"অ্যাবসার্ড" এবারও মাহবুব আলীর ভাগ্যে সুন্দরীর অনুকম্পা মিলিল না
দীর্ঘ শৈত্য প্রবাহ শেষে যখন সকালবেলা সূর্য উদিত হইল, সকলে বেজায় পুল্কিত অনুভব করিলেও মাহবুব আলী আতঙ্ক বোধ করিল। কারন এতদিন যাহারা শীত নিদ্রা গমন করিয়াছিল সেই রোগীকুল নিদ্রা ভাঙ্গিয়া আজ বন্যার পানির ন্যায় আসিবে।
সুতরাং মাহবুব আলীও জাভেদ উমর মার্কা ইনিংস খেলিবার প্রস্তুতি লইয়া গৃহত্যাগ করিল। বাংলার বাঘের ন্যায় মিয়াও করিলে হইবেক না।
হাসপাতালে গিয়া যথারীতি সলিড ব্যাটিং করিতে লাগিল।
প্রেসক্রিপশনের বুক চিরে কলম দিয়ে বাউনডারির ঠিকানায় রোগী পাঠাইতে লাগিল, ক্রমে হাফ সেঞ্চুরি করিয়া রান যখন ৬০ এর ঘরে, তখন মাহবুব আলীর ধৈর্যচ্যুতি ঘটিল। তবে আশার কথা হইল ততক্ষনে ওভার শেষ হইয়া গিয়াছে।
হাসপাতাল হইতে বাহির হইয়া, মাহবুব আলীর মনে পরিল, ব্যাংক এ একটু কাজ আছে। হাত পা ঠাণ্ডা হইয়া আসিল। সরকারী কোন প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার কথা মনে হলেই কেন জানি হাত পা ঠাণ্ডা হইয়া আসে।
তার উপর দীর্ঘ ব্যাটিং এর পর আজ মন মেজাজ ভালো না।
ব্যাংক এর সামনে সাইকেল পার্ক করিতেই এক মোটরসাইকেল আরোহী আসিয়া মাহবুব আলীর উপর তুলিয়া দিতেদিতে ও দিল না। গাঁয়ের উপর তুলিয়া না দেয়াতে কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকাইয়া দুয়া দুরুদ পড়িয়া যখন মাহবুব আলী ব্যাংক এ প্রবেশিল,তখন তাহার মনে হইল, ফুটন্ত কড়াই থেকে জলন্ত উনুন বুঝি ইহাকেই বলে।
কাতারে কাতার বান্দা হাজার------ এক খানা বয়স্ক ভাতা কাতার, এক খানা বিধবা ভাতা কাতার, এক খানা কারেন্ট বিল গ্যাস বিল কাতার। সে এক এলাহি কারবার।
ব্যাগ পকেট সব কিছু বাচাইয়া মাহবুব আলী যখন তাহার কাঙ্খিত টেবিলের সামনে পৌঁছাইল তখন দেখিল, গড়ের মাঠ, "একি
মাহবুব আলীর মনে কু ডাক ডাকিল। "আগের বার যখন আসিয়াছিলাম তখন উনার পিতা ইন্তেকাল করিয়াছিলেন, এবার কি তবে উনার মাতা......???"
কাউকে যে জিজ্ঞাসা করিবে সে সাহস ও হইতেছে না। কারন সকলের মেজাজ সপ্তমে।
এক আনটির দিকে তাকাইয়া মাহবুব আলীর মনে হইল উনাকে জিজ্ঞাসিবে। কারন উনার টেবিলে তেমন ভিড় বাট্টা নাই, এবং উনার চেহারা থেকে স্নেহ নামক বস্তুটা উপচাইয়া পরিতেছে।
ইতিমধ্যে মাহবুব আলীর পায়ে কে যেন জোঁক মারিবার মতো করিয়া মোচড়াইয়া জোরদার এক খানা পারা দিয়া গেল। লেংচাইতে লেংচাইতে মাহবুব আলী যখন উনার টেবিলে পউছিল, স্নেহময়ি আনটি তখন ফোনে কাকে যেন মৃদু ভর্তসনা করিতেছিলেন," চু...মারানির পোলা, তুই কারে কি কস........." শুনিয়া মাহবুব আলী উল্টা দিকে তাকাইয়া হাঁটিতে লাগিল। এই খানে থামা সমিচিন মনে হইল না।
এক পিওন (সম্ভবত) কে হাঁতে পায়ে ধরিয়া মাহবুব আলী কহিল," ভাই এক খানা টি টি করিব। এই টেবিলের ভদ্রলোক কোথায়?" পিওন তাচ্ছিল্যের ভঙ্গীতে বলিল," উনি তো আহার করিতে গিয়াছেন।
আসিতে লেইট হইবেক। বসেন আপনি"
হাফ ছাড়িয়া মাহবুব আলী ভাবিল," যাক বাবা, আজকে তাহলে কেউ মরে নাই" বসার জায়গা খুজিতে গিয়া টের পাইল,ঠাই নাই ঠাই নাই ছোট এ তরি, জনসংখ্যার বিস্ফোরণে গিয়াছে ভরি" :S
দাঁড়াইয়া থাকা কর্তব্য মনে হইল। মিনিট বিশেক বাদে পিওনের মায়া লাগিল, এক খানা টি টি ফর্ম হাঁতে ধরাইয়া দিয়া গেল। ফর্ম পুরন করিয়া যখন আরেক আনটির হাঁতে দিল, নগদ ক্যাশ সমেত। উনার মুখ হইতে পানের সুধারস তাহার ফরমের উপর দিয়া তৈলের ন্যায় গড়াইয়া গেল এবং টাকার অংক শুধু মুছিয়া না, এক্কেবারে লেপটাইয়া দিল।
জিব্বায় কামড় দিয়া নিজের ভাগ্যকে, ব্যাংক কে, আনটিকে সর্বোপরি ঔষধ কম্পানির দেয়া জেল পেন কে গালা গালি করিতে করিতে, পিওন ভাই কে আরেক খানা ফরমের জন্য অনুরোধ করিলে,অগ্নি দৃষ্টি কাহাকে বলে, প্রকারভেদ সহ তাহা জ্ঞান গোচর হইল
আরেকটা ফর্ম ফিলাপ করে যখন ক্যাশ এ বসা আনটির হাঁতে দিল, তখন উনি বলিলেন," হয় নাই তো। আপনি ট্যাক্স কমিশন এই গুলা লিখে আনেন"
"লে হালুয়া, ট্যাক্স কমিশন কত এইগুলা কি আমি জানি?" ভাবিতে ভাবিতে এক সুন্দরী আপুর দিকে দৃষ্টি পরিল মাহবুব আলীর। ইস্মারট ভঙ্গীতে লাভ ইউ মার্কা এক খানা হাসি দিয়া মাহবুব আলী সাহায্য প্রার্থনা করিলে, সুন্দরী এমন ভাবে তাকাইল, যেন মাহবুব আলী পাণি প্রার্থনা করিয়াছে
দ্রুত স্থান ত্যাগ করিয়া ভাবিল,
"শালা যা আছে কপালে, প্রবেশিব ম্যানেজারের হলে"
ম্যানেজারের টেবিলে নিজের কার্ড খানা রাখিয়া, বিনম্র চিত্তে পরিচয় দিলে, ম্যানেজার সাহেব খাতির করিয়া, ট্যাক্স কমিশন ডাক মাশুল এর ঘর ফিলাপ করিয়া দিলেন।
বাক বাকুম করিতে করিতে, ক্যাশ কাউনটারে বসা আনটির হাঁতে যখন ফর্ম টা দিল, উনি তখন একবার আলী সাহেবের দিকে এক বার ফরমের তাকাইলেন, " কে ফিলাপ করিয়াছে???"
"জি, আপনাদের ম্যানেজার সাহেব"
হো হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিলেন জনাবা, আতঙ্কে মাহবুব আলীর কলজে শুকাইয়া গেল," আবার পানের রসে তাহার ফরমের না তেরোটা বাজিয়া যায়।
"হা হা হা এই সবাই এইদিকে আস, দেখ ম্যানেজার কি লিখেছে হা হা হা"
বিকট হাসির ভেতর দিয়ে মাহবুব আলী অবগত হইল, ম্যানেজার সাহেব ভুল লিখিয়াছেন, এবং ম্যানেজারের প্রতি ক্ষোভ ঝারিতে ঝারিতে উনি নিজে ট্যাক্স এর ঘরফিলাপ করিলেন।
বলিলেন," ওই টেবিলের লোক খাইতে গেছে, উনি আসিলে বাকি কাজ হইবেক। আপনি অপেক্ষা করুন। "
মাহবুব আলী ঘরির দিকে তাকাইল, "আড়াই ঘণ্টা হইয়াছে, উনার খাওয়া কবে শেষ হইবেক?"
ভাঙ্গা এক খানা কেদারায় বসিয়া ঝিমাইতে লাগিল মাহবুব আলী। আরও প্রায় ২০ মিনিট অতিক্রান্ত হবার পরে পিওন আসিয়া আরেক টেবিলে বসা কর্মকর্তা কে অনুরোধ করিলে তিনি বলিলেন, "যাও স্লিপ নিয়া আস, যদিও আমার কাজ নহে, আমি করিয়া দিব"
"হায়রে খোদা, এখন স্লিপ পাওয়া যাইতেছে না"
খুঁজিতে খুঁজিতে টেবিলের নীচে পড়িয়া থাকা বাতিল এক খানা স্লিপ পাওয়া গেল, সেই স্লিপে কাজ সারিয়া মাহবুব আলী ব্যাংক ত্যাগ করিল।
টাকা পউছিবে কিনা, খোদা মালুম :S ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।