আমার বন্ধু পলাশ। খুব ভালো ছাত্র। এমবিএ ভাল রেজাল্ট করেছে। চাকুরীর জন্য বিভিন্ন কোম্পানীতে ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি তার একটি নতুন এবং তিক্ত ইন্টারভিউ এর বর্ণনা সবার জন্য তুলে ধরলাম।
সময় অনুযায়ী পলাশ উত্তরায় অবস্থিত আমান প্রুপের কর্পোরেট অফিসে হাজির হয় ইন্টারভিউয়ের জন্য। প্রথমেই তাদের গদি নিয়ে টানাটানি। অর্থাৎ আমান গ্রুপের অফিসে ঢোকার পর কর্তব্যরত কর্মকর্তা তাদের একটি স্থানে বসতে বলে। পলাশ সহ আরো কয়েকজন প্রার্থী সেখানে বসে। কিছুক্ষন পর আরেকজন কর্মকর্তা ধমকের সূরে বলে উঠেন- “এখানে বসেছেন কেন? কে বসতে দিয়েছেন উঠুন।
” পূর্বের ব্যাক্তির কথা বলাতে তিনি আরো ক্ষেপে যান। তাদের কে আরেকটি স্থানে বসতে বলেন। সবাই বসলেন। কিছুক্ষন পর আবারো ঘটনার পূনরাবৃত্তি, অর্থাৎ তাদের গদি নিয়ে টানাটানি। তারা রীতিমত ভড়কে গিয়েছেন ব্যাবহার দেখে।
যাই হোক টানাটানি বন্ধ হলো। ইন্টারভিউ আরম্ভ হলো। আমার বন্ধুটি মনে মনে আল্লাহর নাম জপতে লাগলো। একে একে ইন্টারভিউ শেষ করে বের হচ্ছেন অনেকে। তাদের একজনকে জিজ্ঞেস করা হলো কেমন হয়েছে, তার উত্তর- “ভাই ভিতরে গেলে বুঝবেন।
একাউন্টস বা ফাইন্যান্স না, মনে হচ্ছে দারোয়ানের পদের জন্য আবেদন করেছি। ” পলাশ বুঝে উঠার আগেই তার ডাক পরলো। যথারীতি ভদ্রতার সাথে রুমে প্রবেশ। ৩/৪জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বসে আছেন। সালাম বিনিময় করার পরই তাদের একজন (চেয়ারম্যান বা ডিরেক্টর লেভেলের হবেন।
) - “এখানে দাড়াও”! শুরু হলো জিজ্ঞাসা। পলাশ তো এতোক্ষনে বুঝলো কেন আগের প্রার্থীরা এভাবে বলল। অনেক ইন্টারভিউ দিয়েছে বা শুনেছে, কিন্ত দাড়িয়ে ইন্টারভিউ এবারই প্রথম।
একর পর এক অবাঞ্চিক প্রশ্ন, যার সাথে তার লেখাপড়া বা যে বিভাগে চাকুরীর আবেদন তার কোন মিল নেই। একে একে প্রশ্ন করতে করতে তার ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন আরম্ভ হলো।
পলাশের বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার । বহু বছর আগে অবসর গ্রহন করেছেন। এখানেই বাধল সমস্যা। তার বাবার পেশা নিয়ে নানা আপত্তিমূলক প্রশ্ন করতে লাগলো। মনে হলো আমার বাবার পেশাটি ঘৃণ্যতম পেশা অথবা সামরিক কর্মকর্তারা তাদের শত্রু ।
অথচ পলাশ তার বাবার পেশা নিয়ে গর্ব করে। একপর্যায়ে পলাশকে পরে জানানো হবে বলে আসতে বলে। ক্ষোভ আর দুঃখ নিয়ে পলাশ সেই অফিস থেকে বের হয়। র মনে মনে বলতে থাকে- “এমবিএ ও আইসিএমএ করা অনেক ছেলে এখানে এসছে একাউন্টস এন্ড ফাইন্যান্স বিভাগে চাকুরীর জন্য। এ কি সাক্ষাৎকার! দারোয়ানের মতো আচরণ।
পারিবারিক ব্যাপারে কেন হস্তক্ষেপ? তারা কি জানে একজন যোদ্ধা সম্বন্ধে? আমার বাবা একজন যোদ্ধা ছিলেন। তারা কিভাবে মেধাবী ছাত্রদের বেছে নিবেন। তাদের তো সেই যোগ্যতাটুকু নেই। যে কিনা বায়োডাটা ঠিকমতো পড়তে জানেনা। তাকে দেখিয়ে দিতে হয় একাডেমিক যোগ্যতা কোথায় লিখেছে।
”
এক পর্যায়ে আমাদের কাছে পলাশ দুঃখ প্রকাশ করতে থাকে। আমরা তো অবাক, এই কি আমান গ্রুপ এর ভেতরের অবস্থা। দেশের এতো বড় একটি গ্রুপে কারা বসে আছেন ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য। তারা কি ভুলে গেছেন যে এসব মেধাবী ছেলেদের জন্য আজ একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত। আমান গ্রুপ কি ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে মেধাবীদের বাছাই করছেন নাকি গরু-ছাগল কেনা বেচা করছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।