আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি "যমুনা নদী" আর মরুভুমিতে পরিণত "বাংলাদেশ" সাথে আছেন "ভারত" আর "চায়না" - আর মরি শুধুমাত্র আমরা

বল আমায় সেই সময়ের নেই কেন অস্তিত্ব, বোঝাও আমায় সেই কল্পনার নেই কোন সমাধান.....আমারি স্বপ্ন আজো জেগে রয় আধারো শুন্য চোখে ... বর্তমানে চীনের ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশের কোনও রাজনৈতিক দল কোনও কথা বলছে না বলে। বিএনপি-জামাত বলবে না, কারণ চীন তাদের পরানের গহীন ভিতরে অবস্থান করছে। ভারত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমি বানিয়ে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে! অতএব তাদের বিরুদ্ধে মালকোচা মেরে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য বিএনপি-জামাত জোট রণমূর্তি ধারণ করে বসে আছে। কিন্তু চীন যে গোটা বাংলাদেশটাকেই মরুভূমি বানিয়ে ফেলতে চাইছে, তা নিয়ে এদের কণ্ঠে কোনও কথা নেই। চীন এখন ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে তাদের গোবি মরুভূমিকে সবুজায়ন করার জন্য পানি প্রত্যাহার করে নিয়ে যাচ্ছে।

এর ফলে বাংলাদেশের যমুনা নদী এবং বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ নদ ব্রহ্মপুত্র সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে যাবে, বন্ধ হয়ে যাবে উজান থেকে প্রবাহিত ৪৯ শতাংশ পানির প্রবাহ। বেড়ে যাবে বঙ্গোপসাগরে পানির লবণাক্ততা, এমনকি বদলে যাবে দেশের চাষযোগ্য জমির অভ্যন্তরীণ গঠনও। ধ্বংস হয়ে যাবে জীববৈচিত্র্য, পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, ভূমিকম্প ও দুর্ভিক্ষে মারা যাবে বাঙলাদেশ ও ভারতের কোটি কোটি মানুষ। এই দুই দেশের ১০০ কোটির মতো মানুষ পড়বে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে। সাংপো নদীতে বাঁধ দেয়ার পরিকল্পনা চীন বহুদিন আগে থেকেই করে আসছিল।

১৯৮৮ সালে লি পেং যখন চীনের ক্ষমতায়, তখন থেকে শুরু করে ১৯৯৮ সালের মধ্যে নেয়া চীনের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই উদ্যোগ রূপায়িত হচ্ছে চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্টের সময়েও। চীনের গৃহীত এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ১০টি বৃহৎ নদীতে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা। তা ছাড়া ওখান থেকে প্রাপ্ত পানি কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা নদী দিয়ে প্রবাহের মাধ্যমে মরুভূমিকে সৃষ্টি করা হবে কৃষিজমিতে। এর মধ্যে সিন্ধু নদীতে বাঁধ দেওয়ার কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে।

এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র, মেকং ও সানঝি সহ ১০টি নদীতে বাঁধ দেয়ার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পরিবেশবিদদের অনেকেই বলেছেন, চীনের এ কার্যক্রমের ফলে ব্রহ্মপুত্রের পানি একেবারেই নিঃশেষিত হয়ে যাবে এবং জীববৈচিত্র্য, অর্থনীতি, কৃষি, শিল্প ও আবহাওয়ার যে ক্ষতি হবে তাকে মোকাবিলা করার সাধ্য বাংলাদেশের নেই। চীনের এই বাঁধ দেয়া সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ ও ভারতের নদীভিত্তিক সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। এই বাঁধের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত অ্যাসোসিয়েটড প্রেস (এপি)-এর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চীন ব্রহ্মপুত্র নদীতে বাঁধ দেয়ার এমন এক প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে যা বিস্ময়ের দিক থেকে ১ হাজার ৫০০ মাইলের চীনের মহাপ্রাচীরকেও ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের কথা মনে রেখেও তাদেরকে তোয়াক্কা না করেই চীন তার প্রকল্প বাস্তবায়ন করার প্রতিজ্ঞা নিয়েই মাঠে নেমেছে।

তিব্বতের বার্তা সংস্থা ‘দ্য তিবেতান’-এর রিপোর্ট থেকে জানা যায়, চীন সাংপো নদীতে বাঁধ দিলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তিব্বত, ভারতের আসাম, মিজোরাম, অরুণাচল এবং সম্পূর্ণ বাঙলাদেশ। চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জনসংখ্যা অনুপাতে তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা খাদ্য ও পানি। খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে চীনের প্রয়োজন বসতি স্থাপনোপযোগী জায়গা এবং কৃষিজমির আয়তন বাড়ানো। সে-কারণেই তারা অব্যবহৃত জমি ও তাদের মরু অঞ্চলকে মানুষের বসবাস-উপযোগী করার জন্য কৃষিজমির প্রয়োজন বোধ করছে। এ জন্য তারা শুধু বাঁধ নয়, পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কৃত্রিম খাল তৈরির মাধ্যমে গোবি মরুভূমিতে পানির প্রবাহ তৈরি করে সেখানে ফসল উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে চায়।

চীন মনে করে এর ফলে তাদের পক্ষে কৃষিজমির পরিমাণ কয়েক লক্ষ হেক্টর বাড়ানো সম্ভব হবে। শুধু ব্রহ্মপুত্রই নয়, হিমালয় থেকে ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, নেপাল, লাওস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামে নেমে আসা নদীগুলোতেও বাঁধ দিচ্ছে চীন। তিব্বতের বিভিন্ন হিমবাহ থেকে উৎপন্ন এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত সব নদীকে পূর্ব-পশ্চিমে প্রবাহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। অথচ ২৯৫৭ কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্রের মাত্র ৮৭৭ কিলোমিটারের মালিক চীন। তিব্বতের কৈলাশশৃঙ্গে উৎপন্ন হওয়া নদীর যে জায়গাটিতে চীন বাঁধ দিচ্ছে তার নাম সাংপো হওয়ায় বাঁধটিরও নাম দেয়া হয়েছে সাংপো বাঁধ, চীনে যেটি পরিচিত ইয়ার লং সাংপো নামে।

আণবিক বিস্ফোরণের মাধ্যমে চীন যে কৃত্রিম নদী সৃষ্টি করছে, সেটি খননের নাম দেয়া হয়েছে পিসফুল নিউক্লিয়ার এক্সপ্লোশন। ১৯৯৮ সালের জানুয়ারিতে জার্মান টেলিভিশন চ্যানেল জেডডিএফ-এ প্রচারিত ‘ডাই ওয়েল্ট’ (দি ওয়ার্ল্ড) নামের এক প্রতিবেদনে সাংপো বাঁধের প্রধান পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক চেন চুয়ানয়ুর একটি সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদ তিব্বতে জন্ম নিয়ে ভারতে প্রবেশের আগে যেখানে অশ্বক্ষুরাকৃতিভবে বাঁক নিয়েছে, ঠিক তার আগেই ওই বাঁধ নির্মাণ করে হিমালয়ের মধ্য দিয়ে ১৫ কিলোমিটার কৃত্রিম নদী তৈরির মাধ্যমে পানিকে, পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত করা হবে। এর ফলে ব্রহ্মপুত্রের ২০০ কিলোমিটারের মূল গতিপথ বদলে যাবে। আর এখান থেকে পানি পাম্পিংয়ের মাধ্যমে চীন ৪০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবে এবং লাখ লাখ হেক্টর মরুভূমি সবুজ ও বাসযোগ্য হয়ে উঠবে। প্রকৃতপক্ষে এই বাঁধ তৈরি করে চীন সারা পৃথিবীর বিরুদ্ধেই এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ আতঙ্কিত ও শংকাগ্রস্ত। কিন্তু তা নিয়ে চীনের কোনও মাথাব্যথাই নেই। অথচ এমন এক সময় ছিল, যখন চীনের পক্ষ থেকেই সাংপো নদীর ব্যাপারে এমন এক নিষেধাজ্ঞা ছিল, যাতে এই নদীতে কোনওভাবেই হাত দেওয়া না হয়। কারণ যুগ যুগ ধরে চীনারা ব্রহ্মপুত্রের এই এলাকাকে সাংগ্রাই বা দেবদেবীর এলাকা বলেই জানত। তাই এই এলাকাটি সম্পর্কে প্রকৌশলীদেরও তেমন ধারণা ছিল না।

কিন্তু ১৯৯০ সালে বিশ্বায়নের ফলে চীনারাও তাদের কমিউনিস্ট খোলশ থেকে বেরিয়ে আসে। বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য পুঁজিবাদী দেশের মতো তারাও বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। তাই ১৯৪৯ সালে চীনা নেতাদের, বিশেষভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হো ইং চীনের স্বপ্নবাস্তবায়নের জন্য নেয়া মাল্টি বিলিয়নের সাংপো বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে ২০০৯ সালে। ২০০০ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে এক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে সে সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপাই এ ব্যাপারে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে ভারতের উদ্বেগের কথা জানান। সেই পর্যন্তই।

এরপর ভারতের পক্ষ থেকেও আর তেমন উচ্চবাচ্য করা হয়নি। আর বাঙলাদেশ তো বোবা ও বধির হয়ে গেছে। এই বাঁধের সঙ্গে যেখানে বাংলাদেশের বাঁচা-মরার প্রশ্ন জড়িত, সেখানে এখানকার অধিকাংশ রাজনৈতিক দল কিংবা পরিবেশবিদ একেবারে নিশ্চুপ। এমনকি যে বিএনপি-জামাত ভারতের টিপাইমুখ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন, তাদের কণ্ঠেও কোনও আওয়াজ নেই। আমাদের তথাকথিত মার্কসবাদীরা তো চীনের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে জিভ বেরিয়ে যায়।

এমনকি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারও এ ব্যাপারে তেমন একটা উচ্চবাচ্য করছে না। যদিও মাত্র কয়েকদিন আগে নওগাঁ-৬ আসন থেকে নির্বাচিত সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সংসদের চলতি অধিবেশনে ৭১ বিধিতে এক মনোযোগ আকর্ষণী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পররাষ্ট্র, পরিবেশ ও পানিসম্পদমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সাংপো নদীর ওপরে চীন বাঁধ দিলে ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা নদী সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাবে। এর ফলে বরিশাল, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, নোয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ এলাকার পানি অতিরিক্ত মাত্রায় লবণাক্ত হয়ে গিয়ে সুন্দরবনসহ এই এলাকার জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে। এরপর থেকেই সরকার এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী চীন যে একতরফাভাবে সাংপো নদীর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ নদীতে বাঁধ দিতে পারে না, তা জোরের সঙ্গেই ঘোষণা করেছেন। এ ছাড়াও নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান জাতীয় সংসদে এক লিখিত উত্তরে জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে চীন কর্তৃক বাঁধ দেবার ফলে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে তো বটেই, এমনকি অর্থনীতিতেও ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।

বাঙলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর প্রবাহ নষ্ট হয়ে গিয়ে এখানকার অধিকাংশ অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যাবে। এমনিতেই বাঙলাদেশের নদীগুলোতে নাব্যতার সংকট রয়েছে, আস্তে আস্তে তা শুকিয়ে গিয়ে বাংলাদেশকে এক ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে, সেখানে চীন পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি নিয়ে হলেও বাঙলাদেশ ও ভারতসহ পৃথিবীর বহুদেশকে মরুভূমি বানিয়ে ফেলার উদ্যোগ নিয়ে ইতোমধ্যেই বাঁধ নির্মাণ শুরু করে দিয়েছে। অথচ বিএনপি-জামাত আর বাম দলগুলোর মুখে কথা নেই। কিন্তু কেন? ভয়? চীনকে আমাদের কিসের ভয়? ভারতকে ডিঙিয়ে এসে তারা কি বাংলাদেশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে নাকি? ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে,আমাদের ওপর যে মহাবিপর্যয় নেমে আসছে, সেটা কোনও ব্যাপারই নয়। বিএনপি-জামাত এবং বাম দলগুলো ভাশুরের নাম মুখে আনবে না, আর তথাকথিত সমাজতন্ত্রীরা তো এখন রাশিয়াকে বাদ দিয়ে আধা পুঁজিবাদী চীনের দিকে আকুল নয়নে তাকিয়ে আছেন।

তাদের পক্ষে আওয়ামী লীগের পেছনে লেগে থাকা সম্ভব, ভারতের বিরুদ্ধে লাগতে পারলে তো তাদের শরীরে জোশ এসে যায়, কিন্তু চীন তো আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু, তার বিরুদ্ধে তারা কথা বলবেন কি করে? অতএব বাংলাদেশ গোল্লায় যাক, সমস্ত দেশ মরুভূমি হয়ে যাক, তাতে কোনও ক্ষতি নেই। যা হোক, তবু তো বাঁধটা দিচ্ছে আমাদের পেয়ারা দোস্ত একাত্তরে পাকিস্তানের প্রাণের দোসর এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের দুর্দান্ত সহচর চীন। সম্ভবত এই সুযোগটা চীনকে দেওয়াই উচিত বলে তারা মনে করে। বাংলাদেশের বামদের প্রতিদিনের রুটিন ওয়ার্ক হচ্ছে ভারতকে গালি দেওয়া। তা না হলে তার পেটের ভাত হজম হয় না।

কিন্তু এদিকে চীন যে পুরো দেশটাকেই গ্রাস করতে চলেছে, তাতে সম্ভবত তার শরীরে এক ধরনের আনন্দের অনুভূতি জাগ্রত হচ্ছে। তারা ভাবছে তাদের কাজ একটাই, ভারতকে আক্রমণ কর আর আওয়ামী লীগকে ধসাও। কিন্তু তারা একটিবারও ভাবছে না, পুরো দেশটা মরুভূমিতে পরিণত হলে তারা ক্ষমতা দিয়ে কি করবেন? তখন কোথায় থাকবে বিএনপি-জামাত জোট, আর কোথায় থাকবে আওয়ামী লীগ বা অন্য দলগুলো? দেশ যদি না থাকে তা হলে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, নেতা, পাতিনেতা, এদের কোনও অস্তিত্ব থাকবে? এ নিয়ে কারও ভাববারও যেন সময় নেই। আসলে এরা সবাই সবকিছুই জানে ও বোঝে। এরা জ্ঞানপাপী।

এখন তাদের পরিবেশ বিজ্ঞানীরা কোথায় হাওয়া খেতে গেছেন? তাঁরা কোনও কথা বলছেন না কেন? টিপাইমুখ বাঁধ দিলে আমাদের যেখানে ২%পার্সেন্ট ক্ষতি সাধিত হবে, সেখানে চীন সাংপো নদীতে বাঁধ দিয়ে বাঙলাদেশকে প্রায় মরুভূমি বানিয়ে ফেলার কাজে নিজেদের নিয়োজিত করার পরও চীনের যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেখে আমাদের নেতানেত্রীরা লেজ গুটিয়ে নিয়েছেন। সমস্যাটা আমাদের সবচেয়ে বেশি। ফলে আমাদের যেখানে খুব বেশি উচ্চকণ্ঠ হওয়ার কথা, সেখানে আমরা মনের আনন্দে নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছি। আমাদের নেতানেত্রীরা বোধহয় ভাবছেন, ঘুমের মধ্যে যদি ঘটনা ঘটে যায়, তা হলে তারা তো তা দেখতে পাবেন না। তাই তাদের আবার ভয় কিসের? এদের মধ্যে তো আবার জাতীয়তাবাদী শক্তিও আছে, তারা নাকি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পাহারাদার।

এখন যখন আমাদের গোটা জাতির সামনে ভয়াবহ বিপদ উপস্থিত এবং আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব মরুভূমির আগুনে দগ্ধ হতে চলেছে, তখন সেই তেজ এবং জোশ এখন আর দেখতে পাই না কেন? কারণ বাঁধটা তৈরি করছে চীন। আসলে সত্যিকার দেশপ্রেম থাকলে, দেশটাকে মাতৃভূমি মনে করলে আরও বহু আগেই এ ব্যাপারে শুধু প্রতিবাদ নয়, এটা বন্ধ করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি ছিল। তারা মুখে যেটা বলে, কাজে যে সেটা করে না, তাদের পুরোটাই যে ভাঁওতাবাজী, জনগণ তা ইতোমধ্যেই বুঝে গেছে। সাংপো নদীতে বাঁধ হলে দেশটা তো মরুভূমিতে পরিণত হবেই, এর ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে বাকিটা জনগণই ‘জাতীয়তাবাদী’দের ভালো করে বুঝিয়ে দেবে। এ ব্যাপারে আমাদের পরিবেশবাদীরাও স্পিকটি নট।

যাঁরা ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সময় পরিবেশ রক্ষার জন্য ওসমানী উদ্যানে গাছকে জড়িয়ে ধরে গাছ কাটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, যাঁরা জলাশয় রক্ষায় এবং বুড়িগঙ্গা রক্ষার জন্য মানববন্ধন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মকাণ্ডেই অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁরা এখন কোথায়? এত বড় একটা বিপর্যয়ের সম্ভাবনার মুখে দাঁড়িয়ে তাঁরা কিভাবে চুপ করে ঘরে বসে আছেন, সেটাই বিস্ময়ের বিষয়! আসলে এ সকল প্রতিবাদ-প্রতিরোধের জন্য তাঁদের চাই আওয়ামী লীগের মতো একটা দল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে গণতন্ত্রের নামে, পরিবেশ রক্ষার নামে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়তে তাদের সুবিধে হয়, তারা এক একজন হয়ে ওঠেন অতিবিপ্লবী। কিন্তু চীন তো আগুন নিয়ে খেলা শুরু করে দিয়েছে, তাতে ঝাঁপ দিয়ে রাজনীতিবিদরা, পরিবেশবাদীরা শেষ পর্যন্ত জীবনটা দেবে নাকি? নিজের স্বার্থ পাগলেও বোঝে। আর এরা তো রাজনীতিবিদ-বুদ্ধিজীবী। নিজের নাড়ি টিপে তারা রাস্তায় বের হয়।

কোথাও কোনও সংঘাত-সংঘর্ষ দেখলে তড়িঘড়ি ঘরে ঢুকে বিবৃতি দেয়াই এদের স্বভাব। আসলে এই সব বুদ্ধিজীবীর পরিবেশ-সংক্রান্ত একটি অনুকূল বিষয় নিয়ে মাঠে নামতে সুবিধে হয়। তা ছাড়া চীন হলো পরাশক্তি। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ পেরে উঠবে? তাই চুপচাপ থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমাদের এইসব সুবিধাবাদী রাজনীতিক এবং পরিবেশবাদীরা চায়, তাদের রান্নাটা অন্যে রেঁধে দেবে, আর তারা ডাইনিং টেবিলে বসে প্রাণের সুখে হালুয়া-রুটি খেয়ে যাবেন।

এ কথাটা আরও বিশেষভাবে মনে হল এ জন্য যে, এ নিয়ে বাংলাদেশের কোনও হেলদোল না থাকলেও বিশ্ববাসী কিন্তু চুপ করে বসে নেই। আমেরিকান ভূতাত্ত্বিক ডেভিড মন্টোগোমারি আশংকা প্রকাশ করেছেন, চীন এই বাঁধ দিলে এতে প্রকৃতির স্বতঃস্ফূর্ততা নষ্ট হয়ে যাবে। আবহাওয়া, জীববৈচিত্র্য, কৃষি ও জনজীবনে এর গভীর প্রভাব পড়বে। সুইজারল্যান্ডের আর এক পরিবেশবিদ ও গবেষক আলিভার ক্রোপ ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় লেখা তাঁর এক প্রবন্ধে বলেছেন, এটা দক্ষিণ এশিয়ার ১০০ কোটি মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাই তিনি এ ব্যাপারে চীনকে এই বাঁধ দেয়া থেকে বিরত রাখার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।

ভারতও এখনও এ ব্যাপারে চীনের কাছে খুব জোর প্রতিবাদ জানায়নি। তবে ভারত যে এ ব্যাপারে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকবে না, তা জোরের সঙ্গেই বলা যায়। তাদের প্রতিবাদও যে খুব দুর্বল প্রতিবাদ হবে না, সেটা বোঝা যায় বিশ্ব ব্যাঙ্কের সাবেক ভাই প্রেসিডেন্ট ইসমাইল সেরাগেলদিনের ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্য দিয়ে। তিনি তার ভবিষ্যদ্বাণীতে বলেছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি শুরু হয়, তা হলে তা হবে পানি নিয়ে। চীন যেভাবে সাংপো নদীতে বাঁধ দিয়ে ভারত ও বাঙলাদেশ সহ বিশ্বকেও একটা বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তাতে করে ভারত বিশ্বের বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোকে সঙ্গে নিয়ে চীনকে মোকাবেলা করার কাজে পিছপা হবে না।

কারণ ভারত নিশ্চয়ই তার পুরো উত্তর-পূর্বাচল মরুভূমি হয়ে যাবে, তা কিছুতেই মেনে নেবে না। তার ফলে ভারতের সঙ্গে চীনের সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে। দুটি দেশই এখন পরাশক্তি। তাদের উভয়ের হাতেই রয়েছে পারমাণবিক বোমা। তা ছাড়া ১৯৪৯ সালেই চীনের নেতারা নিজেরাই এই যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন।

ফলে এটা বুঝতে কোনই অসুবিধা হবার কথা নয়, চীন পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েই মাঠে নেমেছে। আমরা জানি না, এই সমস্যার সমাধান কিভাবে হবে। তবে যদি পানির জন্য চীন এবং ভারতের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ বেঁধে যায় তা হলে বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিধর দেশ যে ভারতের পাশে এসেই দাঁড়াবে, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। কারণ একটি ভারসাম্যহীন প্রাকৃতিক অবস্থার ফলে তার প্রতিক্রিয়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এখন সোভিয়েত ইউনিয়ন নেই।

মার্কিনী ষড়যন্ত্রে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলে আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল, তার অবসান ঘটার ফলে মাঝখান থেকে চীন তার ফায়দা লুটে বিশ্ববাজারকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে দখল করে নিয়েছে, তেমনি পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ার ফলে সে এখন সারা পৃথিবীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের ইচ্ছেমত যা খুশি তাই করে যাচ্ছে। সাংপো নদীতে বাঁধ দিয়ে ভাটির দেশগুলোকে ধ্বংস করে দেয়ার প্রয়াস তার একটিমাত্র প্রমাণ। এও জানি, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। তা সত্ত্বেও নিজের দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা নিয়ে কথা বলার অধিকার তার আছে। ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় কাজ না হওয়ায় সমুদ্রের জলসীমা নির্ধারণের জন্য যদি বাঙলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারে, তা হলে ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ এবং ভারত কেন যৌথভাবে চীনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারবে না? আমাদের মনে রাখতে হবে, এটা আমাদের জন্য একটা জাতীয় বিপর্যয়ের শামিল।

এ সময়ে সমস্ত দল ও মতের রাজনৈতিক নেতা, পরিবেশবাদী, পানিবিশেষজ্ঞ, ভূতাত্ত্বিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকদের সঙ্গে আলোচনা করে বাঙলাদেশ কিভাবে এগোবে, তার একটি রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে ভারতের কাছে জানতে চাইতে হবে, এ ব্যাপারে তারা কি ভূমিকা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। যদি ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে এ ব্যাপারটি নিয়ে এগোনো যায়, তা হলে হয়তো কোনও ফলাফল বেরিয়ে আসতেও পারে। যদিও এটার ওপর ভরসা করা খুব আশাপ্রদ হবে বলে মনে হয় না, কারণ চীন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। সমাজতান্ত্রিক (আসলে আধা পুঁজিবাদী) একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও তারা যে ভয়ংকর ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে চলেছে, তাতে করে আমাদের মতো দেশ আতঙ্কিত না হয়ে পারে না।

আর পানি নিয়ে শেষ পর্যন্ত যদি ভারত এবং চীনের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধেই যায়, তা হলে অসহায়ভাবে মৃত্যু বরণ করা ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় থাকবে না। আমাদের ভারতবিরোধী দল এবং ভারতের বন্ধুপ্রতিম দল এটা যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই দেশের জন্য মঙ্গল। কিন্তু আমরা হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করছি, আমাদের দেশের আর কারোরই এ ব্যাপারে কোনও মাথাব্যথা নেই। সেই সাথে দীর্ঘদিন থেকে গলা ফাঁটানো পেইটভুক্ত বামেরাও চায়না দূতাবাসের বিশেষ সুবিধা নিয়ে অনেকটা মুখে কস্টিপ এঁটে বসে আছে। (সংগৃহীত) Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.