আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গুপ্তহত্যা: সরকার সহজেই প্রমাণ করতে পারে যে তারা এর সাথে জড়িত নয়

Look forward to seeing real democracy in Bangladesh বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘সাদাপোষাকে’ গ্রেফতার এবং গুপ্তহত্যার সাম্প্রতিক সংজোযনটি নিয়ে জনগণ সবচেয়ে ভীত এবং সন্ত্রস্ত। কারন, সাদাপোষাকধারী কয়েকজন লোক যদি ‘পরিচয়পত্র’, কদমছাঁট চুল, হাতের ওয়াকিটকি, বা কোমরের পিস্তল দেখিয়ে নিজেকে আইনশৃঙ্খলারক্ষার কর্তব্যে নিয়োজিত বলে দাবি করে, তখন একজন সাধারন নাগারকের জন্য তাদেরকে বাধা দিতে বা গ্রেফতার করতে যাওয়াটাতো প্রায় আত্মহত্যার সামিল। কারন, যদি তাঁরা সত্যিই সরকারি কর্মকর্তা হয়ে থাকেন তাহলে সেটি রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ার মতো চরম অপরাধ, এবং আইনত তাঁর জন্য কঠিন শাস্তি অবধারিত। তবে আইনের মঞ্চে যাওয়ার আগে মহাসম্মানিত আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনির সাথে ‘বেআদবি’ করার কারনে হাজত থেকেই তিনি বেহেশতের টিকিট পেয়ে যেতে পারেন। কিন্তু অন্যদিকে, যেহেতু তারা সাদাপোষাকধারী এবং গ্রেফতারের সময় তারা কোনো নির্ভরযোগ্য পরিচয় রেখে যাচ্ছেনা তাই সাধারন মানুষের জন্য তাদেরকে চিহ্নিত করারও কোনো উপায় থাকছে না।

সমগ্র ঘটনাটির কাছে সাধারন নাগরিকবৃন্দ সম্পূর্ণ অসহায়। কোনো সরকার যদি তার ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে এই কাজে নামে, তাহলে তার চেয়ে অনাচার, স্বৈরাচার, বিশ্বাসঘাতকতা আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু, জনগণ আবারও কিংকর্তব্যবিমূঢ় - সরকারই করছে, নাকি কোনো দূর্বৃত্ত চক্র। প্রধাণমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামাত জোটই নাকি দেশকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে এই কাজে নেমেছে। হতেও পারে, অসম্ভব নয়।

কিন্তু, তারপরেও যেহেতু শেখ হাসিনা এবং মহাজোটবদ্ধ দলগুলি ক্ষমতায় আছেন, আইন-শৃঙ্খলারক্ষী সকল প্রকার বাহিনী যেহেতু তাঁদেরই হাতে, সেহেতু তাঁদেরকেই প্রথম কৈফিয়ৎ দিতে হবে, তাঁরা এমন একটি সন্ত্রাস দমনের জন্য ব্যবস্থা নিতে কেন এখনও ব্যর্থ। যে কোনো দায়িত্বশীল সরকারের বা ক্ষমতাসীন নেতার উচিৎ, প্রথম ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে তারপর অন্যের দিকে আঙ্গুল তোলা। কিন্তু, শেখ হাসিনা সেই ন্যূনতম দায়িত্বশীলতাটুকু দেখানোর কোনো প্রয়োজন বোধ করেন নি। এরপর বিবেচনা করতে হয়, এমন গুপ্তহত্যার সুবিধাভোগী কারা। বলাবাহুল্য এমনতর অপহরণ এবং হত্যাকাণ্ডে সবচেয়ে শঙ্কিত হবে বিরোধী এবং ভিন্নমতাবলম্বী রাজনৈতিক দলগুলি, মানবাধিকারকর্মী এবং প্রতিবাদী সুশীল সমাজ।

এমন সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারি অন্যায়-অনাচারের প্রতিবাদ অনেকটাই দমন হবে (চরম অন্যায়ভাবে অবশ্যই)। আর ক্ষমতাসীনদের পক্ষে এমন দূষ্কর্ম করাটা খুবই সহজ এবং যারা যেকোনোভাবে ক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখতে চায় তারা প্রায়শঃই এমন দূষ্কর্মের স্মরণ নিয়ে থাকে। সেই হিশেবে সন্দেহের তীর ক্ষমতাসীন পক্ষের দিকেই প্রথম যায়। অন্যদিকে ক্ষমতায় না থেকে এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে কোনো না কোনো বারে আইনশৃঙ্খলারক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। এবং একবার ধরা পড়লে বিষয়টি বিরোধী রাজনৈতিক দলের জন্য তা কতখানি আত্মঘাতি হবে, সেটি উপলব্ধি করতে বোধ হয় খুব বেশি বুদ্ধিমান হতে হয় না।

তবে, হতেও পারে, বিরোধীদলগুলি সত্যিই হয়তো অতটাই বোকা। কিন্তু, তার সম্ভাবনা কতটুকু ? এটি যদি বিরোধী দলের চক্রান্তই হয়ে থাকে, তাহলে সরকার এক কাজ করুক, যাতে আমরা অন্তত বুঝতে পারি যে সরকার অক্ষম হলেও এটি দমনের সদিচ্ছা তাদের আছে - ১. সাদাপোষাকে কাউকে গ্রেফতার করা বেআইনী ঘোষণা করুক। ২. আরও ঘোষণা করুক, জনগণ যদি এমন ঘটনার সম্মুখিন হয়, তাহলে তাদের অধিকার থাকবে সাদাপোষাকধারীদের বাধা দেওয়া, বন্দী করা এবং তাদের গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার (উত্তম-মধ্যম দেওয়ার কথাটা বাদ দিলাম, কারন তা হিংসাত্মক হয়ে যায়। এবং ধরে নিলাম সরকার তাদের শাস্তি নিশ্চিত করবে)। ৩. যখন পোষাকধারী কর্মকর্তারা গ্রেফতার করবেন তখন তাঁদের ছবি তুলে রাখার জন্য পথচারী এবং আশেপাশের ব্যক্তিদের সুযোগ দিতে বাধ্য থাকবেন।

৪. গ্রেফতারের সময়ে গ্রেফতারকৃতের নিকটাত্মীয়কে পোষাকধারী ব্যক্তিদের টেলিফোন থেকে ফোন করে এবং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নিজস্ব ব্যবস্থায় উভয় পদ্ধতিতে জানাতে হবে, এবং নিকটবর্তী থানায় এসে গ্রেফতারের প্রমাণপত্র সংগ্রহ করতে বলতে হবে। ৫. গ্রেফতারের পর প্রথম থানায় নিয়ে যেতে হবে, এবং সাধারন জনগণ বা গ্রেফতারকৃতের আত্মীয় বন্ধু-বন্ধব তাদেরকে অনুসরন করে থানায় যেতে পারে সেই সুযোগ দিতে হবে। সরকার যদি শুধুমাত্র প্রথম ঘোষনাটি দেয়, বোধকরি তাহলেই প্রমানিত হয় যে অন্তত সরকার এই নিকৃষ্টতম সন্ত্রাসের সাথে জড়িত নয়। বাংলাদেশের বোধকরি অন্যতম চরম দূর্ভাগ্য হলো কোনো অনাচার-অত্যাচারের দায় কেউ স্বীকার করে না। এ বিষয়ে আমাদের রজনৈতিজক নেতা-নেত্রীরা পরষ্পরের দিকে আঙ্গুল তুলে একে-অন্যকে অভিযুক্ত করে জনগণকে ধোঁকা দিতে বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধ করেন না।

হরতালের নামে আজ পর্যন্ত যত মানুষ জীবন হারিয়েছে, যত দোকান লুঠ হয়েছে, যত গাড়ি পুড়েছে, তার কোনো একটিরও দায়দায়িত্ব হরতালকারী দল কখনও স্বীকার করে নি। তারা ব্যতিক্রমহীনভাবে সব সময় বলেছে, হরতালকারী দলকে ফাঁসানোর জন্য সরকার নিজের বাহিনীর মাধ্যমে ওইসব ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে। তেমনি ক্ষমতাসীন দল তার বাহিনীর সকল অনাচার-নির্যাতনের দায় বিরোধীপক্ষের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। এই ধারায় নতুনভাবে যোগ হলো সাদা পোষাকে অপহরণ এবং গুপ্তহত্যার মতো ভয়ঙ্করতম রজনৈতিক সন্ত্রাস। পরিশেষে আবার বলব যে, সরকার যদি তার ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে এই কাজে নেমে থাকে, তাহলে তার চেয়ে অনাচার, স্বৈরাচার, বিশ্বাসঘাতকতা আর কিছু হতে পারে না।

আমরা প্রমাদ গুনছি। -উমর ফারুক ১৮ ডিসেম্বর ২০১১ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.