আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অজান্তে বন্ধ হয়ে গেছে সবক'টা জানালা

"বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না। "শিহরণে সত্তায় তুমি, হে আমার জন্মভূমি"

প্রিয় দেশ, আজকে শুক্রবার, ১২ই ডিসেম্বর। আর ঠিক দু'দিন পরে শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস। তারপরই বিজয় দিবস। বিজয় দিবস নিয়ে আমাকে কিছু লিখতে বলা হয়েছে।

আমি সামান্য লেখক, কেউ আমার লিখা পড়ে না। পত্রিকার কলাম ভরাটের জন্যে আমাকে কী-বোর্ডের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় কখনো সখনো। তার উপর আমি লিখি নারী পাতায়। বাংলাদেশের বিজয় দিবস আনয়নে নারীর ভূমিকা বলতে গেলে ইতিহাসে কিছুই নেই। আমি শুধু জানি ৩ লাখ নারী না কি ধর্ষিত হয়েছিলো।

দেশ, তোমাকে বলতে লজ্জা নেই ভারতের এক নারী শর্মিলা বোস আমেরিকার টাকা খেয়ে এই তিন লাখ নারীর সংখ্যা নিয়েও বিতর্ক শুরু করেছে। সে পাকিস্তানী আর্মিদের হয়ে সাফাই গাইছে। তোমার শাসনকার্যে নিয়োজিত মানুষেরা এর একবার অফিসিয়িাল প্রতিবাদও জানায়নি। আর তুমি দেশ, তোমার বুকে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছো সেইসব শয়তানদের যারা তোমাকে প্রতিদিন অল্প আঁচে সেদ্ধ করে ধর্মের দোহাই দিয়ে সেই রাজাকার আলবদরদের। আমার জন্যে এখন সবচাইতে বড় পলায়ন টিভি, আমি টিভিতে চোখ সেঁটে বসে থাকি ভাবনা চিন্তাহীন, বস্তাপঁচা সব জিনিস দেখি।

তুমি যখন জন্মেছো দেশ, তখন তোমার একটা মাত্র টিভি চ্যানেল, বাংলাদেশ টেলিভিশন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্বর্ণযুগ ছিল একটা সময়, যারা যুদ্ধোত্তর প্রজন্ম তাদের সবার মনে থাকার কথা। সেই চুরাশি সনে টিভি কেনার পর আমরা এমনকিছূ নেই যা চোখ পেতে দেখতাম না। ঐ স্বৈরাচার রুদ্ধ সময়েও খবর (সংবাদ) শুরু হতো বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান দিয়ে। শুক্রবার বেলা ৩টায় অধিবেশন শুরু হতো।

কতবার যে বাংলার দুই কোকিল রুনা লায়লা আর সাবিনা ইয়াসমিনের গান এসব শুক্রবারে শুনেছি। 'আমার বাউল মনের একতারাটা যায়রে গেয়ে যায়; আমায় যদি প্রশ্ন করে' এমন কত শত গান দেখাতো তখন! জানি না কিভাবে দেখাতো, তবে দেখাতো। ডিশ এসেছে সেই সেদিন। আমরা তো বিটিভিতেই দেখেছি ওরা এগারোজন, আবার তোরা মানুষ হ এসব সিনেমা। আহা ছোট মানুষের মন, সাথে তো কেঁদেছি ও।

আমি এখানে আমাদের সময় বা এখনকার সময়ের তুলনা করতে বসিনি। সময় সময়েরই মতন, পরিস্থিতি অনুয়ায়ী আমরা নিজেদের সময়গুলোকে ভালো মন্দ এসব মানদন্ডে নির্বাচন করি। তুমি তো জানো দেশ এখনকার সময়ে ইন্টারনেট সার্ফ করেই ছেলেপিলেদের কত সময় কেটে যায়। আমি সেদিন এই সাইটটাতে গিয়েছিলাম Click This Link একজন মানুষ লিখেছে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত না কি পরিবর্তিত হওয়া দরকার, ভিনদেশী একজন মানুষের লিখা গান কেন আমার জাতীয় সঙ্গীত হবে!! সেই মানুষ বলেছে জাতীয় সঙ্গীত হতে পারে মাহমুদুজ্জামান বাবুর গান ’আমি বাংলায় গান গাই’ - কত সহজ আজকাল মতামত দেয়া। সে জানে না ”আমি বাংলায় গান গাই” গানটিও একজন ভিনদেশীর, ভারতীয় প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের।

দুঃখী দেশ আমার, এভাবেই এ প্রজন্ম তোমাকে ভুলভাবে জানছে, ভুলভাবে চিনছে। তারা জানে না এই ভিনদেশীরা আমাদের জন্যে কত গান গেয়েছে, জোয়ান বায়েজের 'বাংলাদেশ, বাংলাদেশ' গান তারা শোনেনি। তারা ধর্মকে পুঁজি করে, ইসলামের নাম দিয়ে আমাকে, নারীকে অন্ধকারে অজ্ঞানতার সেই মধ্যযুগে বন্দী করতে চায় আবার। দেশ তুমি কি জানো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলে হলে ইসলামী ছাত্রীশিবির এর নারীরা কিভাবে ঘুরে বেড়ায়? এ নারীরা জানে না, তারা, ঐ ধর্মের লেবাস পরিহিত মুনাফেকেরা, কিভাবে এই নারীদের ব্যবহার করছে। তোমার মুক্তির জন্যে দেশ এ বঙ্গনারীরা ট্রাকে গানের বহর নিয়ে ঘুরেছে সমাজ সংসার তুচ্ছ করে।

সেই নারীরা এখন সহজে গান গাইতে পারে না। তুমি জানো দেশ, শিল্পী মমতাজ কনসার্ট করতে পারেনি সিরাজগঞ্জে এই তথাকথিত ধর্মবাজদের জন্যে! আহা দেশ, সেই একাত্তরে তুমি যখন পুড়ছিলে, কোন আরবীয় দেশ তোমার জন্যে আরবী গান গায়নি, গেয়েছে অন্যধর্মের জোয়ান বায়েজ, জর্জ হ্যারিসন, পন্ডিত রবি শংকর, প্রতিবেশী ভারতে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। মানবতার ধর্মের কাছে যে প্রকৃত মানুষ এক হয়ে যায় এই অধর্মের ধ্বজাধারীরা একবারও জানে না। কতদিন বছর হয়ে গেল, সবার অজান্তে দেশ, বিটিভি’র আটটা এবং দশটার খবরের আগে সেই গান ”সবক’টা জানালা খুলে দাও না’’ সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে। কেউ আর বিজয়ের গান শুনতে চায় না।

তোমার বুকে আবার নির্বাচন। এবারও নির্বাচনের আগে আগে কলম্বাসের আবি®কৃত দেশ থেকে বড় ভাইরা এসে ঘুরে গেছে। আমি এক বঙ্গ নারী শংকায় কাঁপছি। আবারো না ২০০১ এর পূর্ণিমা কাহিনী দেখতে হয়!! প্রিয় দেশ, একজন নারীও যদি আমার এ লিখা পড়ে তবে তোমার মাধ্যমে সেই নারীকে আমি অনুরোধ জানাই একবার জোরে জোরে শব্দ করে গেয়ে উঠুন ”আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি”। তারপর ভেবে নিন, ব্লাসফেমি আইনকে যারা জাতীয় আইন বানাতে চায় তাদের আপনার ভোটে কিভাবে প্রতিহত করবেন।

ধর্মের নামে যারা খুন করে, প্রতিদ্বন্দ্বীকে যারা বিস্ফোরণে ঘায়েল- পঙ্গু করে , নারীকে যারা গনিমাতের মাল বলে, যারা জাতীয় নারীনীতিকে প্রণীত হতে দেয় না, যারা দেশের শিল্প সংস্কৃতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে সার্বভৌমত্বের প্রতীক ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলে তাদের কিভাবে আস্তাকুঁড়েতে নিক্ষেপ করা যায় সেটা ভাবুন। প্রিয় দেশ, আমি কি খুব ভারী ভারী কথা বলে ফেললাম!! আমি জানি না, আমি শুধু জানি কুরবানী শেষে নারী হিসেবে আমার দায়িত্ব এখন শুধু মাংস সামলানোতে না, আমি একাত্তরে যেমন আমার সন্তানকে যুদ্ধে পাঠিয়েছি তোমাকে স্বাধীন করতে, আমি যেমন তোমার জন্যে আমার দেহে ধর্ষণের মতো একটি জঘন্য দুর্ঘটনার ক্ষত সয়ে নিয়েছি, সেভাবে নারী হিসেবে এ মুহূর্তে আমার কর্তব্য গ্রেনেডবাজদের রুখে দাঁড়ানো; বায়তুল মোকাররম থেকে যারা নারীর জন্যে প্রণীত নীতির বিরোধিতা করে তাদের তোমার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করা। প্রিয় দেশ, অনেক জানালা গত সাঁইত্রিশ বছরে বন্ধ হয়েছে আমাদের মেরুদন্ডহীনতার পথ ধরে। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি দেশ, আমি আমার গর্ভে কোন রাজাকার আলবদরের সন্তানের সন্তান ধারণ করব না, আমার গর্ভে কোন গ্রেনেডবাজের সন্তানের জায়গা ও হবে না। ভালোবাসার দেশ আমার, তোমাকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানাই, মুক্ত দেশে 'ওমা অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে কি দেখেছি, আমি কি দেখেছি মধুর হাসি, সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি' গাইবার আনন্দ আমাকে তুমি দিয়েছ তাই তোমার পায়ে আমার আবারো প্রণাম, আবারো সালাম।

যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মু্ক্তির সেনা, তোরা দে না, তোরা দে না, সে মাটি আমার অঙ্গে মাখিয়ে দে না - এ গানের রচয়িতা নারীর মতো আমিও দেশ তোমাকে এভাবে শরীরে জড়িয়ে মরতে চাই।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।