি কোন চিন্তা করনা আমি বিরিয়ানী নিয়ে আসব। প্রতিদিন অফিসে যেতে আসতে রীতি মত যুদ্ধ করতে হয় ঢাকা শহরে।
তারপরও প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য বিরিয়ানী নিয়ে ফিরতে হবে।
বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় আটটা বেজে যায়। বাসার গলিতে ঢুকতেই দেখে এক অসহায় মহিলা ও তার বাচ্চা বসে আছে, হাত পেতে ভিক্ষা করছে। সজীবকে দেখেও বাচ্চাটা বলে ও স্যার আমারে কয়ডা টাকা দ্যান কয়ডা ভাত খামু, খুব ক্ষিদে লাগছে। সজীব মানি ব্যাগ থেকে টাকা বের করতে যেয়ে বাচ্চাটার দিকে চোখ পরে।
ভীষন মমতায় চোখ ভিজে আসে সজীবের। হাতের বিরিয়ানী প্যাকেট বাচ্চাটির হাতে দিয়ে পরম মমতায় মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় সজীব। দ্রুত পায়ে বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়, এমন সময় মোবাইল বেজে উঠে। ফোন রিসিভ করে সজীব হ্যাঁ মা বল, কিছু আনতে হবে! না কিছুই আনতে হবে না তুই সোজা হাসপাতালে চলে আয়। আমি তিথিকে ওর ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসেছি, কেন মা কোন সমস্যা।
না ও ডাক্টার কেয়ারে আছে, কোন সমস্যা নেই তুই চলে আয়। ওকে মা আমি এখনই আসছি বলেই সজীব ট্যাক্সি নেয়। হন্তদন্ত হাসপাতালে ছুটে যায় সজীব। দেখে বাবা-মা দুজনে সহ তিথির বাবা-মা ও বাইরে অপেক্ষা করছে।
তিথির কি হয়েছে মা, কিছুই হয়নি বাবা, ওকে ওটিটে নেয়া হয়েছে আল্লাকে স্মরন কর বাবা।
সজীব বেশ অস্থিরতায় ঘামতে থাকে। আনোয়ার সাহেব বলেন তুই কোন চিন্তা করিসনা বাবা। আমি ব্লাডের ব্যবস্থা করে রেখেছি, তুই শুধু শান্ত হয়ে আমার পাশে বয় আর আল্লাহকে স্মরন কর। ডাক্টার বের হয়ে আসে বলে মা অথবা শিশু যে কোন একজনকে বাঁচানো যাবে। হাতে সময় খুব কম।
আপনাদেরকে খুব দ্রুত সিদ্দান্ত দিতে হবে। সজীবের চোখ ভিজে যায়, বলে ডাক্টার আপনি যে কোন মূল্যে আমার তিথিকে ............! ডাক্তার আবার ভীতরে চলে যায়। সবার মধ্যে এক অস্থিরতা বিরাজ করছে!
অদ্ভুত এক নিরাবতা পরিবেশকে কেমন বিষন্ন করে দেয়, সবাই অজানা শঙ্কা নিয়ে বসে আসে। বেশ কিছুক্ষন পর একটা ফুটফুটে বেবী নিয়ে বের হয় নার্স। সজীব বাচ্চার মুখ দেখে আনন্দে আত্নহারা হয়ে যায়।
আবার মুহুর্তেই চেতনা ফিরে আসে আমার তিথি! ডাক্টার আমার তিথি! Don’t worry, she is out of danger. Thank you doctor, আমাদেরকে ধন্যবাদ দেবার কিছুই নেই সজীব সাহেব, আল্লাহ তায়ালা তার অশেষ কৃপায় দুজনকেই রেখে গেছেন, আমাদের কোন হাত ছিলনা। মুহুর্তের মধ্যেই সকলের মাঝে উজ্জলতার দ্যূতি ছড়িয়ে পরে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।