আমি দেখিনি , আমি শুনিনি , আমি বলিনি অনেক কিছুই....। প্রথম পর্ব
১
বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা টু লন্ডন সরাসরি ফ্লাইটে লন্ডন যাচ্ছে অভি। বাংলাদেশ দূতাবাসের কালচারাল উপদেষ্টা হিসেবে নতুন জয়েন করেছে সে। অন্য কারো জন্য এই চাকরিটাই হতো সোনার হরিণ কিংবা লক্ষ টাকায় কেনা নিজস্ব সম্পত্তি।
বোয়িং এর জানালা দিয়ে সাদা মেঘের খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে তার কথা।
আজ থেকে ৬ বছর আগের কথা। ইন্ট্যার পাশ করার পর আর্মিতে নতুন ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করে সে। প্রথম যোগ দেয়ার পর কঠিন সব দিন পার করেছে সে। প্রতিটি পরীক্ষা সফলভাবে প্রথম স্থানে থেকে শেষ করেছে। স্কুল জীবন থেকেই তার দৃঢ় লক্ষ্য আর্মিতে জয়েন করে দেশ সেবা করা তার উপর উপরি হিসেবে পাওয়া যাবে রোমান্ঝকর সব অভিজ্ঞতা।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতায় একেবারে শেষ সময়ে এসে পড়ে গিয়ে হাত ভেংগে যায়। হতাশাগ্রস্থ হলেও আশা ছিলো হয়তো তার ট্রেনিং এর রেজাল্টের কারনে হয়তো তাকে সুস্থ হবার পর সুযোগ দেয়া হবে। পায়নি সে তবে যা পেয়েছে তা আবার সবাই পায়নি।
যখন সে হাত ভেংগে বাসায় তার আগে থেকেই একদল বিশেষ পাওয়ারফুল মানুষের নজরে ছিলো সে। আর্মি না ডাকলেও তারা ডেকেছিলো।
২
২০০৬ সাল । বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কোনো সরকারী গোয়েন্দা সংস্থাই নিরপেক্ষ নয়। যখন তখন সরকারের সাথে তাদেরও নীতি বদলে যায়। তার উপর টাকা বিনিময়ে যে কোন গোপন খবর ফাঁস করা কোনো ব্যাপারই ছিলো না।
এই অবস্থায় তিন বাহিনী প্রধান খুব গোপনে এক সূদুর প্রসারী পরিকল্পনা হাতে নেন।
তিন জনের মিলিত সিদ্ধান্তে গঠিত হয় '' বাংলাদেশ সিক্রেট সার্ভিস '' ।
বিএসএস এর দায়িত্ব দেয়া হয় অত্যন্ত বিশ্বস্ত মেজর জেনারেল আলী মনসুরের হাতে। আলী মনসুর দয়িত্ব নিয়েই মাঠে নেমে পড়ে কারন সে বুঝতে পেরেছিলো বিএসএস এর আসলেই কি ভয়ানক দরকার বাংলাদেশে। একেবারে গোড়া থেকে শুরু করে সে। ডিজিএফআই , আর্মি ইন্টিলিজেন্স এর গোপন নথিতে প্রাপ্ত কিছু বিশ্বত্ব অফিসারদের নাম নিয়ে তাদের স্পেশাল কিছু ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে কাজ শুরু করেন মে.জে. মনসুর।
তবে তাদের কাউকেই প্রথমে জানানো হয়নি কি কারনে তাদের আলাদা এই ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা।
চায়না , যুক্তরাস্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সাথে বন্ধুত্বের সুবাদে নিয়মিতই সামরিক ট্রেইনিং আদান-প্রদান হতো। ট্রেনিং গ্রাউন্ডের সেরা স্টাফদের পাঠানো হয় উচ্চতর প্রশিক্ষনের জন্য। তারপর তাদের নিয়ে গঠিত হয় দেশের সেরা সামরিক ট্রেনিং টিম। তারা সবদিকেই সেরা মানে স্থল , বিমান এবং নৌ ক্ষেত্রে।
তারপর একটা টিম মোটামোটি দাড়িয়ে গেলে শুরু হয় জনবল খোজা। আর্মি , বিমান ,নৌ বাহিনীতে যেইসব তরুন যোগদান করে তাদের মধ্যে সেরাদের নিয়ে আসা হয় বিএসএস তে। আরেকটি টিম কাজ করে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবীদের নিয়ে। ফিজিক্স , কেমিস্ট্রি , বায়োলজী, ইন্জিনিয়ারিং এর সেরাদের নিয়ে গঠিত হয় স্বয়ং সম্পূর্ন গবেষনা উইং। যাদের কাজ হলো বিভিন্ন প্রচলিত অস্ত্র , এসপায়োনাজ জগতের টুকিটাকি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসের গোপন উন্নতি সাধন।
বিসিসির সেরা বিভাগ হলো হ্যকার উইং। দেশের অসাধারন সব তরুন হ্যকার যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই হ্যাক করতো সেরা সব অনলাইন নিরাপত্তা ব্যবস্থা , তাদের গোপনে নিয়ে আসা হয় বিএসএস তে। তাদের সাথে দেশ সেরা কম্পউটার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এই উইং গঠিত হয়। তারপর দীর্ঘ ৫ বছর পর আজ বিএসএস সম্পূর্নভাবে আধুনিক একটা ইন্টিলিজেন্স বাহিনী।
দ্বিতীয় পর্ব
৩
হিথ্রোতে ল্যান্ড করার পর ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টের কারনে খুব দ্রুতই বের হয়ে অপেক্ষমান গাড়ীতে উঠে বসে অভি।
হাইকমিশন অফিসের সামনে গাড়ী থেকে বের হবার সাথে সাথেই টের পায় লন্ডনের ঠান্ডা কি জিনিস। লন্ডনের পুরুষেরা নাকি তিনটা ডব্লিউকে বিশ্বাস করে না। কাজ, নারী আর আবহাওয়া। বাকি দুটার ব্যাপারে এখনো শিউর না হলেও আবহাওয়ার ব্যাপারে এখনই সে শিউর কারন গাড়ীতে উঠার আগে ঝলমলে রোদ আর সেই সাথে মিষ্টি একটা বাতাস ছিলো আর এখন কনকনে ঠান্ডা।
দূতাবাস থেকে নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে বিশ্রাম নিয়েই কাজে নেমে পড়ে সে।
গোপন কিছু চিন্হ রাখা , টেলিফোন সেট চেক করা এবং গোপন ক্যামেরা সেট করা সহ প্রয়োজনীয় কিছু রুটিন ওয়ার্ক।
জয়েন করেই ব্যস্ত হয়ে পরে অভি। বাংলাদেশী কমিউনিটির সাথে যোগাযোগ রাখা , বিভিন্ন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি কিন্তু রক্তে যার দূরন্ত নেশা সে কি আর এইসব করে চুপ থাকতে পারে?? তাই অস্থির হয়ে উঠে সে কোনো এসাইনমেন্টের জন্য। এক সময় মাসুদ রানার চরম ভক্ত ছিলো সে আর আজ নিজেই এসপায়োনাজ জগতের বাসিন্দা। ভাবতেই পুলক অনুভব করে সে।
অক্টোবর ২০১১ । সার্কভুক্ত দেশ গুলোর পর্যটন ব্যবস্থার জন্য পর্যটক আকর্ষন করার জন্য লন্ডনের রয়াল আলবার্ট হলে আয়োজন করা হয় ৯ দিন ব্যাপি ছবি প্রদশনী আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। যেখানে ৮ দিন থাকবে আটটি দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরার জন্য ৩ ঘন্টার একটি শো আর শেষ দিনে সম্মিলিত অনুষ্ঠান। এর জন্য অভিকে অনেক ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে বাকি দেশ গুলার কালচারাল উপদেষ্টাদের সাথে। শ্রীলংকার সুষমা মালার সাথে এই সুযোগে ভালোই খাতির হয়ে গেছে।
তার কারন মনে হয় সুষমার সাবলিল কথা , সুগঠিত ফিগার , মোহনীয় হাসি আর চরম বন্ধসুলভ আচরন দায়ী !!!
৪
সফলভাবে প্রদর্শনিটা শেষ করার পর এক সপ্তাহের ছুটি নেয় সে। সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠেই ফোন দেয় সুষমাকে। ডিনারের দাওয়াত দেয় । তারপর ঠিক করে কোথায় যাবে ডিনারে। শেষ পর্যন্ত লন্ডনের বিখ্যাত কারি পাড়া বলে খ্যাত ব্রিক লেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
ফোন দিয়ে রাত ৮ টায় টেবিল বুকিং দেয় ক্লিফটন রেস্টুরেন্ট এ ।
৮টার আগেই পৌছে যায় অভি। বাইরে অপেক্ষায় থাকে সুষমার আর ভাবে কতক্ষন দেরি হয় তার আসতে কে জানে কারন কোনো অদ্ভুত কারনে আগের সব কয়টা ডেট ডিনারেই লেট হয়ে গেছে হয় তার নয়তো তার ডেট পার্টনারের । কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে ঠিক ৮টায় সুষমা পৌছে যায় আর তার দিকে একটা মনে ঢেউ তোলা হাসি দেয়।
খাওয়ার ফাকে ফাকে অনেক কথাই হয়।
দক্ষিন এশিয়ার বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা , তাদের শৈশব , ছাত্র জীবনের কথা ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের দুজনের একটা জিনিস মিলে গেছে , দুজনেই কম কথা বলে তবে মন মত কেউ মিলে গেলে কথার বাধ ছেড়ে দেয় , মজা করা শুরু করে মোট কথা সময়টাকে উপভোগ করে যতটুকু সম্ভব যেমন এখন পান খেয়ে মুখ লাল করে ফেলছে অথচ তাদের আজকেই অফিশিয়াল সম্পর্কের বাইরে সময় কাটানো !! দুজনেই বুঝে গেছে লন্ডনে তাদের বাকি সময়টা ভালো যাবে।
৫
এক সপ্তাহ পর অফিস এ এসেই আবার ব্যস্ত হয়ে পরে অভি। রাতে ব্রিটিশ কারি এ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের স্পীচ দিতে হবে তাই ঠিক করছিলো আর তখনই সুষমার মেসেজ। দেখা করতে হবে খুব জরুরী ।
রিপ্লাইতে তাকে সে জানায় রাতের প্ল্যানের কথা বলে রাতে যখনই হোক সে দেখা করবে।
হঠাৎ এতো জরুরীভাব তাকে চিন্তিত করে। কিন্তু সুষমার কথা না শোনা পর্যন্ত কিছুই করার নাই।
অনুষ্ঠান শেষ করেই সুষমার ফ্ল্যাটে রওনা দেয় অভি। পৌছে দেখে তার অপেক্ষায় বসে আছে সুষমা।
তাকে কিছুটা ম্লান দেখায়। সরাসরি কাজের কথায় আসে সুষমা।
-- দেখো আমি কিছু কথা বলবো তোমাকে আজকে। বিষয়টা বাংলাদেশ বিষয়ক। আর তোমাকে আমি বিশ্বাস করেই কথাগুলো বলবো।
আমার কোনো ক্ষতি তাতে হবে না বরং বাংলাদেশের জন্যই তা ভীষন দরকার। তুমি জানো তামিল টাইগারদের জন্য আমাদের ইন্টিলিজেন্সকে খুবই শক্তিশালীভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। ইউকেতে তাদের অনেক বেশী ডোনার আছে তাই আমাদেরও তামিল কমিউনিটিতে গোপন কান রাখতে হয়। আমি শ্রীলংকা ইন্টিলিজেন্সের লন্ডন কন্ট্যাক্ট। আমার মাধ্যমেই খবর পাস হয়।
নরমালি সাউথ এশিয়ান দূতাবাসগুলাতে কোনো সামরিক উপদেষ্টা রাখা হয় না। তাই তোমাদের দূতাবাসের কাউকে জানাতে পারছি না। আমি ধরে নিচ্ছি তোমাকে বললে কথাগুলো মূল্য পাবে।
-- তুমি আমাকে নিশ্চিন্তে বলতে পারো।
-- ধন্যবাদ।
আসলে আজকে রুটিন চেকআপের সময় আমার এক কন্ট্যাক্ট জানায় যে সে কিছু ঘটার আশংকা করছে সাউথ এশিয়ায় বিশেষ করে বাংলাদেশে। ব্যাপারটা রাজনৈতিক কিনা জানতে চাইলে সে জানায় না এমন কোনো ব্যাপার না তবে তারচেয়েও ভয়ংকর কিছু। আমি দেশে কন্ট্যাক্ট করি আর আমার লোকাল কন্ট্যাক্টকে আরো সংবাদ সংগ্রহের নির্দেশ দেই। শ্রীলংকায় আমার বস এই ব্যাপারে তোমাদের জানাতে বলে। আমরা আছি তোমাদের সাথে ।
-- তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। আমি কথা দিচ্ছি এই ব্যাপারটা যথাযথ জায়গায় পৌছে যাবে। আর আশা করি তুমি আরো খোজ জানাবে।
এই ব্যাপারে আরো কিছু কথা বলে বের হয়ে আসে অভি। গাড়ীতে বসে ভাবে সুষমা কি কোনো উপকারী বন্ধু নাকি তাকে বাজিয়ে দেখছে যে সে আসলেই কালচারাল উপদেষ্টা না অন্য কিছু?? আর যদি সে আসলেই সত্য বলে ?? ভাবতেই রক্ত ছলকে উঠে তার।
কারন সুষমার কন্ট্যাক্টের আশংকা বাংলাদেশ তার ম্যাপ থেকে কিছু অংশ হারাতে যাচ্ছে !!!!!!!!!!!
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
পরের পর্বেই হয়তো শেষ হবে প্রবাল দ্বীপ। কারো ইচ্ছা হলে দয়া করে যে কোন সাজেশন দিন , সাদরে গ্রহন করা হবে।
মেঘের দেশে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।