আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সব অবস্থার জন্য প্রস্তুত আছি : গোলাম আযম

ঢাকা : ‘আমি সব অবস্থার জন্য প্রস্তুত আছি, গ্রেফতার করলে গ্রেফতার হতে হবে, এরতো কোনো বিকল্প নেই। ’ নিজের সম্ভাব্য গ্রেফতার নিয়ে এভাবেই বাংলানিউজকে বললেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর গোলাম আযম। তবে সঙ্গে তিনি এও যোগ করেন, ‘আমি কোনো কাজের জন্য অনুতপ্ত নই, অনুতপ্ত হওয়ার কোনো কারণও নেই। ’ গোলাম আযম বলেন, আমাদের ফাঁসিতে ঝোলাতেই বিচার শুরু হয়েছে। •রাজাকার একটি গালি, কিন্তু আমি রাজাকার নই : গোলাম আযম গত ১৫ ডিসেম্বর একান্ত আলাপচারিতায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অন্যতম দোসর আল বদর, আল শামস এবং রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা গোলাম আযম আরও বলেন, ‘রাজাকার শব্দটি ২০০১ সালের পর দেশে চালু হয়েছে এর আগে ছিলো না।

আর এখন আমাদের বলা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী। ’ তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ভালো করেই জানে, জামায়াত-বিএনপি এক হলে তাদের রাজনৈতিক মাঠ শূন্য হয়ে যাবে। জামায়াতের নেতা/ কর্মীরা কী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে কোনো ভূমিকা পালন করেছিলো জানতে চাইলে গোলাম আযম বলেন, ‘ভারতের গোলাম হয়ে যাবো এ ভয়ে জামায়াতের কেউ যুদ্ধে যায়নি। তবে স্বাধীনতার পক্ষে কাজ না করলেও বিরুদ্ধেও কোনো কাজ করেনি। আপনার নেতৃত্বেই পাক হানাদার বাহিনীর সহযোগী বিভিন্ন বাহিনী গড়ে ওঠে--এ প্রশ্ন করা হয় তাক।

জবাবে তিনি বলেন, এগুলো ৪০ বছর ধরে প্রচার করা হচ্ছে। রাজাকার বাহিনী সরকার গঠন করেছিল। আমরা একটা নাগরিক কমিটি করেছিলাম। আমরা পাকিস্তান সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকতাদের বলেছিলাম, বিদ্রোহ যে পরিমাণ হয়েছে এই নাগরিক কমিটি না করলেতো তাদের দমন করা যাবে না। সে সময়ে সরকারের সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিলো, যখন সবাই যুদ্ধে, যখন পাকিস্তানি সেনারা ঢাকাসহ সারা দেশে বিভীষিকার পরিবেশ ছড়িয়ে রেখেছিলো তখন আপনার এই অবাধ চলাফেরা কি বার্তা দেয়? --এমন প্রশ্নে পাকিস্তানি সরকার ও সেনা বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নেন গোলাম আযম।

তাহলে যুদ্ধের সময় ৯ মাস ধরে পুরো বাংলাদেশে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতন হয়েছে, সেগুলোর প্রতিরোধ কেন করেননি-- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু করার ক্ষমতা বা সুযোগ আমাদের ছিল না। আর আমরা অসহায় ছিলাম। ‘একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে সারাদেশে যেসব ঘটনা ঘটে তার অনেক কিছুই আমরা জানতাম না’, বলেন গোলাম আযম। এসময় সংবাদপত্রের খবরাখবর ও স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্রের খবরের কথা বললে, এমনকি চরমপত্রের প্রসঙ্গ তুললে অবজ্ঞার হাসি হাসেন গোলাম আযম। স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্রের দেওয়া খবর মিথ্যা ছিলো বলেও দাবি করেন তিনি।

বিদেশি সংবাদমাধ্যমের খবরাখবর, বিদেশি সাংবাদিকদের বাংলাদেশে অবস্থান ইত্যাদি প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে তা এড়িয়ে যান গোলাম আযম। ১৯৭১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রে রাজাকার শিবির পরিদর্শন করে আলেম ও ইসলামি কর্মীদের রাজাকার ও মুজাহিদ বাহিনীতে ভর্তি হওয়ার আহবান জানিয়েছেন আপনি-- এ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘সেদিন আমি সেখানে গিয়েছিলাম, এ কথা সত্য। কিন্তু আমি তাদের ন্যায়ের পথে কাজ করতে বলার জন্যই গিয়েছি। ’ মানুষকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছেন এমন দাবি করলে গোলাম আযমের কাছে তার কোনো একটি উদাহরণও আছে কি না জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে গোলাম আযম বলেন, তার সুপারিশেই শেখ মুজিবুর রহমানের এক নিকট আত্মীয়কে পাকিস্তানি সেনারা ধরে নিয়ে আবার মুক্ত করে দেয়।

কিন্তু সারা দেশে এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটে, তার কয়টি আপনি প্রতিকার করতে পেরেছেন? এমন প্রশ্নে গোলাম আযম বলেন, অনেক খবরই আমাদের অজানা ছিলো। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা আপনার বিরুদ্ধে ৫২ টি অভিযোগ দিয়েছে বলা মাত্র তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলে ওঠেন, ‘ওরা কী একটা অভিযোগও প্রমাণ করতে পারবে?’ প্রসঙ্গত,১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর রাত ১টা’র সময় ব্রাহ্মবাড়িয়ার পৈরতলা রেলব্রিজের কাছে ৩৮ জনকে এক সঙ্গে হত্যা করে পাকি বাহিনী এবং এই গণহত্যার নির্দেশদাতা ছিলেন গোলাম আযম । তদন্ত সংস্থার রিপোর্টে উল্লেখিত এই তথ্য প্রসঙ্গে গোলাম আযমের জবাব, ‘আমার জীবনে কোনো দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাইনি। ’ তাহলে সে রাতে কোথায় ছিলেন আপনি জানতে চাইলে তিনি কিছু সময় চুপ করে থাকেন। পরে ধাতস্থ হয়ে বলেন, ‘সে রাতেই আমি করাচির উদ্দেশ্যে রওনা দেই।

’ হঠাৎ করাচি কনে যেতে হয়েছিলো সে প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান গোলাম আযম। শুধু নিজের সাফাই- ই নয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যাদের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে সেই জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এমনকি বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সাফাই গান গোলাম আযম। তাদের সবাইকেই নির্দোষ দাবি করে জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমার দলের নেতাদের নিয়েও আমি কনফিডেন্ট। তাদের স্বভাব এ রকম নয়। ’ তিনি বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী, তদন্ত সব ডাহা মিথ্যা।

ওনারা কখনো মানবতাবিরোধী কোনো কাজ করতে পারেন না। ’ যুদ্ধাপরাধের বিচার ও ট্রাইব্যুনালে তাকে গ্রেফতারের জন্য অবেদন করা হয়েছে --এ প্রসঙ্গ তোলা হলে গোলাম আযম বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি। আমাদের ফাঁসিতে ঝোলাতেই সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। যে কোনো অবস্থার জন্যই আমি প্রস্তুত আছি। ’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.